ইসলাম সম্পর্কে জানুন

ইসলামের শাব্দিক বা আভিধানিক অর্থ হল আত্মসমর্পণ করা, নিরাপত্তা,  শান্তি ও প্রশান্তি। ইসলাম এমন একটি খোদায়ী বা ঐশী ধর্ম যা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র ওপর নাজিল হয়েছে।’

প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা ও সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ, জগৎ, জীবন এবং মানব জাতির বিষয়ে প্রকৃত তত্ত্বজ্ঞান প্রদান করার সাথে সাথে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূলের প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস স্থাপন করা অপরিহার্য।

ইসলাম যতটা না ধর্মীয় বিশ্বাস তার চেয়েও বেশি হল, ইসলাম একটি সমৃদ্ধ ও যুক্তিভিত্তিক সর্বশেষ ধর্ম, যা মানুষকে সুপথ দেখায়।

পবিত্র কুরআনের সুরা মায়েদার 03 নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,

আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে (চিরস্থায়ী) ধর্ম বা দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।

ইসলাম আল্লাহর মনোনীত পূর্ণাঙ্গ দীন। এই জীবন ব্যবস্থায় কোনোরূপ অপূর্ণতার কথা চিন্তা করা যায় না। মানুষের ঈমান-আকীদা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক জীবনের মূলনীতিসমূহ ইসলামে এমন ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যা প্রকৃতপক্ষেই পরিপূর্ণ এবং অতুলনীয়।

“ইসলামের বিধানগুলো এমনই যে সেসব মানুষকে ধ্বংসাত্মক আচরণ থেকে বিরত রাখে। যেমন, মদ, জুয়া, মিথ্যাচার, চুরি, অন্যদের শোষণ করা, হত্যা ইত্যাদি।

অন্যদিকে ইসলাম মানুষকে নামাজ-রোজা ও যাকাত বা দানসহ যেসব ভালো কাজ করতে বলে সেসবই মানুষের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, মানুষের প্রতি সম্মান দেখানো, জীব-জন্তুকে কষ্ট না দেয়া ও পরিবেশ দূষণ না করাও এমনই কিছু ভালো বা সৎকাজ।

এ ব্যাপারে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি বনি আদমকে অধিক মর্যাদা দান করেছি। স্থলে ও সমুদ্রে (নৌপথে) তাদের চলাচলের বাহন প্রদান করেছি। তাদের উন্নত রিজিক দান করেছি। আর আমি এ মানবজাতিকে অন্যান্য সৃষ্টির উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।’ (সূরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ৭১)।

আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের রোজা, নামাজ ও সদকার চেয়ে অধিকতর উত্তম কাজের কথা বলব না?’ সাহাবারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, অবশ্যই বলবেন। তিনি বললেন, ‘পরস্পরের মধ্যে বিবাদ নিরসন করা। কারণ পরস্পরের মধ্যে থাকা বিবাদই সব কিছু ধ্বংস করে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫০৯)

কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ নিষেধ করেন না ঐ লোকদের সঙ্গে সদাচার ও ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার করতে যারা তোমাদের সঙ্গে ধর্মকেন্দ্রিক যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের আবাসভূমি থেকে তোমাদের বের করে দেয়নি। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন।’ (সুরা আল মুমতাহিনা-৮)

আল্লাহ বলেন, ‘তারা আল্লাহ তায়ালার বদলে যাদের ডাকে, তাদের তোমরা কখনো গালি দিও না, নইলে তারাও শত্রুতার কারণে না জেনে আল্লাহ তায়ালাকেও গালি দেবে।’ (সূরা আনআম-১০৮)।

রসুল (স) বলেন, ‘সাবধান! যদি কোনো মুসলিম কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তার অধিকার খর্ব করে, তার ক্ষমতার বাইরে কষ্ট দেয় এবং তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক নিয়ে যায়, তাহলে কেয়ামতের দিন আমি তার পক্ষে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্থাপন করব।’ (আবু দাউদ)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘একজন মুসলিমের ওপর অন্য মুসলিমের ছয়টি অধিকার আছে।’ তখন বলা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, তা কী? তিনি বলেছেন, “মুসলিমের সঙ্গে তোমার দেখা হলে সালাম দেবে। তোমাকে ডাকলে সাড়া দেবে। তোমার কাছে পরামর্শ চাইলে উত্তম পরামর্শ দেবে। হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বললে তুমি তার উত্তরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে। অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাবে। আর মারা গেলে তার জানাজায় অংশগ্রহণ করবে।” (মুসলিম, হাদিস : ২১৬২)

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, আমাকে পাঠানো হয়েছে সুন্দর চরিত্রের পূর্ণতা প্রদানের জন্য। (মুসলিম ও তিরমিজি)।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সূরা-৬৮ কলম, আয়াত: ৪)।

রাসূলে আকরাম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে-ই শ্রেষ্ঠ যার চরিত্র অধিক উত্তম।’ (তিরমিযি, আবু দাউদ)।

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ও কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে কাছে থাকবে যে তোমাদের মধ্যে অধিকতর সুন্দর চরিত্রের অধিকারী। আর আমার কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত ও আমার কাছ থেকে সবচেয়ে দূরে থাকবে বাচাল ও অহংকারী।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১০৮)
❒ ‘সবার চেয়ে উত্তম ব্যক্তি সে, যার চরিত্র সবার চেয়ে সুন্দর এবং তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম ব্যক্তি সেই, যে তোমাদের মধ্যে নিজ স্ত্রীদের নিকট উত্তম’। (আহমাদ; তিরমিযী; ইবনে হিব্বান; সহীহুল জামে/১২৩২)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেউ আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর ঈমান আনলে সে যেন কল্যাণকর কথা বলে নতুবা চুপ থাকে। কেউ আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর ঈমান আনলে সে যেন প্রতিবেশীকে সম্মান করে। কেউ আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর ঈমান আনলে সে যেন অতিথির সমাদর করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০১৮)

হাদিসে বলা হয়েছে, ‘তোমরা ঈমান না আনা পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আবার পরস্পরকে ভালোবাসতে না পারা পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না।’

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সূর্য উদিত হওয়া প্রতিটি দিবসেই মানুষের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর সদকা দেওয়া আবশ্যক হয়। দুজনের মধ্যে বিবাদ নিরসন করা সদকার সমতুল্য। কাউকে বাহনে উঠতে কিংবা কোনো সামগ্রী বাহনে তুলে দিতে সাহায্য করা সদকা। সুন্দর কথা বলা সদকা। নামাজে যাওয়ার প্রতিটি পদক্ষেপ সদকা। পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা সদকা।’ (মুসলিম, হাদিস : ১০০৯)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ কোমলতাকে পছন্দ করেন। আল্লাহ কোমলতার বদলায় যা দেন, কঠোরতার কারণে তা দেন না।’ (বুখারি, হাদিস : ২৫৯৩)

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা রবের ক্ষমার দিকে এবং আসমান ও জমিনের সমান বিস্তৃত জান্নাতের দিকে দৌড়ে যাও, যা খোদাভীরুদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে, ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৩-১৩)

❒ ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করবে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করবেন না’ (বুখারী/৭৩৭৬; মুসলিম/৬১৭২)
❒ ‘কল্যাণমুলক কোন কর্মকেই অবজ্ঞা করো না, যদিও তা তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাত করেও হয়’ (মুসলিম/৬৮৫৭)।
❒ ‘তোমরা উপহার বিনিময় কর, পারস্পারিক সম্প্রীতি লাভ করবে’ (বাইহাক্বী; সহীহুল জামে/৩০৮)।
❒ ‘তোমরা সকল ধর্মের মানুষদেরকে দান কর’। (ইবনে আবী শাইবা; সিঃ সহীহাহ/২৭৬৬)।
❒ ‘যে ব্যক্তি কুয়া খুঁড়বে, যে কুয়া থেকে কোন পিপাসার্ত জীব, জ্বীন, মানুষ অথবা পাখি পানি পান করলেই কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাকে সওয়াব দান করবেন’ (বুখারী তারীখ, ইবনে খুযাইমা, সঃ তারগীব/৯৬৩)।
❒ ‘শ্রেষ্ঠ মানুষ হল সেই ব্যক্তি, যে অপরের সাথে মিশতে পারে এবং অপরেও তার সাথে মিশতে পারে’ (সহীহুল জামে/১২৩১)।
❒ ‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক তারা, যাদের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য তাদের তোয়ায করা হয়’ (আবু দাউদ; সহীহুল জামে/৭৯২৩)।

