মিরাজের ঘটনা কি ? শবে মিরাজের কোন আমল আছে কি না ? এবং আমাদের দেশে প্রতি বছর যেভাবে শবে মিরাজ পালন করা হয়, তার বিধান কি ?

By | March 9, 2021

وبالله سبحانه التوفيق

মিরাজের ঘটনার আগের ধারাবাহিক ঘটনাগুলো ছিলো বিষাদের। 

মিরাজের ঠিক আগে লাগাতার রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনে যেসব দুঃখ আসে:

• তাঁর স্ত্রী খাদিজার (রাদিয়াল্লাহু আনহা) ইন্তেকাল; যিনি ছিলেন ঘরে তাঁর সবচেয়ে বড়ো প্রেরণাদাতা।

• তাঁর চাচা আবু তালিবের ইন্তেকাল; যিনি ছিলেন ঘরের বাইরে তাঁর সবচেয়ে বড়ো অভিভাবক, যিনি তাঁকে আগলে রাখতেন।

• তায়েফের দিন; যা ছিলো রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনের সবচেয়ে দুর্বিষহ দিন।

যেমন কুরবানী তেমন মেহেরবানী!

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কষ্টের মধ্যে, তখন আল্লাহ তাঁকে তাঁর জীবনের অন্যতমগুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন প্রত্যক্ষ করান। তাঁকে এমন জায়গায় নিয়ে যান, যেখানে পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো মানুষইতোপূর্বে যায়নি।

মিরাজের ঘটনা কখন সংঘটিত হয়েছিলো ?

মূলত রাসুল সা.-এর মিরাজ নিয়ে কোনো মতানৈক্য নেই। এটি সুসাব্যস্ত একটি বিষয়। কিন্তু এটি কবে ঘটেছে, এ নিয়ে বিস্তর মতানৈক্য রয়েছে। কারও মতে হিজরতের পাঁচ বছর পূর্বে, কারও মতে তিন বছর পূর্বে, কারও মতে দেড় বছর পূর্বে, কারও মতে এক বছর পূর্বে, কারও মতে ছয় মাস পূর্বে। 

অনুরূপ কোন মাসে হয়েছে, এ নিয়েও অনেক মতপাওয়া যায়। 

কারও মতে রবিউল আওয়ালে, 

কারও মতে রবিউল আখিরে, কারও মতে রজবে, 

কারও মতে রমজানেআর কারও মতে শাওয়ালে। 

এভাবে দিন বা তারিখ নিয়েও অনেক মত পাওয়া যায়।

হাফিজ ইবনু হাজার আসকালানি রহ. বলেন :

وَقَدِ اخْتُلِفَ فِي وَقْتِ الْمِعْرَاجِ فَقِيلَ كَانَ قَبْلَ الْمَبْعَثِ وَهُوَ شَاذٌّ إِلَّا إِنْ حُمِلَ عَلَى أَنَّهُ وَقَعَ حِينَئِذٍ فِي الْمَنَامِ كَمَا تَقَدَّمَ وَذَهَبَ الْأَكْثَرُإِلَى أَنَّهُ كَانَ بَعْدَ الْمَبْعَثِ ثُمَّ اخْتَلَفُوا فَقِيلَ قَبْلَ الْهِجْرَةِ بِسَنَةٍ قَالَه بن سعد وَغَيره وَبِه جزم النَّوَوِيّ وَبَالغ بن حَزْمٍ فَنَقَلَ الْإِجْمَاعَ فِيهِوَهُوَ مَرْدُودٌ فَإِنَّ فِي ذَلِكَ اخْتِلَافًا كَثِيرًا يَزِيدُ عَلَى عَشَرَةِ أَقْوَال مِنْهَا مَا حَكَاهُ بن الْجَوْزِيِّ أَنَّهُ كَانَ قَبْلَهَا بِثَمَانِيَةِ أَشْهُرٍ وَقِيلَ بِسِتَّةِأَشْهُرٍ وَحَكَى هَذَا الثَّانِيَ أَبُو الرَّبِيعِ بن سَالم وَحكى بن حَزْمٍ مُقْتَضَى الَّذِي قَبْلَهُ لِأَنَّهُ قَالَ كَانَ فِي رَجَبٍ سَنَةَ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ مِنَالنُّبُوَّةِ وَقِيلَ بِأَحَدَ عَشَرَ شَهْرًا جَزَمَ بِهِ إِبْرَاهِيمُ الْحَرْبِيُّ حَيْثُ قَالَ كَانَ فِي رَبِيعٍ الْآخِرِ قبل الْهِجْرَة بِسنة وَرجحه بن الْمُنِيرِ فِيشَرْحِ السِّيرَةِ لِابْنِ عَبْدِ الْبَرِّ وَقيل قبل الْهِجْرَة بِسنة وشهرين حَكَاهُ بن عَبْدِ الْبَرِّ وَقِيلَ قَبْلَهَا بِسَنَةٍ وَثَلَاثَةِ أَشْهُرٍ حَكَاهُ بن فَارِسٍوَقِيلَ بِسَنَةٍ وَخَمْسَةِ أَشْهُرٍ قَالَهُ السُّدِّيُّ وَأَخْرَجَهُ مِنْ طَرِيقِهِ الطَّبَرِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فَعَلَى هَذَا كَانَ فِي شَوَّالٍ أَوْ فِي رَمَضَانَ عَلَى إِلْغَاءِالْكَسْرَيْنِ مِنْهُ وَمِنْ رَبِيعٍ الْأَوَّلِ وَبِهِ جَزَمَ الْوَاقِدِيُّ وَعَلَى ظَاهِرِهِ يَنْطَبِقُ مَا ذَكَرَهُ بن قُتَيْبَة وَحَكَاهُ بن عَبْدِ الْبَرِّ أَنَّهُ كَانَ قَبْلَهَا بِثَمَانِيَةَعَشَرَ شهرا وَعند بن سعد عَن بن أَبِي سَبْرَةَ أَنَّهُ كَانَ فِي رَمَضَانَ قَبْلَ الْهِجْرَةِ بِثَمَانِيَةَ عَشَرَ شَهْرًا وَقِيلَ كَانَ فِي رَجَب حَكَاهُ بنعَبْدِ الْبَرِّ وَجَزَمَ بِهِ النَّوَوِيُّ فِي الرَّوْضَةِ وَقيل قبل الْهِجْرَة بِثَلَاث سِنِين حَكَاهُ بن الْأَثِيرِ وَحَكَى عِيَاضٌ وَتَبِعَهُ الْقُرْطُبِيُّ وَالنَّوَوِيُّ عَنِالزُّهْرِيِّ أَنَّهُ كَانَ قَبْلَ الْهِجْرَةِ بِخَمْسِ سِنِينَ وَرَجَّحَهُ عِيَاضٌ وَمَنْ تَبِعَهُ.

‘মিরাজের সময় নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কারও মতে এটা নবুওয়াতের পূর্বেই হয়েছে। কিন্তু এটা অত্যন্ত দুর্বল ও বিচ্ছিন্নমত। তবে স্বপ্নে দেখা উদ্দেশ্য নিলে ঠিক আছে; যেমনটি পূর্বে গত হয়েছে। আর অধিকাংশ ইতিহাসবিদের মতে এটা নবুওয়াত প্রাপ্তির পরে হয়েছে। এরপর তারা আবার মতভেদ করেছেন। কারও মতে এটা হিজরতের এক বছর পূর্বেহয়েছে। ইমাম ইবনে সাদ রহ.-সহ প্রমূখ এমনই বলেছেন। ইমাম নববি রহ. এটাকেই চূড়ান্ত বলেছেন। আর ইমাম ইবনে হাজাম রহ. তো অতিরঞ্জিত করে এ মতের ব্যাপারে ইজমার দাবি করেছেন। কিন্তু ইজমার দাবি পুরোই ভুল।কেননা, এ ব্যাপারে দশেরও অধিক মত পাওয়া যায়, যার কয়েকটি ইমাম ইবনুল জাওজি রহ. বর্ণনা করেছেন যে, হিজরতের আট মাস পূর্বে মিরাজ সংঘটিত হয়েছে এবং কারও মতে ছয় মাস পূর্বে। এ দ্বিতীয় মতটি বর্ণনা করেছেনইমাম আবুর রবি বিন সালিম রহ.। আর এর পূর্বের উক্তির দাবিকৃত মতটি বর্ণনা করেছেন ইমাম ইবনে হাজাম রহ.।কেননা, তিনি বলেছেন, মিরাজ সংঘটিত হয়েছে নবুওয়াতের দ্বাদশ বছরের রজব মাসে। কারও মতে এগারো মাসআগে। ইমাম ইবরাহিম হারবি রহ. এটাকে চূড়ান্ত মত বলেছেন। কেননা, তিনি বলেছেন, মিরাজ সংঘটিত হয়েছেহিজরতে এক বছর পূর্বে রবিউল আখিরে। ইমাম ইবনে আব্দুল বার রহ. বিরচিত “আস-সিরাহ” এর ব্যাখ্যাগ্রন্থেইমাম ইবনে মুনির রহ. এটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। কারও মতে হিজরতের এক বছর দুমাস পূর্বে। ইমাম ইবনেআব্দুল বার রহ. এ মতটি বর্ণনা করেছেন। কারও মতে হিজরতের এক বছর তিন মাস পূর্বে। ইমাম ইবনে ফারিসরহ. এ মতটি বর্ণনা করেছেন। কারও মতে হিজরতের এক বছর পাঁচ মাস পূর্বে। ইমাম সুদ্দি রহ. এ মতটি বর্ণনাকরেছেন। তার সূত্রে ইমাম তাবারি রহ. ও ইমাম বাইহাকি রহ. বর্ণনাটি রিওয়ায়াত (বর্ণনা) করেছেন। এ মতানুসারেমিরাজ সংঘটিত হয়েছে রমজানে অথবা রবিউল আওয়াল ও রমজানের ভগ্নাংশ দুটি বাদ দিলে শাওয়ালে। ইমামওয়াকিদি রহ. এ মতটিকে চূড়ান্ত বলেছেন। এ মতের সাথে মিলে যায় যা ইমাম কুরতুবি রহ. উল্লেখ করেছেন এবংইমাম ইবনে আব্দুল বার রহ. বর্ণনা করেছেন যে, হিজরতের আঠারো মাস পূর্বে মিরাজ সংঘটিত হয়েছে। ইমামইবনে সাদ রহ.-এর বর্ণনায় ইবনে আবু সাবরা রহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, মিরাজ হিজরতের আঠারো মাস পূর্বেরমজান মাসে সংঘটিত হয়েছে। কারও মতে মিরাজ রজব মাসে সংঘটিত হয়েছে, যা ইমাম ইবনে আব্দুল বার. বর্ণনাকরেছেন এবং ইমাম নববি রহ. তাঁর “রাওজাতুত তালিবিন”-এ চূড়ান্ত মত বলে অভিহিত করেছেন। কারও মতে, হিজরতে তিন বছর পূর্বে মিরাজ সংঘটিত হয়েছে, যা ইমাম ইবনে আসির রহ. উল্লেখ করেছেন। কাজি ইয়াজ রহ. ওতাঁর অনুকরণে ইমাম কুরতুবি রহ. ও ইমাম নববি রহ. ইমাম জুহরি রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, এটা হিজরতের পাঁচবছর পূর্বে সংঘটিত হয়েছে। কাজি ইয়াজ রহ. ও তাঁর অনুসারীরা এটাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।’ (ফাতহুল বারি : ৭/২০৩, প্রকাশনী : দারুল মারিফা, বৈরুত)

ইমাম ইবনুল জাওজি রহ. বলেন :

وَاتَّفَقَ الْعُلَمَاءُ عَلَى أَنَّ هَذَا الْمِعْرَاجَ كَانَ بِمَكَّةَ قَبْلَ الْهِجْرَةِ، وَاخْتَلَفُوا فِي الْمُدَّةِ الَّتِي كَانَتْ بَيْنَهُمَا عَلَى أَرْبَعَةِ أَقْوَالٍ: أَحَدُهَا: سَنَةٌقَالَهُ ابْنُ عَبَّاسٍ. وَالثَّانِي: سِتَّةُ أَشْهُرٍ. قَالَهُ السُّدِّيُّ. وَالثَّالِثُ: ثَمَانِيَةَ عَشَرَ شَهْرًا. قَالَهُ الْوَاقِدِيُّ. ذَكَرَ هَذِهِ الأَقْوَالَ عَنْهُمْ أَبُو حَفْصِبْنُ شَاهِينَ. وَالرَّابِعُ: ثَمَانِيَةُ أَشْهُرٍ. فَأَمَّا الْهِجْرَةُ فَإِنَّهَا كَانَتْ فِي يَوْمِ الاثْنَيْنِ ثَانِي عَشَرَ رَبِيعِ الأَوَّلِ، أَعْنِي الْيَوْمَ الَّذِي قَدِمَ فِيهِرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ. فَعَلَى الْقَوْلِ الأَوَّلِ يَكُونُ الْمِعْرَاجُ فِي رَبِيعٍ الأَوَّلِ. وَعَلَى الثَّانِي وَالثَّالِثِ يَكُونُ فِي رَمَضَانَ. وَعَلَى الرَّابِعِ يَكُونُ فِي رجب. وقد ذكر محمد بن سعد عن الْوَاقِدِيُّ عَنْ أَشْيَاخٍ لَهُ قَالُوا: كَانَ الْمِعْرَاجُ لَيْلَةَ السَّبْتِ لِسَبْعَ عَشْرَةَ لَيْلَةًخَلَتْ مِنْ رَمَضَانَ قَبْلَ الْهِجْرَةِ بِثَمَانِيَةَ عَشَرَ شَهْرًا.

