অমুসলিম/কাফিরদের সাথে সম্পর্ক কেমন হবে ?

By | February 3, 2021

অমুসলিম_কাফিরদের_সাথে_সম্পর্ক_কেমন_হবে?

আল্লাহর বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্ব থাকা এবং আল্লাহর দুশমনদের সাথে শত্রুতা থাকা একজন মুমিনের ঈমানের পরিচয় এবং এটি ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

যার মধ্যে এ গুণ থাকবে না সে ঈমানদার হতে পারে না।

ঈমানদার হতে হলে অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বন্ধুত্ব এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য শত্রুতা তার মধ্যে থাকতে হবে, অন্যথায় ঈমানদার হওয়া যাবে না।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কিছু বাণী উল্লেখ করার মাধ্যমে এ বিষয়টি পরিষ্কার হবে;

তন্মধ্যে কয়েকটি আয়াত নিম্নে উপস্থাপন করলাম:

১। আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেছেন:

‎لَا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ إِلَّا أَنْ تَتَّقُوا مِنْهُمْ تُقَاةً

অর্থাৎ,মুমিনরা যেন মুমিনদেরকে বাদ দিয়ে কাফির তথা অবিশ্বাসীদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করে। আর যে এটা করবে সে আল্লাহ্‌ তায়ালার দায়িত্ব থেকে মুক্ত;আর আল্লাহ্‌ তায়ালাও তার থেকে মুক্ত।তবে, যদি তারা আত্মরক্ষার্থে এমনটি করে থাকে তবে তার কথা ভিন্ন। (সুরা আলে ইমরানঃ ২৮)

২। আল্লাহ্‌ তায়ালার বাণীঃ

‎يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَاءَ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ (57)

অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! আহলে কিতাব [ইহুদী ও খৃষ্টানগণ] ও কাফিরদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের দ্বীনকে ঠাট্টাবিদ্রূপ ও খেলনার পাত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। আর তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাকো তাহলে আল্লাহ্‌ তায়ালাকে ভয় কর।(মায়েদাহঃ৫৭)

৩। আল্লাহ্‌ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন:‎

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ (51)

অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী খৃষ্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যকার যে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে সেও তাদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা জালেমদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন না। (সুরা মায়েদাহঃ ৫১)

৪। আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ

‎يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ أَتُرِيدُونَ أَنْ تَجْعَلُوا لِلَّهِ عَلَيْكُمْ سُلْطَانًا مُبِينًا (144)

অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিনদেরকে বাদ দিয়ে কাফির তথা অবিশ্বাসীদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমরা কি আল্লাহ্‌ তায়ালার সামনে তোমাদের বিরুদ্ধে কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ দাড় করাতে চাও? (নিসাঃ ১৪৪)

৫। আল্লাহ্‌ তায়ালার বাণীঃ

‎يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِنْ دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ

অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের [মুসলমানদের] মধ্য থেকে ছাড়া অন্যদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের ক্ষতি করতে সামান্য পরিমাণও ত্রুটি করে না। তারা চায় তোমাদের উপর দুঃখ দুর্দশা ও বিপদ নেমে আসুক। [তোমাদের বিরুদ্ধে] জঘন্যতম হিংসা তাদের মুখের কথায় প্রকাশিত হয়। আর তাদের অন্তরে যা আছে তা আরও ভয়ংকর।(আলে ইমরানঃ ১১৮)

তিনি আরো বলেন:* তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে আসে। অতঃপর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না। সুরা নিসা ৪:৮৯

* যারা মুসলমানদের বর্জন করে কাফেরদেরকে নিজেদের বন্ধু বানিয়ে নেয় এবং তাদেরই কাছে সম্মান প্রত্যাশা করে, অথচ যাবতীয় সম্মান শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য। সুরা নিসা ৪:১৩৯

* মুমিনগণ, আল্লাহ যে জাতির প্রতি রুষ্ট, তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না। তারা পরকাল সম্পর্কে নিরাশ হয়ে গেছে যেমন কবরস্থ কাফেররা নিরাশ হয়ে গেছে। সুরা মুমতাহিনা ৬০:১৩

আয়াত সমূহে পরিষ্কার হচ্ছে যে, যেহেতু অমুসলিমরা মুসলিমদের ভাল চায় না , মুসলিমদের ক্ষতিতে অমুসলিমরা খুশি হয়, ক্ষতি চায়, এবং মুসলিমদের ক্ষতি হলে অমুসলিমরা আনন্দিত হয় তাই আল্লাহ্‌ তাদের সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধু স্থাপন করতে নিষেধ করেছেন ।তবে এটি কি পৃথিবীর সকল অমুসলিমের জন্য সর্বদা প্রযোজ্য ? অবশ্যই ‪না!