প্রকৃত ইসলাম ধর্মই কেবল মাত্র মানবিক চাহিদা পূরণ করতে পারে, সুপথ অথবা বিপথ গ্রহণের তত্ত্বজ্ঞান প্রদান করতে পারে, জাহান্নাম কিংবা নরক হতে মুক্তিলাভ এবং জান্নাত বা স্বর্গ লাভের সহজ সঠিক পথ প্রদর্শন করতে পারে।

ইসলামের বৈশিষ্ট্যের ব্যাপকতা আমাদের জীবনের প্রত্যেকটি অংশে প্রভাব বিস্তার করে। মানব জীবনে যা কিছু প্রয়োজন তার সব কিছুর নীতি-নিধারণী বিবরণ আল-কুরআনে আছে। এতে নতুনভাবে কোনো কিছুর সংযোজন বা বিয়োজন করার আদৌ কোনো অবকাশ নেই।

ইসলামের সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রামাণিকভাবে আলোচিত হয়েছে। ইসলামের সৌন্দর্যের নানাদিক, বিভিন্ন আঙ্গিক তুলে ধরে এতেই যে মানুষের ইহ ও পরকালীন জীবনের একমাত্র সাফল্যের গ্যারান্টি তাও প্রমাণিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। তিনি তোমাদের কর্ম ত্রুটিমুক্ত করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে, তারা অবশ্যই সফলকাম হবে।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৭০-৭১)

কেবল নিজেকে রক্ষা করাই একজন মুসলমানের দায়িত্ব নয়, অন্যদের রক্ষা করাও প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব। তাই মানব জাতিকে জাহান্নামের আগুন তথা পরকালের শাস্তি থেকে রক্ষা করার জন্যও মুসলমানদেরকে সচেষ্ট হতে হবে। 

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআন মজিদে বলেছেন, ‘মহাকালের শপথ, মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়। (পারা: ৩০, সূরা-১০৩
আসর, আয়াত: ১-৩)।

ইসলাম তার জন্মলগ্ন থেকেই নানা ধরনের ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূল পরিবেশে মুখোমুখি হয়ে আসছে। তবে সকল ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে ইসলাম এগিয়ে গেছে বিজয়ী বেশে, মাথা উঁচু করে।

বর্তমান যুগে মুসলিমবিশ্বে এমন অনেক যুবা ও তরুণ রয়েছে যারা আধুনিক বস্তুবাদী সভ্যতার সন্তানদের অনুকরণ-অনুসরণ, বিশেষ করে তাদের স্থূল চাকচিক্যময় জীবন,খেল-তামাশা ইত্যাদির অনুসরণ করে নিজেদেরকে মর্যাবান করছে বলে ভাবছে। অথচ তারা নিজেদের প্রকৃত মর্যাদা ও সম্মান ইসলাম ব্যতীত কোথাও খুঁজে পাবে না।

পাশ্চাত্য সভ্যতায় নারীর দুর্গতি, ভোগান্তি, দুর্বাবস্থা, ইসলামী আদর্শের সুশীত ছায়াতলেই যে নারীর প্রকৃত মুক্তি, শান্তি, স্বাধীনতা, নারীর মর্যাদা রক্ষা। যা কুরআনে সুস্পষ্টভাবে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। 

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا

“হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক উৎস থেকে। আর তা থেকে তোমাদের স্ত্রীদেরকেও সৃষ্টি করেছেন। এরপর তা থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক।” (সূরা নিসা, আয়াত ০১)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ

হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন। (সুরা আল-হুজরাত: ১৩)

আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ, ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ, রোজা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ,, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক জিকিরকারী পুরুষ ও জিকিরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৩৫)।

আল্লাহ বলেন-
‘আর যখন সুসংবাদ দেয়া হয় তাদের কাউকে কন্যাসন্তানের, তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় আর সে হয় বড়ই ব্যথিত। সে মুখ লুকায় লোকদের থেকে, তাকে যে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে তার গ্লানির কারণে। সে কি একে (জীবিত) রাখবে বেইজ্জতি সত্ত্বেও, না তাকে পুঁতে রাখবে (জীবন্ত কবর দিবে) মাটিতে। তাদের ফায়সালা কতইনা নিকৃষ্ট।’ (সুরা নহল : আয়াত ৫৮-৫৯)

নারী সন্তানকে হত্যাকারীদের জন্য কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছে। ঘোষণা করেছে,

وَإِذَا الْمَوْءُودَةُ سُئِلَتْ. بِأَيِّ ذَنْبٍ قُتِلَتْ

“আর স্মরণ করো সেই দিনের কথা! যখন জীবন্ত কবরস্থ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে?” (সুরা তাকউইর, আয়াত ৮-৯)

কন্যা সন্তানও যে সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান হতে পারে সে সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে,

لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ يَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ الذُّكُورَ. أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا وَيَجْعَلُ مَنْ يَشَاءُ عَقِيمًا إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ

“আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন। তিনি তো সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।” (সুরা শু’রা: আয়াত ৪৯, ৫০)

কুরআনের পাশাপাশি হাদীসের মাঝেও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কন্যা সন্তানদেরকে খুবই সম্মান ও মর্যাদার উপলক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে,

“ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত; তিনি বলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; যে ব্যক্তির একটি মেয়ে আছে আর সে তাকে তুচ্ছ মনে করে নাই, অপমানিত করে নাই এবং ছেলেদের উপর প্রাদান্য দেয় নাই। আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” (সুনানে আবু দাউদ)

আরো ইরশাদ হয়েছে, “আনাস ইবনে মালেক রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; যে ব্যক্তি দুটি কন্যা সন্তান সাবালক হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করল সে কেয়ামতের দিবসে আমার সাথে থাকবে।” (সহীহ মুসলিম)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,

عن عقبة بن عامر يقول : سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ” من كان له ثلاث بنات ، فصبر عليهن وأطعمهن وسقاهن وكساهن من جدته ، كن له حجابا من النار يوم القيامة ” (سنن ابن ماجة)

“উকবা ইবনে আমের হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন; যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান আছে অত:পর সে তাদের নিয়ে ধৈর্য্য ধারন করে এবং তাদেরকে ভরণ-পোষণ দিয়ে খাওয়ায় পান করায় তার নিজ সম্পদ থেকে, ক্বিয়ামতের দিবসে ঐ কন্যা সন্তানগুলো তার জন্য জাহান্নাম থেকে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে।” (সুনানে ইবনে মাজা)

আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن أبى سعيد الخدرى ، قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : (من عال ثلاث بنات فأدبهن وزوجهن وأحسن إليهن فله الجنة) (سنن أبي داود)

“আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ণিত: তিনি বলেল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান আছে, সে তাদেরকে আদব শিক্ষা দিয়েছে এবং বিবাহ দিয়েছে এবং তাদের সাথে সদাচরন করেছে, তার জন্য রয়েছে জান্নাত।” (সুনানে আবু দাউদ)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,

أكمل المؤمنين إيمانا أحسنهم خلقا. وخياركم خيار لنسائه وبناته

“পরিপূর্ণ মু’মিন হলো সেই ব্যক্তি, যার আখলাক-চরিত্র উত্তম। আর তোমাদের মধ্যে সেই সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রী-কন্যাদের কাছে উত্তম।””

ইরশাদ হয়েছে:

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে। (সুরা রূম: আয়াত ২১)

আরো ইরশাদ হয়েছে,

وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً

“আর অবশ্যই তোমার পূর্বে আমি রাসূলদের প্রেরণ করেছি এবং তাদেরকে দিয়েছি স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি। (সুরা রা’দ: আয়াত ৩৮)

অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে:

هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ

“তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্যে পরিধেয় আর তোমরা তাদের জন্যে পরিধেয়।” (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৭)

অন্যত্র ঘোষণা করেছে,

انْكِحُوهُنَّ بِإِذْنِ أَهْلِهِنَّ وَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ

“সুতরাং তোমরা তাদেরকে তাদের অভিভাবকদের অনুমতিক্রমে বিবাহ কর এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও।” (সূরা নিসা: আয়াত ২৫)

অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে,

وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً

“আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও।” (সূরা নিসা: আয়াত ৪)

বিবাহের পর স্ত্রীদের সাথে সর্বদা সদাচারণ বজায় রাখার নির্দেশ দিয়ে ইসলাম ঘোষণা করেছে,

وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ

“আর তোমরা তাদের সাথে সদাচারণ করো।” (সূরা নিসা: আয়াত ১৯)

নিজে ভালো খাবে, উত্তম পোষাক পড়বে আর স্ত্রীদেরকে নিম্ন মানের জীবন ধারণে বাধ্য করার জাহেলি মানসিকতাকে সমূলে বিনাশ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,

أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنْتُمْ مِنْ وُجْدِكُمْ

“তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেখানে তোমরা বসবাস কর সেখানে তাদেরকেও বাস করতে দাও।” (সূরা তালাক, আয়াত ৬)

নারীর নিজের ভরণ-পোষণের পাশাপাশি সন্তানের দায়িত্বও স্বামীর কাঁধে তুলে দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,

لِيُنْفِقْ ذُو سَعَةٍ مِنْ سَعَتِهِ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنْفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللَّهُ

“বিত্তশালীরা যেনো সামর্থানুযায়ী স্ত্রী-সন্তানের উপর ব্যয় করে। সীমিত উপার্জনকারীরা আল্লাহর দেয়া অর্থানুপাতে ব্যয় করবে।” (সূরা তালাক, আয়াত ৭)

পুরুষদের উপর নারীদের অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে ঘোষণা করেছে,

وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِى عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكُيمٌ

“নারীদের উপর যেমন তোমাদের কিছু অধিকার রয়েছে ঠিক তেমনি তোমাদের উপরও তাদের কিছু অধিকার রয়েছে। স্ত্রীর উপর পুরুষের মর্যাদা। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।” (সূরা বাকারা : আয়াত ২২৮)

নারীদেরকে দূর্বল ও অসহায় পেয়ে যাতে করে কেউ তাঁদের উপর জুলুম ও অত্যাচার না করে সেজন্যে ইসলাম ঘোষণা করেছে,

وَلاَ تُمْسِكُوهُنَّ ضِرَارًا لِّتَعْتَدُواْ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ

“আর তোমরা স্ত্রীদেরকে কষ্ট দেয়ার জন্যে আটকে রেখো না। আর যারা এ ধরণের জঘন্যতম অন্যায় করবে তারা নিজেদের উপরই জুলুম করবে।” (সূরা বাকারা : আয়াত ২৩১)

বার্ধক্যেও নারীর সম্মান-মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছে ইসলাম:

বার্ধক্যে নারীদের দায়িত্ব সন্তানদের উপর অর্পন করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,

وَوَصَّيْنَا الإِنْسَـٰنَ بِوَالِدَيْهِ حُسْناً

“আর আমি মানুষদেরকে তাদের পিতা-মাতার সাথে সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি।” (সূরা আনকাবুত : আয়াত ৮)

অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে,

وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

“আর তুমি তাদের (তোমার পিতা-মাতার) সামনে দীনতার পক্ষপুটকে বিছিয়ে দাও। আর বলো যে, হে আমার রব! আপনি তাদের উপর রহম করুন, যেমন তারা আমার উপর বাল্যকালে রহম করেছেন। ” (সূরা বনী ইসরাঈল : আয়াত ২৪)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,

