কিছু মৌলিক কথা:
উৎসব-অনুষ্ঠানাদি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যার দ্বারা মতবাদ-ধর্মগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়।
উৎসব অনুষ্ঠান যে প্রতিটি জাতির স্বকীয় বৈশিষ্ট্য, এর প্রতি রাসূলুল্লাহ(সা.) ইঙ্গিত করেছেন, যখন তিনি বলেন :
‘প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ রয়েছে, আর এটা আমাদের ঈদ।’ [বুখারী, মুসলিম]
এছাড়া আনাস ইবনে মালিক(রা.) বর্ণিত:
“রাসূলুল্লাহ(সা.) যখন [মদীনায়] আসলেন, তখন তাদের দুটো উৎসবের দিন ছিল। তিনি(সা.) বললেন, ‘এ দুটো দিনের তাৎপর্য কি?’ তারা বলল, ‘জাহিলিয়াতের যুগে আমরা এ দুটো দিনে উৎসব করতাম।’ রাসূলুল্লাহ(সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে এদের পরিবর্তে উত্তম কিছু দিয়েছেন: ইয়াওমুদ্দুহা ও ইয়াওমুল ফিতর ।’ ” [সূনান আবু দাউদ]
এ হাদীস থেকে দেখা যাচ্ছে যে,
ইসলাম আগমনের পর ইসলাম বহির্ভূত সকল উৎসবকে বাতিল করে দেয়া হয়েছে এবং নতুনভাবে উৎসবের জন্য দুটো দিনকে নির্ধারণ করা হয়েছে।
সেই সাথে অমুসলিমদের অনুসরণে যাবতীয় উৎসব পালনের পথকে বন্ধ করা হয়েছে।
বিখ্যাত মুসলিম পণ্ডিত ইমাম ইবনে তাইমিয়া এ সম্পর্কে বলেন:
“উৎসব-অনুষ্ঠান ধর্মীয় বিধান, সুস্পষ্ট পথনির্দেশ এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেরই একটি অংশ, যা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
‘তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই আমি একটি নির্দিষ্ট বিধান এবং সুস্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি।’ [আল-মায়িদাহ :৪৮]
‘প্রতিটি জাতির জন্য আমি ধর্মীয় উপলক্ষ নির্দিষ্ট করে দিয়েছি যা তাদেরকে পালন করতে হয়।’ [আল-হাজ্জ্ব :৬৭]
যেমনটি কিবলাহ, সালাত এবং সাওম ইত্যাদি।
মুসলিমদের উৎসব হচ্ছে ইবাদতের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত।
ইসলাম কেবল কিছু আচার-অনুষ্ঠানের সমষ্টি নয়, বরং তা মানুষের গোটা জীবনকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী বিন্যস্ত ও সজ্জিত করতে উদ্যোগী হয়।
তাই একজন মুসলিমের জন্য জীবনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ইবাদত,
যেমনটি কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা দিচ্ছেন:
“আমি জ্বিন ও মানুষকে আমার ইবাদত করা ছাড়া অন্য কোন কারণে সৃষ্টি করিনি।” [সূরা যারিয়াত:৫৬]
সেজন্য মুসলিম জীবনের আনন্দ-উৎসব আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ ও অশ্লীলতায় নিহিত নয়, বরং তা নিহিত হচ্ছে আল্লাহর দেয়া আদেশ পালন করতে পারার মাঝে, কেননা মুসলিমের ভোগবিলাসের স্থান ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী নয়, বরং চিরস্থায়ী জান্নাত।
তাই মুসলিম জীবনের প্রতিটি কাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে থাকবে তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, তাদের ঈমান, আখিরাতের প্রতি তাদের অবিচল বিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালবাসা ।
তাইতো দেখা যায় যে,
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা – এ দুটো উৎসবই নির্ধারণ করা হয়েছে ইসলামের দুটি স্তম্ভ পালন সম্পন্ন করার প্রাক্কালে। ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ সাওম পালনের পর পরই মুসলিমরা পালন করে ঈদুল ফিতর, কেননা এই দিনটি আল্লাহর আদেশ পালনের পর আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার ও ক্ষমার ঘোষণা পাওয়ার দিন বিধায় এটি সাওম পালনকারীর জন্য বাস্তবিকই উৎসবের দিন – এদিন এজন্য উৎসবের নয় যে এদিনে আল্লাহর দেয়া আদেশ নিষেধ কিছুটা শিথিল হতে পারে, যেমনটি বহু মুসলিমদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তারা এই দিনে আল্লাহর আদেশ নিষেধ ভুলে গিয়ে অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, বরং মুসলিমের জীবনে এমন একটি মুহূর্তও নেই, যে মুহূর্তে তার ওপর আল্লাহর আদেশ নিষেধ শিথিলযোগ্য।