বরং;আল্লাহ বলেন-

• ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন। আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম। (সূরা মুমতাহানা: ৮-৯)

অর্থাৎ তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না যে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলে , কাজ করে সর্বদা ।

• হে মুমিনগণ, আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা ঈমানদার হও। (আল মায়িদা: 57)

অর্থাৎ যে ইসলামকে নিয়ে উপহাস করে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না ।

• তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে আসে। (আন নিসা: 89)দেখুন,

তাফসীরের কিতাবগুলোতে কি বলেছে:

১। তাফসীরে তাবারীতে বলা হয়েছে-

‎ومعنى ذلك: لا تتخذوا، أيها المؤمنون، الكفارَ ظهرًا وأنصارًا توالونهم على دينهم، وتظاهرونهم على المسلمين من دون المؤمنين، وتدلُّونهم على عوراتهم

অর্থাৎ, আয়াতের অর্থ হল-হে মুসলমানগণ! তোমরা মুসলমানদেরকে বাদ দিয়ে কাফেরদেরকে তাদের ধর্মের উপর থাকা অবস্থায় সাহায্যকারী হিসেবে গ্রহণ করো না। তাদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাহায্য করো না এবং তাদের কাছে মুসলমানদের গোপণ তথ্য প্রকাশ করো না। (তাফসীরে তাবারীঃ ৬/৩১৩)

২। তাফসীরে মারাগীতে বলা হয়েছে-

‎أي لا يصطف المؤمنون الكافرين فيكاشفوهم بالأسرار الخاصة بالشئون الدينية ويقدموا مصلحتهم على مصلحة المؤمنين، إذ في هذا تفضيل لهم عليهم وإعانة للكفر على الإيمان.

অর্থাৎ, মুমিনগণ কাফিরদের সাথে একই কাতারে থেকে দ্বিনী গোপণ তথ্য প্রকাশ করবে না এবং মুসলমানদের স্বার্থের উপরে তাদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে না। কেননা, এটাতে তাদেরকে মুমিনদের উপর অগ্রাধিকার দেয়া হয় এবং ঈমানের উপর কুফরকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। (তাফসীরে মারাগীঃ ৩/১৩৬)

একই তাফসীরে একটু পরেই বলা হয়েছে-

‎فإن كانت الموالاة والمحالفة لمصلحة المسلمين فلا مانع منها، فقد حالف النبي صلى الله عليه وسلم خزاعة وهم على شركهم، كما لا مانع من ثقة المسلم بغيره وحسن معاملته فى أمور الدنيا.

অর্থাৎ, যদি তাদের সাথে বন্ধুত্ব কিংবা মিত্রতা হয় মুসলমানদের স্বার্থে, তাহলে কোন বাধা নেই। কেননা, রাসুল (সাঃ) খোজা’আ গোত্রের সাথে মুশরিক থাকা সত্ত্বেও মিত্রতা সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। অনুরূপভাবে, দুনিয়াবী কাজকর্মে কোন মুসলিমের জন্য অন্য ধর্মাবলম্বীর কারও উপর আস্থা রাখা এবং তার সাথে উত্তম ব্যবহার করাতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। (প্রাগুক্তঃ ৩/১৩৬)৩।

তাফসীরে শা’রাবীতে বলা হয়েছে-

‎لأن الكافرين وإن تظاهروا أنهم أولياء لك أيها المؤمن، فهم يحاولون أن يجعلوك تستنيم لهم، وتطمئن إليهم وربما تسللوا بلطف ودقة، فدخلوا عليك مدخل المودة، وهم ليسوا صادقين في ذلك، لأنهم ما داموا كافرين، فليس هناك التقاء في الأصل بين الإيمان والكفر

