১।প্রশ্নঃ
মাসে ৮-১০ হাজার টাকা ইনকামকারী নববিবাহিত হাসবেন্ডের উপর স্ত্রীর থাকার জন্যে কেমন ঘর নিশ্চিত করা ফরয?
উত্তরঃ وبالله سبحانه التوفيق
স্ট্যাটাস অনুযায়ী পর্দা ও নিরাপত্তা নিয়ে থাকার মত বাসস্থান স্বামীর জন্যে নিশ্চিত করা ওয়াজিব।
তবে স্ত্রী দাবি করলে স্বতন্ত্র ভিন্ন বাসস্থানের ব্যবস্থা করা জরুরী।
এই বাসস্থানের অবশ্যই তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে:
১/ বাসস্থানটি স্ত্রীর জন্য নিরাপদ হতে হবে
২/বাসস্থানে স্ত্রীর নিজস্বতা বা Privacy বজায় থাকতে হবে।
৩/ বাসস্থান এমন হতে হবে যেখানে স্ত্রীর কষ্ট বা সংকটাপন্ন হবে না।
পবিত্র কুরআনে আল্লহ তাআলা বলেন-
أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنتُم مِّن وُجْدِكُمْ وَلَا تُضَارُّوهُنَّ لِتُضَيِّقُوا عَلَيْهِنَّ
“তোমরা সামর্থ্যানুযায়ী নিজেরা যেরূপ গৃহে বাস কর, স্ত্রীদের বসবাসের জন্যও তদ্রুপ গৃহের ব্যবস্থা করে দাও। তাদের কষ্ট দিয়ে জীবন সংকটাপন্ন কর না।”
[সূরা তালাক, আয়াত- ৬]
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রী বা আমাদের ‘উম্মুল মুমিনীন’দের প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা বাসস্থান নির্মাণ করেছিলেন এবং প্রত্যেকে তাঁর নিজ নিজ গৃহে কর্তৃত্ব বজায় রেখে নিজস্বতা ও স্বাছন্দ্য নিশ্চিত করেছেন।
তবে স্বামী যদি অসচ্ছল হয়, স্বতন্ত্র থাকার ব্যবস্থা করা যদি তার পক্ষে সম্ভব না হয়, তাহলে স্ত্রী স্বামীর কাছে স্বতন্ত্র ঘর দাবি না করে ধৈর্য ধারণ করবে। (মাতালিবু উলিন নুহা)
এবং সেটা ইহসানের পর্যায়ে পড়বে ।
সুতরাং কেউ ইহসান করতে চাইলে উত্তম। সে নিশ্চয় ইহসানের প্রতিদান পাবে ।
আর এই ইহসান ও সবরের দরুণ স্বামী নিজের স্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে থাকবে।
স্বতন্ত্র আবাসস্থল বলতে –
স্বামীর পৈতৃক ভিটা থেকে দূরে গিয়ে নতুন ঘর নির্মাণ করতে হবে অথবা ভাড়া বাসায় চলে যেতে হবে—এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। পৈতৃক বাড়িতেই স্ত্রীর জন্য স্বতন্ত্র থাকার ঘর, রান্নাঘর ও বাথরুমের ব্যবস্থা করে দিলেই যথেষ্ট। এটুকু পাওয়ার পর অন্য বাড়ির দাবি করা অথবা পৈতৃক ভিটা ছেড়ে শহরে বা অন্য কোথাও চলে যাওয়ার দাবি করার অধিকার স্ত্রীর নেই। (মাজমাউল আনহুর)
কাসানি (রহ.) বলেন, ‘যদি স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে বড় ঘরের একটি কক্ষে থাকে এবং স্ত্রীর মৌলিক প্রয়োজন এককভাবে পূরণ করার ব্যবস্থা করে দেয়, তখন স্বামীর কাছে আলাদা ঘর দাবি করার অধিকার স্ত্রীর নেই।’ (বাদায়িউস সানায়ি)
হাসকাফি (রহ.) বলেন,
‘বড় ঘরের একটি অংশে স্ত্রীকে রেখে তার জন্য আলাদা বাথরুম ও রান্নাঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া যথেষ্ট।’
এর টীকায় ইবনে আবেদিন (রহ.) বলেন, ‘রান্নাঘর ও বাথরুম স্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ঘরের ভেতরে হতে হবে অথবা বাইরে হলেও তাতে অন্য কারও অংশীদারত্ব থাকা যাবে না।’ (রদ্দুল মুহতার)
