জমি বন্ধক দেওয়ার যে পদ্ধতিটি প্রচলিত, তা কি জায়েজ ? এই জমি চাষাবাদ কি জায়েজ?

By | February 22, 2021

জমি বন্ধক দেওয়ার প্রচলিত পদ্ধতিটি কি জায়েজ ? বিকল্প পদ্ধতি আছে কি?

www.askmasail.com

 # আমার এক বিঘা জমি টাকার প্রয়োজনে আমার ছোট ভাইয়ের কাছে ১লাখ টাকার বিনিময়ে বন্দক রাখলাম এই শর্তে যে, প্রতি মাসে জমির ভারা বাবদ ৫০/১০০ টাকা করে  বাদ দিবে ।
আর ঐ ১লাখ টাকা অগ্রিম তার কাছ থেকে নিব।এখন ১বছর পরে জমির ভারা বাবদ ১২ শত টাকা বাদ দিয়ে  ৯৮হাজার ৮শত টাকা  ফেরৎ দিব।
১। এই লেনদেন কি সহীহ হবে?
২। লেনদেনের সময় ভারার টাকা এবং সময়  কি উল্লেখ থাকতে হবে?

 রুহুল আমিন

উত্তর: وبالله سبحانه التوفيق

শরিয়তের পরিভাষায় “বন্ধক” বা ‘রাহন’ হলো কোনো দাবির বিপরীতে কোনো বস্তুকে এমনভাবে আটক রাখা, যাতে আটককৃত বস্তু দিয়ে দাবি বা অধিকার বা পাওনা আদায় সম্ভব হয়। যেমন- ঋণ।

বন্ধকের সংজ্ঞা বর্ণনা করতে যেয়ে আল্লামা তুমুরতাশী রহ. ও হাসকাফী রহ. বলেনঃ

(هُوَ) لُغَةً: حَبْسُ الشَّيْءِ. وَشَرْعًا (حَبْسُ شَيْءٍ مَالِيٍّ) أَيْ جَعْلُهُ مَحْبُوسًا لِأَنَّ الْحَابِسَ هُوَ الْمُرْتَهِن(ُبِحَقٍّ يُمْكِنُ اسْتِيفَاؤُهُ)

রাহন (বন্ধক) এর শাব্দিক অর্থ: কোনো কিছুকে বন্দী বা আটক করে রাখা। পারিভাষায়: রাহন বলা হয়, কোনো মাল জাতীয় জিনিষকে বন্দী বা আটক করে রাখা এমন হক্ব বা অধিকার বা পাওনার পরিবর্তে; যা উসূল করা সম্ভবপর হয়।(আদ-দুররুল মুখতার-৬/৪৭৭)

বন্ধক পদ্ধতি বৈধ তবে এক্ষেত্রে শরয়ী নীতিমালাকে মানতে হবে।

সুতরাং শরীয়তের গণ্ডির ভিতর থেকে বন্ধক দিতে বা নিতে হবে।

বন্ধক পদ্ধতির বৈধতা কোরআন-হাদীস-ইজমা দ্বারা প্রমাণিত।

বন্ধক পদ্ধতির বৈধতা সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা নিজেই বলেনঃ

ﻭَﺇِﻥكُنْتُمْْ ﻋَﻠَﻰ ﺳَﻔَﺮٍ ﻭَﻟَﻢْ ﺗَﺠِﺪُﻭﺍْ ﻛَﺎﺗِﺒًﺎ ﻓَﺮِﻫَﺎﻥٌ ﻣَّﻘْﺒُﻮﺿَﺔٌ ﻓَﺈِﻥْ ﺃَﻣِﻦَ ﺑَﻌْﻀُﻜُﻢ ﺑَﻌْﻀًﺎ ﻓَﻠْﻴُﺆَﺩِّ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺍﺅْﺗُﻤِﻦَ ﺃَﻣَﺎﻧَﺘَﻪُ ﻭَﻟْﻴَﺘَّﻖِ ﺍﻟﻠّﻪَ ﺭَﺑَّﻪُ ﻭَﻻَ ﺗَﻜْﺘُﻤُﻮﺍْ ﺍﻟﺸَّﻬَﺎﺩَﺓَ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﻜْﺘُﻤْﻬَﺎ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺁﺛِﻢٌ ﻗَﻠْﺒُﻪُ ﻭَﺍﻟﻠّﻪُ ﺑِﻤَﺎ ﺗَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ ﻋَﻠِﻴﻢٌ