অর্থাৎ, [সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞার] কারণ, কাফির বা অবিশ্বাসীগণ প্রকাশ্যে নিজেদেরকে আপনার বন্ধু হিসেবে জাহির করতে চাইলেও; তারা [মনে প্রাণে] চায় আপনাকে তাদের কাছে টানতে, আপনার আস্থা অর্জন করতে। কখনও কখনও হয়ত এগুলো করবে খুবই সুক্ষ্ণভাবে। এরপর আপনার অন্তরে হৃদ্যতার পর্যায়ে প্রবেশ করবে। কিন্তু, এটা তাদের প্রকৃত অবস্থা নয়। [তাদের অন্তরের অবস্থা এর বিপরীত] কারণ, তারা তখনও অমুসলিম অবস্থায় আছে। মুলতঃ ঈমান ও কুফর কখনও একত্রিত হতে পারে না। (তাফসীরে শা’রাবীঃ ৩/১৪১১)

৪। তাফসীরে মানারে বলা হয়েছে-

‎فَالْمَمْنُوعُ مِنْهَا مَا يَكُونُ فِيهِ خِذْلَانٌ لِدِينِكَ وَإِيذَاءٌ لِأَهْلِهِ أَوْ إِضَاعَةٌ لِمَصَالِحِهِمْ، وَأَمَّا مَا عَدَا ذَلِكَ كَالتِّجَارَةِ وَغَيْرِهَا مِنْ ضُرُوبِ الْمُعَامَلَاتِ الدُّنْيَوِيَّةِ فَلَا تَدْخُلَ فِي ذَلِكَ النَّفْيِ ; لِأَنَّهَا لَيْسَتْ مُعَامَلَةً فِي مُحَادَّةِ اللهِ وَرَسُولِهِ،

অর্থাৎ,তন্মধ্যে নিষিদ্ধ হচ্ছে সে সম্পর্কগুলো যা তোমার দ্বীনকে অসম্মান করা,দ্বীনের স্বার্থকে নষ্ট করা এবং দ্বীনের অনুসারীদেরকে কষ্ট দেয়ার জন্য করা হয়। ওগুলো ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দুনিয়াবী অন্যান্য আচার আচরণের বেলায় এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হবে না।কেননা,সেটা আল্লাহ্‌ তায়ালা ও তার রাসুল (সাঃ) এর বিরুদ্ধাচরণ নয়। (দেখুন- তাফসীরে মানারঃ ৩/২২৯;তাফসীরুল ওয়াসীত-তানত্বাবীঃ ২/৭৫ )

৫। তাফসীরে ওয়াসীতে আল্লামা ওয়াহাবা জুহায়লী বলেন:

‎والخلاصة: حرّم الله إفشاء الأسرار للأعداء التي تضر الجماعة الإسلامية، ولا مانع من معاملة غير المسلمين معاملة حسنة إذا لم يتآمروا علينا أو يضرونا بضرر، وأما الأعداء الذين أخرجوا المسلمين من بلادهم كفلسطين وغيرها، فلا تحل موالاتهم، بل تجب معاداتهم حتى نحرر الأراضي المحتلة.

অর্থাৎ, মোটকথা- আল্লাহ্‌ তায়ালা শত্রুদের কাছে এমন গোপণ তথ্য প্রকাশ করাকে হারাম ঘোষণা করেছেন যা মুসলিমদের জন্য ক্ষতিকর। যদি তারা মুসলমানদের ক্ষতি করার জন্য সলাপরামর্শ না করে কিংবা ক্ষতি করার চেষ্টা না করে তাহলে, তাদের সাথে উত্তম আচরণ করায় কোন ক্ষতি নেই। তবে, ফিলিস্তিন কিংবা অন্যান্য দেশের মত যেখান থেকে শত্রুরা মুসলমানদেরকে নিজ মাতৃভুমি থেকে বের করে দিয়েছে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা বৈধ হবেনা বরং যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা দখলকৃত ভুমি পুণরুদ্ধার না করব ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সাথে শত্রু হিসেবে আচরণ করা আবশ্যক। (তাফসীরুল ওয়াসীতঃ ১/১৮৭)

অন্যান্য তাফসীরের কথাও একই রকম হওয়ায় আর বেশী উল্লেখ করলাম না। অধিকাংশ মুফাসসিরই বলেছেন, মুসলমানদের ক্ষতি হয় এমন কোন কাজে যেন কোনক্রমেই একজন মুসলিম অমুসলিমদেরকে সাহায্য না করে।

তবে, যদি আত্মরক্ষার প্রয়োজন হয় তাহলে, বাহ্যিকভাবে তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে। অন্তরটাকে থাকতে হবে মুসলমানদের কল্যাণকামী।অনেক সময় অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকলে অমুসলিমকে বিশ্বাস করে হয়ত মুসলিম বন্ধু মুসলমানদের কোন গোপণ তথ্য তাকে দিয়ে দিতে পারে।

কিন্তু, ঐ অমুসলিম এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে মুসলিমদের ক্ষতি করতে পারে।

আর এটাই এ আয়াতে নিষেধ করা হয়েছে।

তবে, অমুসলিমদের কুফরীকে সাপোর্ট না দিয়ে সামাজিকভাবে তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে কোন বাধা নেই। যদি তাতে মুসলিমদের কোন ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকে।

এবার আসুন দেখি !হাদিছে কি আছে?

একদিকে;সহীহ বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবুদাউদ, দারিমী সহ মুসনাদে আহমাদে এমন ২৭টি সহীহ হাদীস রয়েছে ;

যেখানে নবী সল্লাল্লহু আলায়হি অসাল্লাম ইন্তিকালের আগ মুহুর্তে বলে গেছেন :

‎لأُخْرِجَنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى مِنْ جَزِيرَةِ الْعَرَبِ حَتَّى لاَ أَدَعَ إِلاَّ مُسْلِمًا ‏”‏

অর্থ: অবশ্যই অবশ্যই আমি ইয়াহূদী ও খ্রীষ্টান সম্প্রদায়কে আরব উপ-দ্বীপ থেকে বের করে দেবো। তারপর মুসলিম ব্যতীত অন্য কাউকে এখানে থাকতে দেবো না।‎

أخرجوا المشركين من جزيرة العرب!

অর্থ: আমার পরে তোমরা মুশরিকদেরকে আরব থেকে বের করে দিবে!

‎لاَ تَبْدَءُوا الْيَهُودَ وَلاَ النَّصَارَى بِالسَّلاَمِ فَإِذَا لَقِيتُمْ أَحَدَهُمْ فِي طَرِيقٍ فَاضْطَرُّوهُ إِلَى أَضْيَقِهِ

অর্থ: ইয়াহূদী ও নাসারাদের আগে বাড়িয়ে সালাম করো না, রাস্তায় তাদের সঙ্গে তোমাদের সাক্ষাত হলে তাদেরকে রাস্তার সংকীর্ণ দিকে চলে যেতে বাধ্য করবে।

অপর দিকে, আল্লাহর রাসূল সঃ এক মুশরিকের উচ্ছিষ্ট পানি দিয়ে অযু করেছেন৷ খাইবারের ইয়াহুদীদের সাথে তাদের চাষাবাদকৃত শষ্য ও ফলফলাদির উপর নির্ধারিত হারে ট্যাক্স ধরে লেনদেন করেছেন৷

* নবী মুহাম্মদ (সা) অমুসলিমদের সাথে রাষ্ট্রীয় শান্তি চুক্তি করেছেন যাকে আমরা “মদিনা সনদ” বলা হয় ।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৪৩, সহিহ হাদিসঃ মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর জন্য তার পরিবারে একটি ছাগল যবেহ করা হল। তিনি এসে বললেন, তোমরা কি আমাদের ইয়াহুদী প্রতিবেশীকে (গোশত) উপহার পাঠিয়েছ? আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে জিবরাঈল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে। – এখানে ইহুদীদের প্রতিবেশি বলা হয়েছে ।

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৫১৩, সহিহ হাদিসঃ আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক ইয়াহুদী হতে কিছু খাদ্যদ্রব্য কিনেছিলেন এবং তার কাছে নিজের বর্ম বন্ধক রেখেছিলেন।

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৬৯২, সহিহ হাদিসঃ রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-বলেছেন, সে ব্যক্তি মিথ্যাচারী নয়, যে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য ভালো কথা পৌঁছে দেয় কিংবা ভালো কথা বলে।

* এক ইহুদী কিশোর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমত করত। সে অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে গেলেন এবং তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তখন সে মুসলমান হয়ে গেল। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৩৫৬, ৫৬৫৭)

* হযরত উমর (রা) বলেন সাফিয়ার এক দাসী হযরত উমর (রা) এর নিকট গিয়ে অভিযোগ করলো যে, হযরত সাফিয়া ইহুদী সংস্কৃতি অনুকরনে শনিবারকে গুরুত্ব দেন এবং ইহুদীদের সাথে ভাল আচরণ করেন । হযরত উমর (রা) , হযরত সাফিয়া (রা) থেকে বিষয়টি জানতে চাইলেন। হযরত সাফিয়া (রা) জবাবে জানালেন! যখন আল্লাহ্‌ তা’লা হযরত মুহাম্মদ (সা) কে শনিবারের পরিবর্তে শুক্রবার দান করেছেন তখন থেকে আমি শনিবারকে আর পছন্দ করি না । অন্যদিকে আমার কিছু ইহুদী আত্মীয় আছে । আমি তাদের আত্মীয়তার হক অনুযায়ী ভাল আচরণ করি । তিনি হযরত উমর (রা) কে এই জবাব জানিয়ে পাঠালেন অন্যদিকে সেই বাদীকে জিজ্ঞেস করলেন তোমাকে আমার বিরুদ্ধে এই কাজে কে উস্কে দিয়েছে ? সে সত্যি সত্যি জবাব দিল শয়তান আমাকে প্ররোচনা দিয়েছে । হযরত সাফিয়া (রা) বললেন ঠিক আছে । আমি তোমাকে মুক্ত করে দিলাম । – আল ইসাবা,৪/৩৪৭ এবং সীরাতুল মুস্তফা (সা),৩/৩০৬, আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ)।-

খেয়াল করুন! হযরত সাফিয়া (রা) ইহুদীদের সাথে আত্মীয়তার অধিকার হিসেবে ভাল ব্যাবহার করেছেন ।

# হযরত উবাদা ইবনে সাবীত (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলেন: বহু ইহুদীর সাথে আমার বন্ধুত্ব আছে কিন্তু আমি তা ভেঙ্গে দিলাম। আল্লাহ ও রাসূলের বন্ধুত্বই আমার জন্য যথেষ্ট। তখন ওই মুনাফিক বলল: আগা পিছা চিন্তা করা আমার অভ্যাস। আমার দ্বারা এটা হতে পারে না। বলা যায় না কখন কি হয়। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, হে আবদুল্লাহ তুমি উবাদা হতে খুবই নিম্ন স্তরে নেমে গেছ। ( ইবনে কাসির ৫:৫১ আয়াতের শানে নুযুল)

অর্থাৎ সামগ্রিক ভাবে আমরা বুঝলাম এমন অমুসলিমের সাথে বন্ধুত্ব বা মেলামেশা করা যাবে যে ইসলামকে কটাক্ষ করে না , উপহাস করে না , কটুক্তি করে না, মুসলিমকে দ্বীন হতে দূরে সরিয়ে নিতে চায় না ।

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস গুলোর সমন্বয় খুব সাবলীল ভাবে হযরত হাকিমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত আশরাফ আলী থানভী রহ লিখেছেন:‎

کفار کے ساتھ تین قسم کے معاملے ہوتے ہیں: موالات یعنی دوستی۔ مدارات: یعنی ظاہری خوش خلقی۔ مواساۃ: یعنی احسان و نفع رسانی۔‎موالات تو کسی حال میں جائز نہیں۔ ‎اور مدرات تین حالتوں میں درست ہے: ‎ایک دفعِ ضرر کے واسطے، ‎دوسرے اس کافر کی مصلحتِ دینی یعنی توقعِ ہدایت کے واسطے، ‎تیسرے اکرامِ ضیف کے لیے، اور اپنی مصلحت و منفعتِ مال و جان کے لیے درست نہیں۔ ‎اور مواسات کا حکم یہ ہے کہ اہلِ حرب کے ساتھ ناجائز ہے اور غیر اہلِ حرب کے ساتھ جائز۔ (بیان القرآن)

অর্থ: কাফিরদের সাথে সম্পর্ক ৩ ধরণের হতে পারে; যথা:

1. মুওয়ালাত তথা বন্ধুত্ব;

2. মুদারাত তথা বাহ্যিক সদাচারণ;

3. মুওয়াসাত তথা উপকার-সহযোগিতা।

১ম প্রকার বা মুওয়ালাত-বন্ধুত্ব কোন অবস্থাতেই বৈধ নয়;

আর ২য় প্রকার বা মুদারাত-বাহ্যিক সদাচারণ নিম্নোক্ত তিন অবস্থায় বৈধ; যথা:

ক) কাফিরের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য;

খ) কাফিরের হিদায়াতের আশায়;

গ) কাফিরের আতিথেয়তায়। তবে নিজ স্বার্থ বা জান-মালের সুবিধার্থে বৈধ নয়।

আর ৩য় প্রকার বা মুওয়াসাত তথা উপকার-সহযোগিতা আহলে হারবদের জন্য অবৈধ;

তবে আহলে হারব না হলে বৈধ। ( বয়ানুল কুরআন)। والله تعالى اعلم

Mufti Masum Billah

Facebook Comments Box