কুয়েত থেকে প্রকাশিত “আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়া (ফিকহী বিশ্বকোষ)” তে এসেছে-
স্ত্রীর সাথে একই ঘরে পিতামাতা (বা অন্য কোন আত্মীয়) কে বসবাস করতে দেয়া জায়েয নয়। তাই স্বামীর কোন আত্মীয়ের সাথে একত্রে বসবাস করতে অসম্মতি জ্ঞাপন করার অধিকার স্ত্রীর রয়েছে। আলাদা বাসাতে থাকলে স্ত্রী তার ইজ্জত, সম্পদ, নিজস্বতা (privacy) ও অন্যান্য অধিকার উপভোগ করার পূর্ণ নিশ্চয়তা পেতে পারে। সুতরাং এ অধিকার পরিত্যাগে তাকে বাধ্য করার সাধ্য কারো নেই। হানাফি, শাফেয়ি, হাম্বলি মাযহাবসহ অধিকাংশ ফিকাহবিদগণের অভিমত এটি।
উল্লেখ্য, এসব বিধান তখন আর প্রযোজ্য হবে না, যদি বিয়ের সময় চুক্তি হয় বা পরে মেনে নেয়।
আরো জেনে রাখা উচিত,
স্বামীর অনুমতি ছাড়া অন্য লোককে তার ঘরে আসার অনুমতি দেয়া স্ত্রীর জন্য হালাল নয়।
এমনকি স্ত্রীর কোনো স্বজনও যদি স্বামীর নিকট অপছন্দনীয় হয় তাকেও ঘরে আসার অনুমতি স্ত্রী দিতে পারবে না। শুধু মা-বাবা দেখা করতে পারবেন সপ্তাহে একবার, কিন্তু স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রীর মা-বাবাকেও ঘরে থাকতে দেয়া বৈধ নয়।
والله سبحانه تعالى أعلم
বিস্তারিত দ্রষ্টব্য:
বাদায়িউস সানায়ি, আল জাওহারাতুন নায়্যিরাহ, আদ্দুররুল মুখতার, ফাতাওয়ায়ে শামী, ইত্যাদি।
২।প্রশ্নঃ
নববিবাহিতা একজন স্ত্রী পর্দা ও সেফটির সাথে স্বামীর বাড়িতে স্বাচ্ছন্দে থাকার ঘর না থাকলে যদি স্ত্রী নিজ ইচ্ছায় ও স্বামীর সম্মতিতে বাপের বাড়িতে থাকে সেক্ষেত্রে ৮-১০ হাজার টাকা ইনকামকারী স্বামীর উপর বর্তমান বাজার দরে স্ত্রীর ভরণ -পোষণ বাবদ প্রতি মাসে কতোটাকা দেয়া ফরয?
উত্তরঃ وبالله سبحانه التوفيق
স্ট্যাটাস ও সামর্থ অনুপাতে মধ্যম মানের কমপক্ষে দুই বেলা খাবার বা তার মূল্য আর বছরে স্টাটাস ও সামর্থ অনুপাতে কমপক্ষে দুই জোড়া কাপড় বা তার মূল্য দেয়া ওয়াজিব। যার দ্বারা পূর্ণ পর্দাও করতে পারে।
আল্লহ তাআলা বলেন,
لِيُنفِقْ ذُو سَعَةٍ مِّن سَعَتِهِ وَمَن قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللَّهُ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا مَا آتَاهَا سَيَجْعَلُ اللَّهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُسْرًا
বিত্তশালী ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী (স্ত্রীর জন্য) ব্যয় করবে। যে ব্যক্তি সীমিত পরিমাণে রিজিকপ্রাপ্ত, সে আল্লাহ যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যা দিয়েছেন, তদপেক্ষা বেশী ব্যয় করার আদেশ কাউকে করেন না। আল্লাহ কষ্টের পর সুখ দেবেন।’ (সুরা তালাক : আয়াত ৭)
অন্যত্র বলেন,
وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ {البقرة: 233}
‘আর জন্মদাতা পিতার দায়িত্ব হ’ল ন্যায়সঙ্গতভাবে প্রসূতি মায়েদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা’। (বাক্বারাহ ২/২৩৩)।
