স্বামী যদি স্ত্রীর যোনি বা তার আশপাশে হাত চালনা করে তাহলে কি স্ত্রীর গোসল ফরয হবে?

By | February 9, 2021

আসসালামু আলাইকুম মুহতারম,

গোসল কেন ফরজ হয় সেটা জানা আছে। কিন্তু আমার জানতে চাওয়ার বিষয় হলো স্বামী যদি স্ত্রীর যোনি বা তার আশপাশে হাত চালনা করে স্ত্রীকে পূর্ণ তৃপ্তি দেয় বা স্ত্রীকে এমন অবস্থায় উপনীত করে যে সে আর হাত চালাতে দেয় না, তাহলে কি স্ত্রীর গোসল ফরয হবে?
গোসল ফরয হবার কারণ আমরা যেগুলো জানি সেগুলো বাদে অন্য কোন কারণ আছে কিনা যেটা সাধারণ মানুষের বুঝা কষ্টকর, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এমন হলে আসলে গোসল ফরজ হয়ে যায়।
দ্রুত উত্তর পেলে খুব উপকৃত হতাম। জাঝাকাল্লাহ খায়রান।

উত্তর: وبالله سبحانه التوفيق
এমন হলে বীর্য নির্গত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্ত্রীর গোসল ফরয হবে। যদি বীর্যপাত না হয় তাহলে গোসল ফরয হবে না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “পানির কারণে পানি অপরিহার্য।” [সহিহ মুসলিম, অধ্যায় : হায়েজ, অনুচ্ছেদ : পানি নির্গত হলেই পানি ঢালা। হা/ ৩৪৩]।
স্বামী-স্ত্রী একে অপরের লজ্জা স্থানে হাত, পা বা শরীরে অন্য কোন অঙ্গ লাগলে তাতে গোসল ফরজ হয় না। এমন কি স্বামী এবং স্ত্রীর লজ্জা স্থান একটির সাথে আরেকটির কেবল স্পর্শ হলে তাতেও গোসল ফরয হয় না যতক্ষণ না পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ (মাথা) নারীর লজ্জা স্থানে প্রবেশ করে (বীর্যপাত ঘটুক অথবা না ঘটুক)।
আল্লাহ বলেন:
وَ إِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا
অর্থ: যদি তোমরা নাপাক হয়ে থাক, তবে গোসল কর। সূরা মায়েদাহ – ৬) ।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‏ إِذَا الْتَقَى الْخِتَانَانِ وَتَوَارَتِ الْحَشَفَةُ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ
“দু’বিপরীত লিঙ্গ পরস্পর মিলিত হলে এবং পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ অদৃশ্য হয়ে গেলেই গোসল ওয়াজিব হয়।” [সুনানে ইবনে মাজাহ, পবিত্রতা ও তার সুন্নতসমূহ অধ্যায়। সনদ সহীহ। তাখরীজ আলবানী: সহীহাহ ৩/২৬০।]
আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
قَعَدَ بَيْنَ شُعَبِهَا الأَرْبَعِ وَأَلْزَقَ الْخِتَانَ بِالْخِتَانِ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ
“তার (স্ত্রী) চার অঙ্গ (দু হাত ও দু পা অথবা দু রান ও দু পা) এর মাঝখানে বসলে এবং এক যৌনাঙ্গ অপর যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে দিলেই গোসল আবশ্যক হবে।” অন্য বর্ণনায় আছে, و إن لم ينزل “বীর্য নির্গত না হলেও।” অন্য বর্ণনায় আছে, বীর্যপাত হোক অথবা না হোক।
(সহিহ বুখারী ও মুসলিম। সহীহ বুখারী গোসল অধ্যায়। অনুচ্ছেদ: যখন দুটি বিপরীত লিঙ্গ মিলিত হবে।)
আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِذَا جَلَسَ الرَّجُلُ بَيْنَ شُعَبِهَا الأَرْبَعِ ثُمَّ جَهَدَهَا فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ ‏
“যখন কোন ব্যক্তি তার (স্ত্রীর) চার অঙ্গের মধ্যবর্তী স্থানে উপবিষ্ট হয় এবং তার সাথে সঙ্গম করে, তখন গোসল ওয়াজিব হয়।” [সুনানে ইবনে মাজাহ, পবিত্রতা ও তার সুন্নতসমূহ অধ্যায়, মুসনাদ আহমাদ ৬৬৩২ তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: সহীহ আবু দাউদ ২০৯, ইরওয়াহ ১২২।]
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
إِذَا جَاوَزَ الْخِتَانُ الْخِتَانَ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ
“এক লজ্জা স্থান অপর লজ্জা স্থানে প্রবেশ করলে গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়।” (তিরমিযী, পরিচ্ছদ: ৮০. পুরুষের লজ্জা স্থান ও স্ত্রীর লজ্জা স্থান একত্রে মিলিত হলে গোসল করা ওয়াজিব)
উবাই ইবনু কা’ব রা. থেকে বর্ণিত:
إِنَّمَا جَعَلَ ذَلِكَ رُخْصَةً لِلنَّاسِ فِي أَوَّلِ الإِسْلاَمِ لِقِلَّةِ الثِّيَابِ ثُمَّ أَمَرَ بِالْغُسْلِ وَنَهَى عَنْ ذَلِكَ
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় লোকদের কাপড় চোপড়ের স্বল্পতার কারণে কেবল সহবাসে বীর্য নির্গত না হলে গোসল না করার অনুমতি প্রদান করেন। তবে পরবর্তীতে এরূপ অবস্থায় (বীর্যপাত না হলেও) তিনি গোসল করার নির্দেশ দেন এবং গোসল ত্যাগ না করতে বলেন। [সুনানে আবু দাউদ অধ্যায়: পবিত্রতা অর্জন অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮৫ সহবাসে বীর্যপাত না হলে-সহিহ]
এ মর্মে আরও একাধিক হাদিস রয়েছে।
সুতরাং পুরুষাঙ্গ নারীর যৌনাঙ্গে প্রবেশ করলেই গোসল ফরয হবে-বীর্যপাত ঘটুক অথবা না ঘটুক।

لقوله ﷺ لما قالت أمُّ سلمة: يا رسول الله، هل على المرأة من غسلٍ إذا احتلمتْ؟ قال: نعم، إذا رأت الماء،
عن أبي سعيدٍ الخدري رضي الله تعالى عنه قال: قال رسولُ الله ﷺ: الماء من الماء.
رواه مسلم

في البخاري، أنه صلى الله عليه وسلم قال لعتبان بن مالك: ((إذا أعجلت أو أقحطت،و فعليك الوضوء)).

وعن أبي هريرة قال: قال رسولُ الله ﷺ: إذا جلس بين شُعَبِها الأربع ثم جهدها فقد وجب الغسلُ.
متفقٌ عليه، وزاد مسلم: وإن لم يُنزل.
– وعن أنسٍ قال: قال رسولُ الله ﷺ في المرأة ترى في منامها ما يرى الرجل قال: تغتسل.
متفقٌ عليه، زاد مسلمٌ: فقالت أمُّ سلمة: وهل يكون هذا؟! قال: نعم، فمن أين يكون الشَّبَه؟.

( قوله : وكذا المرأة إلخ ) في البحر عن المعراج : لو احتلمت المرأة ولم يخرج الماء إلى ظهر فرجها عن محمد يجب
وفي ظاهر الرواية لا يجب ؛ لأن خروج منيها إلى فرجها الخارج شرط لوجوب الغسل عليها وعليه الفتوى .
رد المحتار – (1 / 467)

والمرأة كذلك في ظاهر الرواية لأن خروج منيها إلى فرجها الخارج شرط لوجوب الغسل عليها وعليه الفتوى هكذا في معراج الدراية
الفتاوى الهندية – (1 / 15)

فإن قيل إذا قضت شهوتها لم تتيقن خروج منيها ويقين الطهارة لا يرفع بظن الحدث إذ حدثها وهو خروج منيها غير متيقن وقضاء شهوتها لا يستدعي خروج شيء من منيها كما قاله في التوشيح
أجيب بأن قضاء شهوتها منزل منزلة نومها في خروج الحدث فنزلوا المظنة منزلة المئنة
الإقناع للشربيني – (1 / 66)

وقال البغوي خروج منيها بشهوة أو بغيرها يوجب الغسل كمني الرجل
المجموع شرح المهذب – (2 / 141)
والله تعالى أعلم

উত্তর প্রদান :

মুফতী মাসুম বিল্লাহ ।

সিনিয়র মুহাদ্দিস ও মুফতি -জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম,ঢাকা।

খতিব-আল মদিনা জামে মসজিদ, ইস্টার্ন হাউজিং, মিরপুর, ঢাকা।

@muftimasumbillahofficialpage

Facebook Comments Box