প্রশ্ন:
কবরের জায়গা কেনা উত্তম নাকি সাদাকায়ে জারিয়া করা ?
উত্তর: وبالله سبحانه التوفيق
এতো বিশাল টাকার জায়গা কিনে #কবর স্থায়ী না করে, বরং এই টাকা দিয়ে #সাদাকায়ে_জারিয়া করে দেয়া বেশি উপকারী।
এতে সাদাকায়ে জারিয়া যেমন আজীবন সংরক্ষিত থাকবে,
তেমনি কেয়ামত পর্যন্ত সাদাকায় জারিয়ার সাওয়াবও পেতে থাকবে।
মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। নিঃশেষ হয়ে যায় যাবতীয় কর্মক্ষমতা। না সওয়াব উপার্জনের সক্ষমতা থাকে, না গোনাহ কামানোর।
তাই #বুদ্ধিমানের কর্তব্য হল,
আখেরাতের চিরস্থায়ী সুখ ও শান্তির পথে অগ্রগামী হওয়া এবং মৃত্যুর আগেই মৃত্যু ও তার পরের জীবনের যথোচিত প্রস্তুতি নেওয়া।
আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে তাঁর প্রিয় মুমিনদেরকে এ কথাই স্মরণ করিয়েছেন-
وَ اَنْفِقُوْا مِنْ مَّا رَزَقْنٰكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ یَّاْتِیَ اَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَیَقُوْلَ رَبِّ لَوْ لَاۤ اَخَّرْتَنِیْۤ اِلٰۤی اَجَلٍ قَرِیْبٍ فَاَصَّدَّقَ وَ اَكُنْ مِّنَ الصّٰلِحِیْنَ وَ لَنْ یُّؤَخِّرَ اللهُ نَفْسًا اِذَا جَآءَ اَجَلُهَا وَ اللهُ خَبِیْرٌۢ بِمَا تَعْمَلُوْنَ .
আমি তোমাদের যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় কর, এর আগে যে, তোমাদের কারো মৃত্যু এসে যাবে আর তখন সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে কিছু কালের জন্য সুযোগ দিলে না কেন, তাহলে আমি দান-সদকা করতাম এবং নেক লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম। যখন কারো নির্ধারিত কাল এসে যাবে তখন আল্লাহ তাকে কিছুতেই অবকাশ দিবেন না। আর তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবহিত। -সূরা মুনাফিকূন (৬৩) : ১০-১১
হাদীসে বুদ্ধিমানের পরিচয় এভাবে ব্যক্ত হয়েছে-
الْكَيِّسُ مَنْ دَانَ نَفْسَهُ وَعَمِلَ لِمَا بَعْدَ الْمَوْتِ، وَالْعَاجِزُ مَنْ أَتْبَعَ نَفْسَهُ هَوَاهَا، وَتَمَنَّى عَلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ.
বুদ্ধিমান সে-ই যে নিজের হিসাব নেয় এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য আমল করে। আর অক্ষম সে-ই যে নিজের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী চলে এবং আল্লাহর কাছে (বৃথা) আশা পোষণ করে।
-জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪৫৯।
চতুর্থ খলীফা আলী ইবনে আবী তালিব রা.-এর একটি বক্তব্যে দুনিয়া-আখেরাতের স্বরূপ ও আমাদের করণীয় এভাবে বর্ণিত হয়েছে-
إِنَّ الدُّنْيَا قَدْ تَرَحَّلَتْ مُدْبِرَةً، وَإِنَّ الْآخِرَةَ مُقْبِلَةٌ وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا بَنُونَ، فَكُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الْآخِرَةِ، فَإِنَّ الْيَوْمَ عَمَلٌ وَلَا حِسَابَ، وَغَدًا حِسَابٌ وَلَا عَمَلَ.
দুনিয়া ফিরে যাচ্ছে আর আখেরাত এগিয়ে আসছে। আর এ দুটির প্রত্যেকটিরই আছে সন্তানাদি। তোমরা আখেরাতের সন্তান হও। কারণ আজ শুধু আমল, হিসাব নেই। আর আগামীকাল শুধু হিসাব, আমল নেই।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩৫৬৩৬
মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমলের ধারা বন্ধ হয়ে গেলেও জীবদ্দশায় নির্দিষ্ট কিছু আমল করে গেলে মৃত্যুর পরও সওয়াব জারি থাকে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ ” .
আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে সেটাই উদ্ধৃত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: যখন মানুষ মারা যায় তখন তার আমল স্থগিত হয়ে যায়; কেবল তিনটি আমল ছাড়া:
১- সদাকায়ে জারিয়া,
২- কিংবা এমন জ্ঞান যা থেকে মানুষ উপকৃত হয়,
৩- কিংবা এমন সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।
[সহিহ মুসলিম (১৬৩১)]
রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ মৃত্যুবরণ করার পর ৪টি আমলের সাওয়াব অব্যাহত থাকে :
১. যে ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দিল তার সাওয়াব,
২. ভাল কাজ চালু করার ফলে তাকে যারা অনুসরণ করল তার সাওয়াব,
৩. যে ব্যক্তি এমন সাদাকাহ করলো, যা প্রবাহমান থাকে তার সাওয়াব,
৪. এমন নেক সন্তান রেখে যাওয়া- যে তার জন্য দোয়া করে।’
(মুসনাদ আহমাদ, হাদিস নং : ২২২৪৭)
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন:
নিশ্চয় মুমিনের মৃত্যুর পর যে আমল ও যে নেকী তার কাছে পৌঁছে সেটা হলো— ১- এমন ইল্ম যা সে শিখিয়ে গেছে
২- কিংবা প্রচার করে গেছে,
৩- কোন নেক সন্তান রেখে গেছে,
৪- কোন মুসহাফ (কুরআনগ্রন্থ) রেখে গেছে
৫- কিংবা কোন মসজিদ বানিয়ে গেছে
৬- কিংবা মুসাফিরের জন্য কোন ঘর বানিয়ে গেছে
৭- কিংবা কোন নদী খনন করে গেছে
৮- কিংবা তার সুস্থতাকালে ও জীবদ্দশায় নিজের সম্পদ থেকে কোন সদকা করে গেছে তার মৃত্যুর পরেও যা তার কাছে পৌঁছে।
[সুনানে ইবনে মাজাহ (২৪২); মুনযিরি ‘আত্-তারগীব ওয়াত তারহীব’ গ্রন্থে (১/৭৮) বলেন: এর সনদ হাসান। আলবানী হাদিসটিকে ‘সহিহু সুনানে ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে ‘হাসান’ বলেছেন।]
সাদাকায়ে_জারিয়া হচ্ছে এমন একটি আমল;
যার প্রাপ্তি ততদিন থাকে; যতদিন ওই আমলের অস্তিত্ব থাকে এবং মানুষ সে আমল বা কাজ দ্বারা উপকার পেয়ে থাকে।
যেমন-
১. মসজিদ নির্মাণ।
২. মকতব-মাদরাসা প্রতিষ্ঠা।
৩. মুসহাফ (কুরআনগ্রন্থ) ছাপানো ও বিতরণ,
৪. দ্বীনী পাঠাগার প্রতিষ্ঠা ও দ্বীনী কিতাবের ব্যবস্থা করা।
৫. দ্বীনি বই ছাপানো ও বিতরণের মাধ্যমে ইল্মের প্রচার করা,
৬. ঈদগাহ বানানো।
৭. কবরস্থান করা।
৮. যে কোনো দ্বীনী কাজের জন্য জমি ওয়াফ্ক করা।
৯. এতীম ও অসহায় লোকদের বাসস্থান ও উপার্জনের ব্যবস্থা করা।
১০. রাস্তা ও পুল নির্মাণ করা।
১১. নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে বা অন্য কোন উপায়ে পানির ব্যবস্থা করা।
১২. ফলদার বৃক্ষ রোপণ করা।
১৩. হাসপাতাল তৈরি করে ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
১৪. সরাইখানা তৈরি করা।
১৫. সীমান্ত পাহারা দেওয়া ইত্যাদি।
১৬. সাধারণ মানুষের উপকারী ইত্যাদি জনকল্যাণকর স্থাপনা নির্মাণ করা।
জারীর ইবনে আবদুল্লাহ আলবাজালী রা. থেকে বর্ণিত,
একবার কিছু বেদুঈন কম্বল পরিহিত অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এল। তিনি তাদের দুরবস্থা দেখলেন। তারা ভীষণ অভাবগ্রস্ত ছিল। উপস্থিত লোকদেরকে তিনি তাদের জন্য দান করার প্রতি উৎসাহিত করলেন। কিন্তু এ কাজে তারা কিছুটা দেরি করল। এতে নবীজীর চেহারায় অসন্তুষ্টির ছাপ ফুটে উঠল। কিছুক্ষণ পর এক আনসারী একটি রূপার থলি নিয়ে এল। কিছুক্ষণ পর আরেকজন এল। এভাবে একে একে সকলেই দান করলেন। তখন নবীজীর চেহারায় প্রসন্নতা ফুটে উঠল।
তিনি ইরশাদ করলেন-
مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً، فَعُمِلَ بِهَا بَعْدَهُ، كُتِبَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا، وَلَا يَنْقُصُ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ، وَمَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً، فَعُمِلَ بِهَا بَعْدَهُ، كُتِبَ عَلَيْهِ مِثْلُ وِزْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا، وَلَا يَنْقُصُ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْءٌ.
যে ইসলামে কোনো উত্তম নিয়ম চালু করে, যে অনুযায়ী পরবর্তীতে আমল করা হয়, তার জন্য আমলকারীদের অনুরূপ সওয়াব লেখা হবে। তাদের সওয়াব সামান্য পরিমাণও কমানো হবে না। আর যে ইসলামে কোনো মন্দ নিয়ম চালু করে, যে অনুযায়ী পরবর্তীতে আমল করা হয়, তার জন্য আমলকারীদের অনুরূপ গোনাহ লেখা হবে। তাদের গোনাহ কিছুমাত্রও কমানো হবে না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০১৭
একজন মুসলিমের জন্য বাঞ্ছনীয় হলো বিভিন্ন খাতে সদকা করা;
যাতে করে প্রত্যেক শ্রেণীর নেক আমলকারীদের সাথে তার একটি ভাগ থাকে।
- মুফতী মাসুম বিল্লাহ
Sharia Specialist, Islamic Economist, Banking & Finance Expert.
Khatib & Mufassir at Al Madina Jame Masjid at Eastern Housing, Pallabi Phase-2, Mirpur 11 ½.
Senior Muhaddis & Mufti at Jamia Islamia Darul Uloom Dhaka,Masjidul Akbar Complex, Mirpur-1,Dhaka-1216
Ustazul fiqh & Ifta at مركز البحوث الاسلامية داكا. Markajul Buhus Al Islamia Dhaka