আর তোমরা যদি সফরে থাক এবং কোন লেখক না পাও, তবে (ঋণের পরিবর্তে) বন্ধকী বন্তু হস্তগত করে রাখা উচিত। যদি একে অন্যকে বিশ্বাস করে, তবে যাকে বিশ্বাস করা হয়, তার উচিত অন্যের প্রাপ্য পরিশোধ করা এবং স্বীয় পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করা।তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না। যে কেউ তা গোপন করবে, তার অন্তর পাপপূর্ণ হবে। তোমরা যা করা, আল্লাহ সে সম্পর্কে খুব জ্ঞাত। (সূরা বাক্বারা-২৮৩)

বন্ধকের বৈধতা সম্পর্কে এক হাদীসে এসেছে, নবীজী সাঃ নিজেও বন্ধক সুবিধা গ্রহণ করেছেন।

হযরত আয়েশা রাযি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ

ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻗﺎﻟﺖ ﺍﺷﺘﺮﻯ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﻦ ﻳﻬﻮﺩﻱ ﻃﻌﺎﻣﺎ ﺑﻨﺴﻴﺌﺔ ﻓﺄﻋﻄﺎﻩ ﺩﺭﻋﺎ ﻟﻪ ﺭﻫﻨﺎ

ভাবার্থ: নবীজী সাঃ এক ইহুদির কাছ থেকে বাকীতে (নির্দিষ্ট সময়ে মূল্য পরিশোধের শর্তে) খাদ্য ক্রয় করেছেন, অতঃপর মূল্যর জামিন হিসাবে নিজ বর্মকে বন্ধক রেখেছেন। (সহীহ মুসলিম-১৬০৩)

ইমাম নাওয়াভী (রহ.) উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় বলেনঃ

 ﻭﻓﻴﻪ ﺟﻮﺍﺯ ﺍﻟﺮﻫﻦ ، ﻭﺟﻮﺍﺯ ﺭﻫﻦ ﺁﻟﺔ ﺍﻟﺤﺮﺏ ﻋﻨﺪ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺬﻣﺔ ، ﻭﺟﻮﺍﺯ ﺍﻟﺮﻫﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﻀﺮ ، ﻭﺑﻪ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ ﻭﻣﺎﻟﻚ ﻭﺃﺑﻮ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻭﺃﺣﻤﺪ ﻭﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﻛﺎﻓﺔ ﺇﻻ ﻣﺠﺎﻫﺪﺍ ﻭﺩﺍﻭﺩ ﻓﻘﺎﻻ : ﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﺇﻻ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻔﺮ 

ভাবার্থ- উক্ত হাদীস দ্বারা বন্ধকের বৈধতা প্রমাণিত হলো। এমনকি কাফিরের কাছে যুদ্ধাস্ত্র বন্ধক রাখারও বৈধতা প্রমাণিত হলো। শুধু তাই নয় বরং মুক্বিম অবস্থায়ও বন্ধক রাখার বৈধতা প্রমাণিত হলো। এটাই ইমাম শাফেয়ী রাহ,ইমাম আবু হানিফা রাহ,ও ইমাম মালিক রাহ,এবং ইমাম আহমদ রাহ,এর মাযহাব ও অভিমত। (আল-মিনহাজ,শরহে নাওয়াভী-পৃঃ২১৮)

ইবনে আবেদীন শামী রাহ, বন্ধক পদ্ধতির বৈধতা সম্পর্কে বলেনঃ

[ كِتَابُ الرَّهْنِ]  هُوَ مَشْرُوعٌ، لِقَوْلِهِ تَعَالَى – {فَرِهَانٌ مَقْبُوضَةٌ} [ البقرة: 283] – وَبِمَا رُوِيَ «أَنَّهُ – عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ – اشْتَرَى مِنْ يَهُودِيٍّ طَعَامًا وَرَهَنَهُ بِهِ دِرْعَهُ» وَانْعَقَدَ عَلَيْهِ الْإِجْمَاعُ.