وَإِن جَـٰهَدَاكَ عَلَىٰ أَن تُشْرِكَ بِى مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلاَ تُطِعْهُمَا وَصَـٰحِبْهُمَا فِى الدُّنْيَا مَعْرُوفاً

“আর তাঁরা যদি তোমাকে আমার সাথে শিরক করার এমন বিষয়ের বাধ্য করে তোমাদের কাছে যার জ্ঞান নেই, তবে (সেক্ষেত্রে) তুমি তাঁদের অনুসরণ করো না। তবে তাঁদের সাথে দুনিয়াতে সৎব্যবহার এবং সদাচারণ বজায় রাখো।” (সূরা লুকমান, আয়াত ১৫)

নিম্নোক্ত হাদীস থেকে যা পরিস্কারভাবে ফুটে উঠেছে।

عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : جاء رجل إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال : يا رسول الله من أحق الناس بحسن صحابتي ؟ قال : أمك ,, قال : ثم من ؟ قال : أمك, قال : ثم من ؟ قال : أمك, قال : ثم من ؟ قال : أبوك . (متفق عليه)

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে একবার জিজ্ঞাসা করা হলো যে ইয়া রাসূলাল্লাহ! পিতা-মাতার মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি সম্মান ও মর্যাদার হকদার কে? প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, তোমার মা। সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, তোমার মা। সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, তোমার মা। এরপর সাহাবী চতুর্থ বার যখন জিজ্ঞেস করলেন যে, তারপর কে? তখন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, তোমার বাবা।” (বুখারী ও মুসলিম)

এক হাদীসে রাসূল সা. বলেন,

عن معاوية بن جاهمة أنه جاء النبي صلى الله عليه وسلم فقال : يا رسول الله أردت أن أغزو، وجئت أستشيرك ؟ فقال: “هل لك من أم”؟ قال نعم: قال: “فالزمها فإن الجنة تحت رجليها” رواه النسائي

হযরত মুয়াবিয়া বিনতে জাহিমা নবীজীর সা. এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যুদ্ধে যেতে চাচ্ছি। আপনার কাছে পরামর্শের জন্য এসেছি। তিনি বললেন, তোমার মা আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তাঁকে সঙ্গ দাও। কেননা জান্নাত তাঁর দুই পায়ের নিচে।” (সুনানে নাসাঈ )

অন্যায়ভাবে কেউ কোনো নারীকে অপবাদ দিলে তার জন্য শাস্তির বিধান দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,

وَالَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً وَلَا تَقْبَلُوا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا وَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ

“আর যারা সচ্চরিত্র নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারপর তারা চারজন সাক্ষী নিয়ে আসে না, তবে তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কর এবং তোমরা কখনই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না। আর এরাই হলো ফাসিক।” (সুরা আন-নূর: আয়াত ৪)

আমল ও সওয়াবের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষকে সমান করেছে ইসলাম:

এভাবে নারীদেরকে দুনিয়ার জীবনে নিশ্চিত, নিরাপদ করার পর পরকালীন জীবনেও তাদের জন্য কল্যাণ ও মঙ্গলের কথা ঘোষণা করেছে। এক্ষেত্রে পুরুষ-নারী বলে কাউকে আলাদা করা হয় নি। ইরশাদ হয়েছে,

مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

“যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব।” (সুরা আন-নাহল: আয়াত ৯৭)

আরো ইরশাদ হয়েছে,

مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ. وَمَنْ يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ نَقِيرًا

“আর পুরুষ কিংবা নারীর মধ্য থেকে যে নেককাজ করবে এমতাবস্থায় যে, সে মুমিন, তাহলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি খেজুরবীচির আবরণ পরিমাণ যুল্ম ও করা হবে না।” (সুরা নিসা: আয়াত ১২৪)

অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে,

أَنِّي لَا أُضِيعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِنْكُمْ مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى بَعْضُكُمْ مِنْ بَعْضٍ

‘নিশ্চয় আমি তোমাদের কোন পুরুষ অথবা মহিলা আমলকারীর আমল নষ্ট করব না। তোমাদের একে অপরের অংশ। (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ১৯৫)

সুরা আল আহযাব এর ৩৫নং আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন:

أَنِّي لَا أُضِيعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِنْكُمْ مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى بَعْضُكُمْ مِنْ بَعْضٍ. إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا

“নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়ামপালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।” (সুরা আহযাব: আয়াত ৩৫).

স্বামীদের উপর নিজ স্ত্রীদের জন্য মহরানা প্রদান বাধ্যতামূলক করে ঘোষণা করেছে,

وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً

“আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও।” (সূরা নিসা: আয়াত ৪)

ইসলাম নারীর আর্থিক স্বাবলম্বীতা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ প্রয়োজনে শরীয়তের সীমা ঠিক রেখে নারীকে কর্মস্থলে যাওয়ারও অনুমতি দিয়েছে। ইসলাম নারীর নিজের প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব পিতা, স্বামী, সন্তানের উপর ন্যস্ত করলেও; নারীর নিজের আয়, নিজের সম্পত্তি কোনো ব্যবসায় বিনিয়োগ করে সেখান থেকে অর্জিত মুনাফা ইত্যাদির উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীনতা দিয়েছে নারীর হাতে। এক্ষেত্রে জোর করে অন্য কারো জন্য সম্পদ গ্রাস করাকেও হারাম করেছে।

সুপথ প্রদর্শনের মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআন প্রতি দিন বিশ্বের লাখ লাখ মানুষকে দেখিয়ে দিচ্ছে যে যুক্তি ও প্রজ্ঞাভিত্তিক এই মহাগ্রন্থ নানা জ্ঞান এবং সত্যকে পাওয়ার এক বড় উৎস।

ফরাসি চিন্তাবিদ (Jull La baume)-এর মতে, কুরআন প্রজ্ঞার এমন এক সাগরের মত যাতে নানা দিক থেকে মিলিত হয়েছে বিভিন্ন রকম জ্ঞানের নদ-নদী। আর মানুষ উপকৃত হচ্ছে তা থেকে। 

 Jull La baume-এর মতে, পবিত্র কুরআন এক চির-জীবন্ত বই এবং সব যুগের গবেষক ও জ্ঞানীরা তাদের ধারণ-ক্ষমতা বা যোগ্যতা অনুযায়ী এই মহাগ্রন্থ থেকে উপকৃত হন।

মার্কিন নওমুসলিম নারী ‘বিটি বাওম্যান’ ইসলাম সম্পর্কিত নানা বই পড়ে পবিত্র কুরআনের সঙ্গে পরিচিত হন। কুরআনের আয়াতগুলো তাকে জীবনের নতুন নতুন প্রাণবন্ত ধারা।

এ প্রসঙ্গে বিটি বলেছেন: যতই কুরআন তিলাওয়াত করছিলাম ততই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করছিলাম। তার মতে প্রতিদিনই কিছু সময় ধরে কুরআন অধ্যয়ন, কুরআনের নানা দিক ও সৌন্দর্য বোঝার চেষ্টা করা এবং এমনকি এ মহাগ্রন্থের আয়াত মুখস্থ করা মুসলমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কারণ, কুরআনের পথ-নির্দেশনা ছাড়া জীবন অর্থহীন ও অন্তঃসারশূন্য।

বিটি বলেছেন: যখন কুরআন অধ্যয়ন করি তখন অনুভব করি যে এক ভিন্ন জগতে প্রবেশ করেছি, তাই ইসলামের জগতে আমার সফরের আনন্দ অন্তহীন এবং তা এনে দেয় চিরস্থায়ী সৌভাগ্য।“

মার্কিন নওমুসলিম নারী ‘বিটি বাওম্যান’-এর মতে, ইসলাম মানুষের প্রতি আল্লাহর এক উপহার এবং ধার্মিকতাই করে জীবনকে প্রকৃত অর্থপূর্ণ।

তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: ‘ধর্মের লক্ষ্য হল প্রাত্যহিক জীবনকে অর্থ দান করা। অর্থাৎ আমাদের প্রাত্যহিক কাজকর্ম, আত্মিক ও শারীরিক চাহিদা, যোগাযোগ- এইসব কিছুকেই আধ্যাত্মিক ব্যবস্থা তথা ইসলামের সঙ্গে যুক্ত করা। ইসলাম মানুষের জীবনে যতটা আধ্যাত্মিকতা জরুরি তার পুরোটাই পরিপূর্ণভাবে দিয়ে থাকে।’

নওমুসলিম পাদ্রি কাভানের মতে, ভারসাম্যহীন সংস্কৃতির কারণে পাশ্চাত্যের চাকচিক্যতার ভেতরে শূন্যতা ও দুর্বলতা বিদ্যমান। তারা বিজ্ঞানকে ভোগ-বিলাস বা আরামের কাজে ব্যবহার করছে। এর মাধ্যমে তারা আত্মাকে দরিদ্র ও উদ্বেগের মধ্যে ছেড়ে দিয়েছে। এ কারণেই তাদের বস্তুবাদী সভ্যতায় উত্তেজনা আর অবিচার। কিন্তু এ থেকে ইসলাম সম্পূর্ণ মুক্ত এবং মুসলিমদের এই বিপদ থেকেও মুক্ত রাখতে সক্ষম।

ইসলামের বৈষম্যহীন বিধানও মুগ্ধ করেছে কাভানকে। তিনি বলেন, ‘এখানে সৎ কাজের পুরস্কার ও মন্দ কাজের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এ জন্য ইসলামে যৌক্তিক ও বিবেকসম্মত চমৎকার সব কর্মসূচি রয়েছে। এ সব সৌন্দর্যের কারণেই আমি ৪২ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি এবং ইব্রাহিম কাভান নাম ধারণ করি।’

প্রকৃত ইসলাম একটি সত্য স্বাভবিক ধর্ম

উপরের আলোচনা থেকে নিশ্চয় আপনার কাছে পরিস্কার হয়েছে যে, আপনি এখুনি মুসলিম হয়ে যেতে পারেন।

ইসলাম গ্রহণ করা খুবই সহজ। কোন মানুষ নিজে নিজেই সেটা করতে পারে; এমনকি সে যদি একেবারে নিঃসঙ্গ হয়, কিংবা মরুভূমিতে থাকে কিংবা কোন বদ্ধ কামরায় থাকে সেখানেও সে নিজে ইসলাম গ্রহণ করতে পারে।

আপনি গিয়ে গোসল করে নিন এবং বলুন,

“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই; আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল (বার্তাবাহক)।” 

যাতে অন্তর্ভুক্ত আছে- মানুষের পক্ষ থেকে আল্লাহর দাসত্বের স্বীকৃতি, আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ, আল্লাহকে উপাস্য হিসেবে স্বীকার করে নেয়া, নিজের ওপর আল্লাহকে যা ইচ্ছা হুকুমদাতা হিসেবে মেনে নেয়া। যা স্বীকার করবে এবং মুসলমানদের একজন হিসেবে গণ্য হবে।

মুসলমানদের প্রাপ্য যে যে অধিকার রয়েছে তার জন্যেও সেসব অধিকার সাব্যস্ত হবে এবং মুসলমানদের ওপর যে যে দায়িত্ব রয়েছে তার ওপর সেসব দায়িত্ব বর্তাবে।

ইসলাম গ্রহণের পর পরই সে ব্যক্তি আল্লাহ তার ওপর যেসব আবশ্যকীয় দায়িত্ব অর্পণ করেছেন সেগুলো পালন করা শুরু করবে।

যেমন- যথাসময়ে নামায আদায় করা, রমযান মাসে রোজা (উপবাস) পালন করা ইত্যাদি।

Facebook Comments Box