প্রশ্ন:
বিবাহের জন্য ঋণ বা ধার-দেনা করার বিধান কি? দলীলসহ জানতে চাই।
উত্তর: وبالله سبحانه التوفيق
আল্লাহ্ তাআলা বলেন:
وَأَنكِحُوا الأَيامى مِنكُم وَالصّالِحينَ مِن عِبادِكُم وَإِمائِكُم إِن يَكونوا فُقَراءَ يُغنِهِمُ اللَّهُ مِن فَضلِهِ وَاللَّهُ واسِعٌ عَليمٌ
অর্থ: “তোমাদের মধ্যে যাদের স্বামী বা স্ত্রী নেই তাদের বিয়ের ব্যবস্থা কর, তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ ও যোগ্য তাদেরও। তারা যদি দরিদ্র হয় তাহলে আল্লাহ্ই নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ্ মহা দানশীল, মহাজ্ঞানী।”
[সূরা নূর, আয়াত: ৩২]
আলী বিন আবু তালহা, ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন: “আল্লাহ্ তাদেরকে বিয়ে দেওয়ার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। তিনি স্বাধীন ও দাস সবাইকে বিয়ে দেয়ার আদেশ দিয়েছেন এবং তাদেরকে স্বাবলম্বী করে দেয়ার ওয়াদা করেছেন। তিনি বলেছেন: “তারা যদি দরিদ্র হয় আল্লাহ্ই নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দিবেন।”
ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন: “তোমরা বিয়ে করার মাধ্যমে স্বাবলম্বন সন্ধান কর”।[তাফসিরে ইবনে কাছির (৬/৫১)]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( ثَلَاثَةٌ حَقٌّ عَلَى اللَّهِ عَوْنُهُمْ : الْمُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ، وَالْمُكَاتَبُ الَّذِي يُرِيدُ الْأَدَاءَ ، وَالنَّاكِحُ الَّذِي يُرِيدُ الْعَفَافَ ) روى الترمذي (1655) والنسائي (3120) وابن ماجه (2518) والحديث حسنه الألباني في صحيح سنن الترمذي .
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ্র দায়িত্বে:
১. আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদকারী,
২. এমন মুকাতাব দাস (মালিককে নিজের মূল্য পরিশোধ করে স্বাধীন হতে ইচ্ছুক) যে পরিশোধ করতে ইচ্ছুক
৩. এবং এমন বিবাহকারী যে চরিত্র রক্ষা করতে ইচ্ছুক।”
[সুনানে তিরিমিযি (১৬৫৫) সনদ হাসান]
ইমাম বুখারী এ হাদিসটির শিরোনাম দিয়েছেন এই বলে: “অভাবীর কাছে বিয়ে দেওয়া”।
দলিল হচ্ছে—আল্লাহ্র বাণী: “তারা যদি দরিদ্র হয় আল্লাহ্ই নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দিবেন”।
হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন: “তিনি যে শিরোনাম দিয়েছেন সেটার পক্ষে কারণ হিসেবে আল্লাহ্র বাণী: “তারা যদি দরিদ্র হয় আল্লাহ্ই নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দিবেন” কে পেশ করেছেন।
এর সার কথা হচ্ছে-
বর্তমানে কারো দরিদ্র অবস্থা তার কাছে বিয়ে দেয়ার পথে বাধা নয়; যেহেতু ভবিষ্যতে তার সম্পদ অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।
وقال صلى الله عليه وسلم : ( مَنْ أَخَذَ أَمْوَالَ النَّاسِ يُرِيدُ أَدَاءَهَا أَدَّى اللَّهُ عَنْهُ وَمَنْ أَخَذَ يُرِيدُ إِتْلَافَهَا أَتْلَفَهُ اللَّهُ ) رواه البخاري (2387)
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন:
যে মানুষ দের থেকে মাল গ্রহণ করে তা পরিশোধের ইচ্ছা রেখে, আল্লহ তাআলা তার পক্ষ হতে আদায় করে দেন, আর যে তা গ্রহণ করে তা নষ্ট করার ইচ্ছা রেখে আল্লহ তাআলা তা নষ্ট করে দেন।
সহীহ বুখারী, ২৩৮৭।
অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে, প্রয়োজনমুখী হলে বিবাহের জন্য ঋণ করতে পারবে; বরং মুস্তাহাব হবে।
ففي المذهب الحنفي،
جاء في البحر الرائق شرح كنز الدقائق: وَفِي فَتَاوَى الْعَلَّامِيِّ: مَنْ أَرَادَ أَنْ يَتَزَوَّجَ، نُدِبَ لَهُ أَنْ يَسْتَدِينَ لَهُ، فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى ضَامِنٌ لَهُ الْأَدَاءَ، فَلَا يَخَافُ الْفَقْرَ إذَا كَانَ مِنْ نِيَّتِهِ التَّحْصِينُ وَالتَّعَفُّفُ. اهـ.
অর্থ- যে বিবাহ করতে চায় তার জন্য ঋণ করা মুস্তাহাব। কেননা আল্লহ তাআলা তার আদায়ের দায়িত্বশীল হন, তাই দারিদ্র্যতার ভয় করবে না, যখন তার নিয়ত হবে চরিত্র রক্ষা ও গোনাহ থেকে পবিত্র থাকা।- আল বাহরুর রায়িক।
وفي المذهب الشافعي،
قال النووي في منهاج الطالبين: هو مستحب لمحتاج إليه، يجد أهبته. فإن فقدها، استحب تركه، ويكسر شهوته بالصوم. اهـ.
قال الرملي في الشرح: فإن لم تنكسر به تزوج. اهـ.
وقال الشبراملسي في حاشيته: قوله: تزوج، أي مع الاحتياج، وعليه فإن لم ترض المرأة بذمته، ولم يقدر على المهر تكلفه بالاقتراض ونحوه. اهـ.
وفي المذهب الحنبلي،
قال ابن مفلح في الفروع: وَجَزَمَ فِي
النَّظْمِ: لَا يَتَزَوَّجُ فَقِيرٌ إلَّا ضَرُورَةً، وَكَذَا قَيَّدَهَا ابْنُ رَزِينٍ بِالْمُوسِرِ. وَنَقَلَ صَالِحٌ: يَقْتَرِضُ وَيَتَزَوَّجُ. وَقَالَ شَيْخُنَا: فِيهِ نِزَاعٌ فِي مذهب أَحْمَدَ وَغَيْرِهِ. اهـ.
عند الحنفية:
أن لا يحجم عن الزواج لعدم وجود المهر بل يندب له الاستدانة إذا أمكنه لأن المتزوج الذي يريد العفاف يكون الله معينا له كما ورد في حديث.
الفقه على المذاهب الاربعة.
অর্থ- মহর না থাকায় বিবাহ থেকে বিরত থাকবে না, বরং তার জন্য সম্ভব হলে ঋণ করা মুস্তাহাব। কেননা চরিত্র রক্ষার ইচ্ছায় বিবাহকারীর জন্য আল্লহ তাআলা সাহায্যকারী হন, যেমনটি হাদীছে এসেছে।
– আল ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া।
সুতরাং চরিত্র রক্ষার আকাঙ্ক্ষা, আল্লাহ্র উপর যথাযথ তাওয়াক্কুল, আল্লাহ্র অনুগ্রহ প্রত্যাশা থাকলে আশা করা যায় এমন দম্পতিকে আল্লাহ্ সাহায্য করবেন এবং তাঁর অনুগ্রহ থেকে রিযিক দিবেন।
وأما ما ورد “حق على الله عون الناكح الذي يريد العفاف ” أخرجه النسائي (3218) وورد أيضا ” التمسوا الرزق بالنكاح ” كنز العمال (44436) فإنما ذلك في حق المتوكلين لا يخاطب به عامة الناس.
الشرح الناضر شرح الأشباه والنظائر ، للشيخ المفتي دلاور حسين حفظه الله تعالى ورعاه.
আর যে হাদীছে সামর্থ্যবানকে বিয়ে করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে তার অর্থ এ নয় যে, সামর্থ্যহীনকে বিয়ে করতে বারণ করা;
বিশেষত কেউ যদি নিজের ব্যাপারে হারামে লিপ্ত হওয়ার আশংকা করে।
অনুরূপভাবে,
সামর্থ্যহীনকে যৌন উত্তেজনা দমিয়ে রাখা ও শান্ত করার জন্য রোযা রাখার দিক-নির্দেশনা দেওয়ার মধ্যেও বিয়ে করার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই।
হতে পারে সে এমন কাউকে পাবে যিনি তাকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন।
হতে পারে সে এমন কোন পাত্রীকে পাবে যে পাত্রী তার দ্বীনদারি ও সৎ হওয়ার কারণে তার আর্থিক অবস্থাকে মেনে নেবে।
এগুলো ব্যক্তিগত ব্যাপার। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে, এক প্রথা থেকে অপর প্রথাতে পার্থক্য হয়।
পক্ষান্তরে,
ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর হাদিসে যা উদ্ধৃত হয়েছে সেটা হচ্ছে—
সাধারণ একটা শিষ্টাচার এবং সামর্থ্যহীনকে রোযা রাখার মাধ্যমে নিজেকে রক্ষা করার পরামর্শ।
আর তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিয়ে করার কোন উপায় পায় তাতে কোন অসুবিধা নেই। বরং তাকে বিয়ের ব্যাপারে উৎসাহ ও উদ্বুদ্ধ করা হবে।
ঠিক এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আর যার সামর্থ্য নেই” তার ক্ষেত্রে তিনি এ কথা বলেননি যে, ‘তার উচিত বিয়ে না করা’। বরং তিনি বলেছেন: “তার উচিত রোযা রাখা”; যাতে করে সে গুনাহতে লিপ্ত না হয়।
আর যদি কিছু কষ্ট-ক্লেশ করে হলেও সে বিয়ে করতে পারে নিঃসন্দেহে তাতে কোন অসুবিধা নেই।
কারণ,
রোযাকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে একেবারে অপারগতার ক্ষেত্রে। যদি কিছু কষ্ট করে হলেও বিয়ে করতে পারে তাহলে সেটাই ভাল।
ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে কিছু যুবক ছিলাম যাদের কিছুই ছিল না। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা সামর্থ্য রাখ তাদের উচিত বিয়ে করে ফেলা। কেননা বিয়ে দৃষ্টি অবনতকারী ও লজ্জাস্থানকে হেফাযতকারী। আর যার সামর্থ্য নেই তার উচিত রোযা রাখা। কেননা রোযা যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী।”
সহীহ বুখারী (৫০৬৬) ও সহীহ মুসলিম (১৪০০)।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ। والله أعلم .
উত্তর প্রদান-
মুফতী মাসুম বিল্লাহ।
Sharia Specialist, Islamic Economist, Banking & Finance Expert.
Khatib & Mufassir at Al Madina Jame Masjid at Eastern Housing, Pallabi Phase-2, Mirpur 11 ½.
Senior Muhaddis & Mufti at Jamia Islamia Darul Uloom Dhaka,Masjidul Akbar Complex, Mirpur-1,Dhaka-1216
Ustazul fiqh & Ifta at مركز البحوث الاسلامية داكا. Markajul Buhus Al Islamia Dhaka