ইস্তিখারা কি ? ইস্তিখারার নামায/সালাতুল ইস্তিখারা এর পদ্ধতি কি ?

By | March 21, 2021

আমাদের জীবনে এমন ঘটনা ঘটে যা আমরা চাই না কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার মধ্যেই আমাদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে । আবার অনেক সময় এমন কিছু আশা করি যার মধ্যে হয়ত কোন অকল্যাণ ও ক্ষতি অপেক্ষা করছে ।

قال سبحانه وتعالى: {وَعَسَى أَن تَكْرَهُواْ شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ وَعَسَى أَن تُحِبُّواْ شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ وَاللّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ} (سورة البقرة: 216).

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমদের কাছে হয়তবা কোন একটা বিষয় পছন্দনীয় নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর । আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর । বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না ।” [সূরা বাকারা: ২১৬]

আমরা কেউই ভবিষ্যত সম্পর্কে জানি না । কোথায় কল্যাণ নিহীত আছে সে ব্যাপারে কারো জ্ঞান নাই।

বিভিন্ন সময় একাধিক বিষয়ের মধ্যে কোনটিকে গ্রহণ করবো সে ব্যাপারে দ্বিধা-দন্ধে পড়ে যাই। তাই সঠিক সিদ্ধান্তে উপণিত হওয়ার জন্য আসমান জমীনের সৃষ্টিকর্তা, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত সকল বিষয়ে যার সম্যক জ্ঞান আছে, যার হাতে সকল ভাল-মন্দের চাবি-কাঠি সেই মহান আল্লাহর তায়ালার নিকট উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করতে হয়। যেন তিনি তার মনের সিদ্ধান্তকে এমন জিনিসের উপর স্থীর করে দেন যা তার জন্য উপকারী। যার ফলে তাকে পরবর্তীতে আফসোস করতে না হয়।

হাদিস শরীফে ইস্তিখারা করার প্রতি বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

ইস্তিখারার গুরুত্ব

হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত জাবির রা. বর্ণনা করেছেন,
…. كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَلِّمُنَا الِاسْتِخَارَةَ فِي الْأُمُورِ كُلِّهَا كَالسُّورَةِ مِنْ الْقُرْآنِ يَقُولُ: إذَا هَمَّ أَحَدُكُمْ بِالأَمْرِ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম আমাদের কাজ-কর্মের ব্যাপারে ইস্তিখারা করার নিয়ম-পদ্ধতি এত গুরুত্বসহকারে শিক্ষা দিতেন, যেরূপ গুরুত্ব সহকারে আমাদের কোরআন মজিদের কোনো সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, যখন তোমাদের কেউ কোনো কাজ করার ইচ্ছা করে (আর সে তার পরিণতি সম্পর্কে চিন্তিত হয়, তখন তার উচিত এভাবে ইস্তিখারা করা)…। (সহিহ বুখারি, হাদিস-১১৬২. সুনানে তিরমিযি, হাদিস-৪৮০)

মহানবী স. এস্তেখারার প্রতি গুরুত্বারোপ করতে যেয়ে বলেছেন,

روي عن عَنْ جَابِرٍ وعن سعد بن أبي وقاص : أن النبي قال: من سعادة ابن آدم استخارة الله، ومن سعادة بني آدم رضاه بما قضى الله، ومن شقوة ابن آدم تركه استخارة الله، ومن شقوة ابن آدم سخطه بما قضى الله.،صحيح البخاري

সা’আদ বিন আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, বনী আদম তার রবের কাছে ইস্তিখারা করাই তার সৌভাগ্যের বিষয়। বনী আদমের আরো সৌভাগ্য হচ্ছে আল্লাহ্‌ তাআলা তার জন্য যা নির্ধারন করেন তাতে সন্তুষ্টি থাকার মাধ্যমে। আর বনী আদমের দূর্ভাগ্য হচ্ছে আল্লাহ্‌র নিকট ইস্তিখারা বন্ধ করে দেয়া এবং বনী আদমের আরো দূর্ভাগ্য হচ্ছে আল্লাহ্‌ তাআলা যা নির্ধারন করেছেন তাতে অসন্তুষ্ট হওয়া।

মুস্তাদরাকে হাকিমঃ১৯০৩,ইসনাদ সহীহ, মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী-গরীব।

আরও কিছু রেওয়ায়েত :

