আরাফার রোযা কবে?

By | July 16, 2021

প্রশ্ন:
হুজুর! আরাফার রোযা নিয়া অনেকে বাড়াবাড়ি করছে।
আপনার একটা মূল্যবান মত কামনা করছি
যাতে জাতি উপকৃত হবে।
ইকরামুজ্জামান।

উত্তর: وبالله سبحانه التوفيق

আগে একটা বিষয় খোলাসা করি, পরে বাকি বিষয় আসছে… ইনশাআল্লহ!

হাদীছের মূলপাঠে শব্দ “يوم عرفة” “ইয়াওমি আরাফাহ”!

এখানে দুটি শব্দ :
যথা;
১. ইয়াওম يوم
২. আরাফাহ عرفة

যদি হাদীছের মূলপাঠের শব্দ দেখি, প্রাসঙ্গিক বিষয়/ব্যাখ্যা না দেখি, তাহলে দেখুন;

ইয়াওমি আরাফাহ তথা আরাফাহ দিবস;

বলাবাহুল্য,
ইয়াওম বা দিবস শরীয়াতে বিশেষত সিয়াম/রোযার ক্ষেত্রে সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ধর্তব্য,
সিয়াম/রোযা পালনকারীর স্থান হিসেবে, যাতে কারো দ্বিমত নাই!

তাহলে ইয়াওমি আরাফাহ বা আরাফাহ দিবসে সিয়াম/রোযা শুরু হবে সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সিয়াম/রোযা পালনকারীর নিজ স্থান হিসেবে!

এখন বলুন!

আমরা বাংলাদেশে সিয়াম/রোযা করবো বাংলাদেশের সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নাকি সৌদির হিসেবে?

উত্তরে সবাই বলবেন, বাংলাদেশ হিসেবে।

এবার বলুন!

যদি বাংলাদেশের হিসেবে হয় তাহলে বাংলাদেশের সুবহে সাদিক সৌদির সুবহে সাদিক হতে ৩ ঘন্টা আগেই হয়।
তাহলে বাংলাদেশের সিয়াম/রোযা সৌদির আরাফাহ দিবসের ৩ ঘন্ট আগে শুরু হবে,
তদ্রুপ ৩ ঘন্টা আগে শেষ হবে!

এবার বলুন!

আরাফাহ দিবসের সাথে কি মিল/সমন্জস্য হল?

আর যেখানে সৌদির দিবসের সময় রাত তারা কি রাতে রোযা রাখবে?

উত্তরে অবশ্যই বলবেন: মিল/সমন্জস্য নাই, আর রাতেও নয়!

অতএব,
হাদীছের মূলপাঠ ইয়াওমি আরাফাহ বা আরাফাহ দিবস ঠিক রাখতে হলে ৯ যিলহজ্জই উদ্দেশ্য হবে!

তদ্রুপ;
অপর হাদীছে তাকবীরে তাশরীকও ইয়াওমি আরাফাহ হতে শুরু করতে বলা হয়েছে, এবং ৫ দিনের কথা বলা হয়েছে;

এখন দেখুন!

সৌদির আরাফাহ দিবস ধরলে বাংলাদেশের ফজরে তাকবীরে তাশরীক পড়া যাবে না!
অথচ সবাই বলবে বাংলাদেশের ফজর হতেই পড়তে হবে!
দ্বিতীয়ত: সৌদির হিসাব মতে শুরু করলে বাংলাদেশে ৬দিন হবে!

আরেকটি কথা!

আরাফাহ দিবস পরবর্তী দিবস ইয়াওমুন নাহর বা কুরবানী দিবস বা ঈদের দিন

এখন বলুন!

আরাফাহ ও ঈদের দিনের মাঝে কি কোন দিন আছে?

উত্তরে অবশ্যই বলবেন, নাই।
এটা সর্বজন স্বীকৃত বিষয়!

অতএব,
আরাফাহ দিবস তথা ৯ই যিলহজ্ব প্রত্যেক দেশ অনুপাতে হবে।

এ দিনে বিশেষ দুটি আমলের ব্যপারে হাদিসে এসেছে :
১. সিয়াম/রোযা রাখা
২. ফজর থেকে প্রতি নামাযের পর তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা।

দুটি আমলের ব্যপারে হাদিসে يوم عرفة শব্দই ব্যবহৃত হয়েছে।

সুতরাং সিয়াম/রোযা ও তাকবীরে তাশরিক যার যার দেশ অনুপাতে ৯ই যিলহজ্জই শুরু করবো, সেদিনই আরাফার দিন।

• পরবর্তী ব্যাখ্যাকারগণ জিলহজ্বের নবম দিন তথা ৯ তারিখকেই ইয়াওমে আরাফা বলেছেন।

ইমাম নওয়াবী (৬৭৬ হি.) রহ. তাঁর মুসলিম শরীফের বিখ্যাত শরাহ আল মিনহাজে জিলহজের নয় দিনের রোজা সম্পর্কে বলেন—
‎هي مستحبة استحبابا شديدا، لا سيما التاسع منها وهو يوم عرفة. (شرح رقم الحديث: 1171—جزء 7 صفحة 71 الشاملة)
এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুস্তাহাব। বিশেষকরে নবম দিন। যা ইয়াওমে আরাফা।

ইমাম নওয়াবীর মতটি;

আল্লামা আজীমাবাদী (১৩২৯ হি.) তাঁর “আউনুল মা’বুদে”,
আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী?(১৩৫৩ হি.) তাঁর “তুহফাতুল আহওয়াজিতে” উল্লেখ করেছেন।

‎▪️ عن أبى قتادة رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وآله وسلم قال: «صيام يوم عرفة أحتسب على الله أن يكفر السنة التى قبله والسنة التى بعده»
‎- رواه مسلم

‎ رواه النسائي عن بعض أزواج النبي صلى الله عليه وسلم: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يصوم تسعا من ذي الحجة ويوم عاشوراء وثلاثة أيام من كل شهر أول اثنين من الشهر وخميسين،
‎ وصححه الألباني

▪️عن عُمرَ بنِ الخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عنه: (أنَّه كان يُكبِّر دُبرَ صلاةِ الغداةِ من يومِ عَرفةَ إلى صلاةِ العصرِ مِن آخِرِ أيَّامِ التَّشريقِ)
‎- رواه ابن المنذر في ((الأوسط)) (2200)، والبيهقي (3/314) (6496).

‎عن عليٍّ رَضِيَ اللهُ عنه: (أنَّه كان يُكبِّرُ من صلاةِ الفجرِ يومَ▪️ عَرفةَ، إلى صَلاةِ العَصرِ مِن آخِرِ أيَّامِ التَّشريقِ)
‎-رواه ابن أبي شيبة في ((المصنف)) (2/165). صحَّحه الألباني في ((إرواء الغليل)) (3/125).

Written By:

Mufti Masum Billah

Facebook Comments Box