ফজরের নামাজ পড়ার উত্তম সময় কখন?

By | September 4, 2022

প্রশ্ন:

আমরা ফজরের নামায তুলনামূলক ওয়াক্তের শেষের দিকে পড়ি, এর কোনো কারন আছে কি? ফজরের নামাজ পড়ার উত্তম সময় কখন?

উত্তর: وبالله سبحانه التوفيق

ফজরের জামাত ইসফার তথা একটু ফর্সা করে পড়া মুস্তাহাব।

হাদীসে ইসফার তথা ফর্সা করে ফজরের নামায পড়া বিষয়ে অধিক সওয়াবের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।
عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ أَسْفِرُوا بِالْفَجْرِ فَإِنَّهُ أَعْظَمُ لِلأَجْرِ.‏
অর্থ: রাফি ইবনু খাদীজ রাযি. বর্ণনা করেন যে, আমি রাসূল ﷺ কে বলতে শুনেছি- তোমরা ইসফার অর্থাৎ চতুর্দিক ফর্সা হয়ে এলে ফজর আদায় করবে। কেননা এতে রয়েছে বিরাট সওয়াব। 
-(ইবনু মাজাহ হাদীস নং- ৬৭২, তিরমিজী হাদিস নং ১৫৪, ইমাম তিরমিযী রাহ. হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন৷)

তবে এতটুকু সময় হাতে নিয়ে পড়া উচিত যে, মাসনূন কিরাত অনুপাতে সালাত শেষ করার পরও এতটুকু সময় বাকি থাকে যে, কোনো কারণবশত যদি নামায নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সুন্নত-কেরাতসহ আবার স্বাভাবিকভাবে নামায
আদায় করা সম্ভব হয়।

এতটা বিলম্বে শুরু করবে না যে, জামাত শেষ করতেই সূর্যোদয় নিকটবর্তী হয়ে যায়।

অর্থাৎ সূর্যোদয়ের অন্তত ৩০-৪০ মিনিট আগে জামাত শুরু করা উচিত। এর বেশি বিলম্ব করা ঠিক নয়।

قال الزيلعي: ولا يؤخرها بحيث يقع الشك في طلوع الشمس , بل يسفر بها بحيث لو ظهر فساد صلاته يمكنه أن يعيدها في الوقت بقراءة مستحبة . ويستثنى من الإسفار صلاة الفجر بمزدلفة يوم النحر، حيث يستحب فيها التغليس عند الجميع.أهـ
-আরো দেখুন: কিতাবুল আছল ১/১২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৮; ফাতহুল কাদীর ১/১৯৯; শরহুল মুনয়াহ, ২৩২।

আর রমাযানুল মুবারকে ফজরের নামায ওয়াক্তের শুরুতেই আদায় করে নেয়া উত্তম।

عَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ قَالَ تَسَحَّرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ قُمْنَا إِلَى الصَّلَاةِ قُلْتُ كَمْ بَيْنَهُمَا قَالَ قَدْرُ قِرَاءَةِ خَمْسِينَ آيَةً
অর্থ: যায়িদ ইবনু সাবিত রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সঙ্গে সাহরি খেলাম, এরপর নামাযে দাঁড়ালাম। রাবী কাতাদাহ রাহ. বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, সাহরি ও নামাযের মধ্যে কত সময়ের ব্যবধান ছিল? তিনি বলেন, পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করার পরিমাণ সময়।
– (বুখারী হাদীস নং- ৫৭৫, মুসলিম হাদীস নং- ১০৯৭)

في المبسوط إنه يستحب التغليس في الفجر والتعجيل في الظهر إذا اجتمع الناس. فيض الباري : ٢/١٣٦
অর্থাৎ মাবসুতের মধ্যে আছে যে, লোকসমাগম হয়ে গেলে ফজর অন্ধকারে পড়া ও যুহর তাড়াতাড়ি পড়া মুস্তাহাব৷ (ফয়জুল বারী: ২/১৩৬)

তাই রামাযানে যেহেতু মসজিদে মুসল্লীগণের উপস্থিতি আগে আগে হয়ে যায়, তাই এ সময়ই জামাত পড়ে নেয়া উত্তম৷

ইমাম সারখাসী রাহ. লিখেন:
ولأن في الإسفار تكثير الجماعة وفي التغليس تقليلها وما يؤدي إلي تكثير الجماعة فهو أفضل. المبسوط للسرخسي ١/١٤٦
অর্থাৎ কেননা (রামাযান ছাড়া) আকাশের অন্ধকার দূর হওয়ার পর ফজর পড়লে জামাতে লোকসমাগম বেশি হয়৷ অন্ধকারে পড়লে লোকসমাগম কম হয়৷ আর যে কারণে এবং যখনই জামাতে লোকসমাগম বেশি হবে, তখনই ফজর পড়া উত্তম৷ (মাবসূত: ১/১৪৬)

যাতে সাহরি খেয়ে রোযাদাররা অনায়াসে ফজরের জামাতে শরীক হতে পারে এবং জামাত বড় হয়৷ অধিকসংখ্যক মুসল্লী জামাতে শামিল হতে পারে৷ আর যদি বছরের অন্যান্য দিনের মতো রামাযানেও ফজরের নামাযের জামাত দেরি করে আদায় করা হয়, তাহলে কতিপয় লোকজন সাহরি খেয়ে ঘরে নামায পড়েই ঘুমিয়ে পড়বে৷ জামাতে লোকসংখ্যা কম হবে৷
অথচ শরীয়ত জামাতে লোকসংখ্যা বেশি হওয়ার দিকটিকে গুরুত্ব দিয়েছে৷

সুতরাং, রমাযানে যেহেতু ওয়াক্তের শুরুর দিকে নামায পড়লে বেশি মানুষ জামাতে শামিল হবে, দেরিতে পড়লে মুসল্লী কম হবে, তাই আগে আগে জামাত পড়ে নেয়াই মুস্তাহাব ও উত্তম৷

তদ্রূপ হজ্বের সময় মুযদালিফায় অবস্থানের রাতে ফজর অন্ধকার থাকতে পড়া মুস্তাহাব।

কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগে আগে আদায় করেছেন।

عَنْ عَبْدِاللهِ بن مسعود رضي الله عنه قَالَ: مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صَلَّى صَلاَةً إِلا لِمِيقَاتِهَا. إِلاَّ صَلاَتَيْنِ: صَلاَةَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ بِجَمْعٍ، وَصَلَّى الْفَجْرَ يَوْمَئِذٍ قَبْلَ مِيقَاتِهَا.

زاد البخاري: قال رسولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إنَّ هاتين الصلاتَينِ حُوِّلَتا عن وَقتِهما في هذا المكانِ: المغرِبَ والعِشاءَ، فلا يقدمُ الناسُ جَمعًا حتى يُعتموا، وصلاةَ الفجرِ هذِه الساعةَ»، قال عبدالرحمن: ثم وقفَ عبدالله حتى أسفرَ، ثم قال: لو أنَّ أميرَ المؤمنينَ أفاضَ الآنَ، أصابَ السُّنَّةَ، فما أدري أقولُه كان أسرعَ أم دَفعُ عثمانَ رضيَ اللهُ عنه.

الحديث أخرجه مسلم حديث (1289)، وأخرجه البخاري في “كتاب الحج”، “باب متى يصلي الفجر بجمع” حديث (1682)، وأخرجه أبو داود في “كتاب المناسك”، “باب الصلاة بجمع”، حديث (1934)، وأخرجه النسائي في “كتاب مناسك الحج”، “باب الجمع بين الظهر والعصر بعرفة” حديث (3010).

কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, ওয়াক্ত হওয়ার আগে নামায পড়া হবে।

কারণ ওয়াক্ত হওয়ার আগে নামায আদায় করলে নামায কবুল হবে না। বরং তা হারাম কাজ। কেননা সেটি আল্লাহ্‌র সীমারেখার লঙ্ঘন। যেহেতু নামাযের ওয়াক্ত নির্ধারিত। শরিয়ত ওয়াক্তের শুরু ও শেষ নির্ধারণ করে দিয়েছে। অতএব, কারো জন্য ওয়াক্ত হওয়ার আগে নামায আদায় করা জায়েয নয়।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “নির্ধারিত সময়ে নামায আদায় করা মুমিনদের উপর অবশ্য কর্তব্য।”[সূরা নিসা, আয়াত: ১০৩]

সুতরাং হাজীসাহেবের উপর আবশ্যক হল, এ বিষয়ে সাবধান থাকা এবং ফজরের ওয়াক্ত হওয়া নিশ্চিত হওয়ার পর বা প্রবল ধারণা হওয়ার পর ফজরের নামায আদায় করা।

والدلائل والمستندات الشرعية :

وَعَنْ «أَبِي الرَّبِيعِ قَالَ: كُنْت مَعَ ابْنِ عُمَرَ فَقُلْتُ لَهُ: إنِّي أُصَلِّي مَعَك ثُمَّ أَلْتَفِتُ فَلَا أَرَى وَجْهَ جَلِيسِي ثُمَّ أَحْيَانًا تُسْفِرُ، فَقَالَ: كَذَلِكَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- يُصَلِّي وَأَحْبَبْتُ أَنْ أُصَلِّيَهَا كَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- يُصَلِّيهَا». رَوَاهُ أَحْمَدُ.

وَعَنْ «مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ: بَعَثَنِي رَسُولُ اللَّهِ -صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- إلَى الْيَمَنِ، فَقَالَ: يَا مُعَاذُ إذَا كَانَ فِي الشِّتَاءِ فَغَلِّسْ بِالْفَجْرِ وَأَطِلْ الْقِرَاءَةَ قَدْرَ مَا يُطِيقُ النَّاسُ وَلَا تَمَلَّهُمْ وَإِذَا كَانَ الصَّيْفُ فَأَسْفِرْ بِالْفَجْرِ فَإِنَّ اللَّيْلَ قَصِيرٌ وَالنَّاسُ يَنَامُونَ فَأَمْهِلْهُمْ حَتَّى يُدْرِكُوا». رَوَاهُ الْحُسَيْنُ بْنُ مَسْعُودٍ الْبَغَوِيّ فِي شَرْحِ السُّنَّةِ، وَأَخْرَجَهُ بَقِيٍّ بْنُ مَخْلَدٍ فِي مُسْنَدِهِ الْمُصَنَّفِ.

أَخْرَجَ ابْنُ أَبِي شَيْبَةَ وَإِسْحَاقُ وَغَيْرُهُمَا بِلَفْظِ: «ثَوِّبْ بِصَلَاةِ الصُّبْحِ يَا بِلَالُ حِينَ يُبْصِرُ الْقَوْمُ مَوَاقِعَ نَبْلِهِمْ مِنْ الْإِسْفَارِ»

وَقَالَ أَبُو جَعْفَرٍ الطَّحَاوِيُّ: إنَّمَا يَتَّفِقُ مَعَانِي آثَارِ هَذَا الْبَابِ بِأَنْ يَكُونَ دُخُولُهُ -صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- فِي صَلَاةِ الصُّبْحِ مُغَلِّسًا ثُمَّ يُطِيلُ الْقِرَاءَةَ حَتَّى يَنْصَرِفَ عَنْهَا مُسْفِرًا، وَهَذَا خِلَافُ قَوْلِ عَائِشَةَ؛ لِأَنَّهَا حَكَتْ أَنَّ انْصِرَافَ النِّسَاءِ كَانَ وَهُنَّ لَا يُعْرَفْنَ مِنْ الْغَلَسِ، وَلَوْ قَرَأَ رَسُولُ اللَّهِ -صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- بِالسُّوَرِ الطِّوَالِ مَا انْصَرَفَ إلَّا وَهُمْ قَدْ أَسْفَرُوا وَدَخَلُوا فِي الْإِسْفَارِ جِدَّا، أَلَا تَرَى إلَى أَبِي بَكْرٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- حِين قَرَأَ الْبَقَرَةَ فِي رَكْعَتَيْ الصُّبْحِ قِيلَ لَهُ: كَادَتْ الشَّمْسُ تَطْلُعُ، فَقَالَ: لَوْ طَلَعَتْ لَمْ تَجِدْنَا غَافِلِينَ.

جاء في “الهداية” من كتب الحنفية: “يُستحب الإسفار بالفجر؛ لقوله عليه الصلاة والسلام: (أَسْفِرُوا بِالْفَجْرِ؛ فَإِنَّهُ أَعْظَمُ لِلْأَجْرِ) رواه الترمذي، وقالوا فيه (في حد الإسفار في الفجر): “أن يبدأ في وقت يبقى منه بعد أدائها إلى آخر الوقت ما لو ظهر له فساد صلاته أعادها بقراءة مسنونة مرتلة ما بين الخمسين والستين آية قبل طلوع الشمس، ولا يظن أن هذا يستلزم التغليس إلا من لم يضبط ذلك الوقت” ينظر: “فتح القدير” (1/ 226).

جاء في الموسوعة الفقهية الكويتية:
وقال الحنفية: ندب تأخير الفجر إلى الإسفار , لقوله عليه الصلاة والسلام: { أسفروا بالفجر فإنه أعظم للأجر }

قال الزيلعي: ولا يؤخرها بحيث يقع الشك في طلوع الشمس , بل يسفر بها بحيث لو ظهر فساد صلاته يمكنه أن يعيدها في الوقت بقراءة مستحبة . ويستثنى من الإسفار صلاة الفجر بمزدلفة يوم النحر، حيث يستحب فيها التغليس عند الجميع.أهـ

والله تعالي أعلم بالصواب.

উত্তর প্রদান-

মুফতী মাসুম বিল্লাহ।

Facebook Comments Box