তেমনিভাবে ঈদুল আযহা পালিত হয় ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ হাজ্জ পালনের প্রাক্কালে। কেননা ৯ই জিলহজ্জ হচ্ছে ইয়াওমুল আরাফা, এদিনটি আরাফাতের ময়দানে হাজীদের ক্ষমা লাভের দিন, আর তাই ১০ই জিলহজ্জ হচ্ছে আনন্দের দিন – ঈদুল আযহা।
এমনিভাবে মুসলিমদের উৎসবের এ দুটো দিন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে বেশী করে স্মরণ করার দিন, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন এবং শরীয়তসম্মত বৈধ আনন্দ উপভোগের দিন – এই উৎসব মুসলিমদের ঈমানের চেতনার সাথে একই সূত্রে গাঁথা।
বরং মুসলিমের জীবনে প্রতিটি মুহূর্তই পরম মূল্যবান হীরকখন্ড, হয় সে এই মুহূর্তকে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করে আখিরাতের পাথেয় সঞ্চয় করবে, নতুবা আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে শাস্তির যোগ্য হয়ে উঠবে।
অপরদিকে,
অমুসলিম, কাফির কিংবা মুশরিকদের উৎসবের দিনগুলো হচ্ছে তাদের জন্য উচ্ছৃঙ্খল আচরণের দিন,
এদিনে তারা নৈতিকতার সকল বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে এমনকি তারা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, আর এই কর্মকান্ডের অবধারিত রূপ হচ্ছে মদ্যপান ও ব্যভিচার।
সেজন্য অমুসলিমদের উৎসব-অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া আর তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
এই উৎসব-অনুষ্ঠানের সাথে একমত পোষণ করা অর্থ কুফরের সাথে একমত পোষণ করা। আর এসবের একাংশের সাথে একমত পোষণ করা অর্থ কুফরের শাখাবিশেষের সাথে একমত হওয়া।
নিঃসন্দেহে তাদের সাথে এসব অনুষ্ঠান পালনে যোগ দেয়া একজনকে কুফরের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
আর বাহ্যিকভাবে এগুলোতে অংশ নেয়া নিঃসন্দেহে পাপ।
মানুষের ভক্তি ও ভালবাসাকে প্রকৃতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টির সাথে আবদ্ধ করে তাদেরকে শিরক বা অংশীদারিত্বে লিপ্ত করানো শয়তানের সুপ্রাচীন “ক্লাসিকাল ট্রিক” বলা চলে।
শয়তানের এই কূটচালের বর্ণনা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনে তুলে ধরেছেন:
“আমি তাকে ও তার জাতিকে দেখেছি, তারা আল্লাহকে ছেড়ে সূর্যকে সিজদা করছে এবং শয়তান তাদের কার্যাবলীকে তাদের জন্য শোভনীয় করেছে…”[সূরা আন নামল :২৪]
এ কূটচালের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে নারীর সহজ-লভ্যতা – নিউ-ইয়র্কের টাইম স্কোয়ারে অথবা ঢাকার গুলশান ক্লাবে – পশ্চিমেও এবং তাদের অনুকরণে এখানেও ব্যাপারটা একটা অলিখিত প্রলোভন।
বিজাতীয় অনুষ্ঠানাদির মধ্যে সমাজ-বিধ্বংসী যে বিষয়গুলো পাওয়া যাবে, তার মাঝে অন্যতম হচ্ছে নারীকে জড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীলতা।
বিভিন্ন পার্টি বা উদযাপন আয়োজনের সবর্ত্রই সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী নারীকে পুরুষের সাথে অবাধ মেলামেশায় লিপ্ত দেখা যাবে।
পৃথিবীতে আল্লাহ মানুষকে যে সকল আকষর্ণীয় বস্তু দ্বারা পরীক্ষা করে থাকেন, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নারী।
রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেন:
“আমি পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে বড় কোন ফিতনা রেখে যাচ্ছি না।” [বুখারী ও মুসলিম]
এজন্যই নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও অবাধ কথাবার্তা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেননা এই অবাধ মেলামেশা ও অবাধ কথাবার্তাই ব্যভিচারের প্রথম ধাপ। যিনা-ব্যভিচার ইসলামী শরীয়াতের আলোকে কবীরাহ গুনাহ , এর পরিণতিতে কুরআন-হাদীসে আখিরাতের কঠিন শাস্তির বর্ণনা এসেছে।
এর প্রসারে সমাজ জীবনের কাঠামো ভেঙ্গে পড়ে, ছড়িয়ে পড়ে অশান্তি ও সন্ত্রাস এবং কঠিন রোগব্যাধি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ
‘‘ যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি..।’’(সূরা আন-নূর :১৯)
বস্তুত যে সমাজেই চরিত্র-হীনতার কাজ ব্যাপক, তথায় আল্লাহর নিকট থেকে কঠিন আযাব সমূহ ক্রমাগত অবতীর্ণ হওয়া অবধারিত,
আল্লাহর রাসূলের হাদীস অনুযায়ী কোন সমাজে যখন ব্যভিচার প্রসার লাভ করে তখন সে সমাজ আল্লাহর শাস্তির যোগ্য হয়ে ওঠে। আর নারী ও পুরুষের মাঝে ভালবাসা উদ্রেককারী অপরাপর যেসকল মাধ্যম, তা যিনা-ব্যভিচারের রাস্তাকেই প্রশস্ত করে।
আব্দুল্লাহ ইবন ‘উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন :
… لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلَّا فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالْأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلَافِهِمِ…
‘‘যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্লজ্জতা প্রকাশমান, পরে তারা তারই ব্যাপক প্রচারেরও ব্যবস্থা করে, যার অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ মহামারি, সংক্রামক রোগ এবং ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ এত প্রকট হয়ে দেখা দিবে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে কখনই দেখা যায় নি।’’(ইবনু মাজাহ, কিতাবুল ফিতান, হাদিস নং-৪০০৯)
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
… وَلَا فَشَا الزِّنَا فِي قَوْمٍ قَطُّ إِلَّا كَثُرَ فِيهِمُ الْمَوْتُ…
‘‘যে জনগোষ্ঠীর-মধ্যেই ব্যভিচার ব্যাপক হবে, তথায় মৃত্যুর আধিক্য ব্যাপক হয়ে দেখা দেবে।’’(মুয়াত্তা মালিক, কিতাবুল জিহাদ, হাদিস নং-৮৭০)
বিপরীত লিঙ্গের দুইজন মানুষের মাঝে যোগাযোগ একটি ফিতনার দরজা।
এ পথ দিয়ে শয়তানের পাতানো ফাঁদে পা দেয়া থেকে সাবধানমূলক দলিল-প্রমাণ ইসলামী শরিয়তে ভরপুর।
এমনকি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এক যুবককে এক যুবতীর দিকে তাকাতে দেখলেন তখন তার গলা ঘুরিয়ে দিলেন যাতে করে যুবতীর উপর থেকে তার দৃষ্টি সরে যায়। এরপরতিনি বললেনঃ “আমি লক্ষ্য করলাম এরা দুইজন যুবক-যুবতী। সুতরাং তাদেরকে আমি শয়তান হতে নিরাপদ মনে করিনি।”।[সুনানে তিরমিযি (৮৮৫), আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]
ভ্যালেন্টাইস ডে এর উৎপত্তি:
২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। আর তাই তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিন ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন’স স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন’ দিবস ঘোষণা করেন। খৃষ্টানজগতে পাদ্রী-সাধু সন্তানদের স্মরণ ও কর্মের জন্য এ ধরনের অনেক দিবস রয়েছে। যেমন: ২৩ এপ্রিল – সেন্ট জজ ডে, ১১ নভেম্বর – সেন্ট মার্টিন ডে, ২৪ আগস্ট – সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে, ১ নভেম্বর – আল সেইন্টম ডে, ৩০ নভেম্বর – সেন্ট এন্ড্রু ডে, ১৭ মার্চ – সেন্ট প্যাট্রিক ডে।
পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্মদিনের উৎসব, ধর্মোৎসব সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য। তাই গির্জা অভ্যন্তরেও মদ্যপানে তারা কসুর করে না। খৃস্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ করা হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়। সম্প্রতি পাকিস্তানেও ২০১৭ সালে ইসলামবিরোধী হওয়ায় ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ করে সেদেশের আদালত।
বর্তমানকালে, পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকোলেট, অন্যান্য উপহারসামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করে এবং আনুমানিক প্রায় ২.৫ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়।
ভ্যালেন্টাইন নাম থেকেই এ দিনটির নাম করণ করা হয় ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ যা আজকের ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’।
বাংলাদেশে এ দিবসটি পালন করা শুরু হয় ১৯৯৩ইং সালে। কিছু ব্যবসায়ীর মদদে এটি প্রথম চালু হয়।
বাংলাদেশে ইদানিং এই দিবস পালন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে তরুণ সমাজের কাছে। যেখানে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির মিশ্রণে একটু ভিন্নভাবে “বিশ্ব ভালোবাসা দিবস” নামে এখানে ভ্যালেন্টাইন’স ডে পালিত হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে-
বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১৩ই ফেব্রুয়ারি তারিখে বসন্ত উৎসব তথা “পহেলা ফাল্গুন” উদযাপিত হয়। তার ঠিক পরের দিনই ভ্যালেন্টাইন’স ডে পালন করা হয় বিধায় অনেকের কাছেই এই দিবসটি বেশ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।
তবে কখনো কখনো লিপ ইয়ারের কারণে পহেলা ফাল্গুন এবং ভ্যালেন্টাইন’স ডে একই দিনে পালিত হয়।
তখন বাংলাদেশের অধুনা তরুণ সমাজের কাছে আরও ভিন্ন উপায়ে উদযাপন করতে উৎসাহিত হয়।
এই “ভালোবাসা দিবস” তথা বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইন’স ডে পালন করার আয়োজন হিসেবে সোশাল মিডিয়া খুব বড় একটা ভূমিকা পালন করে।
বিভিন্ন ফুলের দোকান, ফ্যাশন হাউজ, গিফট শপ, বেকারি ও ফাস্ট ফুড শপগুলোতে বিশেষ কিছু অফার চালু রাখে।
তাছাড়া টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলগুলিতে “ভালোবাসা দিবসের গান”, “ভালোবাসা দিবসের নাটক” ইত্যাদি প্রচারিত হয়।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
-“ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প”।
যেখানে ক্লোজআপ টুথপেস্ট ব্র্যান্ড হতে স্পন্সরকৃত তিনটি রোমান্টিক নাটক প্রচারিত হয়।
এই নাটকের মূলগল্পগুলো মূলত সাধারণ জনগণ বা দর্শকেরা নিজেরাই লেখেন, এর মধ্যে মনোনীত তিনটি গল্পের আলোকে এই নাটকগুলি নির্মিত হয়। এই আয়োজনটি দর্শকমহলের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
তবে বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইন’স ডে পালনের জনপ্রিয়তা শুধুমাত্র তরুণ সমাজের কাছেই সীমাবদ্ধ নয়, এই ভালোবাসার উৎসবে সব বয়সের শ্রেণী-পেশার মানুষ আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তাই পরিবারের সদস্যদের সাথে এবং সমলিঙ্গের বন্ধুদের সাথেও উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করেন অনেকেই।
এসবই শিরক ও ইহুদি-খৃস্টান ও কাফেরদের সংস্কৃতি আমাদের ঘ্রাস করে রেখেছে।
আধুনিক প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে ঘরে ঘরে নিমিষে পৌঁছে যাচ্ছে তাদের আচার-অনুষ্ঠান।
তাদের উৎসব, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো উপভোগ করে, তাতে যোগ দেয় ও আনন্দ করে। কোন কিছুতেই কুণ্ঠাবোধ নেই।
তারা করছে তাই আমরা করছি।
ভালো-মন্দ, বৈধ-অবৈধ ও কুফর-শিরক ভেবে দেখার ফুরসত নেই।
অথচ নবী ﷺ বলেন,
-“যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখল সে তাদের অন্তর্ভুক্ত”।[আবু দাউদ হা/৩৫১৪]
নবী ﷺ তাদের বিরোধিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
-“তোমরা বার্ধক্যকে পরিবর্তন কর, কিন্তু ইহুদিদের সাথে মিল রেখ না”। [তিরমিজি হা/১৬৭১, আহমদ হা/১৩৬১, সহি ও হাসান]
উম্মতের উপর রাসূলুল্লাহ ﷺ যার আশঙ্কা করেছেন এবং যার থেকে তিনি উম্মতকে বারবার সতর্ক করেছেন।
আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
-“তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের রাস্তা অনুসরণ করবে বিঘতে বিঘতে ও হাতে হাতে। তারা যদি গুঁইসাপের গর্তে ঢুকে তোমরা অবশ্যই তাদের অনুসরণ করবে; আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল, ইহুদি ও খৃস্টান? তিনি বললেনঃ তবে কে?”[ বুখারি হা/৩২২১; মুসলিম হা/৪৮২৮]
ইমাম নাওয়াভী (রহ.) বলেন,
-“বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে ও গুঁইসাপের গর্তের উদাহরণ পেশ করার অর্থ কঠিনভাবে তাদের অনুসরণ করা। এ অনুসরণ অর্থ কুফরি নয়, বরং পাপাচার ও ইসলামের বিরোধিতায় তাদের অনুকরণ করা উদ্দেশ্য। এটা নবী ﷺ স্পষ্ট মুজিজা, তিনি যার সংবাদ দিয়েছেন আমরা তা চাক্ষুষ দেখছি” [ইমাম নাওয়াভী রহ. কর্তৃক ‘সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যা’ গ্রন্থ: (১৬/১৮৯)]
এতো কঠোর হুশিয়ারি সত্বেও মুসলিম তাদের অনুসরণে ঘটা করে প্রতিবছর “ভ্যালেন্টাইস ডে” উৎযাপন করে।
তদুপরি এতদুপলক্ষে
নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা,
হাসিঠাট্টা ও আনন্দ উপভোগ,
সাজগোজ করে নারীদের অবাধ বিচরণ ও সৌন্দর্যের প্রদর্শনী,
অভিজাত এলাকার ক্লাব ইত্যাদিতে মদ্যপান তথা নাচানাচি,
পটকা ফুটানো,
কার্ড-ফুল বিনিময় অপচয় সহ
প্রভৃতি কাজের লিপ্ততা সবই মারাত্মক সব হারাম।
এইসকল কর্মকান্ড ও আচরণে মহান আল্লহ তাআলা আনন্দ-আপ্লুত হন ? না ক্রোধান্বিত হন ?
শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে? সূরা আল মায়েদাহ, আয়াত নং ৯০ থেকে ৯১।
ভালবাসার স্বরূপ ও ইসলাম:
ভালবাসা চারটি অক্ষরের সমন্বয় খুব ছোট একটি শব্দ।
যাকে আরবী ভাষায় মুহাব্বত ও ইংরেজী ভাষায় Love বলে। যার অর্থ হচ্ছে, অনুভূতি, আকর্ষণ, হৃদয়ের টান; যা মানুষের অন্তরে আল্লাহপাক সৃষ্টিগতভাবে দিয়ে দেন।
ভালবাসা বলতে আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ভালবাসা, সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার ভালবাসা,স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসা ইত্যাদিকে বুঝায়।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
إِنَّ أَحَبَّ الْأَعْمَالِ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ الْحُبُّ فِي اللَّهِ وَالْبُغْضُ فِي اللَّهِ
‘‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ আমল হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসা এবং শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কারো সাথে শত্রুতা রাখা।’’(আহমদ, মুসনাদুল আনসার, হাদিস নং২০৩৪১)
ভালবাসা’ এক পবিত্র জিনিস যা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর পক্ষ হতে আমরা পেয়েছি। ভালবাসা’ শব্দটি ইতিবাচক।
এই ভালোবাসা পবিত্র কোরআনে ৭টি পর্বে ৬৩ বার উল্লেখ হয়েছে।
বিশ্বাসী বা মোমিনদের ভালোবাসা সম্পর্কে ১৪টি আয়াত রয়েছে;
কাফেরদের ভালোবাসা সম্পর্কে রয়েছে ১২টি আয়াত;
আল্লাহ ভালোবাসেন না প্রসঙ্গে আছে ১৫টি আয়াত;
আল্লাহ ভালোবাসেন প্রসঙ্গে আছে ৯টি আয়াত;
ভুল করে ভালোবাসা সম্পর্কে বিবৃত আছে ৩টি আয়াত,
ভালোবাসার অসার দাবি সম্পর্কে রয়েছে ১টি আয়াত;
ভালোবাসার অন্যান্য প্রসঙ্গে উল্লেখ রয়েছে ৬টি আয়াত।
ভালোবাসা আন্তরিক বিষয়। ভালোবাসাটা কিছু জ্ঞাত কারণে কিংবা কিছু অজ্ঞাত কারণে অন্তরে ঢেলে দেয়া হয়।
কিন্তু এ ভালোবাসা যদি অবাধ মেলামেশা, হারাম দৃষ্টি কিংবা হারাম কথাবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে ঘটে থাকে তাহলে সেটা হারাম। আর যদি এ ভালোবাসা কোন পূর্ব পরিচিতির কারণে, কিংবা আত্মীয়তার কারণে, কিংবা ঐ লোকের ব্যাপারে ভাল কিছু শুনে নিজের মন থেকে সেটা প্রতিহত করতে না পারার কারণে হয় তাহলে এ ভালোবাসাতে কোন গুনাহ নেই। তবে, শর্ত হচ্ছে- আল্লাহ্র সীমারেখা লঙ্ঘিত হতে পারবে না।
তবে, স্বামী বা স্ত্রী হিসেবে কোন পুরুষ বা নারীর প্রতি কোন ব্যক্তি হৃদয়ে টান অনুভব করা, তার প্রতি ভালোবাসা অনুভব করা হারাম নয়।
আল্লাহর প্রতি মুহাব্বত, স্বভাবজাত মুহাব্বতের বিরোধী নয়।
যেমন পানাহার, নারী ইত্যাদির প্রতি টান প্রকৃতিগত বিষয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
«দুনিয়াতে দুটি জিনিস আমার নিকট প্রিয়: ১. নারী, ২. সুগন্ধি।» (আহমাদ।)
সুতরাং পৃথিবীতে এমন কিছু জিনিস রয়েছে যেগুলোর মুহাব্বত করা শিরক নয়।
কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এসব বস্তুকে মুহাব্বত করেছেন। এজন্য এমন সব বস্তুকে মুহাব্বত করা জায়েজ যার মুহাব্বত নিষিদ্ধ বা হারাম নয়।
খাদিজা (রা.)-এর প্রতি রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসা :
আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুল (সা.)-এর কোনো স্ত্রীর প্রতি আমি ঈর্ষান্বিত হইনি। তবে খাদিজা (রা.)-কে না দেখলেও তাঁর প্রতি আমার ঈর্ষা জাগত। রাসুল (সা.) প্রায়ই খাদিজা (রা.)-এর কথা স্মরণ করতেন। অনেক সময় তিনি ছাগল জবাই করে কয়েক ভাগ করে তা খাদিজা (রা.)-এর বান্ধবীদের কাছে পাঠাতেন। তাই আমি রাসুল (সা.)-কে বলতাম, পৃথিবীতে যেন খাদিজা ছাড়া আর কেউ নেই। তখন রাসুল (সা.) বলতেন, সে যেমন উঁচু সম্মানের অধিকারী ছিলেন, তেমনি খুবই বুদ্ধিমতীও ছিলেন। তাঁর থেকে আমার সন্তান হয়েছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৩৮১৮)
অপর হাদিসে আয়েশা (রা.) খাদিজা (রা.)-এর কথা বর্ণনা করেন, ‘রাসুল (সা.) ছাগল জবাই করে বলতেন, এগুলো খাদিজা (রা.)-এর বান্ধবীদের কাছে পাঠিয়ে দাও। একদিন আমি তাকে রাগান্বিত করি। আমি তাঁকে বললাম, খাদিজা? রাসুল (সা.) বললেন, হ্যাঁ। তাঁর ভালোবাসায় আমি সিক্ত।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ২৪৩৫)
ভালোবাসার স্মৃতিবিজড়িত হার : খাদিজা (রা.)-এর বোনের ছেলে আবুল আস বিন রবি বিন আবদুল উজ্জাকে খাদিজা (রা.) অত্যন্ত স্নেহ করতেন। তাই নিজের কন্যা জায়নাব (রা.)-এর সঙ্গে তাঁর বিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের সময় জায়নাব (রা.)-কে খাদিজা (রা.) নিজের একটি হার দেন। আবুল আস বিন রবি (রা.) প্রথমে রাসুল (সা.)-এর প্রতি ঈমান আনেনি। তাই মুশরিকরা আবুল আসকে নির্দেশ দেয়, যেন সে মুহাম্মদ (সা.)-এর কন্যা জায়নাব (রা.)-কে তালাক দেন। এর বদলে কুরাইশের কোনো নারীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হবে। কিন্তু আবুল আস (রা.) তাদের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আল্লাহর শপথ, আমি আমার স্ত্রীকে ছেড়ে দেব না। আমি চাই না, কুরাইশের কোনো নারী এই স্ত্রীর বদলে আমার কাছে আসুক।’ (আস সিরাতুন নববিয়্যাহ, ২১৪/২)
জায়নাব (রা.) স্বামীর সঙ্গে মক্কায় থাকতেন। মুশরিকদের সঙ্গে বিবাহের নিষেধাজ্ঞার বিধান তখনো অবতরণ হয়নি। দুর্ভাগ্যক্রমে আবুল আস (রা.) বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং বন্দি হয়। মুক্তিপণের মাধ্যমে বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বন্দিদের আত্মীয়রা মুক্তিপণ নিয়ে আসছিল।
আবুল আসের মুক্তির জন্য জায়নাব (রা.) বিয়ের সময় মায়ের দেওয়া হারটি প্রেরণ করেন। হারটির ওপর রাসুল (সা.)-এর চোখ পড়তেই তিনি তা চিনে ফেলেন। হারের স্মৃতি তাঁর মনকে বিগলিত করে ফেলল। খাদিজা (রা.)-এর স্মৃতিকথা স্মরণ করিয়ে দিল। তিনি নিজেকে আর সামলাতে পারলেন না। রাসুল (সা.) সাহাবিদের উদ্দেশে বললেন, ‘তোমরা ভালো মনে করলে জায়নাবের সম্পদ ফেরত দিয়ে তাঁর বন্দিকে মুক্তিপণ ছাড়াই মুক্তি দাও।
সাহাবিরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল, ঠিক আছে। আমরা তাই করলাম।’ রাসুল (সা.) আবুল আসকে মুক্তি দেওয়ার আগমুহূর্তে জায়নাব (রা.)-কে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেন। কারণ ইসলামের কারণে উভয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ জরুরি। জায়েদ বিন হারেসা (রা.) ও একজন আনসারি সাহাবিকে মক্কার বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন। তারা যেন জায়নাবকে সঙ্গে করে মদিনায় নিয়ে আসে। আবুল আস (রা.) রাসুল (সা.)-এর অনুরোধ রক্ষা করেন এবং পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং : ২৬৩৬২)
ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেন:
“যদি কোন হারাম কারণ ছাড়া ভালোবাসা তৈরী হয় তাহলে এ ভালোবাসার কারণে ব্যক্তিকে নিন্দা করা হবে না। যেমন- যে ব্যক্তি তার স্ত্রীকে কিংবা তার দাসীকে ভালবাসত, এরপর তাদের মাঝে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে, কিন্তু ভালোবাসাটা মনের মধ্যে রয়ে গেছে– এমন ব্যক্তিকে নিন্দা করা হয় না। অনুরূপভাবে কারো যদি হঠাৎ চোখ পড়ে যায় এবং সে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়, কিন্তু তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও মনের মাঝে ভালোবাসা স্থান করে নেয়। যদিও তার কর্তব্য এটাকে প্রতিহত করা ও দূর করা।”[রওযাতুল মুহিব্বীন (পৃষ্ঠা-১৪)]
কিন্তু পবিত্র এ ভালবাসার সাথে অপবিত্র ও নেতিবাচক কোন কিছুর সংমিশ্রণ হলে তা আর ভালবাসা থাকে না, পবিত্রও থাকে না; বরং তা হয়ে যায় ছলনা,শঠতা ও স্বার্থপরতা।
তদুপরি, জনসমক্ষে যৌনাচারে মেতে উঠা নিতান্তই সভ্যতার পরিপন্থী। অবিবাহিত যুবক-যুবতীর ভালবাসা দিবস উদযাপনের নামে যে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি অনুকরণ করছে তা সম্পূর্ণ রূপে অবৈধ ও হারাম। বিবাহের পূর্বে এরূপ প্রেম-ভালবাসা যা ইসলামে কঠোর নিষিদ্ধ।
মুসলিমের জীবনের সব কিছু আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশনামতে হবে।
তাই কারো প্রতি অন্তরের ভালোবাসা থাকলে তা যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمِنْ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَندَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ
‘‘আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ্ ছাড়া অন্যকে আল্লাহ্র সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে ভালবাসার মত তাদেরকে ভালবাসে; কিন্তু যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ্র প্রতি ভালবাসায় তারা সুদৃঢ়।’’(সূরা আল-বাকারা:১৬৫)
শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসতে হবে, নতুবা কোন ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পাবে না।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلَاوَةَ الْإِيمَانِ أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ
‘‘তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকে সে ঈমানের স্বাদ পায়। ১. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে প্রিয় হওয়া। ২. শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসা। ৩. কুফুরীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ করা।’’(বুখারী, কিতাবুল ঈমান, হাদিস নং:১৫)
আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভালবাসার ফযীলত :
আল্লাহ রাব্বুল ইয্যতের মহত্ত্বের নিমিত্তে যারা পরস্পর ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপন করে, কিয়ামতের দিন তাদেরকে তিনি তাঁর রহমতের ছায়ায় জায়গা দেবেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَيْنَ الْمُتَحَابُّونَ بِجَلَالِي الْيَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِي ظِلِّي يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلِّي
‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার মহত্ত্বের নিমিত্তে পরস্পর ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপনকারীরা কোথায় ? আজ আমি তাদেরকে আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া দান করব। আজ এমন দিন, যে দিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া নেই।’’মুসলিম, কিতাবুল বিররি ওয়াস-সিলাহ, হাদিস নং৪৬৫৫)
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরও বলেন,
إِنَّ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ لَأُنَاسًا مَا هُمْ بِأَنْبِيَاءَ وَلَا شُهَدَاءَ يَغْبِطُهُمُ الْأَنْبِيَاءُ وَالشُّهَدَاءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِمَكَانِهِمْ مِنَ اللَّهِ تَعَالَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ تُخْبِرُنَا مَنْ هُمْ قَالَ هُمْ قَوْمٌ تَحَابُّوا بِرُوحِ اللَّهِ عَلَى غَيْرِ أَرْحَامٍ بَيْنَهُمْ وَلَا أَمْوَالٍ يَتَعَاطَوْنَهَا فَوَ اللَّهِ إِنَّ وُجُوهَهُمْ لَنُورٌ وَإِنَّهُمْ عَلَى نُورٍ لَا يَخَافُونَ إِذَا خَافَ النَّاسُ وَلَا يَحْزَنُونَ إِذَا حَزِنَ النَّاسُ..
‘‘নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছে যারা নবীও নয় শহীদও নয়; কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে তাঁদের সম্মানজনক অবস্থান দেখে নবী এবং শহীদগণও ঈর্ষান্বিত হবে। সাহাবিগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ! আমাদেরকে বলুন, তারা কারা ? তিনি বলেন, তারা ঐ সকল লোক, যারা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই একে অপরকে ভালবাসে। অথচ তাদের মধ্যে কোন রক্ত সম্পর্কও নেই, এবং কোন অর্থনৈতিক লেন-দেনও নেই। আল্লাহর শপথ! নিশ্চয় তাঁদের চেহারা হবে নূরানি এবং তারা নূরের মধ্যে থাকবে। যে দিন মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে,সে দিন তাঁদের কোন ভয় থাকবে না। এবং যে দিন মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকবে, সে দিন তাঁদের কোন চিন্তা থাকবে না..।’’(সুনানু আবী দাঊদ, কিতাবুল বুয়ূ‘, হাদিস নং ৩০৬০)
হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত– ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় পরস্পরকে ভালোবাসে, আমার রেজামন্দির আশায় পরস্পর বৈঠকে মিলিত হয়, আমার সন্তুষ্টির কামনায় পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ করে এবং আমার ভালোবাসার জন্যই নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের ভালোবাসা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়। (মুসলিম)।
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত-‘রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন– আল্লাহতায়ালার বান্দাগণের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা নবীও নয়, আর শহীদও নয়। কিন্তু বিচার দিবসে তাদের মর্যাদা দেখে নবী ও শহীদগণ তাদের ওপর ঈর্ষা করবেন। জিজ্ঞেস করা হলো- হে আল্লাহর রাসুল! তারা কারা? উত্তরে তিনি বললেন– তারা হচ্ছে সেসব লোক, যারা শুধু আল্লাহর মহব্বতে একে অপরকে মহব্বত করেছে। তাদের মধ্যে নেই কোনো রক্তের সম্পর্ক, নেই কোনো বংশের সম্পর্ক। তাদের মুখমণ্ডল হবে জ্যোতির্ময় এবং তারা নূরের মিম্বরের ওপর অবস্থান করবে। কিয়ামতের বিভীষিকাময় অবস্থায় মানুষ যখন ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে, তখন তারা ভীত হবে না। আর মানুষ যখন দুঃখে থাকবে, তখন তাদের কোনো দুঃখ থাকবে না। (তিরমিজি)।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে সে ঈমানের স্বাদ অনুভব করবে। যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সর্বাধিক প্রিয় হবে। অন্য কোনো ব্যক্তিকে সে একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে। আল্লাহ কুফুরি থেকে রক্ষা করার পর আবার তাতে ফিরে যাওয়া তার কাছে আগুনে নিক্ষেপের মতো অপছন্দনীয় হবে।’ (মুসলিম, হাদিস নং : ৪৩)।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তাঁর ছায়ায় রাখবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। ন্যায়পরায়ণ শাসক। আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে বেড়ে ওঠা যুবক। মসজিদের সঙ্গে অন্তর জুড়ে থাকা ব্যক্তি। আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসে, আল্লাহর জন্য তারা সমবেত হয় এবং তাঁর জন্য তারা পৃথক হয়। মর্যাদাবান ও সুন্দরী কোনো নারী ডাকলে সে বলে দেয়, আমি আল্লাহকে ভয় করি। গোপনে সদকাকারী ব্যক্তি, যার বাঁ হাত জানতে পায় না ডান হাত কী সদকা করেছে। নিভৃতে আল্লাহকে স্মরণকারী, যার দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে পড়ে।’ (বুখারি, হাদিস নং : ৬৬০)
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুমিনদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির জন্য একটি চমৎকার পন্থা বাতলে দিয়েছেন।
তিনি বলেন,
لَا تَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلَا تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا أَوَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ أَفْشُوا السَّلَامَ بَيْنَكُمْ..*
‘‘তোমরা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার না হবে, তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য স্থাপন করবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের কথা বলব না, যা করলে তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠিত হবে ? সাহাবীগণ বললেন, নিশ্চয় ইয়া রাসূলাল্লাহ ! (তিনি বললেন) তোমাদের মধ্যে বহুল পরিমাণে সালামের প্রচলন কর।’’(মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, হাদিস নং ৮১)
ভালবাসার গভীর টানে রূহের গতির এক দিনের দূরত্ব পেরিয়েও যে দুই মুমিনের সাক্ষাত হতে পারে তা ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার এক বর্ণনা থেকে আমরা পাই। তিনি বলেন,
النعم تكفر والرحم تقطع ولم نر مثل تقارب القلوب
‘‘কত নি‘আমতের না-শুকরি করা হয়, কত আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হয়, কিন্তু অন্তরসমূহের ঘনিষ্ঠতার মত (শক্তিশালী) কোন কিছু আমি কখনো দেখি নি।’’(ইমাম বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ :হাদীস নং২৬২)
সুতরাং ভালোবাসা হতে হবেঃ
১. আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর জন্য।
২. আমার পেয়ারে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্য।
৩. বাবা–মা‘য়ের জন্য।
৪. স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য।
৫. আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের জন্য।
৬. উস্তাদ, আলেমদের জন্য।
৭. ইমাম–মুসলিম যোগ্য নেতাদের জন্য।
৮. পাড়া প্রতিবেশী ও যাদের সাথে একসাথে মসজিদে নামাজ আদায় করি, সেসব মুসুল্লিদের জন্য।
৯. সাধারণ জনগণের জন্য।
আর এই ভালোবাসা হতে হবে আল্লাহর সন্তস্টির জন্য।
প্রিয় মুমিন-মুসলিম ভাই-বোনেরা !
ভালবাসা কোন পর্বীয় বিষয় নয়। এটি মানব জীবনের সুখ-শান্তির জন্য একটি জরুরি সার্বক্ষণিক মানবিক উপাদান।
সুতরাং আমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ বৃদ্ধির জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিখানো সার্বক্ষণিক পন্থাটি অবলম্বন করি।
বিশ্ব ভালবাসা দিবসের নামে এসব ঈমান বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড হতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে হেফাযত করুন।
শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যেন কাউকে ভালবাসি এবং শত্রুতাও যদি কারো সাথে রাখতে হয়, তাও যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই রাখি। আমীন !!!
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রায়ই এই দোয়া করতেন:
“হে আল্লাহ! আপনার ভালোবাসা চাই, আপনার ভালোবাসার জনের ভালোবাসা চাই; আর সে আমল করার তৌফিক চাই, যে আমল করলে আপনার ভালোবাসা লাভ করা যায়।’ (মুআত্তা ইমাম মালিক)
ভ্যালেন্টাইস ডে এর শুভেচ্ছা বিনিময়:
মুসলিমদের জন্য “ভ্যালেন্টাইস ডে” উপলক্ষে পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় করা নাজায়েজ, যেমনিভাবে এটি উদযাপন করাও জায়েজ নয়।
যেহেতু এ দুইটি কাজের মধ্যে কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য পাওয়া যায়। অথচ আমাদেরকে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদের দলভুক্ত। [সুনানে আবু দাউদ, ৪০৩১, আলবানী সহীহ সুনানে আবি দাউদ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন]
তাছাড়া প্রতি বছর নির্দিষ্ট কোন একটি দিনে শুভেচ্ছা জানানো সে দিনটি উদযাপন করা ও সে দিনটিকে উৎসব হিসেবে গ্রহণ করার নামান্তর। ইসলামে এটি নিষিদ্ধ।
আল্লাহই ভাল জানেন।
তথ্যসূত্র:
উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েব সাইট হতে সংগৃহিত।
সংকলনে:
মুফতী মাসূম বিল্লাহ
সিনিয়র মুহাদ্দিছ ও মুফতী,
জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম ঢাকা (মসজিদুল অকবার কমপ্লেক্স) মিরপুর-১, ঢাকা।
ও উস্তাযুল ফিকহ ওয়াল ইফতা,
মারকাযুল বুহূস আল-ইসলামিয়া ঢাকা।
খতীব,
আল মদীনা মসজিদ, ইস্টার্ন হাউজিং, রূপনগর, মিরপুর, ঢাকা।
Sharia Specialist, Islamic Economist, Banking & Finance Expert.
Khatib & Mufassir at Al Madina Jame Masjid at Eastern Housing, Pallabi Phase-2, Mirpur 11 ½.
Senior Muhaddis & Mufti at Jamia Islamia Darul Uloom Dhaka,Masjidul Akbar Complex, Mirpur-1,Dhaka-1216
Ustazul fiqh & Ifta at مركز البحوث الاسلامية داكا. Markajul Buhus Al Islamia Dhaka