ভাবার্থঃ-বন্ধক পদ্ধতি কোরআনে কারীমের সূরা বাকারার ২৮৩ নং আয়াত দ্বারা প্রমাণিত এবং নবীজী সাঃ কর্তৃক নিজ বর্মকে ইহুদীর কাছে খাদ্যের পরিবর্তে বন্ধক রাখা দ্বারাও প্রমাণিত হয়।সর্বোপরি বৈধতার উপর উলমায়ে কেরামদের ইজমা বা ঐক্যমতও রয়েছে। (রদ্দুল মুহতার-৬/৪৭৭)

* বুরহানুদ্দিন আল-মারগিনানি (রহ:) তার আল-হিদায়া কিতাবের ‘রাহন’ অধ্যায়ে বলেছেন,

“রাহন (বন্ধক) রাখা জায়েজ হওয়ার ব্যাপারে ইজমা রয়েছে। রাহন (বন্ধক) হচ্ছে নিজের পাওনা উসুল নিশ্চিত করার নিমিত্তে সম্পাদিত একটি চুক্তি।’

*বলা বাহুল্য, রাহন বা জমি বন্ধক প্রথায় জমির বেনিফিট-টা মূল ঋণের অতিরিক্ত। তাই তা সুদ।

ইসলামে ঋণ প্রদান করে ঋণ প্রদানের কারণে ঋণগ্রহীতা থেকে ঋণের অতিরিক্ত যে কোন কিছু গ্রহণ করা সুদ।

হাদীসে ইরশাদ হয়েছে- كل قرض جر نفعا فهو ربا “যেসব ঋণ ঋণ প্রদানের কারণে ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি থেকে কোন ধরনের উপকার বয়ে নিয়ে আসে সেটা সুদ হবে”-

[সূত্রঃ আল মাতালিবুল আলীয়া বি-যাওয়ায়িদি মাসানিদি ছামানিয়া, ৪/৩৮১, হাঃ ১৪৮৪;সুনান আল কুবরা,বাইহাক্বি ৫/৫৭৩ হাঃ১০৯৩৩;বাগিয়্যাতুল বাহেস আ’ন যাওয়ায়িদিল মুসনাদিল হারেস ১/৫০০০হাঃ৪৩৭, আল মুগনী আনিল হিফজি ওয়াল কিতাব পৃষ্টাঃ৮১; –

হাদিসটির সনদ যঈফ হলেও সকল ইমাম ও আহলুল ইলম গন এর মা’না বা ভাবার্থকে সহীহ বলেছেন এবং অনেক ইমামগন এর দ্বারা দলিল প্রদান করেছেন, এছাড়াও এ হাদিসের শাহেদও আছে যা এ হাদিসের সনদকে শক্তি শালী করে]

* উক্ত হাদীসে ‘উপকার, লাভ, মুনাফা ইত্যাদি ব্যাপক। চাই তা অর্থ দ্বারা হোক বা অন্য যে কোন উপায়ে অর্জিত হোক-সবই এর অন্তর্ভুক্ত। তদ্রুপ চাই তা চুক্তিতে শর্তযুক্ত হোক বা সামাজিক প্রথা ও রীতির ভিত্তিতে শর্তযুক্ত হোক-সবটাই উদ্দেশ্য।

উক্ত হাদীসে নিষিদ্ধ ‘উপকার, লাভ, মুনাফা হল করজদাতার জন্য। গ্রহীতার জন্য নয়। কারণ, করজ গ্রহিতা তো করজ দ্বারা উপকৃত হওয়ার জন্যই করজ গ্রহণ করেছে।

ইবনে সিরিন (রহ.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক লোক সাহাবি ইবনে মাসউদ (রা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করল, এক ব্যক্তি আমার কাছে একটি ঘোড়া বন্ধক রেখেছে, তা আমি আরোহণের কাজে ব্যবহার করেছি। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, তুমি আরোহণের মাধ্যমে এর থেকে যে উপকার লাভ করেছ তা সুদ হিসেবে গণ্য হবে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৫০৭১)

বিখ্যাত তাবেয়ি ইমাম কাজি শুরাইহ (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সুদ পান করা কিভাবে হয়ে থাকে? তিনি বলেন, বন্ধকগ্রহীতা বন্ধকি গাভির দুধ পান করা সুদ পানের অন্তর্ভুক্ত। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৫০৬৯)

আল-মারগিনানি (রহ:) তাঁর আল-হিদায়া কিতাবের ‘রাহন’ অধ্যায়ে আরো বলেছেন, ‘বন্ধক’ (রাহন) গ্রহীতা ব্যক্তির জন্য জায়েজ নেই বন্ধকের (রাহন) মাল দিয়ে উপকৃত হওয়া, সেবা নেয়া, বসবাস করা বা পরিধান করা কোনোটাই জায়েজ নয়। রাহন রাখা হয় শুধু নিজের পাওনা আদায় করার জন্য।