‘উলামায়ে কিরামের এ ব্যাপারে ঐকমত্য আছে যে, এ মিরাজ হিজরতের পূর্বে মক্কায় থাকাকালীন সংঘটিতহয়েছিল। কিন্তু হিজরত ও মিরাজের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যাপারে তাদের চারটি মত রয়েছে। এক. এক বছর। এটা ইবনেআব্বাস রা.-এর মত। দুই. ছয় মাস। এটা সুদ্দি রহ.-এর মত। তিন. আঠারো মাস। এটা ইমাম ওয়াকিদি রহ.-এরমত। তাঁদের থেকে এ মতগুলো ইমাম আবু হাফস শাহিন রহ. উল্লেখ করেছেন। চার. আট মাস। এদিকে হিজরতহয়েছে রবিউল আউয়ালের দ্বাদশ দিবসে সোমবার। অর্থাৎ এদিনেই তিনি মদিনায় পৌঁছেন। সুতরাং প্রথমমতানুসারে মিরাজ রবিউল আওয়াল মাসে হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় মতানুসারে রমজান মাসে হয়েছে। আর চতুর্থমতানুসারে রজব মাসে হয়েছে। ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাদ রহ. ইমাম ওয়াকিদি রহ. সূত্রে তাঁর উস্তাদদের থেকে বর্ণনাকরেন যে, তাঁরা বলেছেন, হিজরতের আঠারো মাস পূর্বে রমজানের সতেরো তারিখে রোববার রাতে মিরাজ সংঘটিতহয়।’ (আত-তাবসিরা, ইবনুল জাওজি : ২/৩৩-৩৪, প্রকাশনী : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত)

ইমাম ইবনু রজব হাম্বলি রহ. বলেন :

وقد روي: أنه في شهر رجب حوادث عظيمة ولم يصح شيء من ذلك فروي: أن النبي صلى الله عليه وسلم ولد في أول ليلة منهوأنه بعث في السابع والعشرين منه وقيل: في الخامس والعشرين ولا يصح شيء من ذلك وروى بإسناد لا يصح عن القاسمبن محمد: أن الإسراء بالنبي صلى الله عليه وسلم كان في سابع وعشرين من رجب وانكر ذلك إبراهيم الحربي وغيره

‘বর্ণিত আছে যে, রজব মাসে অনেক বড় বড় ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, কিন্তু এর একটিও বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়।যেমন বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সা. এ মাসের প্রথম রাতে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং এ মাসের সাতাশ তারিখেতিনি নবুওয়াতপ্রাপ্ত হন, কারও মতে পঁচিশ তারিখে। এর কোনোটিই বিশুদ্ধভাবে সাব্যস্ত নয়। অনুরূপ অশুদ্ধ সূত্রেকাসিম বিন মুহাম্মাদ রহ. থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সা.-এর মিরাজ রজবের সাতাশ তারিখে হয়েছে। ইমাম ইবরাহিম রহ.-সহ প্রমূখ এটা খণ্ডন করেছেন।’ (লাতায়িফুল মাআরিফ : ১২১, প্রকাশনী : দারু ইবনি হাজাম)

মূলত এগুলোর কোনোটির পক্ষেই প্রমাণযোগ্য কোনো বর্ণনা বা হাদিস পাওয়া যায় না। তাই নির্দিষ্টভাবে ২৭শে রজবকে শবে মিরাজ মনে করার কোনো অবকাশ নেই। 

ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন :

هَذَا إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ الْإِسْرَاءِ تُعْرَفُ عَيْنُهَا، فَكَيْفَ وَلَمْ يَقُمْ دَلِيلٌ مَعْلُومٌ لَا عَلَى شَهْرِهَا وَلَا عَلَى عَشْرِهَا وَلَا عَلَى عَيْنِهَا، بَلِ النُّقُولُ فِيذَلِكَ مُنْقَطِعَةٌ مُخْتَلِفَةٌ لَيْسَ فِيهَا مَا يُقْطَعُ بِهِ،

‘এটা তখনই ঠিক হতো, যখন মিরাজের রাত নির্দিষ্টভাবে জানা থাকত। অথচ এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত কোনো প্রমাণনেই, না এর মাসের ব্যাপারে, না এর দশকের ব্যাপারে আর না নির্দিষ্ট কোনো দিনের ব্যাপারে; বরং এ ব্যাপারেসকল বর্ণনাই সূত্রবিচ্ছিন্ন ও মতানৈক্যপূর্ণ, যার কোনোটিই সুনিশ্চিত নয়।’ (জাদুল মাআদ : ১/৫৮, প্রকাশনী : মুআসসাসাতুর রিসালা, বৈরুত)

আল্লামা ছফিউর রহমান মুবারকপূরী (রাহিমাহুল্লাহ) ‘আর-রাহিকুল মাখতূম’ বইয়ে ৬ টি মত উল্লেখ করেছেন।

 সেগুলো হলো:

• যে বছর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবুওয়্যাত লাভ করেন, সেবছর। এটা ইমাম তাবরানির(রাহিমাহুল্লাহ) মত।

• নবুওয়্যাতের ৫ বছর পূর্বে। এটা ইমাম আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) এবং ইমাম কুরতুবির (রাহিমাহুল্লাহ) মত।

• হিজরতের ১৬ মাস পূর্বে। রামাদ্বান মাসে।

• নবুওয়্যাতের দশম বছর রজব মাসের ২৭ তারিখ। এটা আল্লামা মনসুরপুরীর (রাহিমাহুল্লাহ) মত।

• হিজরতের এক বছর দুই মাস পূর্বে। মহররম মাসে।

• হিজরতের এক বছর পূর্বে। রবিউল আউয়াল মাসে।

[আল্লামা ছফিউর রহমান মুবারকপূরী, আর-রাহিকুল মাখতূম, পৃষ্ঠা ১৫৪। ]

মিরাজ কবে হয়েছিলো, সেটার অন্যতম ক্লু হলো খাদিজা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) –এর ইন্তেকাল। খাদিজা (রা:) ৫ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হবার পূর্বে ইন্তেকাল করেন। আর ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয় মিরাজের রাত্রে। সুতরাং, মিরাজ হয়েছিলো খাদিজার (রা:) ইন্তেকালের পর। 

এই তথ্যের আলোকে ৬ টি মতের মধ্যে প্রথম তিনটি মত বাদ পড়ে যায়। বাকি রইলো শেষ তিনটি মত। 

আল্লামা ছফিউর রহমান মুবারকপূরী (রাহি:) এই সম্পর্কে বলেন:

“শেষোক্ত তিনটি বক্তব্যের কোনোটিকে কোনোটির উপর প্রাধান্য দেয়ার মতো আর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।” 

[আল্লামা ছফিউর রহমান মুবারকপূরী, আর-রাহিকুল মাখতূম, পৃষ্ঠা ১৫৪। ]

সারকথা

এ ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। 

তবে নির্ভর যোগ্য সূত্রে শুধু এতটুকুই পাওয়া যায় যে, মি‘রাজের ঘটনা হিজরতের এক বা দেড় বছর আগে সংঘটিত হয়েছিল। 

কিন্তু মাস, দিন তারিখের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোন দলীল নেই। 

যদিও সাধারণ জনগণের মাঝে প্রসিদ্ধ হলো রজব মাসের ২৭ তম তারিখে সংঘটিত হয়েছিল। 

(আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ ও শরহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়াহ খঃ৮ পৃঃ ১৮/১৯)

মি‘রাজের ঘটনা কোন বছর কোন মাসের কোন তারিখে এবং কোন রাতে হয়েছিল তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মাঝে অনেক মতভেদ রয়েছে এবং এ রাতটি পৃথিবীর ইতিহাসে একবারই এসেছে। কিয়ামত পর্যন্ত আর কখনো মি‘রাজ সংঘটিত হবে না। 

সুতরাং কোন একটা তারিখ চূড়ান্ত মনে করা ও অন্যান্যগুলিকে ভুল বলা যাবে না। 

অর্থাৎ, পরিপূর্ণ নিশ্চয়তার সাথে এ কথা বলা যায় না যে কোন তারিখের কোন রাতে মি‘রাজের ঘটনা ঘটেছিল। 

মিরাজের রাতের দুটো অংশ :

একটি হলো ‘ইসরা’ এবং আরেকটি হলো ‘মিরাজ’। 

ইসরা আরবী শব্দ। অর্থ: রাত্রিভ্রমণ করা।

মি‘রাজ আরবী উরুজ শব্দ থেকে নির্গত, যার অর্থ ঊর্ধ্বে গমন করা। 

আর মি‘রাজ শব্দের অর্থ ঊর্ধ্বে আরোহণেরবাহন। 

পরিভাষায় ;

ইসরা হলো মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত বোরাকের সাহায্যেরাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বল্পকালীন রাত্রিভ্রমণ। 

মিরাজ হলো বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে উর্ধ্বমুখী সিঁড়ি বেয়ে মহাকাশের সীমানা পেরিয়ে আল্লাহর সাথেসাক্ষাৎ। [২]

ইসরা  মিরাজের ঘটনা 

কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছে

سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آَيَاتِنَا إِنَّه هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

অর্থ: পবিত্র ঐ মহান সত্ত্বা যিনি রাত্রি বেলায় তাঁর বান্দাকে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণকরিয়েছেন, যার আশপাশকে আমি বরকতময় করেছি। এটা এজন্য যাতে আমি তাকে আমার নিদর্শনাবলী দেখাতেপারি। (সূরা বনী ইসরাইল আয়াত নং-১)

 হাদীসের আলোকে মিরাজের সংক্ষিপ্ত ঘটনা!

এক রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উম্মে হানী রা. এর ঘরে শুয়েছিলেন। 

রাসূলের অর্ধনিদ্রা অবস্থায় হযরত জিবরীল আ. অন্যান্য ফেরেশতাসহ অবতরণ করেন এবং হুযুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদে হারামে নিয়ে যান। 

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন হাতীমে কা’বায় ঘুমিয়ে পড়েন।

হযরত জিবরীল ও মীকাঈল আ. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জাগিয়ে যমযমের পাশে নিয়ে সীনামুবারক বিদীর্ণ করে অন্তরাত্মা বের করে যমযমের পানিতে ধুয়ে ইলম ও হিকমতে পরিপূর্ণ করে স্বর্ণের তশতরীতে রাখেন। 

অতঃপর পুনরায় বক্ষে স্থাপন করে দেন। 

এরপর বোরাক নামক বাহনে করে হুযুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহিওয়াসাল্লাম কে মসজিদে আকসা পর্যন্ত নিয়ে যান। 

অতঃপর সেখান থেকে আসমানে নিয়ে যান। প্রথম আসমানেরনিকট গিয়ে জিবরীল আ. দরজা খোলার আবেদন জানান। ফেরেশতাগণ অভিবাদন জানিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বরণ করে নেন। এভাবে সপ্তম আসমান অতিক্রম করেন। 

এসময়ে যথাক্রমে প্রথম আসমানে হযরত আদম আ., দ্বিতীয় আসমানে ইয়াহইয়া এবং ঈসা আ. তৃতীয় আসমানে হযরত ইউসুফ আ. চতুর্থ আসমানে হযরত ইদরীস আ. পঞ্চম আসমানে হযরত হারুন আ. ষষ্ঠ আসমানে হযরত মূসা আ. সপ্তম আসমানে হযরত ইবরাহীম আ. এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। সকলেই হুযুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অভ্যর্থনা জানান। সপ্তমাকাশ থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রফরফ নামক বাহনের মাধ্যমে সিদরাতুল মুনতাহা ও আরশে আযীমে গমন করেন। সেখানে অনেক আশ্চর্য ও বিস্ময়কর জিনিস প্রত্যক্ষ করেন।জান্নাত-জাহান্নাম স্বচক্ষে দেখেন। 

পরিশেষে আল্লাহর দীদার ও কালাম লাভে ধন্য হন। এবং আল্লাহর পক্ষ থেকেউপঢৌকন স্বরূপ পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাযের বিধান নিয়ে জমিনের দিকে প্রত্যাবর্তন করেন। 

পথিমধ্যে হযরত মূসা আ. এর পরামর্শক্রমে কয়েকবার আল্লাহর নিকট গিয়ে নামাযের সংখ্যা কমানোর আবেদন জানান। 

অবশেষে পাঁচওয়াক্ত নামায (যাতে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সওয়াব পাওয়া যাবে।) এর বিধান নিয়ে বাইতুল মুকাদ্দাস হয়ে মক্কায় ফিরে আসেন। 

(বুখারী শরীফ হাদীস নং ৩৮৮৭, ফাতহুলবারী ৭/২৫০,২৫৯, শরহে যুরকানী ৮/৪২, সীরাতে ইবনে হিশাম২/১০, খাসায়েসুল কুবরা ১/১৫২)

قَالَ الْإِمَامُ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ الْبُخَارِيُّ: حَدَّثَنِي عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ -هُوَ ابْنُ بِلَالٍ-عَنْ شَرِيكِ بْنِ عَبْدِ اللِّهِ قَالَ: سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُولُ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِرَسُولِ اللَّهِ ﷺ مِنْ مَسْجِدِ الْكَعْبَةِ: إِنَّهُ جَاءَهُ ثَلَاثَةُ نَفَرٍ قَبْلَ أَنْ يُوحَى إِلَيْهِ وَهُوَ نَائِمٌ فِيالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ فَقَالَ أَوَّلُهُمْ: أَيَهُمُّ هُوَ؟ فَقَالَ أَوْسَطُهُمْ: هُوَ خَيْرُهُمْ، فَقَالَ آخِرُهُمْ: خُذُوا خَيْرَهُمْ. فَكَانَتْ تِلْكَ اللَّيْلَةَ فَلَمْ يَرَهُمْ حَتَّىأَتَوْهُ لَيْلَةً أُخْرَى فِيمَا يَرَى قَلْبُهُ، وَتَنَامُ عَيْنَاهُ وَلَا يَنَامُ قَلْبُهُ -وَكَذَلِكَ الْأَنْبِيَاءُ تَنَامُ أَعْيُنُهُمْ وَلَا تَنَامُ قُلُوبُهُمْ-فَلَمْ يُكَلِّمُوهُ حَتَّى احْتَمَلُوهُفَوَضَعُوهُ عِنْدَ بِئْرِ زَمْزَمَ، فَتَوَلَّاهُ مِنْهُمْ جِبْرِيلُ، فَشَقَّ جِبْرِيلُ مَا بَيْنَ نَحْرِهِ إِلَى لَبَّتِهِ حَتَّى فَرَغَ مِنْ صَدْرِهِ وَجَوْفِهِ، فَغَسَلَهُ مِنْ مَاءِزَمْزَمَ، بِيَدِهِ حَتَّى أَنْقَى جَوْفَهُ، ثُمَّ أُتِيَ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ فِيهِ تَوْرٌ مَنْ ذَهَبٍ مَحْشُوًّا إِيمَانًا وَحِكْمَةً، فَحَشَا بِهِ صَدْرَهُ وَلَغَادِيدَهُ -يَعْنِيعُرُوقَ حَلْقِهِ-ثُمَّ أَطْبَقَهُ. ثُمَّ عَرَجَ بِهِ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَضَرَبَ بَابًا مِنْ أَبْوَابِهَا، فَنَادَاهُ أَهْلُ السَّمَاءِ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالَ: جِبْرِيلُ. قَالُوا: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مَعِي مُحَمَّدٌ. قَالُوا: وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالُوا: مَرْحَبًا بِهِ وَأَهْلًا بِهِ، يَسْتَبْشِرُ بِهِ أَهْلُ السَّمَاءِ لَا يَعْلَمُ أَهْلُالسَّمَاءِ بِمَا يُرِيدُ اللَّهُ بِهِ فِي الْأَرْضِ حَتَّى يُعْلِمهم.

وَوَجَدَ فِي السَّمَاءِ الدُّنْيَا آدَمَ، فَقَالَ لَهُ جِبْرِيلُ: هَذَا أَبُوكَ آدَمُ فسلِّم عَلَيْهِ، فسلَّم عَلَيْهِ، وَرَدَّ عَلَيْهِ آدَمُ فَقَالَ: مَرْحَبًا وَأَهْلًا بِابْنِي،نِعْمَ الِابْنُ أَنْتَ، فَإِذَا هُوَ فِي السَّمَاءِ الدُّنْيَا بِنَهْرَيْنِ يَطَّرِدَانِ فَقَالَ: “مَا هَذَانِ النَّهْرَانِ يَا جِبْرِيلُ؟ ” قَالَ: هَذَا النِّيلُ وَالْفُرَاتُعُنْصُرُهُمَا، ثُمَّ مَضَى بِهِ فِي السَّمَاءِ، فَإِذَا هُوَ بِنَهْرٍ آخَرَ عَلَيْهِ قَصْرٌ مِنْ لُؤْلُؤٍ وَزَبَرْجَدٍ، فَضَرَبَ يَدَهُ فَإِذَا هُوَ مِسْكٌ أذْفر فَقَالَ: “مَا هَذَا يَا جِبْرِيلُ؟ ” قَالَ: هَذَا الْكَوْثَرُ الَّذِي خَبَّأَ لَكَ رَبُّكَ.

ثُمَّ عُرِجَ إِلَى السَّمَاءِ الثَّانِيَةِ، فَقَالَتِ الْمَلَائِكَةُ لَهُ مِثْلَ مَا قَالَتْ لَهُ الْأُولَى: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قَالُوا: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قَالُوا: وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالُوا: مَرْحَبًا وَأَهْلًا وَسَهْلًا.

ثُمَّ عَرَجَ بِهِ إِلَى السَّمَاءِ الثَّالِثَةِ، فَقَالُوا لَهُ مِثْلَ مَا قَالَتِ الْأُولَى وَالثَّانِيَةُ. ثُمَّ عَرَجَ بِهِ إِلَى السَّمَاءِ الرَّابِعَةِ، فَقَالُوا لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ. ثُمَّ عَرَجَبِهِ إِلَى السَّمَاءِ الْخَامِسَةِ، فَقَالُوا لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ. ثُمَّ عَرَجَ بِهِ إِلَى السَّمَاءِ السَّادِسَةِ، فَقَالُوا لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ. ثُمَّ عَرَجَ بِهِ إِلَى السَّمَاءِالسَّابِعَةِ، فَقَالُوا لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ. كُلُّ سَمَاءٍ فِيهَا أَنْبِيَاءُ قَدْ سَمَّاهُمْ، قَدْ وَعَيْتُ مِنْهُمْ إِدْرِيسَ فِي الثَّانِيَةِ وَهَارُونَ فِي الرَّابِعَةِ، وَآخَرَفِي الْخَامِسَةِ لَمْ أَحْفَظِ اسْمَهُ، وَإِبْرَاهِيمَ فِي السَّادِسَةِ، وَمُوسَى فِي السَّابِعَةِ بِتَفْضِيلِ كَلَامِ اللَّهِ. فَقَالَ مُوسَى: “رَبِّ لَمْ أَظُنَّ أَنْيُرْفَعَ عَلَيَّ أَحَدٌ” ثُمَّ عَلَا بِهِ فَوْقَ ذَلِكَ، بِمَا لَا يَعْلَمُهُ إِلَّا اللَّهُ، عَزَّ وَجَلَّ، حَتَّى جَاءَ سِدْرَة الْمُنْتَهَى، وَدَنَا الْجَبَّارُ رَبُّ الْعِزَّةِ فَتَدَلَّى،حَتَّى كَانَ مِنْهُ قَابَ قَوْسَيْنِ أو أدنى، فأوحى الله إليه فيما يُوحِي: خَمْسِينَ صَلَاةً عَلَى أُمَّتِكَ كُلَّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ. ثُمَّ هُبِطَ بِهِ حَتَّى بَلَغَمُوسَى فَاحْتَبَسَهُ مُوسَى فَقَالَ: “يَا مُحَمَّدُ، مَاذَا عَهِدَ إِلَيْكَ رَبُّكَ؟ ” قَالَ: “عَهِدَ إِلَيَّ خَمْسِينَ صَلَاةً كُلَّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ” قَالَ:” إِنَّ أُمَّتَكَ لَاتَسْتَطِيعُ ذَلِكَ فَارْجِعْ فَلْيُخَفِّفْ عَنْكَ رَبُّكَ وَعَنْهُمْ”. فَالْتَفَتَ النَّبِيُّ ﷺ إِلَى جِبْرِيلَ كَأَنَّهُ يَسْتَشِيرُهُ فِي ذَلِكَ، فَأَشَارَ إِلَيْهِ جِبْرِيلُ: أَنْنَعَمْ، إِنْ شِئْتَ. فَعَلَا بِهِ إِلَى الْجَبَّارِ تَعَالَى، فَقَالَ وَهُوَ فِي مَكَانِهِ: “يَا رَبِّ، خَفِّفْ عَنَّا، فَإِنَّ أُمَّتِي لَا تَسْتَطِيعُ هَذَا” فَوَضَعَ عَنْهُ عَشْرَ صَلَوَاتٍ، ثُمَّ رَجَعَ إِلَى مُوسَى فَاحْتَبَسَهُ، فَلَمْ يَزَلْ يُرَدِّدُهُ مُوسَى إِلَى رَبِّهِ حَتَّى صَارَتْ إِلَى خَمْسِ صَلَوَاتٍ. ثُمَّ احْتَبَسَهُمُوسَى عِنْدَ الْخَمْسِ فَقَالَ: “يَا مُحَمَّدُ، وَاللَّهِ لَقَدْ رَاوَدْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ قَوْمِي عَلَى أَدْنَى مِنْ هَذَا، فَضَعُفُوا فَتَرَكُوهُ، فَأُمَّتُكَ أَضْعَفُأَجْسَادًا وَقُلُوبًا وَأَبْدَانًا وَأَبْصَارًا وَأَسْمَاعًا، فَارْجِعْ فَلْيُخَفِّفْ عَنْكَ رَبُّكَ” كُلَّ ذَلِكَ يَلْتَفِتُ النَّبِيُّ ﷺ إِلَى جِبْرِيلَ لِيُشِيرَ عَلَيْهِ، وَلَا يَكْرَهُذَلِكَ جِبْرِيلُ، فَرَفَعَهُ عِنْدَ الْخَامِسَةِ فَقَالَ: “يَا رَبِّ، إِنَّ أُمَّتِي ضُعَفَاءُ أَجْسَادُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ وَأَسْمَاعُهُمْ وَأَبْدَانُهُمْ فَخَفِّفْ عَنَّا” فَقَالَ: الْجَبَّارُ: “يَا مُحَمَّدُ، قَالَ: “لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ” قَالَ: إِنَّهُ لَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ، كَمَا فَرَضْتُ عَلَيْكَ فِي أُمِّ الْكِتَابِ: “كُلُّ حَسَنَةٍ بِعَشْرِأَمْثَالِهَا، فَهِيَ خَمْسُونَ فِي أُمِّ الْكِتَابِ وَهِيَ خُمْسٌ عَلَيْكَ”، فَرَجَعَ إِلَى مُوسَى فَقَالَ: “كَيْفَ فَعَلْتَ؟ ” فَقَالَ: “خَفَّفَ عَنَّا، أَعْطَانَابِكُلِّ حَسَنَةٍ عَشْرَ أَمْثَالِهَا” قَالَ: مُوسَى: “قَدْ وَاللَّهِ رَاوَدْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَى أَدْنَى مِنْ ذَلِكَ فَتَرَكُوهُ، فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَلْيُخَفِّفْ عَنْكَأَيْضًا”. قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: “يَا مُوسَى قَدْ -وَاللَّهِ-اسْتَحْيَيْتُ مِنْ رَبِّي مِمَّا أَخْتَلِفُ إِلَيْهِ” قَالَ: “فَاهْبِطْ بِاسْمِ اللَّهِ”، فَاسْتَيْقَظَوَهُوَ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ.

هَكَذَا سَاقَهُ الْبُخَارِيُّ فِي “كِتَابِ التَّوْحِيدِ” ، وَرَوَاهُ فِي “صِفَةِ النَّبِيِّ ﷺ”،عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ أَبِي أُوَيْس عَنْ أَخِيهِ أَبِي بَكْرٍعَبْدِ الْحَمِيدِ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ بِلَالٍ .

وَرَوَاهُ مُسْلِمٌ، عَنْ هَارُونَ بْنِ سَعِيدٍ، عَنِ ابْنِ وَهْب، عَنْ سُلَيْمَانَ قَالَ: “فَزَادَ وَنَقَصَ، وَقَدَّمَ وَأَخَّرَ” .

صحيح البخاري برقم (٤٧٠٨) و(٧٥١٧) و(٣٥٧٠) .صحيح مسلم برقم (١٦٢) و(١٧٨). 

المسند (٦/١٨٩) ورواه ابن خزيمة في صحيحه برقم (١١٦٣) وقال:”إن كان أبو لبابة هذا يجوز الاحتجاج بخبره وفإنيلا أعرفه بعدالة ولا حرج”. وقد وثقه ابن معين.

دلائل النبوة للبيهقي (٢/٣٨٥)

সহিহ বুখারিতে শবে মিরাজের বিবরণ বর্ণিত হয়েছে :

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: كَانَ أَبُو ذَرٍّ يُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” فُرِجَ عَنْ سَقْفِ بَيْتِي وَأَنَا بِمَكَّةَ، فَنَزَلَجِبْرِيلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَفَرَجَ صَدْرِي، ثُمَّ غَسَلَهُ بِمَاءِ زَمْزَمَ، ثُمَّ جَاءَ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مُمْتَلِئٍ حِكْمَةً وَإِيمَانًا، فَأَفْرَغَهُ فِيصَدْرِي، ثُمَّ أَطْبَقَهُ، ثُمَّ أَخَذَ بِيَدِي، فَعَرَجَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَلَمَّا جِئْتُ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، قَالَ جِبْرِيلُ: لِخَازِنِ السَّمَاءِ افْتَحْ،قَالَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ هَذَا جِبْرِيلُ، قَالَ: هَلْ مَعَكَ أَحَدٌ؟ قَالَ: نَعَمْ مَعِي مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ، فَلَمَّافَتَحَ عَلَوْنَا السَّمَاءَ الدُّنْيَا، فَإِذَا رَجُلٌ قَاعِدٌ عَلَى يَمِينِهِ أَسْوِدَةٌ، وَعَلَى يَسَارِهِ أَسْوِدَةٌ، إِذَا نَظَرَ قِبَلَ يَمِينِهِ ضَحِكَ، وَإِذَا نَظَرَ قِبَلَيَسَارِهِ بَكَى، فَقَالَ: مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالِابْنِ الصَّالِحِ، قُلْتُ لِجِبْرِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا آدَمُ، وَهَذِهِ الأَسْوِدَةُ عَنْ يَمِينِهِ وَشِمَالِهِنَسَمُ بَنِيهِ، فَأَهْلُ اليَمِينِ مِنْهُمْ أَهْلُ الجَنَّةِ، وَالأَسْوِدَةُ الَّتِي عَنْ شِمَالِهِ أَهْلُ النَّارِ، فَإِذَا نَظَرَ عَنْ يَمِينِهِ ضَحِكَ، وَإِذَا نَظَرَ قِبَلَ شِمَالِهِبَكَى حَتَّى عَرَجَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الثَّانِيَةِ، فَقَالَ لِخَازِنِهَا: افْتَحْ، فَقَالَ لَهُ خَازِنِهَا مِثْلَ مَا قَالَ الأَوَّلُ: فَفَتَحَ، – قَالَ أَنَسٌ: فَذَكَرَ أَنَّهُوَجَدَ فِي السَّمَوَاتِ آدَمَ، وَإِدْرِيسَ، وَمُوسَى، وَعِيسَى، وَإِبْرَاهِيمَ صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْهِمْ، وَلَمْ يُثْبِتْ كَيْفَ مَنَازِلُهُمْ غَيْرَ أَنَّهُ ذَكَرَ أَنَّهُ وَجَدَآدَمَ فِي السَّمَاءِ الدُّنْيَا وَإِبْرَاهِيمَ فِي السَّمَاءِ السَّادِسَةِ، قَالَ أَنَسٌ – فَلَمَّا مَرَّ جِبْرِيلُ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِإِدْرِيسَ قَالَ: مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالأَخِ الصَّالِحِ، فَقُلْتُ مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا إِدْرِيسُ، ثُمَّ مَرَرْتُ بِمُوسَى فَقَالَ: مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالأَخِالصَّالِحِ، قُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا مُوسَى، ثُمَّ مَرَرْتُ بِعِيسَى فَقَالَ: مَرْحَبًا بِالأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ، قُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا عِيسَى، ثُمَّ مَرَرْتُ بِإِبْرَاهِيمَ، فَقَالَ: مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالِابْنِ الصَّالِحِ، قُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا إِبْرَاهِيمُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِوَسَلَّمَ “، قَالَ ابْنُ شِهَابٍ: فَأَخْبَرَنِي ابْنُ حَزْمٍ، أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ، وَأَبَا حَبَّةَ الأَنْصَارِيَّ، كَانَا يَقُولاَنِ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ثُمَّ عُرِجَ بِي حَتَّى ظَهَرْتُ لِمُسْتَوَى أَسْمَعُ فِيهِ صَرِيفَ الأَقْلاَمِ»، قَالَ ابْنُ حَزْمٍ، وَأَنَسُ بْنُ مَالِكٍ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” فَفَرَضَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى أُمَّتِي خَمْسِينَ صَلاَةً، فَرَجَعْتُ بِذَلِكَ، حَتَّى مَرَرْتُ عَلَى مُوسَى، فَقَالَ: مَا فَرَضَ اللَّهُ لَكَ عَلَى أُمَّتِكَ؟ قُلْتُ: فَرَضَ خَمْسِينَ صَلاَةً، قَالَ: فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ، فَإِنَّ أُمَّتَكَ لاَ تُطِيقُ ذَلِكَ، فَرَاجَعْتُ، فَوَضَعَ شَطْرَهَا، فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى، قُلْتُ: وَضَعَشَطْرَهَا، فَقَالَ: رَاجِعْ رَبَّكَ، فَإِنَّ أُمَّتَكَ لاَ تُطِيقُ، فَرَاجَعْتُ فَوَضَعَ شَطْرَهَا، فَرَجَعْتُ إِلَيْهِ، فَقَالَ: ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ، فَإِنَّ أُمَّتَكَ لاَ تُطِيقُذَلِكَ، فَرَاجَعْتُهُ، فَقَالَ: هِيَ خَمْسٌ، وَهِيَ خَمْسُونَ، لاَ يُبَدَّلُ القَوْلُ لَدَيَّ، فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى، فَقَالَ: رَاجِعْ رَبَّكَ، فَقُلْتُ: اسْتَحْيَيْتُ مِنْرَبِّي، ثُمَّ انْطَلَقَ بِي، حَتَّى انْتَهَى بِي إِلَى سِدْرَةِ المُنْتَهَى، وَغَشِيَهَا أَلْوَانٌ لاَ أَدْرِي مَا هِيَ؟ ثُمَّ أُدْخِلْتُ الجَنَّةَ، فَإِذَا فِيهَا حَبَايِلُاللُّؤْلُؤِ وَإِذَا تُرَابُهَا المِسْكُ

‘আনাস বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু জার রা. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামথেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি মক্কায় থাকাবস্থায় আমার গৃহের ছাদ উন্মুক্ত করা হলো। অতঃপরজিবরিল আ. অবতীর্ণ হয়ে আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। আর তা জমজমের পানি দ্বারা ধৌত করলেন। অতঃপরহিকমত ও ইমানে ভর্তি একটি সোনার পাত্র নিয়ে আসলেন এবং তা আমার বুকের মধ্যে ঢেলে দিয়ে বন্ধ করেদিলেন। অতঃপর হাত ধরে আমাকে দুনিয়ার আকাশের দিকে নিয়ে চললেন। পরে যখন দুনিয়ার আকাশেআসলাম, জিবরিল আ. আসমানের রক্ষককে বললেন, দরজা খোলো। আসমানের রক্ষক বললেন, কে আপনি? জিবরিল আ. বললেন, আমি জিবরিল। আকাশের রক্ষক বললেন, আপনার সঙ্গে কেউ রয়েছেন কি? জিবরিলআ. বললেন, হ্যাঁ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রয়েছেন। অতঃপর রক্ষক বললেন, তাঁকে কি ডাকাহয়েছে? জিবরিল আ. বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর যখন আমাদের জন্য দুনিয়ার আসমান খুলে দেওয়া হলো এবংআমরা দুনিয়ার আসমানে প্রবেশ করলাম তখন দেখলাম, সেখানে এমন এক ব্যক্তি উপবিষ্ট রয়েছেন, যার ডানপাশে অনেক মানুষের আকৃতি রয়েছে এবং বাম পাশেও রয়েছে অনেক মানুষের আকৃতি। যখন তিনি ডান দিকেতাকাচ্ছেন হেসে উঠছেন, আর যখন বাম দিকে তাকাচ্ছেন কাঁদছেন। অতঃপর তিনি বললেন, স্বাগতম হে সৎ নবিও সৎ সন্তান। আমি জিবরিল আ.-কে বললাম, কে এই ব্যক্তি? তিনি জবাব দিলেন, ইনি হচ্ছেন আদম আ.। আরতার ডানে বামে রয়েছে তাঁর সন্তানদের রুহ। তাদের মধ্যে ডান দিকের লোকেরা জান্নাতি আর বাম দিকের লোকেরাজাহান্নামি। ফলে তিনি যখন ডান দিকে তাকান তখন হাসেন আর যখন বাম দিকে তাকান তখন কাঁদেন। অতঃপরজিবরিল আ. আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানে উঠলেন। অতঃপর তার রক্ষককে বললেন, দরজা খোলো। তখনএর রক্ষক প্রথম রক্ষকের মতোই প্রশ্ন করলেন। পরে দরজা খুলে দেওয়া হলো। আনাস রা. বলেন, আবু জার রা. উল্লেখ করেন যে, তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসমানসমূহে আদম আ., ইদরিস আ., মুসাআ., ইসা ও ইবরাহিম আ-কে দেখতে পেয়েছেন। কিন্তু আবু জার রা. তাদের স্থানসমূহ নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি।তবে এতটুকু উল্লেখ করেছেন যে, তিনি আদম আ.-কে দুনিয়ার আকাশে এবং ইবরাহিম আ.-কে ষষ্ঠ আসমানেপেয়েছেন। আনাস রা. বলেন, জিবরিল আ. যখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে নিয়ে ইদরিস আ.-এরনিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন তখন ইদরিস আ. বললেন, মারহাবা হে সৎ ভাই ও পুণ্যবান নবি। আমি বললাম, ইনি কে? জিবরিল আ. বললেন, ইনি হচ্ছেন ইদরিস আ.। অতঃপর আমি মুসা আ.-এর নিকট দিয়ে অতিক্রমকরার সময় তিনি বললেন, মারহাবা হে সৎ নবি ও পুণ্যবান ভাই। আমি বললাম, ইনি কে? জিবরিল আ. বললেন, ইনি মুসা আ.। অতঃপর আমি ইসা আ.-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তিনি বললেন, মারহাবা হে সৎ নবিও পুণ্যবান ভাই। আমি বললাম, ইনি কে? জিবরিল আ. বললেন, ইনি হচ্ছেন ইসা আ.। অতঃপর আমি ইবরাহিমআ.-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলে তিনি বললেন, মারহাবা হে পুণ্যবান নবি ও নেক সন্তান। আমি বললাম, ইনিকে? জিবরিল আ. বললেন, ইনি হচ্ছেন ইবরাহিম আ.। ইবনে শিহাব জুহরি রহ. বলেন, (বিখ্যাত তাবিয়ি) ইবনেহাজাম রহ. আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, ইবনে আব্বাস রা. ও আবু হাব্বা আনসারি রা. উভয়ে বলতেন, নবি সা. বলেছেন, এরপর আমাকে আরও উপরে উঠানো হলো। অতঃপর এমন এক সমতল স্থানে এসে আমি উপনীতহলাম, যেখানে আমি লেখার শব্দ শুনতে পাই। ইবনে হাজাম রহ. ও আনাস বিন মালিক রা. বলেন, রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অতঃপর আল্লাহ আমার উম্মতের ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজকরে দেন। অতঃপর তা নিয়ে আমি ফিরে আসি। অবশেষে যখন মুসা আ.-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলামতখন তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা আপনার উম্মতের ওপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্তনামাজ ফরজ করেছেন। তিনি বললেন, আপনি আপনার পালনকর্তার নিকট ফিরে যান। কেননা, আপনার উম্মততা আদায় করতে পারবে না। আমি ফিরে গেলাম। আল্লাহ তাআলা কিছু অংশ কমিয়ে দিলেন। আমি মুসা আ.-এর নিকট পুনরায় গেলাম আর বললাম, আল্লাহ তাআলা কিছু অংশ কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আপনিপুনরায় আপনার রবের নিকট ফিরে যান। কারণ, আপনার উম্মত এটিও আদায় করতে পারবে না। আমি ফিরেগেলাম। তখন আরও কিছু অংশ কমিয়ে দেওয়া হলো। আবারও মুসা আ.-এর নিকট গেলাম। এবারও তিনিবললেন, আপনি পুনরায় আপনার প্রতিপালকের নিকট যান। কারণ, আপনার উম্মত এটিও আদায় করতে সক্ষমহবে না। তখন আমি পুনরায় গেলাম, তখন আল্লাহ বললেন, এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই (নেকির দিক দিয়ে) পঞ্চাশওয়াক্তের নামাজ (বলে গণ্য হবে)। আর আমার কথার কোনো রদবদল হয় না। আমি পুনরায় মুসা আ.-এর নিকটআসলে তিনি আমাকে আবারও বললেন, আপনার প্রতিপালকের নিকট পুনরায় যান। আমি বললাম, পুনরায়আমার প্রতিপালকের নিকট যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। অতঃপর জিবরিল আ. আমাকে সিদরাতুল মুনতাহাপর্যন্ত নিয়ে গেলেন। আর তখন তা বিভিন্ন রঙে আবৃত ছিল, যার তাৎপর্য আমি অবগত ছিলাম না। অতঃপরআমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হলে আমি দেখতে পেলাম যে, তাতে রয়েছে মুক্তোমালা আর তার মাটি হচ্ছেকস্তুরী।’ (সহিহুল বুখারি : ১/৭৮-৭৯, হা. নং ৩৪৯, প্রকাশনী : দারু তাওকিন নাজাত, বৈরুত)

সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে :

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أُتِيتُ بِالْبُرَاقِ، وَهُوَ دَابَّةٌ أَبْيَضُ طَوِيلٌ فَوْقَ الْحِمَارِ، وَدُونَ الْبَغْلِ،يَضَعُ حَافِرَهُ عِنْدَ مُنْتَهَى طَرْفِهِ»، قَالَ: «فَرَكِبْتُهُ حَتَّى أَتَيْتُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ»، قَالَ: «فَرَبَطْتُهُ بِالْحَلْقَةِ الَّتِي يَرْبِطُ بِهِ الْأَنْبِيَاءُ»، قَالَ ” ثُمَّدَخَلْتُ الْمَسْجِدَ، فَصَلَّيْتُ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ خَرَجْتُ فَجَاءَنِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ بِإِنَاءٍ مِنْ خَمْرٍ، وَإِنَاءٍ مِنْ لَبَنٍ، فَاخْتَرْتُ اللَّبَنَ، فَقَالَجِبْرِيلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اخْتَرْتَ الْفِطْرَةَ، ثُمَّ عُرِجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ، فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ، فَقِيلَ: مَنَ أَنْتَ؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: وَمَنْمَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: َ قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ، فَفُتِحَ لَنَا، فَإِذَا أَنَا بِآدَمَ، فَرَحَّبَ بِي، وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ، ثُمَّ عُرِجَ بِنَا إِلَىالسَّمَاءِ الثَّانِيَةِ، فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ، فَقِيلَ: مَنَ أَنْتَ؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ؟قَالَ: قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ، فَفُتِحَ لَنَا، فَإِذَا أَنَا بِابْنَيْ الْخَالَةِ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ، وَيَحْيَى بْنِ زَكَرِيَّاءَ، صَلَوَاتُ اللهِ عَلَيْهِمَا، فَرَحَّبَا وَدَعَوَا لِيبِخَيْرٍ، ثُمَّ عَرَجَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الثَّالِثَةِ، فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ، فَقِيلَ: مَنَ أَنْتَ؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُعَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قِيلَ: وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ، فَفُتِحَ لَنَا، فَإِذَا أَنَا بِيُوسُفَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذَا هُوَ قَدِ اُعْطِيَ شَطْرَالْحُسْنِ، فَرَحَّبَ وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ، ثُمَّ عُرِجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ الرَّابِعَةِ، فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ، قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ، قَالَ: وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ، فَفُتِحَ لَنَا فَإِذَا أَنَا بِإِدْرِيسَ، فَرَحَّبَ وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ، قَالَ اللهُ عَزَّوَجَلَّ: {وَرَفَعْنَاهُ مَكَانًا عَلِيًّا} [مريم: 57]، ثُمَّ عُرِجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ الْخَامِسَةِ، فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ، قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ، فَفُتِحَ لَنَا فَإِذَا أَنَا بِهَارُونَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَرَحَّبَ، وَدَعَا لِيبِخَيْرٍ، ثُمَّ عُرِجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ السَّادِسَةِ، فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ، قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ، فَفُتِحَ لَنَا، فَإِذَا أَنَا بِمُوسَى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَرَحَّبَ وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ، ثُمَّ عُرِجَبِنَا إِلَى السَّمَاءِ السَّابِعَةِ، فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ، فَقِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قِيلَ: وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ، فَفُتِحَ لَنَا فَإِذَا أَنَا بِإِبْرَاهِيمَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُسْنِدًا ظَهْرَهُ إِلَى الْبَيْتِ الْمَعْمُورِ، وَإِذَا هُوَيَدْخُلُهُ كُلَّ يَوْمٍ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ لَا يَعُودُونَ إِلَيْهِ، ثُمَّ ذَهَبَ بِي إِلَى السِّدْرَةِ الْمُنْتَهَى، وَإِذَا وَرَقُهَا كَآذَانِ الْفِيَلَةِ، وَإِذَا ثَمَرُهَا كَالْقِلَالِ،قَالَ: فَلَمَّا غَشِيَهَا مِنْ أَمْرِ اللهِ مَا غَشِيَ تَغَيَّرَتْ، فَمَا أَحَدٌ مِنْ خَلْقِ اللهِ يَسْتَطِيعُ أَنْ يَنْعَتَهَا مِنْ حُسْنِهَا، فَأَوْحَى اللهُ إِلَيَّ مَا أَوْحَى،فَفَرَضَ عَلَيَّ خَمْسِينَ صَلَاةً فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، فَنَزَلْتُ إِلَى مُوسَى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: مَا فَرَضَ رَبُّكَ عَلَى أُمَّتِكَ؟ قُلْتُ: خَمْسِينَ صَلَاةً، قَالَ: ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَاسْأَلْهُ التَّخْفِيفَ، فَإِنَّ أُمَّتَكَ لَا يُطِيقُونَ ذَلِكَ، فَإِنِّي قَدْ بَلَوْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَخَبَرْتُهُمْ “، قَالَ: فَرَجَعْتُ إِلَى رَبِّي، فَقُلْتُ: يَا رَبِّ، خَفِّفْ عَلَى أُمَّتِي، فَحَطَّ عَنِّي خَمْسًا، فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى، فَقُلْتُ: حَطَّ عَنِّي خَمْسًا، قَالَ: إِنَّأُمَّتَكَ لَا يُطِيقُونَ ذَلِكَ، فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَاسْأَلْهُ التَّخْفِيفَ، قَالَ: فَلَمْ أَزَلْ أَرْجِعُ بَيْنَ رَبِّي تَبَارَكَ وَتَعَالَى، وَبَيْنَ مُوسَى عَلَيْهِ السَّلَامُحَتَّى قَالَ: يَا مُحَمَّدُ، إِنَّهُنَّ خَمْسُ صَلَوَاتٍ كُلَّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، لِكُلِّ صَلَاةٍ عَشْرٌ، فَذَلِكَ خَمْسُونَ صَلَاةً، وَمَنْ هَمَّ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كُتِبَتْلَهُ حَسَنَةً، فَإِنْ عَمِلَهَا كُتِبَتْ لَهُ عَشْرًا، وَمَنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا لَمْ تُكْتَبْ شَيْئًا، فَإِنْ عَمِلَهَا كُتِبَتْ سَيِّئَةً وَاحِدَةً “، قَالَ: ” فَنَزَلْتُحَتَّى انْتَهَيْتُ إِلَى مُوسَى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَخْبَرْتُهُ، فَقَالَ: ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَاسْأَلْهُ التَّخْفِيفَ “، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُعَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” فَقُلْتُ: قَدْ رَجَعْتُ إِلَى رَبِّي حَتَّى اسْتَحْيَيْتُ مِنْهُ

‘আনাস বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার জন্য বোরাকপাঠানো হলো। বোরাক গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট একটি সাদা রঙের জন্তু। যতদূর দৃষ্টি যায়, একপদক্ষেপে সে ততদূর চলে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি এতে আরোহণ করলাম এবংবাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত এসে পৌঁছলাম। তারপর অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কিরাম তাদের বাহনগুলো যে খুঁটির সাথেবাঁধতেন, আমি সে খুঁটির সাথে আমার বাহনটিও বাঁধলাম। তারপর মসজিদে প্রবেশ করলাম ও দুই রাকআতনামাজ আদায় করে বের হলাম। জিবরিল আ. একটি শরাবের পাত্র ও একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমার কাছেএলেন। আমি দুধ গ্রহণ করলাম। জিবরিল আ. আমাকে বললেন, আপনি সঠিক স্বভাবকেই গ্রহণ করলেন।তারপর জিবরিল আ. আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বলোকে গেলেন এবং আসমান পর্যন্ত পৌছে দ্বার খুলতে বললেন। জিজ্ঞেসকরা হলো, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি জিবরিল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? বললেন, মুহাম্মাদসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ, পাঠানো হয়েছিল। অতঃপর আমাদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া হলো। সেখানে আমি আদম আ.-এর দেখাপাই। তিনি আমাকে মুবারকবাদ জানালেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন। তারপর জিবরিল আ. আমাকে ঊর্ধ্বলোক নিয়ে চললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম। জিজ্ঞেস করা হলো, তাকে কি আনতে পাঠানো হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ, পাঠানো হয়েছিল।তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হলো। সেখানে আমি দুই খালাত ভাই ইসা বিন মারইয়াম আ. ও ইয়াহইয়াবিন জাকারিয়া আ.-এর দেখা পেলাম। তাঁরা আমাকে মারহাবা বললেন, আমার জন্য কল্যাণের দুআ করলেন।তারপর জিবরিল আ. আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বলোকে চললেন এবং তৃতীয় আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতেবললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরিল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনিবললেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠানোহয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হলো। সেখানে ইউসুফআ.-এর দেখা পেলাম। সমুদয় সৌন্দর্যের অর্ধেক দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবংআমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন। তারপর জিবরিল আ. আমাকে নিয়ে চতুর্থ আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছেদরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরিল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাঁকে আনতেপাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হলো। সেখানেইদরিস আ.-এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন।আল্লাহ তাআলা তার সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, “আর আমি তাকে উন্নীত করেছি উচ্চ মর্যাদায়।” (সুরা আল-হাদিদ : ১৯)। তারপর জিবরিল আ. আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন।জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরিল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, পাঠানো হয়েছিল। অতঃপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হলো। সেখানে হারুন আ.-এরদেখা পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন। তারপর জিবরিল আ. আমাকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরিল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, পাঠানো হয়েছিল। তারপরআমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হলো। সেখানে মুসা আ.-এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবংআমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন। তারপর জিবরিল আ. সপ্তম আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দরজা খুলতেবললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরিল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনিবললেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাকে আনতে পাঠানোহয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হলো। সেখানে ইবরাহিমআ.-এর দেখা পেলাম। তিনি বাইতুল মামুরে পিঠ ঠেকিয়ে বসে ছিলেন। বাইতুল মামুরে প্রত্যেহ সত্তর হাজারফেরেশতা তাওয়াফের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করেন, যারা আর সেখানে পুনরায় ফিরে আসার সুযোগ পান না। তারপরজিবরিল আ. আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে গেলেন। সে বৃক্ষের পাতাগুলো হাতির কানের ন্যায় আরফলগুলো বড় বড় মটকার মত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সে বৃক্ষটিকে যখন আল্লাহরনির্দেশ থেকে কোনো নির্দেশ এসে আবৃত করে তখন তা পরিবর্তিত হয়ে যায়। সে সৌন্দর্যের বর্ণনা আল্লাহর সৃষ্টিরমধ্যে কারোর পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর আল্লাহ তাআলা আমার ওপর যে প্রত্যাদেশ করার, তা করলেন। আমারওপর দিনরাত মোট পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করলেন। এরপর আমি মুসা আ.-এর কাছে ফিরে আসলাম।তিনি আমাকে বললেন, আপনার প্রতিপালক আপনার ওপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্তনামাজ। তিনি বললেন, আপনার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং তাঁর নিকট আরও সহজ করার আবেদনকরুন। কেননা, আপনার উম্মত এ নির্দেশ পালনে সক্ষম হবে না। আমি বনি ইসরাইলকে পরীক্ষা করেছি এবংতাদের বিষয়ে আমি অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তখন আমিআবার প্রতিপালকের কাছে ফিরে গেলাম এবং বললাম, হে আমার রব, আমার উম্মতের জন্য এ হুকুম সহজ করেদিন। পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়ে দেওয়া হলো। তারপর মুসা আ.-এর নিকট ফিরে এসে বললাম, আমার থেকে পাঁচ ওয়াক্তকমানো হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মত এটাও পারবে না। আপনি ফিরে যান এবং আরও সহজ করারআবেদন করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এভাবে আমি একবার মুসা আ. ও একবারআল্লাহর মাঝে আসা-যাওয়া করতে থাকলাম। শেষে আল্লাহ তাআলা বললেন, হে মুহাম্মাদ, যাও দিন ও রাতে পাঁচওয়াক্ত নামাজ নির্ধারণ করা হলো। প্রতি ওয়াক্ত নামাজে দশ ওয়াক্ত নামাজের সমান সাওয়াব রয়েছে। এভাবে (পাঁচওয়াক্ত হলো) পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের সমান। যে ব্যক্তি কোনো নেক কাজের নিয়ত করল এবং তা কাজে রূপায়িতকরতে পারল না আমি তার জন্য একটি সাওয়াব লিখব; আর তা কাজে রূপায়িত করলে তার জন্য লিখব দশটিসাওয়াব। পক্ষান্তরে যে কোনো মন্দ কাজের নিয়ত করল; অথচ তা কাজে পরিণত করল না তার জন্য কোনো গুনাহলিখা হয় না। আর তা কাজে পরিণত করলে তার ওপর শুধু একটি গুনাহ লিখা হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তারপর আমি মুসা আ.-এর নিকট নেমে এলাম এবং তাকে এ বিষয়ে অবহিতকরলাম। তিনি তখন বললেন, প্রতিপালকের কাছে ফিরে যান এবং আরও সহজ করার প্রার্থনা করুন। রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ বিষয়টি নিয়ে বারবার আমি আমার প্রতিপালকের নিকট আসা-যাওয়া করেছি, এখন (এ আবেদন নিয়ে) পুনরায় যেতে লজ্জা হচ্ছে।’ (সহিহু মুসলিম : ১/১৪৫-১৪৬, হা. নং ১৬২, প্রকাশনী : দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)

মিরাজের ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন কিসসা-কাহিনী ও বানোয়াট কথা প্রচলিত আছে, যা যোগ্য নয়। 

এ আলোচনায় আমরা বিশাল কলেবরের বিশুদ্ধ দুটি হাদিস এনেছি, যা থেকে শবে মিরাজের পূর্ণ বিবরণ পাওয়া যাবে। আর সরল পথের পথিক মুমিনদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট হবে, ইনশাআল্লাহ।

 রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজ স্বশরীরে হয়েছিলস্বপ্ন যোগে নয়

হুযুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মি‘রাজ জাগ্রত অবস্থায় স্বশরীরে হয়েছিল। তবে এছাড়া অন্য সময় হুযুরের স্বাপ্নিক মি‘রাজও হয়েছে। যার বর্ণনা হাদীস শরীফে এসেছে। তথাপি কতিপয় লোক রাসূলের স্বশরীরের মি‘রাজকে কিছু ভ্রান্ত যুক্তি তর্কের মাধ্যমে অস্বীকার করার চেষ্টা করে। যা আদৌ ঠিক নয়। 

আল্লামা ইবনু কাসির রহ. বলেন :

ثُمَّ اخْتَلَفَ النَّاسُ: هَلْ كَانَ الْإِسْرَاءُ بِبَدَنِهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَرُوحِهِ، أَوْ بِرُوحِهِ فَقَطْ؟ عَلَى قَوْلَيْنِ، فَالْأَكْثَرُونَ مِنَ الْعُلَمَاءِ عَلَى أَنَّهُ أُسْرِيَبِبَدَنِهِ وَرُوحِهِ يَقَظَةً لا مناما، ولا ينكرون أَنْ يَكُونَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى قَبْلَ ذَلِكَ مَنَامًا ثُمَّ رَآهُ بعد يقظة،

‘এরপর লোকেদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে যে, তাঁর মিরাজ কি দেহ ও রুহ উভয়টির মাধ্যমে হয়েছে নাকি শুধু রুহেরমাধ্যমে। এখানে দুটি মত পাওয়া যায়। তবে অধিকাংশ উলামায়ে কিরামের মতানুসারে তাঁর মিরাজ দেহ ও রুহউভয়টির মাধ্যমে জাগ্রত অবস্থায় সংঘটিত হয়েছে, স্বপ্নযোগে নয়। তারা এটাও অস্বীকার করেন না যে, রাসুলুল্লাহসা. মিরাজের পূর্বে স্বপ্ন দেখেছিলেন এরপর জাগ্রত অবস্থায় বাস্তবেও সব দেখেছেন।’ (তাফসিরু ইবনি কাসির : ৫/৪০-৪১, প্রকাশনী : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত)

মূলত প্রসিদ্ধ মি‘রাজ স্বশরীরে হওয়ার ব্যাপারে কুরআনের আয়াত ও অনেক সহীহ হাদীস সহ বিভিন্ন দলিল রয়েছে। 

স্বশরীরে হওয়ার কয়েকটি দলিল :

ক. আল্লাহ তাআলা সুরা বনি ইসরাইলে মিরাজের রাতের ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন :

سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকেমসজিদে আকসা পর্যন্ত, যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি; যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শনদেখিয়ে দিই। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ০১)

আল্লাহ তাআলা এখানে ‘সুবহান’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। আর এটা কেবল ওই সব ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ ও মহান কোনো কিছু বুঝানো হয়ে থাকে। 

অতএব, রাসুলুল্লাহ সা.-এর মিরাজ যদি সশরীরে নাহয়ে স্বপ্নযোগে হতো তাহলে তো এটা স্বাভাবিক বিষয় হতো, এতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সাব্যস্ত হতো না। কেননা, স্বপ্নেঅনেক বিষয়ই দেখা যায়, যা বাস্তবে সম্ভব নয়। তাই স্বপ্নযোগে মিরাজ হয়ে থাকলে কুরআনে এখানে ‘সুবহান’ শব্দব্যবহার করাটা অনর্থক সাব্যস্ত হয়। একমাত্র সশরীরে মিরাজ হলে তবেই ‘সুবহান’ শব্দটির ব্যবহার এখানে যথার্থহয়। কুরআনের এ ইঙ্গিত থেকে সাব্যস্ত হয় যে, রাসুলুল্লাহ সা.-এর মিরাজ সশরীরেই ছিল।

 (দ্রষ্টব্য- তাফসিরু ইবনি কাসির : ৫/৪০-৪১, প্রকাশনী : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত)

খ. কুরআনের এ আয়াতে ‘আব্দুন’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আর দেহ ও রুহের সমন্বয় হলেই তাকে ‘আব্দুন’ বাবান্দা বলা হয়। 

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায়ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ০১) 

এখানে আল্লাহতাআলা তাঁর নবির জন্য ‘আব্দুন’ বা বান্দা শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এ রাতে তাঁকেসশরীরে সফর করানো হয়েছে।

(দ্রষ্টব্য- তাফসিরু ইবনি কাসির : ৫/৪১, প্রকাশনী : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত)

গ. আল্লাহ তাআলা কুরআনে এ মিরাজকে মানুষদের জন্য ফিতনা তথা পরীক্ষা বলে অভিহিত করেছেন।

 যেমন, ইরশাদ হচ্ছে : 

وَمَا جَعَلْنَا الرُّؤْيَا الَّتِي أَرَيْنَاكَ إِلَّا فِتْنَةً لِلنَّاسِ

‘আর আমি আপনাকে যে দৃশ্য দেখিয়েছি, তা শুধু মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৬০)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে :

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، فِي قَوْلِهِ تَعَالَى: {وَمَا جَعَلْنَا الرُّؤْيَا الَّتِي أَرَيْنَاكَ إِلَّا فِتْنَةً لِلنَّاسِ} قَالَ: هِيَ رُؤْيَا عَيْنٍ، أُرِيَهَارَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ إِلَى بَيْتِ المَقْدِسِ

‘ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর বাণী “আর আমি আপনাকে যে দৃশ্য দেখিয়েছি, তা শুধু মানুষকেপরীক্ষা করার জন্য” এর ব্যাখ্যায় বলেন, এটি হলো প্রত্যক্ষভাবে চোখের দেখা, যা রাসুলুল্লাহ সা.-কে সে রাতেদেখানো হয়েছে, যে রাতে তাঁকে বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হয়েছিল।’ (সহিহুল বুখারি : ৫/৫৪, হা. নং৩৮৮৮, প্রকাশনী : দারু তাওকিন নাজাত. বৈরুত)

আর পরীক্ষা তো তখনই হবে, যখন এটাকে সশরীরে মিরাজ বলে মেনে নেওয়া হবে। নচেৎ স্বপ্নযোগে হলে সেটাবিশ্বাস করা তো খুবই সহজ ও সাধারণ। এতে তো কোনো পরীক্ষা সাব্যস্ত হয় না। 

সুতরাং কুরআনের আয়াতের অর্থ ও মর্ম যথাযথভাবে সাব্যস্ত করতে হলে মিরাজকে সশরীরে মানতে হবে। অন্যথায় ‘পরীক্ষা করার জন্য’ কথাটির কোনো অর্থই থাকে না।

ঘ. যদি মিরাজ স্বশরীরে না হয়ে শুধু স্বপ্নযোগে হতো তাহলে এটা নিয়ে কাফিররা হইচই করত না এবং দুর্বলমুসলমানেরা মুরতাদও হয়ে যেত না। 

কেননা, স্বপ্নযোগে হলে তো এটা সাধারণ বিষয় হতো, এর কারণে এত বিশালআলোড়ন সৃষ্টি হতো না। কিন্তু এটা যেহেতু সশরীরে হওয়ার কথা আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেছিলেন, সেজন্যই সবাই এটা নিয়ে মাতামাতি শুরু করে দেয় এবং এটাকে অসম্ভব ও মিথ্যা ভেবে কিছু দুর্বলইমানের অধিকারী পুনরায় কাফিরদের দলে যোগ দেয়। 

আর এটা এমনই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল যে, আবু বকর রা. প্রথম শোনায়ই এটা বিশ্বাস করে নেওয়ায় তাঁর নামের শেষে আজীবনের জন্য ‘সিদ্দিক’ উপাধী লেগে যায়। 

যেমনটি মুসতাদরাকে হাকিমের বর্ণনায় এসেছে :

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: لَمَّا أُسْرِيَ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى أَصْبَحَ يَتَحَدَّثُ النَّاسُ بِذَلِكَ، فَارْتَدَّنَاسٌ مِمَّنْ كَانَ آمَنُوا بِهِ وَصَدَّقُوهُ، وَسَمِعُوا بِذَلِكَ إِلَى أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، فَقَالُوا: هَلْ لَكَ إِلَى صَاحِبِكَ يَزْعُمُ أَنَّهُ أُسْرِيَ بِهِاللَّيْلَةَ إِلَى بَيْتِ الْمَقْدِسِ، قَالَ: أَوَ قَالَ ذَلِكَ؟ قَالُوا: نَعَمْ، قَالَ: لَئِنْ كَانَ قَالَ ذَلِكَ لَقَدْ صَدَقَ، قَالُوا: أَوَ تُصَدِّقُهُ أَنَّهُ ذَهَبَ اللَّيْلَةَ إِلَى بَيْتِالْمَقْدِسِ وَجَاءَ قَبْلَ أَنْ يُصْبِحَ؟ قَالَ: نَعَمْ، إِنِّي لَأَصُدِّقُهُ فِيمَا هُوَ أَبْعَدُ مِنْ ذَلِكَ أُصَدِّقُهُ بِخَبَرِ السَّمَاءِ فِي غَدْوَةٍ أَوْ رَوْحَةٍ، فَلِذَلِكَسُمَيَّ أَبُو بَكْرٍ الصِّدِّيقَ

‘আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নবি সা.-কে (মিরাজের) রাতে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করানোহলো, (সকালে ঘটনা জানতে পেরে) লোকেরা এ নিয়ে পরস্পর বিভিন্ন কথা বলাবলি করতে লাগল। এতে কিছুলোক মুরতাদ হয়ে গেল, যারা ইতিপূর্বে তাঁর ওপর ইমান এনেছিল এবং তাঁকে সত্যায়ন করেছিল। তারা আবু বকর রা.-কে ঘটনা শুনিয়ে বলল, তোমার বন্ধুর কথা শুনেছ? সে দাবি করছে, আজ রাতে নাকি তাঁকে বাইতুল মুকাদ্দাসসফর করানো হয়েছে! তিনি বললেন, সত্যিই কি তিনি এমন বলেছেন? তারা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, যদি তিনিএটা বলে থাকেন, তাহলে অবশ্যই সত্য বলেছেন। তারা বলল, তুমি কি একথা বিশ্বাস করো যে, রাতে সে বাইতুলমুকাদ্দাসে গিয়ে সকাল হওয়ার আগেই ফিরে এসেছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি তো এর চেয়ে অসম্ভব কথাও বিশ্বাস করি। সকাল-সন্ধ্যা তাঁর নিকট আসমানের অহি আসার বিষয়ে আমি তাঁকে সত্যায়ন করি। এ ঘটনারকারণেই তাঁকে ‘সিদ্দিক’ বা মহাসত্যবাদী বলে ডাকা হয়।’ (মুসতাদরাকুল হাকিম : ৩/৬৫, হা. নং ৪৪০৭, প্রকাশনী : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত)

ঙ. যদি মিরাজকে সশরীরে না বলে স্বপ্নযোগে বলা হয়, তাহলে এটা রাসুলুল্লাহ সা.-এর মুজিজা বলে সাব্যস্ত হয় না।অথচ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হলো, মিরাজ আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরএকটি মুজিজা। আর মুজিজা হলো নবিদের থেকে প্রকাশিত আলৌকিক কোনো ঘটনা বা বিষয়। সুতরাং এটামুজিজা তখনই সাব্যস্ত হবে, যখন এ কথা মানা হবে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে স্বশরীরে আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কারণ, এমনটা স্বাভবিক নিয়মে অসম্ভব ছিল, কিন্তু মুজিজা হওয়ার কারণে এটাসম্ভব হয়েছে। কিন্তু স্বপ্নযোগে মিরাজের দাবি করলে এটাকে মুজিজা বলার কোনো সুযোগ থাকে না।’

(দ্রষ্টব্য- মাআরিজুল কবুল : ৩/১০৬৭, প্রকাশনী : দারু ইবনিল কাইয়িম, দাম্মাম)

চ. সহিহ হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, মিরাজের রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বোরাকে আরোহন করিয়ে ভ্রমণ করানো হয়েছে। আর বোরাক অস্বাভাবিক দ্রুতগতিসম্পন্ন একটি বিশেষ প্রাণী, যাদেহবিশিষ্ট কোনো কিছুর জন্যই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরজন্য বিশেষভাবে বোরাকের ব্যবস্থা করাই প্রমাণ করে যে, তাঁর মিরাজ সশরীরে হয়েছিল। কেননা, রুহের জন্য এমনকোনো প্রাণী বা যানবাহনের প্রয়োজন পড়ে না।’ (দ্রষ্টব্য- তাফসিরু ইবনি কাসির : ৫/৪১, প্রকাশনী : দারুল কুতুবিলইলমিয়্যা, বৈরুত)

মোটকথা

১. রূহানী মি‘রাজ কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয়। বরং শারীরিক মি‘রাজই আশ্চর্যের বিষয়। এ দিকে ইংগিত করে আল্লাহ তা‘আলা উক্ত ঘটনার বর্ণনার শুরু করেছেন ‘সুবহানা’ শব্দ দিয়ে। তাছাড়া উক্ত আয়াতে ‘বি আবদিহী’ (অর্থাৎ, নিজের বান্দাকে) শব্দ রয়েছে। যা মি‘রাজ স্বশরীরে হওয়ার প্রমাণ বহন করে।

২. মি‘রাজ যদি স্বাপ্নিক হত তাহলে কেউ মুরতাদ হতো না। কারণ স্বপ্নের কোনো কিছুকে কেউ অস্বীকার করে না।

৩. স্বশরীরে মি‘রাজ হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের ইজমা রয়েছে। অতএব প্রসিদ্ধ মি‘রাজকে রূহানী বা স্বাপ্নিক বলেব্যক্ত করার কোন অবকাশ নেই। (শরহে যুরকানী ৮/১৩৮)

এছাড়াও আরও অনেক দলিল রয়েছে, যা থেকে প্রমাণ হয় যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর মিরাজ স্বপ্নযোগে নয়; বরং স্বশরীরে ছিল। যারা সত্যপ্রত্যাশী, তাদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।

❒ মি‘রাজের শিক্ষা ও নির্দেশনা

মি’রাজ বিশ্বনবী সা: এর অন্যতম মু’জিজা। এ বিশ্বাস করা ইমানের দাবি আর অবিশ্বাস করা কুফরি।

মি‘রাজের রাত্রে হুযুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর উম্মতকে তিনটি জিনিস হাদিয়া দেওয়া হয়।

প্রথমত : পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ;

যা প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্ত ছিল

দ্বিতীয়ত: শিরক থেকে বেঁচে থাকা;

তাঁর উম্মতের যেসব ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, আল্লাহ তাঁর পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন আল্লাহ তা‘আলা তাকে চিরকাল আযাব দিবেন না। বরং তাকে একদিন অবশ্যই স্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং চিরকালের জন্য আরামে রাখবেন।

তৃতীয়ত : সূরা আলবাকারার শেষাংশ।

যার মধ্যে এই উম্মতের প্রতি আল্লাহর পরিপূর্ণ রহমত মাগফিরাত দয়া ও অনুগ্রহ এবং কাফেরদের মুকাবেলায় সাহায্য ও সফলতার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। 

তাছাড়া এ আয়াতসমূহ রাত্রে ঘুমানোরপূর্বে পড়লে তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ, তাহাজ্জুদের সওয়াবসহ সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে সে ব্যক্তি হিফাযতে থাকে।

সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরী যে প্রাথমিক ভাবে এ তিনটি বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া এবং সঠিক ওসুন্দরভাবে তা হাসিল করা। 

সাথে সাথে দীনের অন্যান্য বিষয় অর্জনে সচেষ্ট হওয়া। 

বিশেষ করে দীনের যে পাঁচটিবিষয়ের ইলম অর্জনকে ফরযে আইন ঘোষণা করা হয়েছে তা অবশ্যই হাসিল করা। (সূরা বাকারাঃ ১৭৭, মুসলিম, হাদীস নং ২৮৯)

 মিরাজের নির্দেশনা :

পবিত্র এই মি’রাজে রয়েছে আমাদের জন্য এক বিশাল দিকনির্দেশনা যা পালনে রয়েছে আমাদের সার্থকতা। 

এই নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করলে ইহকাল এবং পরকাল উভয়কালে আসবে সফলতা।

আসুন ! জেনে নেই নির্দেশনা গুলো __

সূরা বনি ইসরাইলের ১৪ দফা নির্দেশনা।

যথা:

১. একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করা, তাঁর সঙ্গে কারও শরিক না করা

২. পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করা

৩. আত্মীয়স্বজন, এতিম ও মুসাফিরের হক মেনে চলা

৪. অপচয় না করা

৫. অভাবগ্রস্ত ও প্রার্থীকে বঞ্চিত না করা

৬. হাত গুটিয়ে না রেখে সব সময় কিছু দান করা

৭. অন্যায়ভাবে কোনো মানুষকে হত্যা না করা

৮. দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা না করা

৯. ব্যভিচারের নিকটবর্তী না হওয়া

১০. এতিমের সম্পদের ধারেকাছে না যাওয়া

১১. যে বিষয়ে জ্ঞান নেই, তা অনুসন্ধান করা

১২. মেপে দেওয়ার সময় সঠিক ওজন পরিমাপ করা

১৩. প্রতিশ্রুতি পালন করা

১৪. পৃথিবীতে দম্ভভরে চলাফেরা না করা।

পবিত্র কোরআনের সূরা বনি ইসরাইলে মিরাজ সংক্রান্ত আলোচনায় বিধৃত হয়েছে, যদি মুসলমানদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এরসুমহান জীবনাদর্শ ও মিরাজের শিক্ষামূলক অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি আদর্শ ও কল্যাণমুখী জাতিগঠনের রূপরেখা অনুযায়ী নীতি-নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করা যায়, তাহলেই বিশ্ব মানবতার সর্বাঙ্গীণ সুখ-শান্তি, উন্নয়ন-সমৃদ্ধি ও মুক্তি সম্ভব হবে,

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজের শিক্ষা হলো হতাশ হওয়া যাবে না। নবীজী প্রতিটি পদে পদেদাওয়াতের কাজে তীব্র কষ্ট স্বত্ত্বেও কখনো হতাশ হননি। বার বার পথ খুঁজেছেন। নতুন উদ্যমে দাওয়াতি কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। 

  শবে মিরাজ পালন করার বিধানঃ

আমাদের অনেকেরই ভুল ধারণা আছে যে, শবে বরাত ও শবে ক্বদর যেমন প্রতি বছর আসে, তেমনি শবে মিরাজওপ্রতি বছর আসে৷ 

বস্তুত এ ধারণা সঠিক নয়! 

কেননা শবে বরাতের সম্পর্ক হলো ১৪ই শা‘বান দিবাগত রাতের সাথে–

যা প্রতি বছর আগমন করে৷ 

কিন্তু শবে মিরাজের সম্পর্ক হচ্ছে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মিরাজ সংঘটিত হওয়ার সাথে৷ সেই রাত পৃথিবীতে মাত্র একটিই, আর তা হচ্ছে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয়জীবদ্দশায় মিরাজে গমন করার মহান রাত্রি৷ কিন্তু এরপর প্রতি বছর যেহেতু সেই মিরাজ সংঘটিত হয় না, তাই প্রতিবছরের ২৭শে রজব রাত্রি মিরাজের রাত্রি নয়৷ 

আবার মিরাজের ঘটনা সংঘটিত হওয়ার তারিখ ২৭শে রজব হওয়াও নিশ্চিত নয়৷ কেননা এ বিষয়ে মুহাক্কিকগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে। তবে প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী ২৭শে রজব মিরাজ সংঘটিত হওয়া গণ্য করলেও তা প্রতি বছরের

২৭শে রজব নয়, বরং শুধু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর জীবনে উক্ত ঘটনা সংঘটিত হওয়ার বছরের সেই রাতই কেবল লাইলাতুল মিরাজ বা শবে মিরাজ৷ তবে হ্যাঁ, তারিখ মিল হওয়ায় প্রতি বছরের ২৭শে রজবের রাতকে সে রকম তারিখ বিশিষ্ট একটি রাত্রি বলা যায়! কিন্তু শুধু এতটুকু মিল হওয়ার কারনে একে শবে মিরাজের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করা যায় না৷ 

তবে তারিখের সাথে মিল হওয়ায় প্রতি বছরের এ সময়ে সেই মহান মিরাজের রাত্রির কথা স্মরণ হতে পারে, আর তা স্মরণ করে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সেই মহান মিরাজের কথা এবং তাঁর জীবন সম্পর্কে আলোচনা করা যেতে পারে! 

তাও সেই রাতের সাথে খাস করে নয়, বরং এর কাছাকাছি কোন সময়ে বা জুমুআর সময়ে অথবা এ মাসের যে কোনসময়ে তা আলোচনা করা যেতে পারে! 

এ ব্যাপারে কিছু করতে চাইলে এতটুকুই, এর বেশী কিছু করার অধিকার নেই৷ 

শবে মি‘রাজ যদি শবে বরাত বাশবে কদরের মত ফযীলতপূর্ণ কোন ইবাদতের রাত হত। তাহলে তার দিন তারিখ সংরক্ষিত থাকতো। 

রাসূলসাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ ব্যাপারে হাদীস বর্ণিত হতো। সাহাবায়ে কেরাম রা. এর কোন না কোন আমল পাওয়া যেতো। 

অথচ এ বিষয়ে কুরআন হাদীসে কোন আমলের কথা বর্ণিত নেই। 

অতএব বৎসরের অন্যান্য দিনের মত স্বাভাবিক ইবাদত বন্দেগী করাই আমাদের এ দিনের কর্তব্য।

 (সূরায়ে মায়েদা- আয়াত ৩, বুখারী-হাদীস ২৬৯৭, মুসলিম-হাদীস ৫৯৬)

শবে মি‘রাজের ইবাদত বন্দেগীর ব্যাপারে কোন ফযীলত কুরআন-হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণিত নয়। শরীয়ত মিরাজ উপলক্ষ্যে কোন আমল নির্ধারন করেনি৷ 

আর শরীয়ত আমল রুপে যা নির্ধারন করেনি, তাকে আমল বানানো বা তা করাই বিদআত৷ আর প্রচলিত শবে মিরাজের আমল সমূহের প্রচলন ঘটেছে চারশত হিজরীর পরে৷ যা শরীয়তের কোন দলীল দ্বারাই প্রমানিত নয়৷ 

যেমন সহিহ বুখারির বর্ণনায় এসেছে :

حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ القَاسِمِ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّىاللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ، فَهُوَ رَدٌّ. 

‘আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু আবিষ্কারকরল, যা দ্বীনের অংশ নয় তাহলে তা প্রত্যাখ্যাত।’ (সহিহুল বুখারি : ৩/১৮৪, হা. নং ২৬৯৭)

সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে :

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا خَطَبَ احْمَرَّتْ عَيْنَاهُ، وَعَلَا صَوْتُهُ، وَاشْتَدَّ غَضَبُهُ، حَتَّى كَأَنَّهُمُنْذِرُ جَيْشٍ… وَيَقُولُ: أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللهِ، وَخَيْرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ، وَشَرُّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا، وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَة. 

‘জাবির বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. যখন খুতবা (ভাষণ) দিতেন তখন তাঁরচক্ষুদ্বয় রক্তিম বর্ণ ধারণ করত, কণ্ঠস্বর জোরালো হতো, তাঁর রাগ বেড়ে যেত; এমনকি মনে হতো, তিনি যেনশত্রুবাহিনী সম্পর্কে সতর্ক করছেন …এবং বলতেন, সর্বনিকৃষ্ট কর্ম হলো বিদআত বা দ্বীনের নামে নবআবিস্কৃতকাজ। আর প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহি।’ (সহিহু মুসলিম : ২/৫৯২, হা. নং ৮৬৭)

ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন :

وَلَا شُرِعَ لِلْمُسْلِمِينَ تَخْصِيصُ اللَّيْلَةِ الَّتِي يُظَنُّ أَنَّهَا لَيْلَةُ الْإِسْرَاءِ بِقِيَامٍ وَلَا غَيْرِهِ.

‘অনুরূপ মুসলমানদের জন্য নির্দিষ্টভাবে কোনো রাতকে শবে মিরাজ মনে করা এবং তাতে নামাজ ও অন্যান্যইবাদত-বন্দেগি করাও শরিয়া-অনুমোদিত নয়।’ (জাদুল মাআদ : ১/৫৮, প্রকাশনী : মুআসসাসাতুর রিসাল, বৈরুতি)

হাফিজ ইবনু কাইয়িম আল-জাওজিয়া রহ. বলেন :

وَكُلُّ حَدِيثٍ فِي ذِكْرِ صَوْمِ رَجَبٍ وَصَلاةِ بَعْضِ اللَّيَالِي فِيهِ فَهُوَ كَذِبٌ مُفْتَرًى كَحَدِيثِ مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ أَوَّلَ لَيْلَةٍ مِنْ رَجَبٍعِشْرِينَ رَكْعَةً جَازَ عَلَى الصِّرَاطِ بِلا حِسَابٍ وَكُلُّ حَدِيثٍ فِي ذِكْرِ صَوْمِ رَجَبٍ وَصَلاةِ بَعْضِ اللَّيَالِي فِيهِ فَهُوَ كَذِبٌ مُفْتَرًى كَحَدِيثِ”مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ أَوَّلَ لَيْلَةٍ مِنْ رَجَبٍ عِشْرِينَ رَكْعَةً جَازَ عَلَى الصِّرَاطِ بِلا حِسَابٍ.

‘রজব মাসের রোজা ও এতে কিছু রাতের নামাজের ব্যাপারে বর্ণিত প্রতিটি হাদিসই মিথ্যা ও জাল। যেমন একটিহাদিস হলো, “যে ব্যক্তি রজবের প্রথম তারিখ রাতে বিশ রাকআত নামাজ পড়বে, সে বিনা হিসাবে পুলসিরাত পারহয়ে যাবে।”’ (আল-মানারুল মুনিফ : পৃ. নং ৯৬, প্রকাশনী : মাকতাবাতুল মাতবুআতির ইসলামিয়্যা, হালব)

হাফিজ ইবনু হাজার আসকালানি রহ. বলেন :

لم يرد في فضل شهر رجب، ولا في صيام شيء منه معين، ولا في قيام ليلة مخصوصة فيه حديث صحيح يصلح للحجة.

‘রজব মাসের ফজিলত, এ মাসে নির্দিষ্ট রোজা ও নির্দিষ্ট রাতের নামাজ সম্পর্কে এমন কোনো বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিতহয়নি, যা দলিলের উপযুক্ত হতে পারে।’ (তাবয়িনুল আজব বিমা ওরাদা ফি শাহরি রজব : পৃ. নং ২৩)

শাইখ সাইয়িদ সাবিক রহ. বলেন :

وصيام رجب، ليس له فضل زائد على غيره من الشهور، إلا أنه من الاشهر الحرم. ولم يرد في السنة الصحيحة: أن للصيام فيهفضيلة بخصوصه، وأن ما جاء في ذلك مما لا ينتهض للاحتجاج به.

‘আর অন্যান্য মাসের রোজার তুলনায় রজবের রোজার অতিরিক্ত কোনো মর্যাদা নেই, তবে এতটুকু যে, রজব হলোহারাম বা মর্যাদাপূর্ণ মাসসমূহের একটি। বিশুদ্ধ হাদিসে এমনটা পাওয়া যায় না যে, রজব মাসে রোজার বিশেষকোনো মর্যাদা আছে। এ ব্যাপারে যেসব বর্ণনা এসেছে, তার কোনোটিই দলিলের উপযোগী নয়।’ (ফিকহুস সুন্নাহ : ১/৪৫৩, প্রকাশনী : দারুল কিতাবিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)

শাইখ ইবনু উসাইমিন রহ. বলেন :

ثم ابتدع الناس في هذه الليلة بدعاً لم تكن معروفة عند السلف، فصاروا يقيمون ليلة السابع والعشرين من رجب احتفالاً بهذهالمناسبة، ولكن لم يصح أنها- أعني: ليلة الإسراء والمعراج- كانت في رجب، ولا أنها في ليلة سبع وعشرين منه، فهذه البدعةصارت خطأً على خطأ: خطأً من الناحية التاريخية؛ لأنها لم تصح أنها في سبع وعشرين من رجب، وخطأ من الناحية الدينية؛لأنها بدعة، فإن الرسول صلى الله عليه وعلى آله وسلم لم يحتفل بها، ولا الخلفاء الراشدون، ولا الصحابة، ولا أئمة المسلمين منبعدهم.

‘অতঃপর লোকেরা এ রাতে অনেক বিদআত আবিষ্কার করেছে, যা সালাফে সালিহিনের সময় প্রচলিত ছিল না।তারা এ উপলক্ষে রজবের সাতাশ তারিখে শবে মিরাজ উদযাপন করে। অথচ মিরাজ যে রজব মাসে হয়েছে এবংএটা যে রজবের সাতাশ তারিখে; এর কোনোটিই প্রমাণিত নয়। অতএব, এ বিদআত ভুলের ওপর ভুল বলে গণ্যহয়েছে। এক তো ঐতিহাসিক ভুল; কেননা রজবের সাতাশ তারিখে শবে মিরাজ হওয়া প্রমাণিত নয়। আর দ্বিতীয়টিহলো দ্বীনি ভুল; কেননা এটা বিদআত বা নবআবিষ্কৃত। যেহেতু রাসুলুল্লাহ সা., খুলাফায়ে রাশিদিন, সাহাবায়েকিরাম ও তাঁদের পরবর্তী ইমামগণের কেউই শবে মিরাজ উদযাপন করেননি।’ (ফাতাওয়া নুর আলাদ দারব : ৪/২)

মোটকথা

শবে মিরাজ কবে সংঘটিত হয়েছে, এ ব্যাপারে নির্দিষ্টভাবে কোনো মাস বা তারিখ বলার সুযোগ নেই।শবে মিরাজ চূড়ান্তভাবে নির্দিষ্ট না হওয়া এটাই প্রমাণ করে যে, রাসুলুল্লাহ সা. ও তাঁর সাহাবায়ে কিরাম রা.-এর কাছেএ দিবস পালনের কোনো বিশেষত্ব বা গুরুত্ব ছিল না। আর এজন্যই নির্দিষ্টভাবে এর তারিখ নির্ণয় করা পরবর্তীলোকদের পক্ষে কঠিন হয়ে গেছে।

অতএব শবে মিরাজ উপলক্ষে নামায, রোযাসহ যে কোন ইবাদতই বিদআত ও পরিত্যাজ্য৷ 

❒ শবে মি‘রাজ সম্পর্কিত বর্জনীয় বিষয়সমূহ!

সম্ভাব্য এ রাতে ;

নির্দিষ্ট ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল হওয়া, 

দিনে রোযা রাখা, 

সরকারীভাবে শবে মি‘রাজ পালনের উদ্যোগ নেওয়া, 

এই রাত্রকে উদ্দেশ্য করে মসজিদে ভীড় জমানো, 

মসজিদে আলোকসজ্জা করা, 

রাত্র জাগরণ করা, 

বাড়ীবাড়ী মীলাদ পড়া, 

প্রচার মাধ্যমে এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা, 

শবে মি‘রাজ উপলক্ষে হালুয়া রুটির আয়োজন করা, 

ইত্যাদি কোনটাই সহীহ নয়।

আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে বিদআত থেকে বেঁচে থেকে সুন্নাহসম্মত আমল করার তাওফিক দান করুন। والله اعلم بالصواب

প্রমান্য গ্রন্থাবলী :

সূরা বনী ইসরাইল 

তাফসিরু ইবনি কাসির 

সহিহ বুখারি

সহিহ মুসলিম

মুসতাদরাকে হাকিম

মাআরিজুল কবুল 

আল ফাউয়ায়েদুল মাযমুয়া ৷

আল লায়ালিল মাসনুয়া ৷

আসারুল মারফুয়া ৷

তানযিহুস শরীয়া ৷

লাতায়েফুল মাআরিফ ৷

আল মাওযুয়াত ৷

আল-মানারুল মুনিফ

ফাতহুল বারি 

তাবয়িনুল আজব বিমা ওরাদা ফি শাহরি রজব 

আত-তাবসিরা

জাদুল মাআদ

আর-রাহিকুল মাখতূম

আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ ও শরহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়াহ 

শরহে যুরকানী 

সীরাতে ইবনে হিশাম

খাসায়েসুল কুবরা 

ফিকহুস সুন্নাহ 

ফাতাওয়া নুর আলাদ দারব 

প্রচলিত জাল হাদীস ১/১৩৯-১৪১ পৃষ্ঠা৷

বেহেশতী জেওর ৬/১০৫ পৃষ্ঠা৷

& web sites.

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *