প্রশ্ন :
ওয়াসওয়াসা/ আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ চিন্তা আসলে কী করণীয়?
Shamiul Alam Toshon
উত্তর : وبالله سبحانه التوفيق
‘ওয়াসওয়াসা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ – গোপন শব্দ ও মনের খটকা (লিসানুল আরব)।
আর শারীয়াতের পরিভাষায়, মনের মধ্যে ওয়াসওয়াসা দ্বারা কুমন্ত্রণা এবং মনের মধ্যে খারাপ ধারণা এবং খারাপ কর্ম করার মানসিকতা সৃষ্টি হওয়াকে বুঝানো হয়। এটা শয়তানের পক্ষ থেকে হয় আবার মানুষের নিজের থেকেও হতে পারে। এর দ্বারা ঈমান শূন্য হয় না। তবে ঈমানের ক্ষতি হয়।
এ জন্য শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে আল্লাহ স্বীয় নবী (স.)-কেও পানাহ চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন (সূরা নাস; বুখারী হা/৩২৭৬)।
আল্লাহ তায়ালা মুমিনদেরকে সান্তনা দিয়ে ইরশাদ করেছেন,
إنما النجوى من الشيطان ليحزن الذين آمنوا و ليس بضارهم شيئا إلا بإذن الله
‘শয়তানের পক্ষ থেকে যেসব মন্দ ভাবনা সৃষ্টি হয় এগুলো প্রকৃতপক্ষে শয়তানের কুমন্ত্রণা। এভাবে সে মুমিনদেরকে পেরেশানিতে ফেলতে চায়। এরপর আল্লাহ তায়ালা বলেন, এই কুমন্ত্রণা মুমিনদেরকে চুল পরিমাণ ক্ষতি করতে পারে না, আল্লাহ তায়ালার হুকুম ছাড়া।’ (সূরা: মুজাদালা, আয়াত: ১০)।
🔸 কেউ যদি মনে মনে ইসলাম, ঈমান, আল্লাহ, রাসূল বা দ্বীনের কোন বিষয়ে ধরণের কুচিন্তা অনুভব করে, অন্তরে দ্বীনের ব্যাপারে সংশয় ও সন্দেহ দেখা যায় কিন্তু পরক্ষণেই যদি এ থেকে মুক্তির জন্য মনে অস্থিরতা অনুভব করে বা এ ভয়ে আতঙ্কিত হয় যে, এতে করে সে পাপের মধ্যে ডুবে গেলো কি না,ইসলাম থেকে বের হয়ে গেল কি না, সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেল কিনা.. তাহলে বুঝতে হবে, সে একজন ঈমানদার। এই মনের অস্থিরতা ও পাপবোধ তার সুস্পষ্ট ঈমানের পরিচায়ক। আল হামদুলিল্লাহ।
যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত,
جَاءَ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَأَلُوهُ إِنَّا نَجِدُ فِي أَنْفُسِنَا مَا يَتَعَاظَمُ أَحَدُنَا أَنْ يَتَكَلَّمَ بِهِ قَالَ وَقَدْ وَجَدْتُمُوهُ قَالُوا نَعَمْ قَالَ ذَاكَ صَرِيحُ الْإِيمَانِ
“সাহাবীদের একদল লোক রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কাছে আগমন করে জিজ্ঞাসা করল, আমরা আমাদের অন্তরে কখনো কখনো এমন বিষয় অনুভব করি, যা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করা আমাদের কাছে খুব কঠিন মনে হয়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন যে, সত্যিই কি তোমরা এরকম পেয়ে থাক? তাঁরা বললেন হ্যাঁ, আমরা এরকম অনুভব করে থাকি। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটি তোমাদের ঈমানের স্পষ্ট প্রমাণ”। (সহীহ মুসলিম)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আর আবূ হুরায়রা (রাঃ) অত্র হাদীস মারফূ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ لأُمَّتِي عَمَّا وَسْوَسَتْ أَوْ حَدَّثَتْ بِهِ أَنْفُسَهَا، مَا لَمْ تَعْمَلْ بِهِ أَوْ تَكَلَّمْ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা আমার উম্মাতের সে সমস্ত ওয়াসওয়াসা মাফ করে দিয়েছেন যা তাদের মনে উদয় হয় বা যে সব কথা মনে মনে বলে থাকে; যতক্ষন না তা কাজে পরিণত করে বা সে সম্পর্কে কারও কাছে কিছু বলে।” [(সহীহ বুখারী ও মুসলিম। সহীহ বুখারী হাদিস নম্বরঃ [6209] অধ্যায়ঃ ৭১/ শপথ ও মানত , ইসলামিক ফাউন্ডেশন]
ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত,
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إنِّى اُحَدِّثُ نَفْسِى بِالشَّيْءِ لَأَنْ يَكُونَ حُمَمَةً أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْ أَن ْ يَتَكَلَّمَ بِهِ فَقَالَ النبي صلى الله عليه وسلم الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي رَدَّ أَمْرَهُ إِلَى الْوَسْوَسَةِ
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে একজন লোক আগমন করে বলল, আমার মনে কখনো এমন কথার উদয় হয়, যা উচ্চারণ করার চেয়ে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া আমার কাছে বেশী ভাল মনে হয়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি এই বিষয়টিকে নিছক একটি মনের ওয়াস্ওয়াসা (কুমন্ত্রণা) হিসাবে নির্ধারণ করেছেন।” (সুনানে আবু দাউদ)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্ তাআলা আমার উম্মতের ওয়াসওয়াসা (শুচিবায়ু), মনে মনে কথা বলা ক্ষমা করে দিয়েছেন; যতক্ষণ না সে কর্ম করে কিংবা কথা বলে”।[সহিহ বুখারী (৬৬৬৪) ও সহিহ মুসলিম (১২৭)]
শয়তানের ওয়াসওয়াসার বা কুমন্ত্রণা টের পেলে সাথে সাথেই কী করবে? সে সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহে কী বলা হয়েছে দেখুন-
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّـهِ ۚ
“আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো।” (সূরা আরাফ: ২০০)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:
رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ
“হে আমার রব! শয়তানের প্ররোচনা হতে আমি আপনার কাছে পানাহ চাই। আর হে আমার রব! আমি আপনার কাছে পানাহ চাই, ওদের (শয়তানদের) উপস্থিতি হতে। সূরা মু‘মিনুন: ৯৭-৯৮)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
يَأْتِي الشَّيْطَانُ أَحَدَكُمْ ، فَيَقُولَ : مَنْ خَلَقَ كَذَا وَكَذَا ؟ حَتَّى يَقُولَ لَهُ : مَنْ خَلَقَ رَبَّكَ ؟ فَإِذَا بَلَغَ ذَلِكَ ، فَلْيَسْتَعِذْ بِاللَّهِ وَلْيَنْتَهِ
শয়তান তোমাদের কারো নিকট আসে এবং বলে, এটা কে সৃষ্টি করেছে, ওটা কে সৃষ্টি করেছে? পরিশেষে এ প্রশ্নও করে, তোমার রবকে কে সৃষ্টি করেছে? এ পর্যায়ে পৌঁছলে তোমরা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর এবং এ ধরণের ভাবনা থেকে বিরত হও। ( বুখারী – ৩২৭ )
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই কু প্রবৃত্তির অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন,
وَنَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ شُرُورِ أَنْفُسِنَا وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا
“আমরা আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আমাদের নফস (কু প্রবৃত্তি) এবং কৃত কর্মের অনিষ্ট থেকে।” (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিখ্যাত খুতবাতুল হাজাহ)
সেই সাথে তিনি নিম্নোক্ত দুয়াটিও পাঠ করতেন:
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ
“হে অন্তরের পরিবর্তনকারী, তুমি আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখো।” (তিরমিযী)
ইবনে সুন্নির গ্রন্থে আয়েশা (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, “যে ব্যক্তি এই ওয়াসওয়াসা দ্বারা আক্রান্ত হবে সে যেন তিনবার বলে, আমরা আল্লাহ্র প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি। এতে করে, তার থেকে এটি দূর হয়ে যাবে”।
উসমান বিন আবুল আস (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন:
শয়তান আমার মাঝে এবং আমার নামায ও তেলাওয়াতের মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তিনি বললেন: এমন শয়তানকে ‘খিনযিব’ বলা হয়। এমনটি ঘটলে আপনি আউযুবিল্লাহ্ পড়ুন (অর্থাৎ শয়তান থেকে আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় চান) এবং বামদিকে তিনবার থুথু ফেলুন। তখন আমি এভাবে করলাম। ফলে আল্লাহ্ শয়তানকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিলেন। সহিহ মুসলিম- (২২০৩)
সাহাবীগণ নাবী (ﷺ) এর কাছে অভিযোগ করলেন যে, তাদের অন্তরে এমন জিনিসের উদয় হয়, যা মুখে উচ্চারণ করার চেয়ে তার কাছে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া অধিক প্রিয় বলে মনে হয়। নাবী (ﷺ) তখন বললেন- আল্লাহু আকবার। ঐ আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা, যিনি শয়তানের চক্রান্তকে ওয়াসওয়াসার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। যার কাছে সৃষ্টি ও সৃষ্টিকর্তার ব্যাপারে ওয়াস্ওয়াসা এবং একের পর এক যদি এভাবে প্রশ্নের উদয় হয় যে, এই তো আল্লাহ্ সকল মাখলুক সৃষ্টি করেছেন, তাহলে কে আল্লাহকে সৃষ্টি করেছে? এমন পরিস্থিতিতে তিনি কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করার আদেশ দিয়েছেনঃ
هُوَ الأوَّلُ وَالآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
‘‘তিনিই সর্বপ্রথম, তিনিই সর্বশেষ, তিনিই প্রকাশমান ও অপ্রকাশমান এবং তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত’’। (সূরা হাদীদ-৫৭:৩)
এমনিভাবে আবু যামীল ইবনে আববাস (রাঃ) কে প্রশ্ন করেছিল, এ কি জিনিস যা আমার বক্ষদেশে কিছু (ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রনা) অনুভব করছি। আব্দুল্লাহ্ ইবনে আববাস (রাঃ) বললেন- সেটি কী? তিনি বলেন- আমি বললামঃ আল্লাহর কসম! আমি এ ব্যাপারে কথা বলবনা। ইবনে আববাস তখন বললেন- সেটি কি কোন সন্দেহ? আমি বললামঃ হ্যাঁ। আল্লাহ্ তা‘আলা এ ব্যাপারে কুরআনের আয়াত নাযিল না করা পর্যন্ত কেউ এ থেকে রেহাই পায়নি। সুতরাং তুমি যখন তোমার অন্তরে এমন কিছু অনুভব কর তখন এই আয়াতটি পাঠ করবেঃ
الأوَّلُ وَالآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
‘‘তিনিই সর্বপ্রথম, তিনিই সর্বশেষ, তিনিই প্রকাশমান ও অপ্রকাশমান এবং তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত’’। (সূরা হাদীদ-৫৭:৩)
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلَاةِ بِاللَّيْلِ كَبَّرَ، ثُمَّ يَقُولُ: سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ، ثُمَّ يَقُولُ: اللهُ أَكْبَرُ كَبِيْرًا، ثُمَّ يَقُولُ: أَعُوذُ بِاللهِ السَّمِيعِ العَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ، ‘
রাসূলুল্লাহ (স.) যখন রাতে নামাযে দাঁড়াতেন তখন নামায শুরু করে বলতেন, ‘আমি অভিশপ্ত শয়তান এবং তার কুমন্ত্রণা, ঝাঁড়ফুঁক ও যাদুমন্ত্র হ’তে সর্বশ্রোতা ও সর্বময় জ্ঞানের অধিকারী আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।
উল্লেখিত রেওয়ায়েতগুলোর আলোকে ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার আমল-
(১) ওয়াসওয়াসার সাথে সাথেই নিচের দুআটি ৩ বার পড়া-
آمَنْتُ بِاللهِ وَرُسُلِهِ اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْم
(অর্থাৎ, আল্লাহ’র ও তাঁর রসুলের প্রতি ঈমান আনলাম, আল্লহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান হতে পানাহ কামনা করছি)
(২) নিচের দুআগুলো পড়া-
هُوَ الأَوَّلُ وَالآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيءٍ, عَلِيمٌ
رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ
أَعُوذُ بِاللهِ السَّمِيعِ العَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللّهِ التَّامَّةِ، مِنْ غَضَبِه وَعِقَابِه وَشَرِّ عِبَادِه وَمِنْ همَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ وَأَنْ يَّحْضُرُوْنِ
اَلْلّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ، وَقَهْرِ الرِّجَالِ
وَنَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ شُرُورِ أَنْفُسِنَا وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ
اَللَّهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوْبِ صَرِّفْ قُلُوْبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ
سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْخَلَّاقِ إنْ يَشَأْ يُذْهِبْكُمْ وَيَأْتِ بِخَلْقٍ جَدِيدٍ وَمَا ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ بِعَزِيزٍ
(৩) বিশেষ করে এ জিকির বেশি বেশি করা – لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ
(৪) বেশি বেশি সূরা নাস পড়া।
(৫) উক্ত চিন্তা থেকে বিরত হয়ে অন্য কোন চিন্তা বা কাজে লিপ্ত হওয়া।
(৬) দৈনিক একবার হলেও মসজিদে প্রবেশের দোয়ার সাথে পড়া –
أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: মসজিদে প্রবেশের সময় কেউ এটা পড়লে শয়তান বলে, এই ব্যক্তি আজ সারাদিনের জন্য আমার থেকে রক্ষা পেয়ে গেল। (সুনানে আবি দাউদ, ৩৯৩)
ইবনে হাজার আল-হাইতামি তাঁর ‘আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা’ গ্রন্থে (১/১৪৯)
শুচিবায়ু (ওয়াসওয়াসা) এর প্রতিকার সম্পর্কে যা উল্লেখ করেছেন এখানে সেটা উল্লেখ করা যেতে পারে:
“তাঁকে ওয়াসওয়াসা এর প্রতিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: এর ঔষধ একটাই সেটা হচ্ছে–শুচিবায়ুকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া; এমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও। কেননা কেউ যদি সেটাকে ভ্রুক্ষেপ না করে তাহলে সেটা স্থির হবে না। কিছু সময় পর চলে যাবে; যেমনটি তাওফিকপ্রাপ্ত লোকেরা যাচাই করে পেয়েছেন। আর যে ব্যক্তি শুচিবায়ুকে পাত্তা দিবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করবে সে ব্যক্তির শুচিবায়ু বাড়তেই থাকবে; এক পর্যায়ে তাকে পাগলের কাতারে নিয়ে পৌঁছাবে কিংবা পাগলের চেয়েও নিকৃষ্ট পর্যায়ে পৌঁছাবে। যেমনটি আমরা অনেক মানুষের মাঝে দেখেছি, যারা শুচিবায়ুতে আক্রান্ত হয়ে এতে কান দিয়েছেন এবং এর শয়তানের কথা শুনেছেন। যে শয়তানের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাবধান করে বলেছেন: “তোমরা পানি ব্যবহারে শুচিবায়ু (কুমন্ত্রণাদাতা শয়তান) থেকে বেঁচে থাক, যাকে ‘ওয়ালাহান’ ডাকা হয়। অহেতুক কাজ করানো ও বাড়াবাড়ির কুমন্ত্রণা দেয়ার কারণে তাকে এই নামে ডাকা হয়। যেমনটি আমি ‘শারহু মিশকাতিল আনওয়ার’ নামক গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করেছি।
সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে আমি যে পরামর্শ দিয়েছি এর সমর্থনমূলক বর্ণনা এসেছে যে, যে ব্যক্তি শুচিবায়ুতে আক্রান্ত হয়েছে সে যেন ‘আউযুবিল্লাহ্’ পড়ে এবং (দুঃশ্চিন্তাকে বাড়তে না দিয়ে) থেমে যায়। আপনি এ প্রতিকারটি একটু ভেবে দেখুন; যে প্রতিকারের পরামর্শ দিয়েছেন এমন ব্যক্তি যিনি তাঁর উম্মতকে লক্ষ্য করে মনগড়া কোন কথা বলেন না। জেনে রাখুন, যে ব্যক্তি এই প্রতিকার অবলম্বন করা থেকে বঞ্চিত সে আসলেই বঞ্চিত। কেননা, সর্বসম্মতিক্রমে শুচিবায়ু শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। আর এই লানতপ্রাপ্ত শয়তানের সর্বাত্মক উদ্দেশ্য হচ্ছে – মুমিনকে বিভ্রান্তির ডোবাতে ফেলে দেয়া, পেরেশান করে রাখা, জীবনকে ভারাক্রান্ত করে তোলা, অন্তরকে অন্ধকারাচ্ছন্ন ও বিষাদময় করে ফেলা; যাতে এক পর্যায়ে তাকে ইসলাম থেকে এমনভাবে বের করে ফেলতে পারে যে সে টেরও পাবে না। (নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু; সুতরাং তাকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ কর”[সূরা ফাতির, আয়াত: ৬]
হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় শুচিবায়ুগ্রস্ত ব্যক্তির ব্যাপারে এসেছে, সে যেন বলে: “আমি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি”। নিঃসন্দেহে যে ব্যক্তি নবীদের আদর্শগুলো পর্যালোচনা করে দেখবে, বিশেষতঃ আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ; সে দেখতে পাবে যে, তাঁর আদর্শ ও শরিয়ত হচ্ছে- সহজ, সুস্পষ্ট, স্বচ্ছ সাদা, পরিষ্কার ও এত সরল যে তাতে কোন বক্রতা নেই। “তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি”[সূরা হাজ্জ, আয়াত: ৭৮]
যে ব্যক্তি তা ভেবে দেখবে এবং এর প্রতি যথাযথভাবে ঈমান আনবে তার থেকে শুচিবায়ু রোগ ও এর শয়তানের কুমন্ত্রণাগ্রস্ত হওয়া দূর হয়ে যাবে। ইবনে সুন্নির গ্রন্থে আয়েশা (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, “যে ব্যক্তি এই ওয়াসওয়াসা দ্বারা আক্রান্ত হবে সে যেন তিনবার বলে, আমরা আল্লাহ্র প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি। এতে করে, তার থেকে এটি দূর হয়ে যাবে”।
আল-ইয্য ইবনে আব্দুস সালাম ও অপরাপর আলেমগণও আমরা যা উল্লেখ করেছি এ রকম কথা উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন: ওয়াসওয়াসা বা শুচিবায়ু এর প্রতিষেধক হচ্ছে- ব্যক্তি এ বিশ্বাস করা যে, এটি শয়তানী কুমন্ত্রণা। ইবলিস এটি তার অন্তরে আরোপ করছে এবং তার সাথে লড়াই করছে। এতে করে সে ব্যক্তি জিহাদ করার সওয়াব পাবে। কেননা সে ব্যক্তি আল্লাহ্র শত্রুর সাথে লড়াই করছে। যদি কেউ এভাবে অনুভব করতে পারে তাহলে শয়তান তার থেকে পালিয়ে যাবে। সৃষ্টির সূচনাকালে মানুষকে যেভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে মানুষের উপর শয়তানকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এটা সে জাতীয় পরীক্ষা; যাতে করে এর মাধ্যমে আল্লাহ্ সত্যকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবেন এবং মিথ্যাকে বাতিল গণ্য করবেন, যদিও কাফেরেরা তা অপছন্দ করুক না কেন।
সহিহ মুসলিমে (২২০৩) উসমান বিন আবুল আস (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: শয়তান আমার মাঝে এবং আমার নামায ও তেলাওয়াতের মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তিনি বললেন: এমন শয়তানকে ‘খিনযিব’ বলা হয়। এমনটি ঘটলে আপনি আউযুবিল্লাহ্ পড়ুন (অর্থাৎ শয়তান থেকে আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় চান) এবং বামদিকে তিনবার থুথু ফেলুন। তখন আমি এভাবে করলাম। ফলে আল্লাহ্ শয়তানকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিলেন।
এর মাধ্যমে ইতিপূর্বে আমি যা উল্লেখ করেছি তার যথার্থতা জানা যায় যে, ওয়াসওয়াসা (শুচিবায়ু) শুধু এমন সব ব্যক্তির উপর ভর করে যার মাঝে অজ্ঞতা, নির্বুদ্ধিতা প্রভাব সৃষ্টি করে রেখেছে, তার নিজের কোন বিবেচনাশক্তি নেই। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি ইলম ও বিবেক-বুদ্ধির উপর অবিচল আছে সে ব্যক্তি কখনও অনুসরণের পথ ছেড়ে বিদাতের পথে হাঁটবে না। নিকৃষ্টতম বিদাতী হচ্ছে– শুচিবায়ুগ্রস্ত ব্যক্তিরা। এরপর ইমাম মালেক (রাঃ) তাঁর শিক্ষক রাবিআ – তাঁর যামানায় আহলে সুন্নাহ্র সর্বোচ্চ নেতা-সম্পর্কে বলেন: দুইটি বিষয়ে রাবিআ সকল মানুষের চেয়ে দ্রুতগতি ছিলেন: মলমুত্র থেকে পবিত্র হওয়া ও ওযু করার ক্ষেত্রে। এমনকি অন্য কেউ…। আমি বলব: অর্থাৎ অন্য কেউ না করলেও। (সম্ভবতঃ তিনি বুঝাতে চাচ্ছেন: অন্য কেউ ওযু না করলেও)।
ইবনুল হুরমুয মলমুত্র থেকে পবিত্র হওয়া ও ওযু করার ক্ষেত্রে ধীরগতি ছিলেন। তিনি বলতেন: আমি পরীক্ষার শিকার, তোমরা আমাকে অনুসরণ করো না।
ইমাম নববী (রহঃ) জনৈক আলেম থেকে বর্ণনা করেন যে, যে ব্যক্তি ওযু কিংবা নামাযে শুচিবায়ু রোগে আক্রান্ত তার জন্য ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা মুস্তাহাব। কেননা শয়তান যিকির শুনলে দূরে চলে যায়। আর ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ হচ্ছে–প্রধান যিকির। শুচিবায়ু দূর করার উত্তম মহাষৌধ হচ্ছে– বেশি বেশি আল্লাহ্র যিকিরে মশগুল থাকা। [ইবনে হাজার হাইতামি এর বক্তব্য সমাপ্ত]
হজরত হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি (রহ.) বলেন,
চোর এমন গৃহস্থের বাড়িতেই যায়, যার ঘরে অর্থ-সম্পদ আছে। যে ঘরে কিছু নেই, চোর সেখানে কেন যাবে? কিন্তু এই (শয়তান) চোর ওই অন্তরেই কুমন্ত্রণা দেয় যার ভেতরে ঈমানের দৌলত আছে। অন্তরে যদি আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান না থাকত তা হলে শয়তান সেখানে গিয়ে কুমন্ত্রণা দেয়ার প্রয়োজন মনে করত না। তাই যখন মনে কোনো ওয়াসওয়াসা ও বাজে চিন্তা আসে তখন প্রথম কর্তব্য হলো আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করা। আলহামদুলিল্লাহ, আমার অন্তরে ঈমান আছে। তা না হলে এই সব চিন্তা আমার মনে সৃষ্টি হত না।
হজরত থানবি (রহ.) একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টা বুঝিয়েছেন। তিনি বলেন,
ধর কারো কাছে বাদশার পক্ষ থেকে আমন্ত্রণপত্র এসেছে, অমুক সময় দরবারে উপস্থিত হবে। তার সঙ্গে তোমাকে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হবে। তোমাকে পুরস্কৃত করা হবে। আমন্ত্রিত ব্যক্তি প্রস্তুত হয়ে দরবারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। পথিমধ্যে দুইটা কুকুর রাস্তার দুইপাশে দাঁড়িয়ে ঘেউ ঘেউ করতে লাগল। এই মুহূর্তে তার কী করা উচিত? এই ব্যক্তি কী যথাসময়ে দরবারে পৌঁছার জন্য কোনো দিকে না তাকিয়ে দ্রুত পথ চলবে নাকি কুকুরের চিৎকার বন্ধ করার চেষ্টায় লেগে যাবে? বুদ্ধিমানের কাজ কী হবে? যদি সে কুকুর তাড়ানোর পিছনে ছুটতে থাকে তা হলে সময়মত দরবারে পৌঁছা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই বুদ্ধিমানে কাজ হলো, কুকুর চিৎকার করতে থাকুক, তুমি যেখানে যেতে চাচ্ছ সেখানে কীভাবে দ্রুত পৌঁছা যায় সেই চিন্তা কর। তুমি যদি কুকুর তাড়ানোর চিন্তায় পড়ে যাও তা হলে দরবারে পৌঁছার সুযোগ তোমার হাতছাড়া হয়ে যাবে।
এমনিভাবে তোমরা যেই ইবাদত করছ এটা হলো আল্লাহ তায়ালার দরবারে উপস্থিতি। এই সৌভাগ্যের মুহূর্তে যেসব বিক্ষিপ্ত চিন্তা তোমার অন্তরে সৃষ্টি হচ্ছে এগুলো হলো কুকুরের ঘেউ ঘেউ। যদি তোমরা সেদিকে মনোযোগ দাও, সেগুলো দূর করার চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড় তা হলে শয়তানের উদ্দেশ্য হাসিল হবে। আর তোমরা সাক্ষাতের সৌভাগ্য থেকে বি ত হবে।
মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.) বলতেন,
যদি কোথাও অন্ধকার হয়ে আসে তবে তার সমাধান এই না যে, তুমি লাঠি নিয়ে অন্ধকার তাড়াতে নেমে পড়বে। কেননা এভাবে অন্ধকার দূর করা যায় না। অন্ধকার দূর করার পন্থা এই যে, তুমি একটি বাতি জ্বালিয়ে দাও। বাতির আলো যেই পর্যন্ত পৌঁছবে অন্ধকার সেখান থেকে বিদায় নেবে। মানুষের মনে যেসব ওয়াসওয়াসা ও কুচিন্তা, দ্বিধা-সংশয় সৃষ্টি হয় সেগুলোও এক ধরনের অন্ধকার। একে তাড়ানোর চেষ্টায় লেগে যাওয়া এর সমাধান না। বরং তোমার মনে আল্লাহ তায়ালার স্মরণের বাতি জ্বালাও। বন্দেগি ও আনুগত্যের চেরাগ জ্বালাও। দেখবে আঁধার দূর হয়ে গেছে।
দর্শনশাস্ত্রে আছে-
النفس لا تتوجه إلى شيئين في آن واحد
মানুষের চিন্তা একই সময়ে দুই বিষয়ে নিবদ্ধ হয় না।
এ জন্য তুমি যদি নিজেকে কাজে বা বিষয়ে ব্যস্ত কর তা হলে প্রথম চিন্তা এমনিতেই দূর হয়ে যাবে।
আল্লহ তাআলা আমাদেরকে ওয়াসওয়াসা থেকে ও শয়তানের সর্বপ্রকার কুমন্ত্রণা থেকে হেফাজত করুন, আমীন।
قال – تعالى -: (إِنَّمَا النَّجوَى مِنَ الشَّيطَانِ لِيَحزُنَ الَّذِينَ آمَنُوا وَلَيسَ بِضَارِّهِم شَيئًا إِلَّا بِإِذنِ اللَّهِ وَعَلَى اللَّهِ فَليَتَوَكَّلِ المُؤمِنُونَ)( سورة المجادلة: الآية 10.
وقال الله عز وجل : { وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ } [ فصلت36 ] .
وهذا كما قال – تعالى -: (وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيطَانِ نَزغٌ فَاستَعِذ بِاللّهِ إِنَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ – إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوا إِذَا مَسَّهُم طَائِفٌ مِّنَ الشَّيطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُم مٌّبصِرُونَ) (سورة الأعراف: الآيتان 201,200.)
لما في الحديث عن أبي هريرة – رضي الله عنه -قال: قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم -: ((يأتي الشيطان أحدكم فيقول: من خلق كذا وكذا حتى يقول له: من خلق ربك؟ فإذا بلغ ذلك فليستعذ بالله ولينته)( مسلم 134.)
وفي الحديث عن عبد الله بن مسعود – رضي الله عنه -قال: قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم -: ((إنّ للشيطان لـمَّة بابن آدم, وللمَلَك لـمَّة, فأما لـمَّة الشيطان, فإيعاد بالشر وتكذيب بالحق, وأما لـمَّة الملك, فإيعاد بالخير, وتصديق بالحق, فمن وجد ذلك, فليعلم أنه من الله, فليحمد الله, ومن وجد الأخرى, فليتعوّذ بالله من الشيطان الرجيم)), ثم قرأ: (الشَّيطَانُ يَعِدُكُمُ الفَقرَ وَيَأمُرُكُم بِالفَحشَاء) (سورة البقرة: آية 286.) رواه الترمذي 2988 وقال: حسن غريب, وابن حبان في صحيحه رقم40.
كذلك قال ابن عباس لأبي زُميل سماك بن الوليد الحنفي وقد سأله:\”ما شيء أجده في صدري؟ قال: ما هو؟ قال: قلت: والله لا أتكلم به, قال: قال لي: أشيءٌ من شك؟ قلت: بلى. فقال لي: ما نجا من ذلك أحد, حتى أنزل الله – عز وجل -: (فَإِن كُنتَ فِي شَكٍّ, مِّمَّا أَنزَلنَا إِلَيكَ فَاسأَلِ الَّذِينَ يَقرَؤُونَ الكِتَابَ مِن قَبلِكَ) قال: قال لي: فإذا وجدت في نفسك شيئاً فقل: (هُوَ الأَوَّلُ وَالآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيءٍ, عَلِيمٌ) (لأثر رواه أبو داود عن عبد الله بن عباس رضي الله عنه: 5/335. قال الأرناؤوط: وسنده حسن.
ولذلك كان النبي – صلى الله عليه وسلم – كثيراً ما يدعو فيقول: ((يا مقلب القلوب ثبت قلبي على دينك)( رواه الترمذي: 2066، وأحمد في المسند: 11664.
لقول الله – تعالى -: (فَاسأَلُوا أَهلَ الذِّكرِ إِن كُنتُم لاَ تَعلَمُونَ).
وقوله سبحانه: (وَإِذَا جَاءهُم أَمرٌ مِّنَ الأَمن ِأَوِ الخَوفِ أَذَاعُوا بِهِ وَلَو رَدٌّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَى أُولِي الأَمرِ مِنهُم لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَستَنبِطُونَهُ مِنهُم وَلَولاَ فَضلُ اللّهِ عَلَيكُم وَرَحمَتُهُ لاَتَّبَعتُمُ الشَّيطَانَ إِلاَّ قَلِيلاً).
فالخواطر التي ليست بمستقرة ولا اجتلبتها الشبهة فهي التي تدفع بالإعراض عنها ، وعلى مثلها يطلق اسم الوسوسة [ تفسير القرطبي 7/348 ] .
وَفِي كِتَابِ ابْنِ السُّنِّيِّ مِنْ طَرِيقِ عَائِشَةَ : رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا { مَنْ بُلِيَ بِهَذَا الْوَسْوَاسِ فَلْيَقُلْ : آمَنَّا بِاَللَّهِ وَبِرُسُلِهِ ثَلَاثًا ، فَإِنَّ ذَلِكَ يُذْهِبُهُ عَنْهُ } .
وَفِي مُسْلِمٍ مِنْ طَرِيقِ عُثْمَانَ بْنِ أَبِي الْعَاصِ أَنَّهُ قَالَ حَالَ بَيْنِي وَبَيْنَ صَلَاتِي وَقِرَاءَتِي فَقَالَ : ذَلِكَ شَيْطَانٌ يُقَالُ لَهُ خَنْزَبٌ ، فَتَعَوَّذْ بِاَللَّهِ مِنْهُ وَاتْفُلْ عَنْ يَسَارِك ثَلَاثًا ، فَفَعَلْت فَأَذْهَبَهُ اللَّهُ عَنِّي .
وَنَقَلَ النَّوَوِيُّ – رَحِمَهُ اللَّهُ – عَنْ بَعْضِ الْعُلَمَاءِ أَنَّهُ يُسْتَحَبُّ لِمَنْ بُلِيَ بِالْوَسْوَسَةِ فِي الْوُضُوءِ ، أَوْ الصَّلَاةِ أَنْ يَقُولَ : لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ إذَا سَمِعَ الذِّكْرَ خَنَسَ ؛ أَيْ : تَأَخَّرَ وَبَعُدَ ، وَلَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ – رَأْسُ الذِّكْرِ وَلِذَلِكَ اخْتَارَ صَفْوَةُ هَذِهِ الْأُمَّةِ – مِنْ أَصْحَابِ التَّرْبِيَةِ وَتَأْدِيبِ الْمُرِيدِ – قَوْلَ ( لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ ) لِأَهْلِ الْخَلْوَةِ ، وَأَمَرُوهُمْ بِالْمُدَاوَمَةِ عَلَيْهَا ، وَقَالُوا : أَنْفَعُ عِلَاجٍ فِي دَفْعِ الْوَسْوَسَةِ الْإِقْبَالُ عَلَى ذِكْرِ اللَّهِ تَعَالَى وَالْإِكْثَارُ مِنْهُ .
وَقَالَ ابْنُ أَبِي الْحَوَارِيِّ بِكَسْرِ الرَّاءِ وَفَتْحِهَا شَكَوْت إلَى الدَّارَانِيِّ الْوَسْوَسَةَ فَقَالَ : إذَا أَرَدْت قَطْعَهُ فَمَتَى أَحْسَسْت بِهِ فَافْرَحْ فَإِذَا فَرِحْت انْقَطَعَ عَنْك فَإِنَّهُ لَيْسَ شَيْءٌ أَبْغَضَ إلَى الشَّيْطَانِ مِنْ سُرُورِ الْمُؤْمِنِ ، قَالَ بَعْضُهُمْ : وَيُؤَيِّدُ هَذَا مَا ذُكِرَ عَنْ بَعْضِ الْأَئِمَّةِ أَنَّهُ إنَّمَا يُبْتَلَى بِهِ مَنْ كَمُلَ إيمَانُهُ ؛ فَإِنَّ اللِّصَّ لَا يَسْرِقُ مِنْ بَيْتِ لِصٍّ مِثْلِهِ ا هـ .
وَقَالَ الْعَارِفُ أَبُو الْحَسَنِ الشَّاذِلِيُّ : إذَا كَثُرَ عَلَيْك الْوَسْوَاسُ فَقُلْ : سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْخَلَّاقِ { إنْ يَشَأْ يُذْهِبْكُمْ وَيَأْتِ بِخَلْقٍ جَدِيدٍ وَمَا ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ بِعَزِيزٍ } ، أَذْهَبَ اللَّهُ عَنَّا سَائِرَ الْمَضَارِّ وَالْمَخَاوِفِ وَالْفِتَنِ ، وَأَنَالَنَا كُلَّ خُلُقٍ حَسَنٍ ، وَجَعَلَنَا مِنْ أَهْلِ وِلَايَةِ أَهْلِ النِّعَمِ وَالْمِنَنِ إنَّهُ عَلَى مَا يَشَاءُ قَدِيرٌ وَبِالْإِجَابَةِ جَدِيرٌ [ الفتاوى الفقهية الكبرى 2/51 ] .
উত্তর প্রদানে-
মুফতী মাসুম বিল্লাহ।
Sharia Specialist, Islamic Economist, Banking & Finance Expert.
Khatib & Mufassir at Al Madina Jame Masjid at Eastern Housing, Pallabi Phase-2, Mirpur 11 ½.
Senior Muhaddis & Mufti at Jamia Islamia Darul Uloom Dhaka,Masjidul Akbar Complex, Mirpur-1,Dhaka-1216
Ustazul fiqh & Ifta at مركز البحوث الاسلامية داكا. Markajul Buhus Al Islamia Dhaka