
প্রশ্ন:
যে সব জায়নামাযে কাবা শরীফের বা মসজিদের নকশা থাকে সেই নকশার উপর পা রাখা ও বসা কি বৈধ? এ বিষয়ে শরীয়াত কি বলে?
উত্তর: وبالله سبحانه التوفيق
‘কাবা শরিফ ও মসজিদ সমূহ আল্লাহর ঘর। ইসলামের মর্যাদার প্রতীক। কাবা শরিফ মুসলমানদের ইবাদাতের কেবলা। হজ ও উমরার সময় কাবা প্রদক্ষিণ করতে হয়। নামাজ পড়তে হয় কাবার দিকে ফিরে। কাবার দিকে ফিরে বা কাবাকে পিছন দিয়ে মল-মূত্র ত্যাগ করা জায়েজ নেই। কবরে মৃতকে কাবার দিকে ফিরিয়ে শোয়ানো সুন্নত। কাবার চত্বরে বসে কাবার দিকে তাকিয়ে থাকাও সওয়াবের কাজ। কাবাকে সম্মান করা ও ভালোবাসা ঈমানের অংশ বিশেষ।
পবিত্র ও সম্মানিত কা’বা শরীফ, মসজিদে নববী শরীফ এবং বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক এর শিয়ার বা নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেকের জন্যই জরুরী এবং অশেষ কল্যাণের কারণও বটে।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক বলেন-
وَمَن يُعَظِّمْ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى ٱلْقُلُوبِ
অর্থ: “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক এর নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে, নিশ্চয়ই তা তার জন্য অন্তরের তাক্বওয়া বা পবিত্রতারই নিদর্শন।” (সূরা হজ্জ-৩২)
মহান আল্লাহ পাক অন্যত্র আরো বলেন-
ذَٰلِكَ وَمَن يُعَظِّمْ حُرُمَاتِ اللَّهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ عِندَ رَبِّهِ ۗ [٢٢:٣٠]
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক যে সকল বস্তুকে সম্মানিত করেছেন, তাকে যে ব্যক্তি সম্মান করলো, এটা তার জন্য মহান আল্লাহ পাক এর নিকট কল্যাণ বা ভালাইয়ের কারণ হবে।” (সূরা হজ্জ-৩০)
উপরোক্ত আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, মহান মহান আল্লাহ পাক এর নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা সকলের জন্যই জরুরী। আর সেগুলোর অবমাননা করা সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয।
“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১/১০৮ এ উল্লেখ আছে,
وتكره الصلاة على سطح الكعبة لما فيه من ترك التعظيم
অর্থ: “কা’বা ঘরের ছাদের উপর নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। কেননা কা’বা ঘরের ছাদে নামায পড়লে কা’বা ঘরের সম্মান ত্যাগ করা হয়।”
যেসব নিদর্শন সম্মানিত, এর ছবিগুলোর প্রতিও কোনো প্রকার অসম্মান দেখানোর সুযোগ নেই। তাই মুসলমানগণ ইসলামী দৃষ্টিতে সম্মানের পাত্র এমন সব নিদর্শনের ছবির প্রতিও সম্মান সহকারে যত্নবান থাকবে এটাই নিয়ম। সে হিসেবে মুসলমানগণ নিজেদের ঘরে, অফিসে ঐসব পবিত্র স্থানের ছবিগুলোও সতর্কতার সাথে সংরক্ষণ করে থাকে।
কিন্তু কোরআন-হাদিসের কোথাও কাবার ছবি ঘরে ঝুলিয়ে রাখতে বলা হয়নি। তাই কাবার ছবি ঘরে রাখাতে বরকতের বা সওয়াবের কিছু নেই। তবে কারো ব্যক্তিগত অভিরুচি ও আগ্রহ থেকে রাখলে রাখতে পারে; নিষেধ নেই। কিন্তু কাবার ছবির সঙ্গে এমন কিছু করা যাবে না- যা সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিংবা সভ্যতার দৃষ্টিকোণ থেকে অবমাননার পর্যায়ে পড়ে। আবার কাবার ছবির প্রতি অতিরিক্ত কোনো ভক্তি ও শ্রদ্ধাও প্রদর্শন করা যাবে না।
বলাবাহুল্য, আমাদের সমাজে মক্কা-মদিনার ও মসজিদের ছবি/নকশা আমরা শ্রদ্ধাভরে দেয়ালের উঁচু স্থানে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে স্থাপন করি।
অথচ জায়নামাজের ব্যাপারটি অনেকেই বুঝেও বুঝতে চান না।সৌদি আরবে প্রচুর পরিমাণে মক্কা-মদিনার ছবিসহ জায়নামাজ বিক্রি হয়। ছবি ছাড়া জায়নামাজ দোকানে চাইতে গেলে, দোকানদাররা বিরক্তি প্রকাশ করে জানান মক্কা মদিনায় ছবিওয়ালা জায়নামাজের ক্রেতা বেশি। সবাই তো এটাই চায়।
বিধর্মীদের কারসাজিতে আজ ইবাদতও লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্ছে। চীনের তৈরি জায়নামাজগুলোর অধিকাংশই দুই পবিত্র স্থানের ছবি শোভা পায়। তাদের উদ্দেশ্য মুসলমানদের আন্তরিক শ্রদ্ধাকে পুঁজি করে ব্যবসা করা। সাথে আরো একটি জঘন্য ইচ্ছা পূরণ করছে এ সুবাদে যে, মুসলমানদের নিকট সর্বাধিক পবিত্র স্থানদ্বয়কে তাঁদেরকে দিয়েই পদদলিত করাচ্ছে। কতিপয় মুসলমান নিজের অজান্তে এ পবিত্র ছবির উপর বসছে, পা রাখছে কিংবা এর উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। এ অনুভূতি জাগ্রত হচ্ছে না যে, আমরা কী করছি।
সুতরাং যেখানে সম্মান দিয়ে কাবা শরিফ ও মসজিদের ছবি/নকশা ঘরের দেয়ালে রাখা হচ্ছে। সেখানে পবিত্র স্থানের ছবি পায়ের নিচে রাখা বা তার উপর বসা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এটি সরাসরি আদবের খেলাপ (শিষ্টাচার বিরোধী)।
এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে,
এটাতো কোনো আসল কা’বা শরীফ বা রওজা শরীফ নয়, এটা তো একটি নকশা মাত্র, এর আবার সম্মান-অসম্মান কি?
এ ধরনের প্রশ্ন শুধুমাত্র মুসলমানদের নিকট নয়, বরং সচেতন সকল মানুষের নিকট এ ধরনের আচরণ আপত্তিকর অসম্মানের শামিল। যেমন বর্তমানে কুশপুত্তলিকা দাহ করার সংস্কৃতি বিশ্বব্যাপী প্রচলিত। এটা কোনো ব্যক্তির প্রতি ক্ষোভ, অসম্মান প্রদর্শন করার উদ্দেশ্যেই এ আচরণ করা হয়। কুশপুত্তলিকার আগুনের তাপতো ঐ ব্যক্তির অনুভব হচ্ছে না। তারপরও তো এটাকে অসম্মানই বিবেচনা করা হয়।
এখন প্রশ্ন হল : কারো বাবা-মা’য়ের ছবি দিয়ে যদি একটা শতরঞ্জি তৈরি করা হয়, তাহলে সে কি সে শতরঞ্জির উপরে বসে খানা খাবে অথবা পা দিয়ে মাড়াবে অথবা অন্য কাউকে মাড়াতে দিবে?
সুতরাং কোনো সম্মানিত ব্যক্তির বা বস্তুর প্রতিচ্ছবির প্রতি অসম্মান প্রদর্শন মূল ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতিই অসম্মান নিঃসন্দেহে।
অতএব, সমাজে প্রচলিত ব্যবস্থায় যদি মানুষের কাছে যে সব জায়নামাযে কাবা শরীফের বা মসজিদের নকশা থাকে সেই নকশার উপর পা রাখা ও বসা বেয়াদবি ও অসম্মান প্রদর্শন মনে করা হয় তাহলে সেই নকশার উপর পা রাখা ও বসা বেয়াদবি হবে।
তবে যদি জায়নামাজ বা অন্য কোথাও কাবা ঘরের ছবি থাকে আর অসর্তকতা বশত: তাতে পা লেগে যায় তাহলে তাতে কোন গুনাহ নেই। কেননা, এ ক্ষেত্রে কাবা ঘরের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন উদ্দেশ্য থাকে না। তবে এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।
আর যদি সমাজে প্রচলিত ব্যবস্থায় মানুষের কাছে যে সব জায়নামাযে কাবা শরীফের বা মসজিদের নকশা থাকে সেই নকশার উপর পা রাখা ও বসা বেয়াদবি ও অসম্মান প্রদর্শন মনে করা না হয় তাহলে সেই নকশার উপর পা রাখা ও বসা বেয়াদবি হবে না। গুনাহও হবে না।
তবে যদি কেউ জেনে-দেখে অবজ্ঞা বশত বা হেয়-অসম্মানের নিয়তে কাবা বা মসজিদের ছবি/নকশার উপর পা রাখে বা বসে তাহলে তার ঈমান চলে যাবে।
তাই মহান মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُحِلُّوا شَعَائِرَ اللَّهِ [٥:٢]
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক এর নিদর্শনসমূহের হালাল মনে করো না তথা অবমাননা করো না।” (সূরা মায়িদা-২)
والله تعالى أعلم
فتاویٰ محمودیہ میں ہے البتہ اگر پاؤں رکھنے سے یا بیٹھنے سے کسی کی نیت بے ادبی کی ہو تو جس طرح حقیقی مسجد میں بطور تحقیر کے کوئی پاؤں رکھتا ہے وہ بے ادبی ہے تو اسی طرح یہ بھی بے ادبی ہوگی یا اگر عرف میں اس کو تعظیم کے منافی سمجھا جاتا ہو تو پھر یہ بیٹھنا یا پاؤں رکھنا تعظیم کے منافی ہوگا۔
ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ৭/১১১।
উত্তর প্রদান
মুফতী মাসুম বিল্লাহ
Sharia Specialist, Islamic Economist, Banking & Finance Expert.
Khatib & Mufassir at Al Madina Jame Masjid at Eastern Housing, Pallabi Phase-2, Mirpur 11 ½.
Senior Muhaddis & Mufti at Jamia Islamia Darul Uloom Dhaka,Masjidul Akbar Complex, Mirpur-1,Dhaka-1216
Ustazul fiqh & Ifta at مركز البحوث الاسلامية داكا. Markajul Buhus Al Islamia Dhaka