  • روى ابن السني عن أنس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يا أنس؛ إذا هممت بأمر فاستخر ربك فيه سبع مرات، ثم انظر إلى الذي يسبق إلى قلبك فإن الخير فيه.
  • আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সাঃ) বলেছেন: হে আনাস, তুমি যখন কোন বিষয়ে চিন্তা করবে তখন সে বিষয়ে তোমার রবের কাছে সাতবার ইস্তিখারা কর। অতপর: তোমার অন্তরে যা জাগ্রত হয় তার দিকেই তাকাও। নিশ্চয় এর মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে।
  • إذا أراد الرجل أو المراة الاستخارة في الخطبة أي (الزواج) وجب أيضا الاستشارة والأخذ بالأسباب، كما في حديث فاطمة بنت قيس عندما خطبها معاوية وأبو جهم بن حذيفة فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم «أما أبو جهم فلا يضعُ عصاهُ عن عاتقهِ، وأما معاويةُ فصعْلُوكٌ لا مالَ لهُ، انكحِي أسامةً بن زيدٍ : قالت : فكرهتُه، ثم قال : انكحي أسامةَ بن زيدٍ، فنكحتُه، فجعلَ اللهُ في ذلك خيرا واغْتبَطْتُ به». السنن الصغير للبيهقي : 3/189
  • রাসূল (সাঃ) যখনি কিছু চাইতেন তখনি বলতেন: হে আল্লাহ্‌! আমার বিষয়টাকে কল্যাণকর করুন এবং তা বাস্তবায়ন করতে আমাকে ইলহাম (ঐশী ইঙ্গিত) করুন। অতপর (ইতিবাচক ও নেতিবাচক) দুইটি বিষয়ের উত্তমটি আমার জন্য নির্বাচিত করুন।[তিরমিযী]।

وقال عمر بن الخطاب: لا أبالي أصبحت على ما أحب أو على ما أكره، لأني لا أدري الخير فيما أحب أو فيما أكره.

فيا أيها العبد المسلم لا تكره النقمات الواقعة والبلايا الحادثة، فلرُب أمر تكرهه فيه نجاتك، ولرب أمر تؤثره فيه عطبك.

قال النووي رحمه الله تعالى: في باب الاستخارة والمشاورة
والاستخارة مع الله، والمشاورة مع أهل الرأي والصلاح، وذلك أن الإنسان عنده قصور أو تقصير، والإنسان خلق ضعيفاً، فقد تشكل عليه الأمور، وقد يتردد فيها فماذا يصنع ؟

يقول شيخ الإسلام ابن تيمية: ما ندم من استخار الخالق، وشارو المخلوقين، وثبت في أمره. وقد قال سبحانه وتعالى: ( فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللّهِ لِنتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لاَنفَضُّواْ مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللّهِ إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ ) (سورة آل عمرا ن: 159)، وقال قتادة: ما تشاور قوم يبتغون وجه الله إلا هدوا إلى أرشد أمرهم.

قال ابن القيم فالمقدور يكتنفه أمران: الاستخارة قبله، والرضا بعده.

ইস্তিখারার সুফল:

  • ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে কার্যকরী সহায়ক।
  • যে কোন সিদ্ধান্তে দোদল্যতা ও সিদ্ধান্তহীনতা থেকে মুক্তি।
  • অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল কাজেও টেনশন ফ্রি ও মানসিক প্রশান্তি।
  • আল্লাহ্‌র উপর ঈমান ও তাওয়াক্কুল (ভরসা) বৃদ্ধি।
  • দুনিয়াবী কাজে ব্যর্থতার লজ্জা থেকে মুক্তি।
  • আল্লাহ্‌র কাছে বেশী বেশী চাওয়ার মানসিকতা তৈরি।
  • আল্লাহ্‌র সাথে ব্যক্তির গোপন ও সরাসরি একটি সম্পর্ক তৈরি হয়।
  • দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা।

ইস্তিখারা কি

আভিধানিক অর্থ হলো, استخارة (ইস্তিখারা) শব্দটি اسم বা বিশেষ্য। অর্থ : কোন জিনিসের ক্ষেত্রে কল্যাণ কামনা করা।

উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে ব্যক্তিকে দুটো বিষয়ের মধ্যে একটি বিষয় বাছাই করে নিতে হবে, দুটো বিষয়ের কোন একটি কল্যাণকর বিষয় কামনা করা।

আল্লাহ্‌র কাছে ইস্তিখারা করা মানে, দুটো বিষয়ের মধ্যে কল্যাণকর বিষয়টি কামনা করে আল্লাহ্‌র সাহায্য চাওয়া।

الاستخارة: طلب الخيرة في الشيء، وهي استفعال منه، يقال: استخر الله يَخِر لك . ابن الأثير في “غريب الجامع” 6/ 251.

وهي: طلب الخيرة في شيء، وهي استفعال من الخير أو من الخيرة – بكسر أوله وفتح ثانيه، بوزن العنبة، واسم من قولك خار الله له، واستخار الله: طلب منه الخيرة، وخار الله له: أعطاه ما هو خير له، والمراد: طلب خير الأمرين لمن احتاج إلى أحدهما. (ابن حجر: فتح الباري في شرح صحيح البخاري).

সালাতুল ইস্তিখারা হলো, কোন কিছু নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা থাকলে দুটো বিষয়ের মধ্যে কল্যাণকর বিষয়টি কামনা করে আল্লাহ্‌র সাহায্যর উদ্দেশ্যে নামাজ পড়া।

ওলামায়ে কেরাম একমত যে, ইস্তিখারার নামাজ সুন্নাত।

البحر الرائق لابن نجيم (2/55) . مراقي الفلاح للشرنبلالي (ص: 149)

مواهب الجليل للحطاب (2/8)، وينظر: ((القوانين الفقهية)) لابن جزي (ص: 33).

المجموع للنووي (4/54)، وينظر: ((أسنى المطالب)) لزكريا الأنصاري (1/205).

الفروع لابن مفلح (2/403)، ((كشاف القناع)) للبهوتي (1/443).

কোন বিষয়ে ইস্তিখারা করবেন:

রাসূল (সাঃ) সকল বিষয়েই ইস্তিখারা করতে উদ্ভুদ্ধ করেছেন। কিন্তু অলসতা ও গুরুত্ব না দেয়া ইত্যাদি মানবীয় কারণে ইস্তিখারা করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে উঠেনা। তাই অন্ততঃ নিজের জীবনের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ইস্তিখারা করা প্রয়োজন।

তাহলে জীবনের কিছু টার্নিং পয়েন্টে দোদল্যতা, সিদ্ধান্তহীনতা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং এই সকল ক্ষেত্রে যেই সিদ্ধান্ত কল্যাণকর সেই সিদ্ধান্ত নিতে আল্লাহ্‌ তাআলা সাহায্য করবেন।

এমন গুরুত্ব বিষয়গুলো যেমন,

বিয়ে-শাদি, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সফর, বিদেশ যাওয়া, সহায়-সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়, গাড়ি-বাড়ি নির্মাণ, কাউকে কোন পরামর্শ দেয়া, কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত ইত্যাদি জায়েয কাজ ইস্তিখারা করেই আরম্ভ করা উত্তম। এতে আল্লাহর ইচ্ছায় কোনো অমঙ্গল হবে না এবং পরে কোনোরূপ অনুতপ্ত হতে হবে না।

শুধুমাত্র হালাল কিংবা বৈধ বিষয়ে ইস্তেখারা করা। অন্যায় বা হারাম কাজে এমন কি মাকরূহ কাজেও ইস্তিখারা করা জায়েজ নাই ।

যে সব বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে অর্থাৎ বিষয়টি তার ইচ্ছার অধীনে সেসব বিষয়ে ইস্তেখারা না করা।

অনেকের মনে একটি প্রশ্ন দেখা দেয় আর তা হল:

একাধিক বিষয়ের জন্য কি একবার ইস্তিখারা করাই যথেষ্ট না প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য পৃথকভাবে করতে হবে ?

এক্ষেত্রে বলব যে, প্রতিটি কাজের জন্য পৃথকভাবে ইস্তিখারা করা উত্তম । তবে একবার ইস্তিখারা করে দুয়ায় সকল বিষয়ের নিয়ত করলেও যথেষ্ট হবে ।

ইস্তিখারা করার নিয়ম:

১) নামাযের ওযুর মত করে ওযু করতে হয়।
২) ইস্তিখারার উদ্দেশ্যে দু রাকায়াত নামায পড়তে হয়। 
৩) নামাযের সালাম ফিরিয়ে আল্লাহ তায়ালা বড়ত্ব, ও মর্যাদার কথা মনে জাগ্রত করে একান্ত বিনয় ও নম্রতা সহকারে আল্লাহর প্রশংসা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দুরূদ পেশ করার পর নিচের দুয়াটি পাঠ করা:

(اللَّهُمَّ إنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلا أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلا أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلامُ الْغُيُوبِ..

اللَّهُمَّ إنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ..

اللَّهُمَّ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِي الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ ارْضِنِي بِهِ. (وَيُسَمِّي حَاجَتَهُ)

وَفِي رواية ( ثُمَّ رَضِّنِي بِهِ) رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ (1166)

আরবি দোয়াটি কোনো আলেমের কাছ থেকে বিশুদ্ধ উচ্চারণে শিখে নিতে হবে।

অর্থ: হে আ্ল্লাহ, আমি আপনার কাছে কল্যাণ চাই –আপনার ইলমের সাহায্যে।
আপনার কাছে শক্তি কামনা করি আপনার কুদরতের সাহায্যে।
আপনার কাছে অনুগ্রহ চাই আপনার মহা অনুগ্রহ থেকে।
আপনি সর্বোময় ক্ষমতার অধিকারী –আমার কোন ক্ষমতা নাই।
আপনি সর্বজ্ঞ – আমি কিছুই জানি না।
আপনি সকল গোপন বিষয় পূর্ণ অবগত।
“হে আল্লাহ, আপনার ইলমে এ কাজ আমার দ্বীন আমার জীবন-জিবীকা ও কর্মফলের দিক থেকে(অথবা বলেছিলেন, দুনিয়া ও পরকালের দিক থেকে মন্দ হয়) তবে তা আমাকে করার শক্তি দান করুন।
পক্ষান্তরে আপনার ইলমে এ কাজ যদি আমার দ্বীন আমার জীবন-জিবীকা ও কর্মফলের দিক থেকে তবে আমার ধ্যান-কল্পনা একাজ থেকে ফিরিয়ে নিন। তার খেয়াল আমার অন্তর থেকে দূরীভূত করে দিন।
আর আমার জন্যে যেখানেই কল্যাণ নিহিত রয়েছে এর ফায়সালা করে দিন এবং আমাকে এরই উপর সন্তুষ্ট করে দিন । (বুখারী )

(লক্ষনীয়: আপনি যদি আরবী পারেন তাহলে أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ এর স্থানে আপনার আপনার বিষয়টি উল্লেখ করুন। অন্যথায় দোয়াটি পড়ে এ কাজ এর স্থানে আপনার আপনার বিষয়টি উল্লেখ করুন এবং আপনার মনের বিষয়টা আল্লাহ্‌র কাছে বলেন এবং এ ব্যপারে কল্যাণকর হলে ইতিবাচক এবং অকল্যাণকর হলে নেতিবাচক নির্দেশনা পেতে ও সে হিসেবে সিদ্ধান্ত নিতে তাঁর সাহায্য কামনা করুন।

স্বপ্ন দেখা জরুরি নয়

উক্ত শেষ করে কারো সাথে কথা না বলে কিবলামুখী হয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। ঘুম থেকে জাগার পর মন যেদিকে সায় দিবে, বা যেদিকে আগ্রহী হয়ে উঠবে, সেটিই ফলাফল মনে করবে। [তুহফাতুল আলমায়ী-২/৩৩৮, বেহেশতী জেওর]

এ পদ্ধতিকে রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত পদ্ধতি বলা যাবে না। একদম বাতিল পদ্ধতিও বলা ঠিক নয়। কারণ এটি জানার পদ্ধতি যেহেতু কোন দ্বীনী বিষয় নয়। বরং দুনিয়াবী বিষয়ের ফায়সালা জানতে এমনটি করা হয়ে থাকে, তাই এটির ক্ষেত্রে মানুষের অভিজ্ঞতার একটি দখল রয়েছে।

কারো অভিজ্ঞতায় যদি এমন আমল করার দ্বারা ইস্তেখারাকৃত বিষয়ের ফলাফল স্পষ্ট হয়, আর সেটিকে তারা সুন্নত না মনে করে, সওয়াবের কারণ মনে না করে, তাহলে এটিকে বিদআত বলা যাবে না।

সাধারনতঃ স্বপ্নের মাধ্যমেই ফলাফল বা দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়, বৈধ কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহনের ব্যাপারে । যদি ভালো স্বপ্ন দেখেন, সরাসরি দিক নির্দেশনা পান, সাদা বা সবুজ রঙ দেখেন অথবা ঘুম থেকে উঠার পর মন-মেজাজ অনেক ভালো থাকে বা ফুরফুরে থাকে, তবে আপনার জন্য বিষয়টি মঙ্গলজনক হতে পারে আর যদি এগুলির বিপরীত হয়, লাল বা কালো রঙ দেখেন, তবে বিষয়টি অমঙ্গলজনক হতে পারে । (স্বপ্নের ব্যাখ্যা অবশ্যই একজন আলেমের মাধ্যমে যাচাই করে নিতে হবে)

স্মরণ রাখবেন, স্বপ্ন দেখা কোনো জরুরি বিষয় নয়। স্বপ্নে অবশ্যই কোনো নির্দেশনা দেয়া হবে বা অন্তত কোনো একটা ইঙ্গিত দেয়া হবে— এটা আবশ্যক কিছু নয়। কখনো স্বপ্ন আসে আর কখনো তা আসে না।

ইস্তিখারার মূল কথা হলো, অভীষ্টকাজ সম্পর্কে কল্যাণ প্রার্থনা ও মঙ্গল চাওয়া। কল্যাণ সম্পর্কে অবগত হওয়া নয়। অথচ কেউ কেউ মনে করে, ইস্তিখারার বিষয়টি হলো স্বপ্নের মাধ্যমে অবগত হওয়া। এ কারণেইস্তিখারার নামাজ ও দোয়া ঘুমানোর আগে করতে হয়। আর ইস্তিখারার ফলাফল অর্থাত্ কাজটিকরা উচিত কি উচিত না—তা স্বপ্নযোগে জানিয়ে দেয়া হয়। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ধারণা।

স্বপ্ন দেখা তো ইস্তিখারার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় নয়। ইস্তিখারার পর কেউ কোনোস্বপ্ন দেখতে পারে আবার নাও দেখতে পারে। স্বপ্নে কোনো কিছু দেখলে তাকে বিচার করতে হবে স্বপ্নের বিষয়ে শরিয়তের যে বিধান আছে তারই ভিত্তিতে। আর মানুষের দেখা স্বপ্ন তো কোনো দলিল নয় যে, এর মাধ্যমে তার সমাধান করবে। এ ব্যাপারে শরিয়তের বিধানই অনুসরণীয়-অনুকরণীয়।

ইসতিখারার কোনো সময় নির্ধারিত নেই

কেউ কেউ মনে করেন, ইসতিখারা সর্বদা রাতে শয্যাগ্রহণের সময়ই করতে হয়, কিবা এশার নামাজের পরেই করতে হয়। এমন কোনো কিছুই জরুরি নয়। বরং যখনই সুযোগ হয়, এই ইসতিখারা করে নেয়া যায়। না রাতের কোনো শর্ত আছে, আর না দিনের। না শয়নের কোনো শর্ত আছে, আর না জাগরণের।

রাতে সময় পাওয়া না গেলে, দিনেও ইস্তেখারা করা যাবে।

তবে, রাতে করার ব্যাপারে একটু গুরুত্ব দেয়ার কারণটা হল, দিনে মানুষ সাধারণত ব্যস্ত থাকে তাই মন দিয়ে করাটা সবসময় সম্ভব হয়না আর রাতে সব কাজ সেরে মন দিয়ে আমলটা করতে পারা যায় । স্বপ্নের ব্যাপারটাও হল এই, স্বপ্নে ঐ ব্যাপারটার পক্ষে বিপক্ষে কিছু দেখলে সিদ্ধান্ত নেয়াটা আপনার জন্য বেশি সহজ হবে । আর এস্তেখারা করার পর না ঘুমানো হলে আপনার মন হয়ত যে কোন একদিকে ঝুঁকতে পারে কিন্তু এটা বুঝতেও আপনার বেগ পেতে হতে পারে ।

লক্ষনীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

১) ছোট-বড় সকল বিষয়ে এস্তেখারা করার অভ্যাস গড়ে তোলা ভাল ।

২) খুব তাড়াহুড়া বা একান্ত জরুরী প্রয়োজন না হলে যে সকল সময়ে সাধারণ নফল নামায পড়া নিষিদ্ধ সে সকল সময়ে সালাতুল এস্তেখারা আদায় করা থেকে বিরত থাকুন । তবে তাড়াহুড়া থাকলে নিষিদ্ধ সময়গুলোতেও তা পড়া যাবে।

৩) মহিলাদের ঋতু স্রাব বা সন্তান প্রসব জনিত রক্ত প্রবাহের সময় সালাতুল এস্তেখারা আদায় করা থেকে বিরত থাকতে হবে । তবে এমতাবস্থায় নামায না পড়ে শুধু এস্তেখারা র দুয়াটি পড়া যাবে ।

৪) এস্তেখারা র দুয়া মুখস্ত না থাকলে দেখে দেখে তা পড়তে অসুবিধা নেই । তবে মুখস্ত করার চেষ্টা করা ভাল ।

৫) উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনিত হলে আল্লাহর উপর ভরসা করে দৃঢ়ভাবে কাজে এগিয়ে যান । পিছুপা হবেন না বা হীনমন্যতায় ভূগবেন না । আল্লাহ তায়ালা বলেন: “আর যখন সিদ্ধান্ত গ্রহন করে ফেল তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর।”(সূরা আলে ইমরান: ১৫৯)

ইসতিখারার ফলাফল

হযরত শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকী উসমানী হাফি. বলেন,

কোনো কোনো ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ইসতিখারা করার পরে মানুষের অন্তর একদিকে ঝুঁকে যায়। অন্তর যেদিকে ঝোঁকে, সে কাজের সিদ্ধান্তই নিতে হয়। হাঁ, অনেকসময়ই অন্তরে এই ঝোঁক সৃষ্টি হয়। কিন্তু তা কোনো জরুরি বিষয় নয়। একান্ত অন্তর কোনো দিকে যদি না ঝোঁকে, বরং তাতে দোদুল্যমানতা থেকেই যায়, তখনও ইসতিখারার উদ্দেশ্য অর্জিত হয়ে যায়। কেননা ইসতিখারা করার পরে আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য সে ফায়সালাই করে, যা তার জন্য কল্যাণকর। এরপর অবস্থাই এমন সৃষ্টি হয়ে যায় এবং তা-ই সংঘটিত হয়, যার মধ্যে বান্দার জন্য প্রভূত কল্যাণ লুকায়িত রয়েছে। প্রথম থেকে সে বিষয়ে তার ধারণাও থাকে না। কখনো মানুষ কোনো এক পথকে খুব উত্তম মনে করে, কিন্তু হঠাৎ দেখা যায়, সেই পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে সেই পথ থেকে সরিয়ে নেন। ইসতিখারার পরে আল্লাহ তাআলা আসবাব-উপকরণগুলোকে এমনভাবে সৃষ্টি করে দেন, তখন তা-ই ঘটে, যার মধ্যে বান্দার জন্য কল্যাণ লুকায়িত রয়েছে। এখন কল্যাণ কিসের মাঝে? মানুষ তা জানে না, কিন্তু (ইসতিখারার মাধ্যমে) আল্লাহ তাআলা তার জন্য কলাণ নির্ধারিত করে দেন।

এটাই কল্যাণকর ছিলো

হযরত শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকী উসমানী হাফি. বলেন,

যখন সেই কাজটি হয়ে যায়, তখন কোনো কোনো সময় এমনটা মনে হয়, যা হয়েছে বাহ্যত তা মঙ্গলজনক মনে হচ্ছে না, অন্তরের দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণও বোধ হচ্ছে না। এই অবস্থায় বান্দা আল্লাহ তাআলার কাছে অভিযোগ জানায়, হে আল্লাহ! আমি তো আপনার সঙ্গে মশওয়ারাহ ইসতিখারা করেছিলাম। কিন্তু কাজ তো তা-ই হলো, যা আমার মর্জি এবং তবিয়তের সম্পূর্ণ বিরোধী। যা হলো, বাহ্যত তা-তো মঙ্গলজনক মনে হচ্ছে না।

এই প্রসঙ্গে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলছেন, আরে বোকা! তুই তোর সীমাবদ্ধ বিবেক দ্বারা ভেবে নিয়েছিস, তোর জন্য এই বিষয়টি মঙ্গলজনক হয়নি। কিন্তু যার ইলমের অধীনে সমগ্র বিশ্বের পরিচালনার জ্ঞান, তিনি ভালো করেই জানেন, তোর জন্য কোনটা কল্যাণকর ছিলো আর কোনটা অকল্যাণকর ছিলো। তিনি যা করেছেন, তোর জন্য সেটাই কল্যাণকর ছিলো। কোনো কোনো সময় তো দুনিয়ায়ই জানা হয়ে যায়, আদতে কোনটা তোর জন্য কল্যাণকর ছিলো আর কখনো বা সারাটা জীবনে ফায়সালাকৃত বিষয়ের যথার্থতা বোধগম্য হয়ে ওঠে না। এরপর যখন আখিরাতে গমন করবি, তখন সেখানে গিয়ে বুঝতে পারবি, আদতে ফায়সালাকৃত বিষয়টিই তোর জন্য কল্যাণকর ছিলো।

ইসতিখারার পর নিশ্চিন্ত হয়ে যাও

হযরত শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকী উসমানী হাফি. বলেন,

এ কারণেই উপরিউক্ত হাদিসে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলছেন, যখন তুমি কোনো বিষয়ে ইসতিখারা করে ফেলো, তখন এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে যাও যে, এখন আল্লাহ তাআলা যে ফায়সালা করবেন, তা কল্যাণকর ফায়সালাই হবে। হতে পারে— বাহ্যদৃষ্টিতে সেই ফায়সালা তোমার কাছে মঙ্গলজনক বোধ হবে না। কিন্তু পরিণতির বিচারে তা-ই মংগলজনক বলে প্রতীয়মান হবে। সেই ফায়সালার যথার্থতা হয়তো দুনিয়ায়ই বোধগম্য হয়ে যাবে, অথবা আখিরাতে যাওয়ার পরে তো সুনিশ্চিতভাবেই জ্ঞাত হবে যে, আল্লাহ তাআলা যে ফায়সালা করেছিলেন, তোমার ক্ষেত্রে তাই কল্যাণকর ছিলো।

কোনো বান্দা যখন আল্লাহ তাআলার কাছে ইসতিখারা করে, তখন আল্লাহ তাআলা তার জন্য কল্যাণের ফায়সালা করে দেন।

কত বার ইস্তিখারা করবে ?

روى ابن السني عن أنس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يا أنس؛ إذا هممت بأمر فاستخر ربك فيه سبع مرات، ثم انظر إلى الذي يسبق إلى قلبك فإن الخير فيه.

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সাঃ) বলেছেন: হে আনাস, তুমি যখন কোন বিষয়ে চিন্তা করবে তখন সে বিষয়ে তোমার রবের কাছে সাতবার ইস্তিখারা কর। অতপর: তোমার অন্তরে যা জাগ্রত হয় তার দিকেই তাকাও। নিশ্চয় এর মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে।

বিজ্ঞ আলেমগণ বলেছেন,

ইসতেখারা করার পর তার মন যে দিকে ধাবিত হবে সে দিকেই যাবে। আর যদি কোন দিকে ধাবিত না হয় তা হলে যতক্ষণ পর্যন্ত কোন দিক নির্দেশনা না পাবে, বা কোন দিকে মন ধাবিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ইসতেখারা করতে থাকবে।

في الموسوعة الفقهية الكويتية: قال الحنفية والمالكية والشافعية: ينبغي أن يكرر المستخير الاستخارة بالصلاة والدعاء سبع مرات، لما روى ابن السني عن أنس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يا أنس؛ إذا هممت بأمر فاستخر ربك فيه سبع مرات، ثم انظر إلى الذي يسبق إلى قلبك فإن الخير فيه. ويؤخذ من أقوال الفقهاء أن تكرار الاستخارة يكون عند عدم ظهور شيء للمستخير، فإذا ظهر له ما ينشرح به صدره لم يكن هناك ما يدعو إلى التكرار، وصرح الشافعية بأنه إذا لم يظهر له شيء بعد السابعة استخار أكثر من ذلك، أما الحنابلة فلم نجد لهم رأيا في تكرار الاستخارة في كتبهم التي تحت أيدينا رغم كثرتها .انتهى.

ইসতিখারার সংক্ষিপ্ত দোয়া

হযরত শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকী উসমানী হাফি. বলেন,

ওপরে ইসতিখারার যে সুন্নত তরিকা বিবৃত হয়েছে, এটা তো তখন, যখন ইসতিখারা করার জন্য বান্দার কাছে পর্যাপ্ত সময় এবং সুযোগ থাকবে। তখন দুই রাকাত নামাজ পড়ে ইসতিখারার উপরিউক্ত দোয়া পাঠ করবে। কখনো এমন পরিস্থিতি আসে যে, দুই রাকাত নামাজ পড়ে সেই দীর্ঘ দোয়া পড়ার মতো সময় পাওয়া যায় না, তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে হয়। আচমকা এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সামনে এলে আর দুই রাকাত নামাজ পড়ে উপরিউক্ত দীর্ঘ দোয়া পড়ার মতো সময় না পাওয়া গেলে তখন শুধু রাসুলুল্লাহ সা. নির্দেশিত নিচের দোয়াটি পাঠ করেও ইসতিখারা করা যাবে—

اَللّهُمَّ خِرْ لِيْ وَ اخْتَرْ لِيْ

হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনিই পছন্দ করে দিন যে, কোন পথটি নির্বাচন করা উচিত। শুধু এ দোয়াটি পড়ে নিলেই হবে। এছাড়া আরো একটি দোয়া রাসুলুল্লাহ সা. শিখিয়েছেন—

اَللّهُمَّ اهْدِنِيْ وَ سَدّدْنِيْ

হে আল্লাহ! আমাকে সথিক পথ প্রদর্শন করুন এবং সঠিক পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন।

তেমনই আরেকটি মাসনুন দোয়া—

اَللّهُمَّ أَلْهِمْنِيْ رُشْدِيْ

হে আল্লাহ! সঠিক পথ কোনটা আমার হৃদয়ে তা উদ্রেক করে দিন।

উপরিউক্ত দোয়াগুলোর মধ্যে সেসময়ে যেটা স্মরণ আসে, তা পড়ে নিলেই ইসতিখারা হয়ে যাবে।

আরবি দোয়া যদি একান্ত স্মরণ না আসে, তাহলে নিজের ভাষায় এভাবে দোয়া করে নিলেও হবে—

হে আল্লাহ! আমি সিদ্ধানের দোদুল্যমানতায় ভুগছি। আপনি আমাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করুন।

মুখেও যদি বলার মতো পরিস্থিতি না থাকে, তাহলে মনে মনে এ কথা স্মরণ করবে—

হে আল্লাহ! এই সমস্যা এবং পেরেশানি দেখা দিয়েছে। এখন আপনি আমাকে সঠিক পথ দেখিয়ে দিন; যে পথ আপনার সন্তুষ্ট মোতাবেক হবে এবং যাতে আমার জন্য প্রভূত কল্যাণ নিহিত থাকবে।

মুফতিয়ে আজম রহ. এর আমল

হযরত শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকী উসমানী হাফি. বলেন,

আমি মরহুম আব্বাজান, মুফতিয়ে আজম পাকিস্তান, মুফতি শফি রহ. কে এই আমল করতে দেখেছি, যখনই এমন কোনো পরিস্থিতি আসতো, যাতে তাৎক্ষণিকই সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন দেখা দিতো, সামনে দুটো পথ, এখনই কোনো একটিকে গ্রহণ করে নিতে হবে— এমন পরিস্থিতিতে তিনি কিছুক্ষণের জন্য চোখ বন্ধ করে ফেলতেন। আব্বাজানের আদত সম্পর্কে যাদের জানাশোনা ছিলো না, তারা বুঝতেই পারতো না, চোখ বন্ধ করে তিনি কী কাজ করছেন। হাকিকতে চোখ বন্ধ করে তিনি কিছু সময়ের জন্য আল্লাহ তাআলার প্রতি পূর্ণ অভিমুখী হতেন এবং মনে মনেই তাঁর কাছে দোয়া করতেন, হে আল্লাহ! আমার সামনে এখন দোদুল্যমান অবস্থা। আমি বুঝতে পারছি না, এখন কী ফায়সালা করবো। আপনি আমার দিলে সেই কথা উদ্রেক করে দিন, যা আপনার দৃষ্টিতে কল্যাণকর। মনে মনেই এই ছোট এবং সংক্ষিপ্ততম ইসতিখারা হয়ে যেতো।

ইস্তিখারা কারা করবেন?

  • প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজের প্রয়োজনে সে নিজেই ইস্তিখারা করবে।
  • ব্যক্তির সিদ্ধান্তের সাথে পরিবারের সদস্য, অভিভাবক, আত্নীয় স্বজন এধরণের যারা সম্পৃক্ত তারাও সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যপারে ইস্তিখারা করতে পারেন। কারণ যারা সিদ্ধান্ত নিবেন তিনি যেহেতু তাদের একজন তাই তার সিদ্ধান্ত দেয়ার ব্যপারেও তিনি ইস্তিখারা করবেন।
  • যারা কাছে মানুষ কোন ব্যপারে পরামর্শ চান তারাও সঠিক পরামর্শ দেয়ার জন্য ইস্তিখারা করতে পারেন।

ইস্তিখারার ভুল পদ্ধতি

  1. হাদিস শরীফে প্রয়োজনগ্রস্ত ব্যক্তিকেই ইস্তিখারা করতে বলাহয়েছে। অথচ এক্ষেত্রে আরেকটি ভুল হলো, নিজে না করে অন্যকে দিয়ে ইস্তিখারা করানো। অনেকে মসজিদের ইমাম সাহেব বা পরিচিত কোনো আলেমের কাছে ইস্তিখারার আবেদন করে থাকেন।এটাও ইস্তিখারার মূলনীতির খেলাফ, যা পরিত্যাজ্য। তবে সাধারণভাবে তার কল্যাণের জন্য দুয়া করতে পারে । যেমন, মা-বাবা তাদের সন্তানের কল্যাণের জন্য নামাযের বাইরে কিংবা নফল নামাযে সাজদাহ রত অবস্থায় এবং তাশাহুদের দুরুদ পাঠের পরে দুয়া করতে পারে ।
  2. আরেকটি ভুল হল, কুরআন মজীদ থেকে কিংবা দেওয়ানে হাফেয, মাছনবী ইত্যাদি থেকে ইঙ্গিত গ্রহণ। এটি সম্পূর্ণ ভুল পদ্ধতি। আর কুরআন মজীদ থেকে এ জাতীয় ইঙ্গিত গ্রহণ মূলত কুরআনের সাথে বেআদবী। এভাবে ইস্তিখারার ক্ষেত্রে আরও নানা ধরনের ভুল-ভ্রান্তিতে লিপ্ত হতে দেখা যায়।

ইস্তিখারার পর পরামর্শ গ্রহণ

যে বিষয়ে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে চান সে বিষয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, নেককার, সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যক্তির পরামর্শ গ্রহণ করুন।

قال سبحانه وتعالى:{وَشَاوِرْهُمْ فِي الأَمْر}
وهذا خطاب للنبي صلى الله عليه وسلم، وقال سبحانه وتعالى: { فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللّهِ إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ } (سورة آل عمرا ن: 159).

وكان النبي صلى الله عليه وسلم هو أسدُ الناس رأياً وأصوبهم صواباً، يستشير أصحابه في بعض الأمور التي تشكل عليه، وكذلك خلفاؤه من بعده كانوا يستشيرون أهل الرأي والصلاح

أن يكون صالحاً في دينه، لأن من ليس صالحا ً في دينه ليس بأمين وفي الحديث، عن أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ رضي الله عنه يَقُولُ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهم عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: (لا إِيمَانَ لِمَنْ لا أَمَانَةَ لَهُ وَلا دِينَ لِمَنْ لا عَهْدَ لَهُ ) لأنه إذا كان غير صالح في دينه فإنه ربما يخون والعياذ بالله، ويشير بما فيه الضرر، أو يشير بما لا خير فيه، فيحصل بذلك من الشر ما لله به عليم.

وقال شيخ الإسلام ابن تيمية: (ما ندم من استخار الخالق، وشاور المخلوقين، وثبت في أمره)

আসুন!

আমরা মহান আল্লাহ্‌র কাছে আমাদের প্রয়োজন মেটাতে একটু ধরনা দেই। এর মধ্যেই মহান আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপায় ও কল্যাণ নির্ধারন করে রেখেছেন। আমাদের নিজেদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আল্লাহ্‌র কাছে ইস্তিখারা করতে শিখি এবং ইস্তিখারার মাধ্যমে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ও টার্নিং পয়েন্টগুলোতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনের গচ্ছিত কল্যাণ হাসিল করতে উদ্যত হই। আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাদেরকে ইস্তিখারা করার জন্য মানসিকতা ও তাওফীক দান করুন। আমীন!!

.

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *