
প্রশ্ন:
কুরবানী কার উপর কখন ওয়াজিব হয় ? জানিয়ে উপকৃত করবেন।
উত্তর: وبالله سبحانه التوفيق
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে অথচ সে কোরবানী করেনি সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়”[সুনানে ইবনে মাজাহ (৩১২৩), আলবানী ‘সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]
এখানে সামর্থ্য দ্বারা উদ্দেশ্য হল:
কুরবানীর দিনগুলো তথা ১০ যিলহজ সুবহে সাদিক হতে ১২ যিলহজের সূর্যাস্তের পূর্ব সময়ে
জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্ক মুকীম মুসলমান নারী-পুরুষের মালিকানায়
পরিশোধযোগ্য ঋণ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী (নিজের ও যাদের ব্যয়ভার ওয়াজিব তাদেরও অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-বাহন-সেবক-ড্রাইভার প্রভৃতির ব্যয়ভার) বাদে —
এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা-পয়সা, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সব আসবাবপত্র, পোশাক-আশাক, আসবাবপত্র, তৈজসপত্রও ধর্তব্য হবে। সে সম্পদের ওপর এক বছর অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়।
শুধু স্বর্ণ হলে ৭.৫ ভরি স্বর্ণ থাকলে
অথবা শুধু রুপা হলে ৫২.৫ ভরি রুপা থাকলে
অথবা শুধু ব্যবসায়িক সম্পদ বা বিক্রয়ের নিয়তে ক্রয়কৃত মাল ৫২.৫ ভরি রুপার মূল্য সমপরিমাণ থাকলে
অথবা প্রয়োজনাতিরিক্ত নগদ অর্থ-সম্পদ ৫২.৫ ভরি রুপার মূল্য সমপরিমাণ থাকলে
অথবা উপরোক্ত সবগুলো বা কয়েকটির সমষ্টি ৫২.৫ ভরি রুপার মূল্য সমপরিমাণ থাকলেই
তার উপর কুরবানীর দিনগুলোর ভিতরেই কুরবানী করা ওয়াজিব।
তথা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে শরিয়তের বিধান অনুসারে নির্দিষ্ট পশু জবাই করা।
একটি কোরবানি হলো :
একটি কমপক্ষে এক বছর বয়সী ছাগল,
বা একটি এক বছর বয়সীভেড়া বা একটি দুম্বা (তবে ৬ মাস বয়সী দেখতে একবছরের মত হৃষ্টপুষ্ট হলেও চলবে)
বা দুই বছর বয়সী গরু, মহিষ বা উটের সাত ভাগের এক ভাগ।
অর্থাৎ একটি গরু, মহিষ বা উট সাত শরিকে বা সাতজনের পক্ষ থেকে কোরবানি করা যাবে। والله تعالى أعلم
দেখুন:
১। আল্লাহ তাআলা বলেন: “কাজেই আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামায আদায় করুন এবং কুরবানী করুন”[সূরা কাউছার, আয়াত: ২]
২। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “বলুন, আমার সালাত, আমার নুসুক (কুরবানী), আমার জীবন ও আমার মরণ সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ্রই জন্য”[সূরা আনআম, আয়াত: ১৬২]
সাঈদ বিন যুবায়ের বলেন: নুসুক হচ্ছে- কুরবানী। কারো কারো মতে, নুসুক সকল ইবাদতকেই বুঝায়; এর মধ্যে কুরবানীও অন্তর্ভুক্ত। শেষোক্ত তাফসিরটি ব্যাপকতর।
৩। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর আমরা প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য ‘মানসাক’ এর নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণস্বরূপ যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেসবের উপর তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদেরর ইলাহ্ এক ইলাহ্, কাজেই তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ কর এবং সুসংবাদ দিন বিনীতদেরকে।”[সূরা হাজ্জ, আয়াত: ৩৪]
সুন্নাহ:
১। সহিহ বুখারী (৫৫৫৮) ও সহিহ মুসলিমে (১৯৬৬) আনাস বিন মালেক (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এসেছে- “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদাকালো রঙের দুইটি মেষ দিয়ে কোরবানী দিয়েছেন। তিনি মেষের পাঁজরের উপর পা রেখে বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বলে নিজ হাতে জবাই করেছেন।”
২। আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দশবছর মদিনাতে ছিলেন ও কোরবানী দিয়েছেন।”[মুসনাদে আহমাদ (৪৯৩৫), সুনানে তিরমিযি (১৫০৭), আলবানী ‘মিশকাতুল মাসাবীহ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]
৩। উকবা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদের মাঝে কুরবানীর পশু বিতরণ করছিলেন। উকবার ভাগে একটি জিযআ (ছয় মাস বয়সী ভেড়া) পড়ল। উকবা বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি একটি জিযআ পেয়েছি। তিনি বললেন: এটি দিয়ে কোরবানী কর।”[সহিহ বুখারী (৫৫৪৭)]
৪। বারা বিন আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি (ঈদের) নামাযের পর জবাই করল তার নুসুক (ইবাদত) পূর্ণ হয়েছে এবং সে মুসলমানদের আদর্শ অনুসরণ করল।”[সহিহ বুখারী (৫৫৪৫)]
لحديث النبيّ -صلّى الله عليه وسلّم- قال: (لا تَذْبَحُوا إلَّا مُسِنَّةً، إلَّا أنْ يَعْسُرَ علَيْكُم، فَتَذْبَحُوا جَذَعَةً مِنَ الضَّأْنِ)،[رواه مسلم، في صحيح مسلم، عن جابر بن عبدالله، الصفحة أو الرقم: 1963، صحيح.]
قال جابر بن عبدالله -رضي الله عنه-: (خَرَجْنَا مع رَسولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عليه وسلَّمَ مُهِلِّينَ بالحَجِّ: فأمَرَنَا رَسولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عليه وسلَّمَ أَنْ نَشْتَرِكَ في الإبِلِ وَالْبَقَرِ، كُلُّ سَبْعَةٍ مِنَّا في بَدَنَةٍ)،[رواه مسلم، في صحيح مسلم، عن جابر بن عبد الله، الصفحة أو الرقم: 1318، صحيح.]
وقد حصر النبيّ -صلّى الله عليه وسلّم- البقر الذي يُشرَع ذَبحه في المُسِنّة؛ فقال: (لا تَذْبَحُوا إلَّا مُسِنَّةً)؛[١٥] والمُسنّة من البقر هي التي أتمّت عامَين ودخلت في الثالثة،
فتجب التضحية على حر مسلم مقيم موسر (تنوير الأبصار مع الدر-9/452-453
الأضحية واجبة على كل حر مسلم مقيم موسر فى يوم الأضحى عن نفسه (الهداية-4/443
فی المحیط البرھانی :
ﻭﺷﺮﻁ ﻭﺟﻮﺑﻬﺎ اﻟﻴﺴﺎﺭ ﻋﻨﺪ ﺃﺻﺤﺎﺑﻨﺎ ﺭﺣﻤﻬﻢ اﻟﻠﻪ، ﻭاﻟﻤﻮﺳﺮ ﻓﻲ ﻇﺎﻫﺮ اﻟﺮﻭاﻳﺔ ﻣﻦ ﻟﻪ ﻣﺎﺋﺘﺎ ﺩﺭﻫﻢ، ﺃﻭ ﻋﺸﺮﻭﻥ ﺩﻳﻨﺎﺭا، ﺃﻭ ﺷﻲء ﻳﺒﻠﻎ ﺫﻟﻚ ﺳﻮﻯ ﻣﺴﻜﻨﻪ ﻭﻣﺘﺎﻉ ﻣﺴﻜﻨﻪ ﻭﻣﺘﺎﻋﻪ ﻭﻣﺮﻛﻮﺑﻪ ﻭﺧﺎﺩﻣﻪ ﻓﻲ ﺣﺎﺟﺘﻪ اﻟﺘﻲ ﻻ ﻳﺴﺘﻐﻨﻲ ﻋﻨﻬﺎ، ﻓﺄﻣﺎ ﻣﺎ ﻋﺪا ﺫﻟﻚ ﻣﻦ ﻣﺘﺎﻋﻪ ﺃﻭ ﺭﻗﻴﻘﻪ ﺃﻭ … ﺃﻭ ﻣﺘﺎﻉ….. ﺃﻭ ﻟﻐﻴﺮﻫﺎ ﻓﺈﻧﻬﺎ…. ﻓﻲ ﺩاﺭﻩ.
ﻭﻓﻲ «اﻷﺟﻨﺎﺱ» ﺇﻥ ﺟﺎء ﻳﻮﻡ اﻷﺿﺤﻰ ﻭﻟﻪ ﻣﺎﺋﺘﺎ ﺩﺭﻫﻢ ﺃﻭ ﺃﻛﺜﺮ ﻭﻻ ﻣﺎﻝ ﻏﻴﺮﻩ ﻓﻬﻠﻚ ﺫﻟﻚ ﻟﻢ ﺗﺠﺐ ﻋﻠﻴﻪ اﻷﺿﺤﻴﺔ، ﻭﻛﺬﻟﻚ ﻟﻮ ﻧﻘﺺ ﻋﻦ اﻟﻤﺎﺋﺘﻴﻦ، ﻭﻟﻮ ﺟﺎء ﻳﻮﻡ اﻷﺿﺤﻰ ﻭﻻ ﻣﺎﻝ ﻟﻪ ﺛﻢ اﺳﺘﻔﺎﺩ ﻣﺎﺋﺘﻲ ﺩﺭﻫﻢ ﻓﻌﻠﻴﻪ اﻷﺿﺤﻴﺔ۔۔۔۔۔۔۔
ﻭﻓﻲ «اﻷﺟﻨﺎﺱ» : ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﻋﻨﺪﻩ ﺣﻨﻄﺔ ﻗﻴﻤﺘﻬﺎ ﻣﺎﺋﺘﺎ ﺩﺭﻫﻢ ﻳﺘﺠﺮ ﺑﻬﺎ، ﺃﻭ ﻣﻠﺢ ﻗﻴﻤﺘﻬﺎ ﻣﺎﺋﺘﺎ ﺩﺭﻫﻢ، ﺃﻭ ﻗﺼﺎﺭ ﻋﻨﺪﻩ ﺻﺎﺑﻮﺕ ﺃﻭ ﺃﺷﻨﺎﻥ ﻗﻴﻤﺘﻬﺎ ﻣﺎﺋﺘﺎ ﺩﺭﻫﻢ ﻓﻌﻠﻴﻪ اﻷﺿﺤﻴﺔ۔
( ج 6 ، ص 86 ، ط: دارالکتب العلمیة )
(وَأَمَّا) (شَرَائِطُ الْوُجُوبِ) : مِنْهَا الْيَسَارُ وَهُوَ مَا يَتَعَلَّقُ بِهِ وُجُوبِ صَدَقَةِ الْفِطْرِ دُونَ مَا يَتَعَلَّقُ بِهِ وُجُوبُ الزَّكَاةِ،………. وَالْمُوسِرُ فِي ظَاهِرِ الرِّوَايَةِ مَنْ لَهُ مِائَتَا دِرْهَمٍ أَوْ عِشْرُونَ دِينَارًا أَوْ شَيْءٌ يَبْلُغُ ذَلِكَ سِوَى مَسْكَنِهِ وَمَتَاعِ مَسْكَنِهِ وَمَرْكُوبِهِ وَخَادِمِهِ فِي حَاجَتِهِ الَّتِي لَا يَسْتَغْنِي عَنْهَا، فَأَمَّا مَا عَدَا ذَلِكَ مِنْ سَائِمَةٍ أَوْ رَقِيقٍ أَوْ خَيْلٍ أَوْ مَتَاعٍ لِتِجَارَةِ أَوْ غَيْرِهَا فَإِنَّهُ يُعْتَدُّ بِهِ مِنْ يَسَارِهِ،(الفتاوى الهندية، كتاب الأضحية، فصل شرائط الوجوب-5/292)
ولو لأحدهم أقل من سبع لا يجز عن أحد (الدر المختار مع رد المحتار-9/457)
واذا كان الشركاء فى البدنة أو البقرة ثمانية لا يجزئهم، لأن نصيب أحدهم أقل من السبع (الفتاوى التاتارخانية، كتاب الأضحية، الفصل الثامن فيما يتعلق بالشركة فى الضحايحا-17/453، رقم-2780
وراجع : الفتاوى الخانية ٣/٣٤٤، بدائع الصنائع ٤/١٩٤، الدر المختار و رد المحتار، كتاب الاضحية-9/452-453، مجمع الانهر-4/167، المجموع شرح المهذب، بيروت: دار الفكر، صفحة 392، جزء 8. بتصرّف.، ،
উত্তর প্রদান
মুফতী মাসুম বিল্লাহ
Sharia Specialist, Islamic Economist, Banking & Finance Expert.
Khatib & Mufassir at Al Madina Jame Masjid at Eastern Housing, Pallabi Phase-2, Mirpur 11 ½.
Senior Muhaddis & Mufti at Jamia Islamia Darul Uloom Dhaka,Masjidul Akbar Complex, Mirpur-1,Dhaka-1216
Ustazul fiqh & Ifta at مركز البحوث الاسلامية داكا. Markajul Buhus Al Islamia Dhaka