বন্ধককৃত বস্তু বন্ধকগ্রহীতার কাছে আমানতস্বরূপ। বন্ধকি জমি থেকে বন্ধকগ্রহীতার কোনো ফায়দা হাসিল করা নাজায়েজ ও হারাম। এমনকি বন্ধকদাতা এর অনুমতি দিলেও পারবে না। কারণ বন্ধকি জমি থেকে বন্ধকগ্রহীতা কোনো ধরনের ফায়দা উপভোগ করা সুদের অন্তর্ভুক্ত, যা হারাম। (বাদায়েউস সানায়ে : ৬/১৪৬)

এ সম্পর্কে আল্লামা হাসক্বফী রাহ, বলেন:

(لَا انْتِفَاعَ بِهِ مُطْلَقًا) لَا بِاسْتِخْدَامٍ، وَلَا سُكْنَى وَلَا لُبْسٍ وَلَا إجَارَةٍ وَلَا إعَارَةٍ، سَوَاءٌ كَانَ مِنْ مُرْتَهِنٍ أَوْ رَاهِنٍ (إلَّا بِإِذْنِ) كُلٍّ لِلْآخَرِ، وَقِيلَ لَا يَحِلُّ لِلْمُرْتَهِنِ لِأَنَّهُ رِبًا، وَقِيلَ إنْ شَرَطَهُ كَانَ رِبًا وَإِلَّا لَا.وَفِي الْأَشْبَاهِ وَالْجَوَاهِرِ: أَبَاحَ الرَّاهِنُ لِلْمُرْتَهِنِ أَكْلَ الثِّمَارِ أَوْ سُكْنَى الدَّارِ أَوْ لَبَنِ الشَّاةِ الْمَرْهُونَةِ فَأَكَلَهَا لَمْ يَضْمَنْ وَلَهُ مَنْعُهُ، ثُمَّ أَفَادَ فِي الْأَشْبَاهِ أَنَّهُ يُكْرَهُ لِلْمُرْتَهِنِ الِانْتِفَاعُ بِذَلِكَ،

বন্ধককৃত জমি দ্বারা কোনোভাবেই উপকৃত হওয়া যাবে না।না বন্ধককৃত জিনিষ থেকে কোনোপ্রকার খেদমত গ্রহণ করা যাবে,না তাকে বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করা যাবে,না পোষাক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে,এমনকি উক্ত জিনিষ কাউকে ভাড়া বা আরিয়ত (ফ্রি ব্যবহার অনুমিত) হিসেবেও দেওয়া যাবে না।বন্ধকদাতা বা বন্ধকগ্রহীতা কেউ-ই তা পারবে না।তবে বন্ধকদাতা ও বন্ধকগ্রহীতা একে অপরের অনুমতি সাপেক্ষে উপরোক্ত বন্ধককৃত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণ করতে পারবে।কেউ কেউ বলেন বন্ধকগ্রহীতা কখনো উক্ত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণ করতে পারবে না।কেননা তা সুদ হয়ে যাবে।আবার কেউ কেউ বলেন,বন্ধক চুক্তির সময় বন্ধককৃত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণের চুক্তি থাকলে সুদ হবে নতুবা সুদ হবে না।আল-আশবাহ ওয়াল জাওয়াহির নামক কিতাবে বর্ণিত আছে,যদি বন্ধকদাতা বন্ধকগ্রহীতার জন্য গাছের ফলমূল বা তাতে বসবাস বা বকরী হলে তা থেকে দুধ খাওয়ার অনুমতি দিয়ে থাকে, তাহলে বৈধ হবে। এবং যদি সে উক্ত সুবিধাদি গ্রহণ করে ফেলে তাহলে সে যামিন হবে না।তবে বন্ধকগ্রহীতা তাকে বাধা প্রদানও করতে পারবে।অতঃপর আশবাহ ওয়াল জাওয়াহির নামক কিতাবে উল্লেখ করা হয়,বন্ধকগ্রহীতার জন্য সাধারণত বন্ধককৃত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণ করা মাকরুহ। আদ-দুররুল মুখতার-( ৬/৪৮২-৮৩)

ইবনে আবেদীন “শামী” রাহ উক্ত ইবারত সমূহের বিস্তারিত ব্যখার এক পর্যায়ে বলেনঃ

 (قَوْلُهُ وَقِيلَ لَا يَحِلُّ لِلْمُرْتَهِنِ) قَالَ فِي الْمِنَحِ: وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ أَسْلَمَ السَّمَرْقَنْدِيِّ وَكَانَ مِنْ كِبَارِ عُلَمَاءِ سَمَرْقَنْدَ أَنَّهُ لَا يَحِلُّ لَهُ أَنْ يَنْتَفِعَ بِشَيْءٍ مِنْهُ بِوَجْهٍ مِنْ الْوُجُوهِ وَإِنْ أَذِنَ لَهُ الرَّاهِنُ، لِأَنَّهُ أَذِنَ لَهُ فِي الرِّبَا لِأَنَّهُ يَسْتَوْفِي دَيْنَهُ كَامِلًا فَتَبْقَى لَهُ الْمَنْفَعَةُ فَضْلًا فَيَكُونُ رِبًا، وَهَذَا أَمْرٌ عَظِيمٌ.

ভাবার্থ : মিনাহ কিতাবে বর্ণিত আছে, সমরক্বন্দ এলাকার একজন বিজ্ঞ হানাফী আলেম-“আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আসলাম আস-সামারক্বান্দী” থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ বন্ধকগ্রহীতার জন্য বন্ধককৃত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণ করা কোনো ভাবেই বৈধ হবে না।যদিও বন্ধকদাতা তাতে অনুমতি প্রদান করুক না কেন? কারণ প্রথমতঃ বন্ধকদাতা সুদের মধ্যে অনুমতি প্রদান করছে। দ্বিতীয়তঃ বন্ধকগ্রহীতা পরবর্তীতে তার পূর্ণ ঋণ-ই সে উসূল করবে; অথচ বন্ধককৃত জিনিষ থেকে সে ইতিপূর্বে ফায়দা গ্রহণ করেছে,সুতরাং ফায়দা গ্রহণটা অতিরিক্ত থেকে যাবে, আর এটাই সূদ,যা অনেক বড় গোনাহ। (রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২)

তবে শর্তসাপেক্ষে বন্ধককৃত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণের কিছু মতামতও তিনি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তিনি বন্ধককৃত জিনিষ থেকে ফায়দা গ্রহণের বৈধতা ও অবৈধতা সম্পর্কীয় উভয় মতামত পর্যালোচনা শেষে সিদ্ধান্তমূলক আলোচনা করে বলেনঃ

ﻗَﺎﻝَ ﻃ: ﻗُﻠْﺖُ ﻭَاﻟْﻐَﺎﻟِﺐُ ﻣِﻦْ ﺃَﺣْﻮَاﻝِ اﻟﻨَّﺎﺱِ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﺇﻧَّﻤَﺎ ﻳُﺮِﻳﺪُﻭﻥَ ﻋِﻨْﺪَ اﻟﺪَّﻓْﻊِ اﻻِﻧْﺘِﻔَﺎﻉَ، ﻭَﻟَﻮْﻻَﻩُ ﻟَﻤَﺎ ﺃَﻋْﻄَﺎﻩُ اﻟﺪَّﺭَاﻫِﻢَ ﻭَﻫَﺬَا ﺑِﻤَﻨْﺰِﻟَﺔِ اﻟﺸَّﺮْﻁِ، ﻷَِﻥَّ اﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑَ ﻛَﺎﻟْﻤَﺸْﺮُﻭﻁِ ﻭَﻫُﻮَ ﻣِﻤَّﺎ ﻳُﻌَﻴِّﻦُ اﻟْﻤَﻨْﻊَ، ﻭَاَﻟﻠَّﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺃَﻋْﻠَﻢُ اﻩـ.

ভাবার্থঃ তাহতাবী রহ. বলেন: (আমার ধারণা) মানুষের প্রবল বা অধিকাংশ অবস্থা এমন যে, তারা ঋণ দিয়ে বন্ধককৃত জিনিষ গ্রহণের সময় উক্ত জিনিষ থেকে উপকার গ্রহণের-ই ইচ্ছা করে থাকে।এবং (বাস্তবতাও এমন যে,) উপকার না থাকলে সে উক্ত দিরহামগুলো ঋণ দেবে না। সুতরাং ফায়দা গ্রহণের প্রবল অবস্থা বা প্রচলন তা শর্তযুক্তের স্থলাভিষিক্ত। কেননা প্রচলিত প্রথা বা পদ্ধতির হুকুম শর্তযুক্তের মতই হুকুম । যা নিষিদ্ধ বা নাজায়িযকেই নির্দিষ্ট করে।আল্লাহ-ই ভালো জানেন। (রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২)

সুতরাং প্রশ্নোল্লেখিত ঋণদাতার জন্য বন্ধকি জমি ভোগ করা সম্পূর্ণ নাজায়েয। এটি মূলত ঋণ প্রদান করে বিনিময়ে সুদ গ্রহণেরই একটি প্রকার। যা মূলত ঋণ প্রদান করে বন্ধকি জমি ভোগ করার একটি অবৈধ কৌশল বৈ অন্য কিছু নয়। কারণ এক্ষেত্রে আলাদাভাবে ইজারা চুক্তি করা হয় না; বরং জমি ভোগ করার শর্তেই ঋণ দেওয়া হয় এবং ঋণের সুবিধা পাওয়ার কারণেই জমির মালিক নামমাত্র মূল্যে ভাড়া হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। আল্লাহ-ই ভালো জানেন।

প্রকাশ থাকে যে, উক্ত কারবার বৈধভাবে করতে চাইলে বিকল্প সূরত রয়েছে :

বিকল্প সূরত অনুসরণ করলে এ চুক্তি জায়েজ হবে, ইনশাআল্লাহ।

বিকল্প ১ম সূরত :

বন্ধকি জমি থেকে বন্ধকগ্রহীতা উপকৃত হতে চাইলে এ পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে যে, বন্ধকি চুক্তি বাতিল করে দীর্ঘমেয়াদি ইজারা পদ্ধতি অবলম্বন করবে। অর্থাৎ যত দিন পর্যন্ত ঋণের টাকা শোধ না হয় ঋণদাতা জমিটি ইজারা/লীজ পদ্ধতিতে তা ভোগ করবে এবং তার ন্যায্য ভাড়াও মালিককে আদায় করবে। এ ক্ষেত্রে ঋণ ও ইজারা/লীজ চুক্তি দুটি ভিন্ন হতে হবে, দুটি চুক্তিকে মিলিয়ে একটি অপরটির ওপর শর্তযুক্ত হতে পারবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ৫/৪৬৫, ইমদাদুল আহকাম ৩/৫১৮)

নবীজী সাঃ বলেনঃ 

ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻗﺎﻝ ﻧﻬﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻦ ﺑﻴﻌﺘﻴﻦ ﻓﻲ ﺑﻴﻌﺔ (الترمذي 1231 , المرقاة 2868)

হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, নবীজী সাঃ এক লেনদেন অনুষ্ঠানে দুই-দুইটি লেনদেন/ক্রয়-বিক্রয় থেকে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ এক চুক্তিতে অন্য চুক্তি করতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে তিরমিযি-১২৩১; মিরক্বাতুল মাফাতিহ-২৮৬৮)

বন্ধক চুক্তি থাকাবস্থায় ইজারা চুক্তি করা যাবে না।

এ সম্পর্কে ইবনে আবেদীন শামী রাহ বলেনঃ

وأما الإجارة فالمستأجر إن كان هو الراهن فهي باطلة،………….. وإن كان هو المرتهن وجدد القبض للإجارة أو أجنبيا بمباشرة أحدهما العقد بإذن الآخر بطل الرهن والأجرة للراهن وولاية القبض للعاقد ولا يعود رهنا إلا بالاستئناف.

বন্ধককৃত জিনিষকে ভাড়ায় খাটাতে ভাড়া প্রদানকারী যদি বন্ধকদাতাই হয়ে থাকেন,তাহলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।আর যদি ভাড়া প্রদানকারী বন্ধকগ্রহীতা থাকেন, এবং ভাড়া প্রদানের নিমিত্তে ক্ববযাকে নতুনত্ব করে নেন,অথবা কোনো আজনবী তাদের একজনের উপস্থিতি ও অন্যজনের অনুমিত সাপেক্ষে ভাড়া প্রদান করেন, তাহলে এমতাবস্থায় বন্ধকচুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে।ভাড়া বাবৎ প্রদত্ত টাকা বন্ধকদাতাই পাবে।এবং ভাড়ায় গ্রহণকারীর জন্য উক্ত জিনিষে হস্তক্ষেপ করার শরয়ী অধিকার থাকবে।এখন আর তাতে বন্ধকচুক্তি থাকবে না।এক্ষেত্রে বন্ধকগ্রহীতা নিজ ঋণকে উসুল করে নিবে।কেননা বন্ধক চুক্তি বাতিল হয়ে গেছে। (রদ্দুল মুহতার-৬/৫১১)

ولو آجره المرتهن بإذن الراهن فالأجر للراهن، وبطل الرهن، 

যদি বন্ধকগ্রহীতা বন্ধকদাতার অনুমতি সাপেক্ষে বন্ধককৃত জিনিষকে কোথাও ভাড়ায় প্রদান করে,তাহলে প্রদত্ত ভাড়া বন্ধকদাতাই পাবে,এবং বন্ধকচুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৪৭৮)

وكذلك لو استأجره المرتهن صحت الإجارة، وبطل الرهن

যদি বন্ধকগ্রহীতা বন্ধককৃত জিনিষকে ভাড়ায় নিয়ে নেয়,তাহলে ভাড়া নেওয়া বিশুদ্ধ হবে এবং বন্ধকচুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৪৬৫)

অর্থাৎ ঋণদাতা জমি লীজ নিয়ে তা থেকে উপকৃত হবে। তবে এর জন্য শর্ত হল-

. ঋণ ও লীজ চুক্তি দুটি সম্পূর্ণরূপে স্বতন্ত্রভাবে হতে হবে।

. একটি চুক্তির সাথে আরেকটি চুক্তি কোনভাবেই শর্তযুক্ত হবে না।

সুতরাং ঋণ প্রদানের পর ঋণগ্রহীতা তার জমি লীজ দিতে অস্বীকার করলে তাকে চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। কেবল সঠিক অর্থে জমি বা অন্য কিছু বন্ধক প্রদানের জন্য বলতে পারবে।

. জমির রেন্ট/ভাড়া উরফ অনুযায়ী ন্যায়সঙ্গত হতে হবে।

যার বিবরণ হল,

শুরু থেকেই বন্ধকি চুক্তি না করে ভাড়া বা লীজ চুক্তি করবে। জমির মালিক জমি ভাড়া দিবে। তার যত টাকা প্রয়োজন সেজন্য যত বছর ভাড়া দিতে হয় একত্রে তত বছরের জন্য ভাড়া দিবে। যেমন-এক বিঘা জমির বার্ষিক ভাড়া ১০ হাজার টাকা। মালিকের ৫০ হাজার টাকা প্রয়োজন। তাহলে সে ৫ বছরের জন্য জমি ভাড়া দিবে। এখন অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা নিবে। এক্ষেত্রে জমির ভাড়া স্থানীয় ভাড়া থেকে সামান্য কম বেশিও হতে পারে। এরপর ভাড়ার মেয়াদ শেষ হলে অর্থ দাতা জমি ফেরত দিবে, কিন্তু প্রদেয় টাকা ফেরত পাবে না। অবশ্য সময়ের আগে ফেরত দিলে যে কয়দিন ভাড়ায় ছিল সে পরিমাণ ভাড়া কর্তন করে অবশিষ্ট টাকা ভাড়াটিয়া ফেরত পাবে।

বিকল্প ২য় সূরত :

অথবা সে বন্ধকদাতার সঙ্গে ‘বাই বিল ওয়াফা’ চুক্তি করবে। অর্থাৎ বন্ধকগ্রহীতার কাছে ঋণী ব্যক্তি তার জমিটি বিক্রি করে দেবে এই ওয়াদার ওপর যে, ঋণ পরিশোধ হওয়ার পর বন্ধকগ্রহীতা আবার জমিটি তার কাছে বিক্রি করে দেবে। এ ক্ষেত্রে বন্ধকগ্রহীতার মালিকানায় যত দিন থাকবে সে তা মালিক হিসেবে ভোগ করতে পারবে। (ইমদাদুল আহকাম : ৩/৫১১)

অর্থাৎ ঋণদাতা জমি বন্ধক নিয়ে তা থেকে উপকৃত হবে। তবে এর জন্য শর্ত হল-

দু’টি চুক্তি সম্পাদন করবে :

১. প্রথমে ক্রয় বিক্রয় চুক্তি।

২. তারপর আলাদা আরেকটি চুক্তি নামায় যেদিন টাকা পরিশোধ করতে পারবে সেদিন জমিটি প্রথম জমির মালিক ক্রয় নিয়ে নিয়ে যাবে আর বর্তমান মালিক তা বিক্রি করে দিবে মর্মে চুক্তি সম্পাদিত করবে।

যার বিবরণ হল, যেমন-

রাশেদ এর জমি আছে। কিন্তু টাকা নেই। তার টাকা প্রয়োজন। আর খালেদের টাকা আছে। কিন্তু জমি নেই। তার জমি প্রয়োজন। রাশেদ তার জমিটি খালেদের কাছে দিয়ে ৫ লাখ টাকা নিতে চাচ্ছে। আর খালেদ টাকা প্রদান করে জমিটির ফসল নিতে চাচ্ছে।

এমতাবস্থায় রাশেদ তার জমিটি ৫ লাখ টাকায় খালেদের কাছে বিক্রি করে টাকা গ্রহণ করে নিবে। এভাবে রাশেদ টাকার মালিক; আর খালেদ জমিটির ভোগ দখলের মালিক হয়ে যাবে।

তারপর ভিন্ন আরেকটি চুক্তি সম্পাদন করবে।

যাতে লিখবে যে, যেদিন রাশেদ ৫ লাখ টাকা দিতে পারবে, সেদিন খালেদ জমিটি রাশেদের কাছে ৫ লাখ টাকা দিয়ে বিক্রি করে দিবে।

এভাবে ভিন্ন দু’টি চুক্তি সম্পাদিত করলে টাকা খরচ করা এবং জমিটি ভোগ দখলের মাঝে অবৈধতার কোন কিছুই বাকি থাকবে না। আল্লাহ-ই ভালো জানেন।

والصحيح ان العقد الذي جرى بينهما ان كان بلفظ البيع لا يكون رهنا ثم ينظر إن ذكرا شرط الفسخ في البيع فسد البيع ،وإن لم يذكرا ذلك في البيع وتلفظا بلفظة البيع بشرط الوفاء وتلفظا بالبيع الجائر ،وعندهما هذا البيع عبارة عن عقد غير لازم فكذلك ،وإن ذكر البيع من غير شرط ثم ذكر الشرط على وجه المواعدة جاز البيع ويلزمه الوفاء بالوعد،لأن المواعدة قد تكون لازمة فتجعل لازمة لحاجة الناس ، (فتاوى قاضيخان 2/165, بهامش الفتاوى الهندية)

لو ذكرا البيع بلا شرط ثم ذكرا الشرط على وجه العقد جاز البيع ولزم الوفاء بالوعد، إذ المواعيد قد تكون لازمة فيجعل لازما لحاجة الناس تبايعا بلا ذكر شرط الوفاء ثم شرطاه يكون بيع الوفاء؛ (رد المحتار، كتاب البيوع، مطلب فى البيع بشرط فاسد-7/281، 547، البحر الرائق، كتاب البيوع، باب خيار الشرط-6/8) والله تعالى أعلم.

এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত দেখুন-

মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৮/২৪৪-২৪৫; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৩/১৪৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২১২, বাদায়েউস সানায়ে ৬/১৪৬, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ৫/৪৬৫, ফাতাওয়া কাযীখান-২/১৬৫ [ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ার টীকায় লিখিত], বাহরুর রায়েক্ব ,কিতাবুল বুয়ু’-বাবু খিয়ারিশ শরত ৬/৮;রদ্দুল মুহতার,কিতাবুল বুয়ু’ ৭/২৮১, শরহুল মাজাল্লা, খালেদ আতাসী ৩/১৯৬-১৯৭; ইলাউস সুনান ১৮/৬৪; ইরওয়াউল গালীল হা/১৩৯৭, ইমদাদুল আহকাম : ৩/৫১১

উত্তর প্রদান

মুফতী মাসূম বিল্লাহ

সিনিয়র মুহাদ্দিছ ও মুফতী,

জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম ঢাকা (মসজিদুল অকবার কমপ্লেক্স) মিরপুর-১, ঢাকা।

ও উস্তাযুল ফিকহ ওয়াল ইফতা,

মারকাযুল বুহূস আল-ইসলামিয়া ঢাকা।

খতীব,

আল মদীনা মসজিদ, ইস্টার্ন হাউজিং, রূপনগর, মিরপুর, ঢাকা।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *