1.নিয়ত খালিছ, পরিশুদ্ধ হতে হবে
১। আল্লাহ তাআলা বলেন: “কাজেই আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামায আদায় করুন এবং কুরবানী করুন”[সূরা কাউছার, আয়াত: ২]
২। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “বলুন, আমার সালাত, আমার নুসুক (কুরবানী), আমার জীবন ও আমার মরণ সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ্রই জন্য”[সূরা আনআম, আয়াত: ১৬২]
সাঈদ বিন যুবায়ের বলেন: নুসুক হচ্ছে- কুরবানী। কারো কারো মতে, নুসুক সকল ইবাদতকেই বুঝায়; এর মধ্যে কুরবানীও অন্তর্ভুক্ত। শেষোক্ত তাফসিরটি ব্যাপকতর।
৩। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর আমরা প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য ‘মানসাক’ এর নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণস্বরূপ যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেসবের উপর তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদেরর ইলাহ্ এক ইলাহ্, কাজেই তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ কর এবং সুসংবাদ দিন বিনীতদেরকে।”[সূরা হাজ্জ, আয়াত: ৩৪]
৪। আল্লাহ তাআলা বলেন –
قال تعالى لن ينال الله لحومها ولا دماؤها ولكن يناله التقوى منكم..(الحج ٣٧)
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা বলেন- তোমাদের কোরবানির মাংস বা রক্ত কোন কিছুই আমার কাছে পৌছে না। কিন্তু পৌছে শুধু তোমাদের তাক্ওয়া।( সূরা হজ্জ আয়াত নং ৩৭)
৫। আল্লহ তাআলা আরো বলেন-
ۖ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ
অবশ্যই আল্লাহ্ মুত্তাকীদের কুরবানী কবূল করেন।’সূরা মায়িদা, ২৭।
* শরীকদের একজনের নিয়ত খারাপ হলে সবার নষ্ট হবে।
যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯
• হালাল মাল হতে হবে
* শরীকদের একজনের মাল হারাম হলে সবার নষ্ট হবে, কারো কুরবানী সহীহ হবে না।
⁃ স্মর্তব্য—
⁃ যে পশুটি কুরবানি করা হবে তার উপর কুরবানি দাতার পূর্ণ মালিকানা সত্ত্ব থাকতে হবে।
⁃ বৈধ পদ্ধতিতে ক্রয় কৃত হতে হবে।
⁃ বন্ধকি পশু, কর্জ করা পশু বা পথে পাওয়া পশু দ্বারা কুরবানি আদায় হবে না।
•পশু কেমন হতে হবে?
1. নির্ধারিত পশু
এমন পশু দ্বারা কুরবানি দিতে হবে যা শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেগুলো হল উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা।
এ গুলোকে কুরআনের ভাষায় বলা হয় ‘বাহীমাতুল আন‘আম।’
যেমন, আল্লাহ বলেন:—
﴿ وَلِكُلِّ أُمَّةٖ جَعَلۡنَا مَنسَكٗا لِّيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلۡأَنۡعَٰمِۗ ٣٤ ﴾ [الحج : ٣٤]
‘আমরা প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানির নিয়ম করে দিয়েছি; তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলোর উপর যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ছাড়া অন্য কোনো জন্তু কুরবানি করেননি ও কুরবানি করতেও বলেননি। তাই কুরবানি শুধু এগুলো দিয়েই করতে হবে।
• এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫
• যেসব পশু কুরবানী করা জায়েয সেগুলোর নর-মাদা দুটোই কুরবানী করা যায়। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫
•গুণগত দিক দিয়ে উত্তম হল –
1. কুরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট,
কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম।-মুসনাদে আহমদ ৬/১৩৬, আলমগীরী ৫/৩০০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩
2. অধিক গোশত সম্পন্ন,
3. নিখুঁত,
4. দেখতে সুন্দর হওয়া।
•কুরবানীর পশুর সর্বোত্তম রঙ
কালো রঙ অপেক্ষা সাদা বেশি হালকা কালো মিশ্রিত রঙের পশু কুরবানী উত্তম।
কারণ রাসূলে কারীম (সা.) এ ধরনের দুম্বা কুরবানী করেছেন বলে সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে।
তাছাড়াও মহানবী (সা.) বলেন,
‘কালো রঙের দু‘টি কুরবানী অপেক্ষা ধূসর রঙের একটি কুরবানী আল্লাহর নিকট অধিকতর পছন্দনীয়।’
(আহমাদ, হাকিম, সিলসিলাহ সহীহাহ, হাদীস নং ১৮৬১)
•পশুর বয়স
শরিয়তের দৃষ্টিতে কুরবানির পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরি। উট পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ দু বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা হতে হবে এক বছর বয়সের।
• যদি বিক্রেতা কুরবানীর পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে স্বীকার করে আর পশুর শরীরের অবস্থা দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার উপর নির্ভর করে পশু কেনা এবং তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে। -আহকামে ঈদুল আযহা, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ. ৫
#কুরবানীর_পশুর_দাঁত_ধর্তব্য_নাকি_বয়স?
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
لَا تَذْبَحُوا إِلَّا مُسِنَّةً، إِلَّا أَنْ يَعْسُرَ عَلَيْكُمْ، فَتَذْبَحُوا جَذَعَةً مِنَ الضَّأْنِ.
তোমরা (কুরবানীতে ) ‘মুসিন্না’ ছাড়া যবেহ করবে না। তবে সংকটের সময় ছ’মাস বয়সী ভেড়া দুম্বা যবেহ করতে পারবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৬৩
হাদীস শরীফে যে ‘মুসিন্না’ পশু যবেহ করতে বলা হয়েছে, গরু মহিষের ক্ষেত্রে মুসিন্না হল যার বয়স দু’বছর পূর্ণ হয়ে তৃতীয় বৎসরে পড়েছে।
কেউ কেউ বলছে,
পশুর দাঁত ধর্তব্য। তার স্বপক্ষে হাদীছের শব্দ مسنة এর যে ব্যাখ্যা দিচ্ছে ;
এটা জুমহূর ফুকাহাদের সর্বসম্মত মতের বিপরীত ব্যাখ্যা।
তাদের সর্বজন স্বীকৃত ব্যাখ্যা “বয়স” ধর্তব্য।
যেমন,
গরু কুরবানীর উপযুক্ত হওয়ার জন্য দুই বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি। বিশেষ দাঁত উঠা জরুরি নয়।
তবে যেহেতু বিশেষ দুটি দাঁত দুই বছর বয়স পূর্ণ হলেই উঠে থাকে তাই সাধারণত দুই দাঁত উঠাকে দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আলামত মনে করা হয়। এ কারণেই মানুষ কুরবানীর পশু কিনতে গেলে তা পরীক্ষা করে। এতে আপত্তির কিছু নেই।
তবে যদি কোনো গরুর ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, দুই বছর পূর্ণ হলেও এখনও বিশেষ দুটি দাঁত উঠেনি তাহলে সেই গরু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে।
অতএব, কুরবানীর পশুর ক্ষেত্রে বয়স অত্যন্ত জরুরি। কোন পশুর বয়স পূর্ণ না হলে কুরবানীর সহীহ হবে না।
• উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে।
• গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে।
• আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে।
• তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।
উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫-২০৬ ।
•নিখুঁত ও ত্রুটি মুক্ত হতে হবে–
কুরবানির পশু নিখুঁত ও যাবতীয় দোষ-ত্রুটি মুক্ত হতে হবে।
যেমন হাদিসে এসেছে:—
عن البراء بن عازب- رضى الله عنه- قال: قام فينا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: «أربع لا تجوز في الأضاحي،- وفي رواية: تجزىء – العوراء البين عورها، والمريضة البين مرضها، والعرجاء البين ضلعها، والكسيرة التي لا تنقى ».
رواه الترمذي وفي رواية النسائي] ذكر [العجفاء] بدل [الكسيرة] وصححه الألباني في صحيح سنن النسائي
সাহাবি আল-বারা ইবনে আযেব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন তারপর বললেন: চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কুরবানি জায়েয হবে না। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে পরিপূর্ণ হবে না—
1. অন্ধ; যার অন্ধত্ব স্পষ্ট,
2. রোগাক্রান্ত; যার রোগ স্পষ্ট,
3. পঙ্গু; যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট
4. এবং আহত; যার কোনো অঙ্গ ভেঙ্গে গেছে। নাসায়ির বর্ণনায় ‘আহত’ শব্দের স্থলে ‘পাগল’ উল্লেখ আছে।[9]
• বিস্তারিত হল—
১- যে পশু কেবল তিন পায়ে চলে,এক পা মাটিতে রাখতেই পারে না ; সে পশু দিয়ে কুরবানি করা যাবে না। —বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪
২- যে পশু এত বেশি দুর্বল যে, জবাই করার স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না। সে পশু দিয়ে কুরবানি করা নাজায়েজ। —বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪
৩- যে পশুর সব দাঁত পড়ে গেছে কিংবা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, দাঁত পড়ে যাওয়ার কারণে ঘাস বা খাদ্য চিবিয়ে খেতে পারে না,এমন পশু দিয়ে কুরবানি করলে সহিহ হবে না।তবে যদি ঘাস বা খাদ্য চিবিয়ে খেতে পারে, তাহলে কুরবানি করা বৈধ হবে।
—হিন্দিয়্যাহ ৫/২৯৮
৪- যে পশুর শিং গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে। যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে পশু দিয়ে কুরবানি করা যাবে না। তবে যদি শুধু শিংয়ের উপরিভাগ ভেঙ্গে যায় অথবা জন্মগতভাবেই শিং না উঠে, তাহলে কুরবানি করা বৈধ। —রাদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪
৫- যদি কোনো পশুর কানের এক-তৃতীয়াংশ থেকে বেশি কাটা হয়, তাহলে সে পশু দিয়ে কুরবানি করা নাজায়েজ। কিন্তু যদি কানের এক-তৃতীয়াংশ বা এক-তৃতীয়াংশের কম কাটা হয়, তাহলে সে পশু দিয়ে কুরবানি করা বৈধ। মাবসুত ১২/১৫,
৬. যদি কোনো পশুর একটি চোখের এক-তৃতীয়াংশ বা এক-তৃতীয়াংশের কম দৃষ্টিশক্তি চলে যায়, তাহলে সে পশু দিয়ে কুরবানি করা বৈধ হবে। তবে যদি এক-তৃতীয়াংশের বেশি দৃষ্টিশক্তি চলে যায় তাহলে কুরবানি করা বৈধ হবে না।—রাদ্দুল মুহতার ৯/৪৬৮
৭. যদি কোনো পশুর লেজের এক-তৃতীয়াংশ থেকে বেশি কাটা হয়, তাহলে সে পশু দিয়ে কুরবানি করা যাবে না। কিন্তু যদি লেজের এক-তৃতীয়াংশ বা এক-তৃতীয়াংশের কম কাটা হয়, তাহলে সে পশু দিয়ে কুরবানি করা বৈধ।—হিন্দিয়্যাহ ৫/২৯৭
৮- পশু কুরবানি করার সময় দস্তাদস্তি করার কারণে কোনো দোষ ত্রুটি সৃষ্টি হলে, সে পশু দিয়ে কুরবানি করা বৈধ। —আল মুহিতুল বুরহানি ৭/৪৬৭
( যদিও আমাদের দেশে এটাকে অনেকে নাজায়েজ মনে করে।)
তেমনিভাবে খাসিকৃত পশুর কুরবানি বৈধ এবং হিজড়া পশুর কুরবানিও বৈধ। শামি ৯/৪৬৭,হিন্দিয়্যাহ ৫/২৯৯
পাগল পশু দিয়ে কুরবানি করা বৈধ। তবে যদি এমন পাগল হয় যে, ঘাস-পানি দিলে খায় না এবং মাঠেও চরে না, তাহলে কুরবানি সহিহ হবে না।
—বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬
উল্লেখ্য, বন্ধ্যা পশু দিয়ে কুরবানি করা বৈধ।
—রাদ্দুল মুহতার ৯/৪৭০
•যে সব পশু কুরবানী করা মাকরূহ–
আবার পশুর এমন কতগুলো ত্রুটি আছে যা থাকলে কুরবানি আদায় সহীহ হয় কিন্তু মাকরূহ হবে। এ সকল দোষত্রুটি যুক্ত পশু কুরবানি না করা ভাল।
সে ত্রুটিগুলো হল শিং ভাঙ্গা, কান কাটা, লেজ কাটা, ওলান কাটা, লিঙ্গ কাটা ইত্যাদি।
•শরীকানা বা ভাগে কুরবানী–
উট ও গরু-মহিষে সাত ভাগে কুরবানি দেয়া যায়। যেমন হাদিসে এসেছে—
এক : সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে :
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: نَحَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْحُدَيْبِيَةِ الْبَدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ، وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ.
‘জাবির বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা হুদাইবিয়ার বছর রাসুলুল্লাহ সা.-এর সাথে উট কুরবানি করেছি সাতজনের পক্ষ থেকে, অনুরূপ গরু কুরবানি করেছি সাতজনের পক্ষ থেকে।’ (সহিহু মুসলিম : ২/৯৫৫, হা. নং ১৩১৮)
দুই : সুনানু আবি দাউদে বর্ণিত হয়েছে :
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ، وَالْجَزُورُ عَنْ سَبْعَةٍ.
‘জাবির বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবি কারিম সা. ইরশাদ করেছেন, গরু সাতজনের পক্ষ থেকে এবং উট সাতজনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট।’ (সুনানু আবি দাউদ : ৩/৯৮, হা. নং ২৮০৮)
তিন : মুসনাদু ইবনি জাদে বর্ণিত হয়েছে :
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نَشْتَرِكَ فِي الْإِبِلِ وَالْبَقَرِ، كُلُّ سَبْعَةٍ مِنَّا فِي بُدْنَةٍ.
‘জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদেরকে রাসুলুল্লাহ সা. আদেশ দিয়েছেন, যেন আমরা প্রত্যেক সাতজনে একটি করে গরু ও উটে শরিক হই। (মুসনাদু ইবনিল জাদ : পৃ. নং ৩৮৪, হা. নং ২৬২৮)
চার : সুনানুত তিরমিজিতে বর্ণিত হয়েছে :
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: نَحَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالحُدَيْبِيَةِ البَدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ، وَالبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ.
هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وَالعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ أَهْلِ العِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَغَيْرِهِمْ، وَهُوَ قَوْلُ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ، وَابْنِ الْمُبَارَكِ، وَالشَّافِعِيِّ، وَأَحْمَدَ، وَإِسْحَاقَ وقَالَ إِسْحَاقُ: يُجْزِئُ أَيْضًا البَعِيرُ عَنْ عَشَرَةٍ وَاحْتَجَّ بِحَدِيثِ ابْنِ عَبَّاسٍ
‘জাবির বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা হুদাইবিয়ার বছর রাসুলুল্লাহ সা.-এর সাথে উট কুরবানি করেছি সাতজনের পক্ষ থেকে এবং গরু কুরবানি করেছি সাতজনের পক্ষ থেকে।’
ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, এটা হাসান সহিহ হাদিস। নবি কারিম সা.-এর বিজ্ঞ সাহাবা ও অন্যন্য ফুকাহায়ে কিরাম এ হাদিস অনুযায়ী আমল করেন। আর এটাই ইমাম সুফইয়ান সাওরি রহ., ইমাম ইবনে মুবারক রহ., ইমাম শাফিয়ি রহ., ইমাম আহমাদ রহ. ও ইমাম ইসহাক রহ.-এর মত। ইসহাক রহ. বলেন, উট দশজনের পক্ষ থেকেও যথেষ্ট হবে এবং তিনি ইবনে আব্বাস রা.-এর হাদিস দ্বারা প্রমাণ দেন। (সুনানুত তিরমিজি : ৩/১৩১, হা. নং ১৫০২)
এসব হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, গরু বা উটে সাতজন ব্যক্তি শরিক হতে পারবে।
• একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কুরবানী দিতে পারবে। এমন একটি পশু কয়েকজন মিলে কুরবানী করলে কারোটাই সহীহ হবে না। আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হতে পারবে। সাতের অধিক শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৯, কাযীখান ৩/৩৪৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭-২০৮
• সাতজনে মিলে কুরবানী করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭
• উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কুরবানী করা জায়েয। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭
• কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও আকীকা দুটোই সহীহ হবে।-তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬২
• শরীকদের কারো পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না।
• যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কুরবানী দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরীক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কুরবানী করাই শ্রেয়। শরীক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়, যার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, তাহলে সে অন্যকে শরীক করতে পারবে না। এমন গরীব ব্যক্তি যদি কাউকে শরীক করতে চায় তাহলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে নিবে।-কাযীখান ৩/৩৫০-৩৫১, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০
• কয়েকজন মিলে কুরবানী করার ক্ষেত্রে জবাইয়ের আগে কোনো শরীকের মৃত্যু হলে তার ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করার অনুমতি দেয় তবে তা জায়েয হবে। নতুবা ওই শরীকের টাকা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য তার স্থলে অন্যকে শরীক করা যাবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫১
• কুরবানীর সময়
কুরবানি নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সম্পর্কিত একটি ইবাদত। এ সময়ের পূর্বে যেমন কুরবানি আদায় হবে না তেমনি পরে করলেও আদায় হবে না।
যারা ঈদের সালাত আদায় করবেন তাদের জন্য কুরবানির সময় শুরু হবে ঈদের সালাত আদায় করার পর থেকে।
যদি ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে কুরবানির পশু যবেহ করা হয় তাহলে কুরবানি আদায় হবে না।
যেমন হাদিসে এসেছে—
عن البراء بن عازب -رضى الله عنه- قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يخطب فقال: «إن أول ما نبدأ به من يومنا هذا، أن نصلى ثم نرجع فننحر، فمن فعل هذا فقد أصاب سنتنا، ومن نحر قبل أن يصلي فإنما هو لحم قدمه لأهله، ليس من النسك في شيء ». [رواه البخاري]
আল-বারা ইবনে আযেব রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবাতে বলেছেন: এ দিনটি আমরা শুরু করব সালাত দিয়ে। অতঃপর সালাত থেকে ফিরে আমরা কুরবানি করব। যে এমন আমল করবে সে আমাদের আদর্শ সঠিকভাবে অনুসরণ করল। আর যে এর পূর্বে যবেহ করল সে তার পরিবারবর্গের জন্য গোশতের ব্যবস্থা করল। কুরবানির কিছু আদায় হল না।সহীহ বুখারী।
عن جندب بن سفيان قال: شهدت النبي صلى الله عليه وسلم يوم النحر قال: «من ذبح قبل أن يصلي فليعد مكانها أخرى، ومن لم يذبح فليذبح.» [رواه البخاري]
জুনদুব ইবনে সুফিয়ান বলেন, আমি কুরবানির দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি নামাজের পূর্বে যবেহ করেছে সে যেন আবার অন্য স্থানে যবেহ করে। আর যে যবেহ করেনি সে যেন যবেহ করে। সহীহ বুখারী।
আর কুরবানির সময় শেষ হবে যিলহজ মাসের বারো তারিখের সূর্যাস্তের সাথে সাথে।
অতএব কুরবানির পশু যবেহ করার সময় হল ৩ দিন। যিলহজ মাসের দশ, এগারো, বার।
• মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়। যিলহজ্বের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে সম্ভব হলে যিলহজ্বের ১০ তারিখেই কুরবানী করা উত্তম। -মুয়াত্তা মালেক ১৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫
• যেসব এলাকার লোকদের উপর জুমা ও ঈদের নামায ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের নামাযের আগে কুরবানী করা জায়েয নয়। অবশ্য বৃষ্টিবাদল বা অন্য কোনো ওজরে যদি প্রথম দিন ঈদের নামায না হয় তাহলে ঈদের নামাযের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম দিনেও কুরবানী করা জায়েয।-সহীহ বুখারী ২/৮৩২, কাযীখান ৩/৩৪৪, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮
• ১০. ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতেও কুরবানী করা জায়েয। তবে দিনে কুরবানী করাই ভালো। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৪৯২৭; মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/২২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, কাযীখান ৩/৩৪৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩
• কুরবানীদাতা এক স্থানে আর কুরবানীর পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কুরবানীদাতার ঈদের নামায পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮।
• কুরবানীর দিনগুলোতে যদি জবাই করতে না পারে তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে। তবে যদি (সময়ের পরে) জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য হ্রাস পেল তা-ও সদকা করতে হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০-৩২১
•খুতবার পর কুরবানী করা
সালাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে কুরবানি পশু যবেহ না করে সালাতের খুতবা দুটি শেষ হওয়ার পর যবেহ করা ভাল।
কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রকম করেছেন। হাদিসে এসেছে—
قال جندب بن سفيان البجلي -رضى الله عنه-: صلى النبى صلى الله عليه وسلم يوم النحر، ثم خطب ثم ذبح … ]رواه البخاري [
সাহাবি জুনদাব ইবনে সুফিয়ান আল-বাজালী রা. বলেছেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানির দিন সালাত আদায় করলেন অতঃপর খুতবা দিলেন তারপর পশু যবেহ করলেন।সহীহ বুখারী।
আল্লাহ তাআ’লা আমাদের সবাইকে আমলগুলো সঠিকভাবে করার তৌফিক দান করেন।আমিন।
Sharia Specialist, Islamic Economist, Banking & Finance Expert.
Khatib & Mufassir at Al Madina Jame Masjid at Eastern Housing, Pallabi Phase-2, Mirpur 11 ½.
Senior Muhaddis & Mufti at Jamia Islamia Darul Uloom Dhaka,Masjidul Akbar Complex, Mirpur-1,Dhaka-1216
Ustazul fiqh & Ifta at مركز البحوث الاسلامية داكا. Markajul Buhus Al Islamia Dhaka