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলায়হি অসাল্লাম বলেন,
‘আর তোমাদের উপর তাদের ন্যায়সঙ্গত ভরণ-পোষণের ও পোশাক-পরিচ্ছদের অধিকার রয়েছে’। (মুসলিম হা/১২১৮; মিশকাত হা/২৫৫৫)।
ভরণপোষণের পরিমাণের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের অবস্থা বিবেচিত হবে। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে গরিব হলে একজন গরিব সাধারণত যে পরিমাণ খরচ করে থাকে, সে পরিমাণই করতে বাধ্য থাকবে। উভয় জন মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত হলে একজন মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত তার সামাজিক মর্যাদার দিকে লক্ষ রেখে যে পরিমাণ স্ত্রীর জন্য খরচ করে, সে পরিমাণই খরচ করতে বাধ্য থাকবে। উভয়ের অবস্থায় যদি ভিন্নতা থাকে একজন উচ্চবিত্ত, আরেকজন নিম্নবিত্ত, তাহলে মাঝামাঝি একটি পরিমাণ নির্ধারিত হবে। এসব ব্যাপারে ইসলাম সুনির্দিষ্ট কোনো অঙ্ক চাপিয়ে দেয়নি; বরং সামাজিকভাবে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ন্যায়ানুগ ভরণপোষণ দিতে হবে।
তবে অনেক আলেম বলেছেন, এ ক্ষেত্রে স্বামীর অবস্থাই বিবেচ্য; অর্থাৎ স্বামী যদি অবস্থাসম্পন্ন হয়, তাহলে সে তার মতো করে খরচ করবে। গরিব ও নিম্নবিত্ত হলে সে অনুপাতে খরচ করবে। (হিদায়া)
স্ত্রীর অসুস্থতায় তার চিকিৎসা সেবা, মেডিকেল খরচদান অসামর্থবান স্বামীর অপরিহার্য কর্তব্য নয়। তবে সামর্থবান হলে দেয়া উচিত। (ফাতাওয়ায়ে উসমানী)
স্ত্রীকে বাপের বাড়ীতে বেড়াতে কিংবা মা-বাবার সাক্ষাতের জন্য নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব স্বামীর নয়।
স্ত্রীর মা-বাবা তাদের মেয়েকে দেখতে এলে তাদের অতিথি সেবা, আপ্যায়ন করাও স্বামীর দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত নয়। এমনকি স্ত্রীর মা-বাবা সপ্তাহে মাত্র একবার আসতে পারবে। তাও দূর থেকে সাক্ষাত করে চলে যাবে, তাদেরকে ঘরে বসিয়ে সাক্ষাত করতে দেয়া স্বামীর অপরিহার্য দায়িত্ব নয়। والله سبحانه تعالى أعلم
৩।প্রশ্নঃ
পর্দা ও সেফটির সাথে স্বামীর বাড়িতে স্বাচ্ছন্দে থাকার মতো ঘর না পেয়ে নববিবাহিতা স্ত্রী স্বামীর কথা না শুনে বাপের বাড়িতে থাকলে স্বামীর উপর ভরণ -পোষণ না দেয়া অথবা একেবারেই না দেয়ার মতো দেয়া জায়েয?
উত্তরঃ وبالله سبحانه التوفيق
স্বামীর অনুমতি ছাড়া গেলে খরচ দেয়া ওয়াজিব নয়।
ওমর (রা.)-এর শাসনামলে এক ব্যক্তি বিয়ে করার সময় স্ত্রীকে তার বাবার বাড়িতে রেখে দেওয়ার শর্তারোপ করে। তখন ওমর (রা.) সেই শর্ত নাকচ করে বললেন, ‘স্ত্রী স্বামীর ঘরেই থাকবে।’ (কানজুল উম্মাল)
والله سبحانه تعالى أعلم
৪।প্রশ্নঃ
বিবাহিতা স্ত্রী শাশুড়ীর সাথে না মিললে, একসাথে থাকতে না চাইলে স্বামীর দায়িত্ব কি?
স্বামীর মায়ের উপর ভিত্তি করে স্ত্রীকে মানসিক/ শারিরীক টর্চার করা, প্রেশার প্রয়োগ করা কি বৈধ??
উত্তরঃ وبالله سبحانه التوفيق
না, বৈধ নয়। এক্ষেত্রে উভয়কে একসাথে মিলে মিশে থাকার জন্য বুঝাবে, আল্লহ তাআলার কাছে কান্নাকাটি করে দুআ করবে।
لقول الله تعالى: فَلاَ جُنَاْحَ عَلَيْهِمَا أَن يُصْلِحَا بَيْنَهُمَا صُلْحًا وَالصُّلْحُ خَيْر {النساء:128}.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শ্বশুর পরিবারের অনিষ্টের ভয়ে ফাতিমা বিনতে কায়েসকে শ্বশুর বাড়িতে ইদ্দত পালন করতে না দিয়ে ইবনু উম্মে মাকতূমের বাড়িতে ইদ্দত পালনের নির্দেশ দেন (আবুদাউদ হা/২২৮৪; ইবনু হিববান হা/৪২৫৩; ইরওয়া হা/১৮০৪)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শ্বশুর পরিবারের অনিষ্টের ভয়ে ফাতিমা বিনতে কায়েসকে শ্বশুর বাড়িতে ইদ্দত পালন করতে না দিয়ে ইবনু উম্মে মাকতূমের বাড়িতে ইদ্দত পালনের নির্দেশ দেন (আবুদাউদ হা/২২৮৪; ইবনু হিববান হা/৪২৫৩; ইরওয়া হা/১৮০৪)।
তবে স্ত্রীকে আলাদা ঘরে রাখলেও পরিবারের অন্য সদস্যের প্রতি কর্তব্য পালন করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অবহেলা করা যাবে না;
বিশেষ করে মা-বাবার সেবায় কার্পণ্য করা কোনোভাবেই ইসলাম অনুমোদন করে না।
ফকীহগণ লিখেছেন,
নিজের প্রয়োজন এবং স্ত্রী-সন্তান থাকলে তাদের স্বাভাবিক প্রয়োজন পূরণের পর অবশিষ্ট সম্পদ পিতামাতার জন্য খরচ করা ওয়াজিব। যদি কোনো কিছুই উদ্বৃত্ত না থাকে তাহলে অভাবী পিতামাতাকে নিজের পরিবারে শামিল করে নিবে। কারণ গোটা পরিবারের খাদ্য-বস্ত্রে একজন বা দু’ জন মানুষকে শামিল করা অসম্ভব নয়। -আলমুফাসসাল ১০/১৯৫।
والله سبحانه تعالى أعلم
পরিশেষে কিছু কথা—
পারিবারিক বন্ধনের ব্যাপারটি অনেক জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ব্যাপারগুলো নিয়ে অনেক সময় অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায় অনেককে।
বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী আলাদা হয়ে থাকা শরিয়তের পাবন্দির জন্য ভাল হলেও সেটা করতেই হবে এমন নয় অর্থাৎ সেটা ফরজ নয়। যা পূর্বে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
শরিয়তের পাবন্দি যৌথ পরিবারে থাকলেও করা সম্ভব, একক পরিবারেও সম্ভব। সেটা নির্ভর করে ব্যক্তি বিশেষের চারিত্রিক কাঠামোর উপর।
আমাদের দেশে যেটা দেখা যায়, বৌ’রা একক কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী বা যৌথ পরিবার হতে বেরিয়ে আলাদা থাকতে চায়। মা-বাবার প্রতি আনুগত্যের কারণে স্বামীরা চায় তার স্ত্রী আর সকলের সাথে যৌথ পরিবারে থাকুক। এই বাদানুবাদ হতে ঘরসংসার ভাঙ্গনের মুখে পড়ে। বিষয়টা এমন নয় যে, কোন স্ত্রী যৌথ পরিবারে এবাদত ফিকির করতে পরছে না বলে যৌথ পরিবার থেকে বের হতে চায়।
আবার এমনও নয় যে, একক পরিবারে থাকলে স্ত্রী একেবারে রাবেয়া বসরী হয়ে যাবে। একক কর্তৃত্ব, স্বাধীনভাবে চলা, শ্বশুড় শ্বাশুড়ীর শাসন বারণ সহ্য করতে না পারা স্ত্রীলোক বা স্বামীদের একক পরিবার গঠনে মূল ভূমিকা পালন করে, ধর্মীয় অনুসাসন মেনে চলার আকাঙ্খায় নয়। – এটা আমাদের দেশের পরিস্থিতি।
বরং একক পরিবারে থাকার চেয়ে যৌথ পরিবারে থাকলে সামাজিক ও ধর্মীয় অনেক সুবিধা আছে। বাচ্চা লালন পালন করা, শারিরীক সমস্যায় চিকিৎসা সেবায়, সংসার দেখাশুনা করাসহ অনেক সুবিধা রয়েছে। এটা শরিয়তে হারাম নয়।
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
সাতটি বা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) নয়টি মেয়ে রেখে আমার পিতা ইন্তেকাল করেন। তারপর আমি এক বিধবা মহিলাকে বিয়ে করি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ জাবির! তুমি বিয়ে করেছ? আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি তারপর জিজ্ঞাসা করলেনঃ কুমারী বিয়ে করেছ না বিধবা? আমি বললামঃ বিধবা। তিনি বললেনঃ কুমারী করলে না কেন? তুমি তার সাথে প্রমোদ করতে, সেও তোমার সাথে প্রমোদ করতো। তুমিও তাকে হাসাতে, সেও তোমাকে হাসাতো।
জাবির (রাঃ) বলেনঃ আমি তাকে বললামঃ অনেকগুলো কন্যা সন্তান রেখে আবদুল্লাহ (তার পিতা) মারা গেছেন তাই আমি ওদের-ই মত কুমারী মেয়ে বিয়ে করা পছন্দ করিনি। আমি এমন মেয়েকে বিয়ে করলাম যে তাদের দেখাশোনা করতে পারে।
তিনি বললেনঃ আল্লাহ তোমাকে বরকত দিন অথবা বললেনঃ কল্যাণ দান করুন। সহীহ বুখারী, ৪৯৭৬।
المستندات الشرعية
قوله صلى الله عليه وسلم: ” أحق الشروط أن توفوا به ما استحللتم به الفروج ” متفق عليه
ففي سنن ابن ماجه عن أبي هريرة، قال: قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: اللهم إني أحرِّج حق الضعيفين: اليتيم، والمرأة.
قال النووي -رحمه الله- في رياض الصالحين: ومعنى “أحرج”: ألحق الحرج، وهو الإثم بمن ضيع حقهما، وأحذر من ذلك تحذيرًا بليغًا، وأزجر عنه زجرًا أكيدًا. انتهى.
فقد ثبت في الصحيحين من حديث أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: إذا دعا الرجل امرأته إلى فراشه فأبت فبات غضبان عليها لعنتها الملائكة حتى تصبح. وفي صحيح مسلم عن أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: والذي نفسي بيده ما من رجل يدعو امرأته إلى فراشه فتأبى عليه إلاّ كان الذي في السماء ساخطاً عليها حتى يرضي عنها .
قال الكاساني -رحمه الله- في بدائع الصنائع: ولو أراد الزوج أن يسكنها مع ضرتها، أو مع أحمائها كأم الزوج وأخته، وبنته من غيرها، وأقاربه، فأبت ذلك؛ عليه أن يسكنها في منزل مفرد؛ لأنهن ربما يؤذينها، ويضررن بها في المساكنة. وإباؤها دليل الأذى والضرر. انتهى.
قال خليل المالكي في مختصره: ولها الامتناع من أن تسكن مع أقاربه. اهـ
قال شارحه عليش: لتضررها باطلاعهم على أحوالها وما تريد ستره عنهم وإن لم يثبت إضرارهم بها.
وفي شرح ميارة: سُئِلَ مَالِكٌ عَن امْرَأَةٍ تَزَوَّجَهَا رَجُلٌ، فَأَسْكَنَهَا مَعَ أَبِيهِ وَأُمِّهِ، فَشَكَتْ الضَّرَرَ فِي ذَلِكَ؟ فَقَالَ مَالِكٌ: لَيْسَ لَهُ أَنْ يُسْكِنَهَا مَعَهُمَا. فَقِيلَ لَهُ إنَّهُ يَقُولُ: إنَّ أَبِي أَعْمَى، وَأُغْلِقُ دُونِي وَدُونَهُ بَابًا. قَالَ: يُنْظَرُ فِي ذَلِكَ، فَإِنْ رُئِيَ ضَرَرٌ، كَأَنَّهُ يَقُولُ: إنْ رُئِيَ ضَرَرٌ يُحَوِّلُهَا عَنْ حَالِهَا. انتهى.
قال في تحفة الحبيب من الشافعية مبينا ما على الزوجة من الحق للزوج وما لها من الحق عليه: الْحَقُّ الْوَاجِبُ لِلزَّوْجِ عَلَى زَوْجَتِهِ أَرْبَعَةٌ: طَاعَتُهُ, وَمُعَاشَرَتُهُ بِالْمَعْرُوفِ, وَتَسْلِيمُ نَفْسِهَا إلَيْهِ, وَمُلَازَمَةُ الْمَسْكَنِ. وَالْحَقُّ الْوَاجِبُ لَهَا عَلَيْهِ أَرْبَعَةٌ أَيْضًا: مُعَاشَرَتُهَا بِالْمَعْرُوفِ, وَمُؤْنَتُهَا, وَالْمَهْرُ, وَالْقَسْمُ.اهـ
قال ابن قدامة في المغني: فأما البالغ الرشيد: فلا حضانة عليه، وإليه الخيرة في الإقامة عند من شاء من أبويه. فإن كان رجلًا، فله الانفراد بنفسه، لاستغنائه عنهما، ويستحب أن لا ينفرد عنهما، ولا يقطع بره عنهما. اهـ
قال ابن نجيم: لأن المرأة لا يجب عليها طاعة الزوج في كل ما يأمر به إنما ذلك فيما يرجع إلى النكاح وتوابعه خصوصاً إذا كان في أمره إضرار بها.
وقال ابن حجر الهيتمي في الفتاوى الفقهية الكبرى بعد ذكر الأحوال الضرورية التي يجوز للمرأة الخروج فيها دون إذن زوجها: لا لعيادة مريض وإن كان أباها، ولا لموته وشهود جنازته، قاله الحموي. انتهى.
وقال ابن قدامة في المغني: وللزوج منعها من الخروج من منزله، إلى ما لها منه بد، سواء أرادت زيارة والديها، أو عيادتهما، أو حضور جنازة أحدهما، قال أحمد، في امرأة لها زوج وأم مريضة: طاعة زوجها أوجب عليها من أمها، إلا أن يأذن لها. انتهى.
قال البهوتي الحنبلي في الروض المربع: يلزم الزوج نفقة زوجته – قوتًا، وكسوة- وسكناها بما يصلح لمثلها، ويعتبر الحاكم ذلك بحالهما عند التنازع، فيفرض للموسرة تحت الموسر قدر كفايتها من أرفع خبز البلد، وأدمه، ولحمًا، عادة الموسرين بمحلهما، وما يلبس مثلها من حرير، وغيره، وللنوم فراش، ولحاف، وإزار، ومخدة، وللجلوس حصير جيد، وزلي، وللفقيرة تحت الفقير من أدنى خبز البلد، وأدم يلائمه، وما يلبس مثلها، ويجلس عليه، وللمتوسطة مع المتوسط، والغنية مع الفقير، وعكسها ما بين ذلك عرفًا. اهـ.
جاء في الموسوعة الفقهية الكويتية: فَالْجَمْعُ بَيْنَ الْأَبَوَيْنِ وَالزَّوْجَةِ فِي مَسْكَنٍ وَاحِدٍ لَا يَجُوزُ ( وَكَذَا غَيْرُهُمَا مِنْ الْأَقَارِبِ ) وَلِذَلِكَ يَكُونُ لِلزَّوْجَةِ الِامْتِنَاعُ عَن السُّكْنَى مَعَ وَاحِدٍ مِنْهُمَا ; لِأَنَّ الِانْفِرَادَ بِمَسْكَنٍ تَأْمَنُ فِيهِ عَلَى نَفْسِهَا وَمَالِهَا حَقُّهَا , وَلَيْسَ لِأَحَدٍ جَبْرُهَا عَلَى ذَلِكَ . وَهَذَا مَذْهَبُ جُمْهُورِ الْفُقَهَاءِ مِن الْحَنَفِيَّةِ وَالشَّافِعِيَّةِ وَالْحَنَابِلَةِ . اهـ .
ذكر ابن نجيم الحنفي في الكنز الرائق أن النفقة إذا أطلقت فإنها تنصرف إلى الطعام والكسوة والسكنى ونقل ذلك عن محمد بن الحسن.
وقال خليل في مختصره: يجب لممكنة مطيقة للوطء على البالغ وليس أحدهما مشرفا قوت وإدام وكسوة ومسكن.
وقال البهوتي في الروض المربع: وهي كفاية من يمونه خبزا، وأدما، وكسوة، ومسكنا، وتوابعها.اهـ
وقد ذكر النووي في المنهاج مثل ذلك.
قال ابن قدامة في المغني: قال أصحابنا: ونفقتها معتبرة بحال الزوجين جميعا، فإن كانا موسرين فلها عليه نفقة الموسرين، وإن كانا معسرين فعليه نفقة المعسرين، وإن كانا متوسطين فلها عليه نفقة المتوسطين، وإن كان أحدهما موسرا والآخر معسرا فعليه نفقة المتوسطين أيهما كان الموسر. وقال أبو حنيفة ومالك: يعتبر حال المرأة على قدر كفايتها؛ لقول الله تعالى: وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ {البقرة: 233} والمعروف الكفاية، ولأنه سوّى بين النفقة والكسوة، والكسوة على قدر حالها فكذلك النفقة، وقال النبي صلى الله عليه وسلم لهند: خذي ما يكفيك وولدك بالمعروف. فاعتبر كفايتها دون حال زوجها، ولأن نفقتها واجبة لدفع حاجتها فكان الاعتبار بما تندفع به حاجتها دون حال من وجبت عليه كنفقة المماليك، ولأنه واجب للمرأة على زوجها بحكم الزوجية لم يقدر فكان معتبرا بها كمهرها وكسوتها، وقال الشافعي: الاعتبار بحال الزوج وحده؛ لقول الله تعالى: لينفق ذو سعة من سعته ومن قدر عليه رزقه فلينفق مما آتاه الله لا يكلف الله نفسا إلا ما آتاها. ولنا أن فيما ذكرناه جمعا بين الدليلين، وعملا بكلا النصين، ورعاية لكلا الجانبين، فيكون أولى.. انتهى.
قال ابن قدامة -رحمه الله- في المغني: وَمَنْ لَمْ يَفْضُلْ عَنْ قُوتِهِ إلَّا نَفَقَةُ شَخْصٍ، وَلَهُ امْرَأَةٌ، فَالنَّفَقَةُ لَهَا دُونَ الْأَقَارِبِ؛ لِقَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَدِيثِ جَابِرٍ: إذَا كَانَ أَحَدُكُمْ فَقِيرًا، فَلْيَبْدَأْ بِنَفْسِهِ، فَإِنْ كَانَ لَهُ فَضْلٌ، فَعَلَى عِيَالِهِ، فَإِنْ كَانَ لَهُ فَضْلٌ، فَعَلَى قَرَابَتِهِ. انتهى.
قال الحصكفي الحنفي: لا يلزمه مداواتها.
قال ابن عابدين في حاشيته شارحا لكلامه: أي إتيانه لها بدواء المرض ولا أجرة الطبيب ولا الفصد ولا الحجامة.
قال العدوي في حاشيته على شرح كفاية الطالب الرباني: لا يلزمه الدواء لمرضها، ولا أجرة نحو الحجامة، ولا المعالجة في المرض.
قال الخطيب الشربيني الشافعي في شرحه لمتن أبي شجاع: ولا يجب لها عليه دواء مرض ولا أجرة طبيب وحاجم ونحو ذلك كفاصد وخاتن لأن ذلك لحفظ الأصل ويجب لها طعام أيام المرض وأدمها لأنها محبوسة عليه ولها صرفه في الدواء ونحوه.
وقال البهوتي في كشاف القناع: ولا يجب عليه -أي الزوج- الأدوية وأجرة الطبيب والحجام والفاصد -أي الزوجة-.
ويرى بعض المالكية وجوب نفقة علاج الزوجة على الزوج، جاء في منح الجليل ممزوجا لمختصر خليل للقاضي عليش: “(و) لا يفرض (دواء ولا حجامة) ولا أجرة طبيب. ابن عرفة: ابن حبيب ليس عليه أجر الحجامة ولا الطبيب، ونحوه قول أبي حفص. ابن العطار: يلزمه أن يداويها بقدر ما كان لها من نفقة صحتها لا أزيد. ابن زرقون: في نفقات ابن رشيق عن ابن عبد الحكم: عليه أجر الطبيب والمداواة. انتهى
الحنفية – قالوا: إذا كان الزوجان موسرين أو معسرين فلا خلاف في أمرهما، فتقدر في حال اليسر بنفقة اليسار، وفي حالة العسر بنفقة الإعسار، أما إذا كان أحدهما موسراً والآخر معسراً، ففيه رأيان مصححان:
الرأي الأول: تقدر النفقة بحسب حالهما معاً، بمعنى أنها تجب لها نفقة الوسط، فإذا كان الزوج موسراً وهي فقيرة، وجبت لها نفقة الوسط بحيث تكون زائدة عن حالها ناقصة عن حاله، وهذا لا إشكال فيه، أما إذا كانت هي غنية وهو فقير، فقد يقال: إن النفقة الزائدة عن حاله يعجز عن أدائها، ويجاب: بأنه تجب عليه نفقة الوسط، ولكن لا يكلف إلا بدفع نفقة الفقير، والباقي يبقى ديناً في ذمته.
الرأي الثاني: اعتبار حال الزوج فقط، فإن كان غنياً وهي فقيرة، فرضت عليه نفقة الموسرين وإذا كان فقيراً وهي غنية، فرضت عليه نفقة المعسرين وكلا القولين مصحح، ولا يخفى أن الثاني هو المنضبط في باب الأحكام، وحيث كان صحيحاً فينبغي الأخذ به، وإن كانت المتون على الأول. الفقه على المذاهب الأربعة – المجلد 4 – الصفحة 493 – جامع الكتب الإسلامية
جاء في العناية: “على الزوج أن يسكنها في دار مفردة، ليس فيها أحد من أهله، إلا أن تختار ذلك؛ لأن السكنى من كفايتها، فتجب لها كالنفقة، وقد أوجبه الله تعالى مقرونا بالنفقة حيث قال: (أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنْتُمْ مِنْ وُجْدِكُمْ) الطلاق/ 6، وإذا أوجب السكنى حقاً لها، فليس له أن يُشرك غيرها فيها؛ لأنها تتضرر به فإنها لا تأمن على متاعها ويمنعها ذلك من المعاشرة ومن الاستمتاع”.
جاء في مجمع الأنهر في شرح ملتقى الأبحر: ” وفي شرح المختار ولو كان في الدار بيوت وأبت أن تسكن مع ضرتها ومع أحد من أهله إن خلى لها بيتا وجعل له مرافق وغلقا على حدة ليس لها أن تطلب بيتا آخر”
قال الحصكفي : وكذا تجب لها السكنى في بيت خالٍ عن أهله وأهلها بقدر حالهما كطعام وكسوة وبيت منفرد من دار له غلق ومرافق ومراده لزوم كنيف (أي : بيت خلاء ) ومطبخ كفاها لحصول المقصود .أ.هـ.
وعلَّق ابن عابدين فقال : والمراد من ( الكنيف والمطبخ ) أي : بيت الخلاء وموضع الطبخ بأن يكونا داخل البيت (أي : الغرفة ) أو في الدار لا يشاركهما فيهما أحد من أهل الدار .أ.هـ
قال الإمام الشربيني رحمه الله في مغني المحتاج : ولو اشتملت دار على حجرات مفردة المرافق جاز إسكان الضرات فيها من غير رضاهن والعلو والسفل إن تميزت المرافق مسكنان . اهـ .
واختار شيخ الإسلام ابن تيمية أنه إذا كان الزوج فقيراً وعاجزا عن إيجاد سكن مستقل لزوجته ، فليس لها أن تطالب بما يعجز عنه . نقله عنه في “مطالب أولي النهى” (5/122)
وراجع:
الكاساني؛ بدائع الصنائع (4/16)،
مجمع الأنهر (2/180)،
حاشية رد المحتار (3/577)
مواهب الجليل (4/188)،
تحفة المحتاج (8/327)،
المغني (9/230).
الفقه على المذاهب الأربعة – المجلد 4 – الصفحة 493 –
উত্তর প্রদান –
মুফতী মাসুম বিল্লাহ।
Sharia Specialist, Islamic Economist, Banking & Finance Expert.
Khatib & Mufassir at Al Madina Jame Masjid at Eastern Housing, Pallabi Phase-2, Mirpur 11 ½.
Senior Muhaddis & Mufti at Jamia Islamia Darul Uloom Dhaka,Masjidul Akbar Complex, Mirpur-1,Dhaka-1216
Ustazul fiqh & Ifta at مركز البحوث الاسلامية داكا. Markajul Buhus Al Islamia Dhaka