
প্রশ্ন:
ইদানিং কেউ কেউ শরীয়া আইন বিরোধী বক্তব্য কটুক্তি কটাক্ষ মূলক পোস্ট কমেন্ট করছে অহরহ!
এ ধরনের মানসিকতা পোষণ কারী ব্যক্তিদের বিধান কি হবে?
মারূফ আব্দুল্লাহ।
উত্তর: وبالله سبحانه التوفيق
ইসলাম আল্লাহ্ পাকের একমাত্র মনোনীত ধর্ম।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এর প্রতিটি বিধি-বিধান সর্বযুগে ও সর্বদেশে সর্বস্তরের মানুষের জন্য প্রযোজ্য।
এ সম্পর্কে আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ করেছেন-
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করলাম (অর্থাৎ শরিয়তে আল্লাহ কর্তৃক সকল বিষয়বস্তু সংযোজন সম্পন্ন হলো), তোমাদের উপর আমার কৃপা পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের [একমাত্র] ধর্ম হিসাবে মনোনীত করলাম। [সুরা মায়িদা:৩]
কুরআন ও হাদীসে প্রতিটি বিষয়ে সমাধান পাওয়া যায়। এমন কোন বিষয় নেই, যার সমাধান কুরআন-হাদীসে নেই।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَنَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ تِبۡيَٰنٗا لِّكُلِّ شَيۡءٖ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٗ وَبُشۡرَىٰ لِلۡمُسۡلِمِينَ ٨٩ ﴾ [النحل: ٨٩]
‘‘আমি প্রত্যেক বিষয়ে ব্যাখ্যাস্বরূপ এবং মুসলিমদের জন্য হিদায়াত, রহমাত ও সুসংবাদস্বরূপ আপনার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি’’। সূরা নাহল-৮৯।
সুতরাং কালের আবর্তনে উদ্ভূত সকল সমস্যার সমাধানের জন্য কুরআন ও সুন্নাহভিত্তিক চিন্তা-গবেষণার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এতে রয়েছে। ফলে যাবতীয় নতুন অবস্থার সাথে তা সামঞ্জস্যশীল হতে সক্ষম।
নবীজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যেমন এর সফল কার্যকারিতা রয়েছে, তেমনি কিয়ামত পর্যন্ত এর কার্যকারিতা অক্ষুন্ন থাকবে।
কেননা কিয়ামত পর্যন্ত এটিই আল্লাহর দেয়া সর্বশেষ ও একমাত্র জীবন বিধান।
ইসলাম যেহেতু মহান রাব্বুল ‘আলামিন কর্তৃক মনোনীত জীবন-বিধান, তাই এর বিধিবিধান চির শাশ্বত ও অলংঘনীয়।
আর কুরআন হাদীছের এই শ্বাশ্বত আইন-বিধানই শরীয়াহ আইন। যা মেনে চলা, সমাজে বাস্তবায়ন ও কার্যকর করা অপরিহার্য।
ইসলামের সূচনা লগ্নে যে শরীয়াহ আইন ছিল, আজ দেড় হাজার বছর পরেও সেই আইনই জারী আছে। ভবিষ্যতেও বলবৎ থাকবে।
এর মধ্যে কোন রকমের পরিবর্তন বা পরিবর্ধনের চেষ্টা করা, অথবা তার দাবী তোলা ধর্মদ্রোহীতার শামিল।
যেমন—
জীবনের ধরন-ধারণ অহরহ বদলে যাচ্ছে বলে এ কথার দোহাই দিয়ে আমরা বলতে পারি না যে, মানব জীবনের প্রাণ বা আত্মাও বদলে যায়।
কুরআন-হাদীছে রয়েছে মানব জীবনের প্রতিটি দিকের সাথে সম্পর্কিত নীতিমালা, আহকাম ও আইন-কানুন, চাই তা মানুষের আকীদা, ইবাদাত ও চরিত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট হোক কিংবা ব্যক্তি, সমাজ ও দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও আইন-বিচার পদ্ধতি সংক্রান্ত হোক।
আর কুরআন-হাদীছের এই শ্বাশ্বত আইন-বিধানই শরীয়াহ আইন।
Sharia, Islamic law, or Sharia law is a religious law forming part of the Islamic tradition. It is derived from the religious precepts of Islam, particularly the Quran and the hadith. Wikipedia
শারীয়াহ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
অতঃপর আমি আপনাকে (মুহাম্মাদকে) কর্মপদ্ধতির উপর (শারীয়াহর উপর) প্রতিষ্ঠিত করেছি। সুতরাং আপনি তাই অনুসরণ করুন; আর আপনি মূর্খদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করবেন না।’ [সুরাতুল জাসিয়া:১৮]
তাই শারীয়াহ তথা ইসলামী আইন-বিধান মেনে চলা, সমাজে বাস্তবায়ন ও কার্যকর করা অপরিহার্য।
বর্তমানেও শরীয়াহ আইনের উপর চলার আর কোন বিকল্প নেই ।
কেননা;
সমাজের সকলের অধিকারকে সুশৃংখলভাবে সংরক্ষণ করার জন্য প্রয়োজন একটি পরিপূর্ণ আইনী ব্যবস্থা ও বিধানের, যা তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় করবে, অধিকারের সীমা নির্দিষ্ট করে দেবে ও প্রত্যেকের স্বেচ্ছাচারিতাকে আইনের দ্বারা সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত করবে। এ ব্যবস্থা না হলে মানুষের সামষ্টিক জীবন হয়ে পড়বে খুবই দুষ্কর।
কেননা মানুষের একটা প্রবণতা হচ্ছে নিজের সুবিধা ও স্বার্থকে বড় করে দেখা। এ প্রবণতা যদি আইন দ্বারা সুনিয়ন্ত্রিত না হয়, তাহলে পারস্পরিক যুলুম-নির্যাতন বেড়ে যাবে, অধিকার ক্ষুন্ন হবে এবং সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। আর প্রতাপশালী ও কূটজাল বিস্তারকারীদের দৌরাত্ম প্রতিষ্ঠিত হবে।
সুতরাং মানুষ সবসময়ই সুশৃংখল আইন-কানুন সম্বলিত এমন এক ব্যবস্থা মেনে চলার তীব্র প্রয়োজন অনুভব করেছে, যাতে সমাজের সকলের অধিকার নিশ্চিত হয়, কেউ কারো অধিকার হরণ করতে না পারে এবং কেউ-ই তার নিজের সীমা লংঘন করে অন্যের সীমায় অনুপ্রবেশ করতে না পারে। বস্তুত একটা সুষম, কল্যাণমুখী ও সর্বাত্মক ব্যবস্থা ছাড়া মানুষের পক্ষে সুস্থ স্বাভাবিক সমাজ জীবন যাপন করা কোনমতেই সম্ভবপর নয়।
এজন্যই আল্লাহর অবতারিত শরীয়ত তাঁর অগণিত অন্য সব নিয়ামতের মতই বিশ্বমানবতার প্রতি এক বিরাট রহমাত হয়ে দেখা দিয়েছে। এর ভিত্তিতেই হতে পারে মানুষের যাবতীয় সমস্যার সার্থক সমাধান ও তাদের পারস্পরিক বিবাদ-বিসম্বাদের সুষ্ঠু মীমাংসা ও নিষ্পত্তি।
আল্লহ তাআলা বলেন,
﴿ إِنَّآ أَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّ لِتَحۡكُمَ بَيۡنَ ٱلنَّاسِ بِمَآ أَرَىٰكَ ٱللَّهُۚ ﴾ [النساء : ١٠٥]
‘‘নিশ্চয়ই আমি আপনার প্রতি সত্য সহকারে গ্রন্থ নাযিল করেছি যাতে আপনি মানুষের মধ্যে সে বিষয় দিয়ে মীমাংসা করেন যা আল্লাহ আপনাকে দেখিয়েছেন’’।
সুতরাং সভ্য সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের কোনো বিকল্প নেই। সুবিচারপ্রাপ্তি সব নাগরিকের অধিকার এবং ন্যায়বিচার আল্লাহর হুকুম। এটি ফরজ ইবাদত।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘হে মুমিনগণ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকবে, কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদের যেন কখনো সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে, সুবিচার করবে, এটা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় করবে, তোমরা যা করো নিশ্চয় আল্লাহ তার সম্যক খবর রাখেন।’ (সুরা-৫ মায়িদা, আয়াত: ৮)।
ইসলামী শারীয়াহ বা শারীয়াহ আইন মানুষের চিন্তা ভাবনা থেকে উৎসারিত কোন আইন কানুন নয়, বরং ইহার প্রণেতা হলেন মহান আলাহ পাক রাব্বুল আলামিন, মানুষের স্বভাব ও সৃষ্টিগত চাহিদায় যা কিছু উপযোগী তিনি সে সব কিছুই তিনি অন্তর্ভূক্ত করেছেন। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তিনিই মানুষের প্রয়োজন সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত।
আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি করে জানবেন না? তিনি সূক্ষ্মজ্ঞানী, সম্যক জ্ঞাত। (সূরা মুলকঃ ১৪)
শারীয়াহ্ প্রণয়ন করেছেন সর্বজ্ঞানী মহাবিজ্ঞানময় এমন এক ইলাহ, আসমান ও যমীনের অনু পরিমাণ কোনো বস্তুও যার থেকে অদৃশ্য ও অজ্ঞাত থাকে না, যিনি মানুষকে সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করেছেন। ফলে স্বভাবতই তিনি তাদের সার্বিক কল্যাণের উপযোগী বিধান সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখেন।
‘মাআ’লিম ফিত-তরীক’ গ্রন্থকার বলেন,
‘‘যে শারীয়াহ্ আল্লাহ মানব জীবনকে সুসংবদ্ধ করার জন্য প্রণয়ন করেছেন তা এমনই এক বিধান যা জগতের সাধারণ নিয়মের সাথে সম্পর্কিত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এক কথায়,
এসব নিয়ম ও বিধানের প্রণেতা স্বয়ং তিনিই যিনি সৃষ্টিরও স্রষ্টা।
কাজেই এ নিয়ম ও বিধানাবলিকেও তিনি প্রণয়ন করেছেন সৃষ্টির অন্তর্নিহিত প্রয়োজনের সাথে সমন্বয় ও সামঞ্জস্যশীল করে।
ইরশাদ হচ্ছে :
فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا ۚ فِطْرَتَ اللَّـهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا ……
তুমি একনিষ্ঠ ভাবে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। (সূরা রূমঃ ৩০)
পক্ষান্তরে ;
মানব রচিত আইনসমূহ মানব রচনা করে। তারা জ্ঞান বিজ্ঞানে যতই উর্ধে উঠুক না কেন তাদের জ্ঞান অসম্পুর্ণ থেকে যায়। তারা গতকাল ও আজকের বিষয়গুলো জানলেও আগামী কালের বিষয়গুলো জানেনা। মানুষের কিছু স্বভাব চরিত্র জানলেও পুরোপুরি কিছুই জানেনা। এজন্যই এ সব আইন কানুন সব স্বভাবের সাথে উপযোগী হয়না, সব সমাজে ও অবস্থায় কার্যকরী হয়না। ইহা কোন কোন জাতির কাজে আসলেও অন্যান্যদের কাজে আসেনা।
তদ্রুপ ব্যক্তিগত ও মানব প্রসূত অভিমতের ভিত্তিতে কুরআনের আয়াত বা হাদীসকে বর্জন করা ও তার উপর আমল ছেড়ে দেয়া অনুমতি ইসলামী শরীয়াত দেয় না।
কারণ,
এ অনুমতি থাকলে মানুষ প্রবৃত্তি বা স্বার্থের অনুসারী হয়ে যাবে।
বাস্তব প্রমাণে দেখা গিয়ছে যে,
যারা শরীয়াহ আইনের অনুসরণ না করে মানব প্রসূত আইন বাস্তবায়ন করতে তৎপর হয়েছেন, তারা শেষ পর্যন্ত আল্লাহর গোলামীর পরিবর্তে নিজের নফস বা মনের গোলামী করে শরী‘আত বিবর্জিত পথে পরিচালিত হচ্ছেন ।
তাই বর্তমানেও শরীয়াহ আইনের উপর চলার আর কোন বিকল্প নেই ।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব কিছুর উর্ধ্বে ।
দেশ-জাতি ও সাহিত্য-সংস্কৃতি সবই আল্লাহর নির্দেশের গন্ডির মধ্যেই হতে হবে । মুসলমানগণের সংস্কৃতিও শরী‘আতের ধাঁচেই গঠিত হবে ।
সুতরাং কোন মুসলমান কুরআন-সুন্নাহর বিরোধিতা করে এ দীন-ঈমান বিরোধী কাজগুলোর কোনটাই করতে পারে না ।
সে একজন মুসলমান এটাই বড় কথা এবং এটা তার প্রথম পরিচয় ।
অতএব,
দীনকে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহর অবতারিত নির্দেশ ও গ্রন্থ ছাড়া অন্য আইন দ্বারা হুকুম পরিচালনা করার মানে দাঁড়ায় আল্লাহর দীন ও হুকুমের স্থলে মানব প্রবৃত্তি ও মতবাদকে সেখানে স্থলাভিষিক্ত করা।
দীনকে ধ্বংস করার জন্য এর চেয়ে আর বড় কোনো পন্থা আছে কি??
এবং দীনের বিরুদ্ধে কৃত এর চেয়েও বড় কোনো অপরাধ আছে কি??
মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥ ﴾ [النساء : ٦٥]
‘‘কখনোই নয়, আপনার রবের শপথ! তারা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের মধ্যকার বিবাদ-বিসম্বাদে আপনাকে হুকুমদাতা হিসাবে স্থির করে, অতপর আপনি যে ফয়সালা করে দেন তাতে নিজেদের মনে কোনরূপ দ্বিধা না রেখে পুরোপুরি মেনে নেয়’’। সূরা নিসা-৬৫।
﴿ وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ ٤٤ ﴾ [المائدة: ٤٤]
‘‘যারা আল্লাহর অবতারিত বিধান অনুযায়ী হুকুম প্রদান করে না তারা কাফির’’। সূরা মায়িদা-৪৪।
শরিয়ত অস্বীকার করা আল্লাহ ও নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) এর আদর্শ ও অস্তিত্বকে অস্বীকার করার নামান্তর।
এমনকি শরিয়তের এক অংশ পালন করা আর অন্য অংশ অস্বীকার করা কুফরী।
কুরআনে আছে,
তবে কি তোমরা গ্রন্থের (কুরআন) কিছু অংশ বিশ্বাস করো, আর কিছু অংশ প্রত্যাখ্যান করো? তোমাদের যারা এরূপ করে তাদের একমাত্র প্রতিফল হলো পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা। আর কিয়ামতের দিন তারা কঠিনতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। [সুরা বাকারা, আয়াত ৮৫]
যেভাবে ইসলামের ছোট বড় প্রতিটি মৌলিক আক্বায়িদ ও আহকাম প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য মেনে নেয়া ফরয।
তেমনি এর কোন একটাকে অস্বীকার করা বা তুচ্ছ জ্ঞান করা অথবা ইসলামের কোন বিষয় নিয়ে বিদ্রুপ-উপহাস করা কুফুর; যা মানুষকে ইসলামের গন্ডি থেকে বের করে দেয়।
[প্রমাণ: ফাতাওয়া শামী: ৪:২২২ # ফাতাওয়া দারুল উলূম, ১২:৩৫৫]
কোন মুসলমান যদি ধর্মীয় হুকুম-আহকাম ও আচার অনুষ্ঠান পালন না করে, কিন্তু সে কোন ধর্মীয় বিধি-বিধানকে অস্বীকার বা কটাক্ষও করে না, তাহলে সে ‘ফাসিক (অপরাধী ও গুণাহগার) বলে গণ্য হবে।
এ অবস্থাতেই যদি সে ফাসিক মারা যায়, তাহলে নিয়ম মাফিক তার জানাযা পড়তে হবে।
তবে বিশিষ্ট আলিম-উলামা ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বর্গের এতে অংশগ্রহণ না করা উচিত। যাতে করে এ ধরনের মানুষের কিছুটা বোধোদয় হয় এবং এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে স্বীয় অবস্থা থেকে ফিরে আসে। [প্রমাণ: ইমদাদুল আহকাম ১ : ১৩৩ # ফাতাওয়া দারুল উলূম, ৫ : ৩৪৯]
কিন্তু ধর্মদ্রোহীতার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। সেই বিষয় জানার আগে ধর্মদ্রোহী বা মুরতাদ (ধর্মত্যাগী)-এর পরিচয় বিস্তারিতভাবে জানা প্রয়োজন।
তা নিম্নে প্রদত্ত হল:
উল্লেখ্য মু‘মিন হওয়ার জন্য সকল আক্বীদায় বিশ্বাসী হওয়া জরুরী।
কিন্তু কাফির বা মুরতাদ হওয়ার জন্য সবগুলি অস্বীকার করা জরুরী নয়। যে কোন একটি বিষয় অবিশ্বাস করা যথেষ্ট।
যদি মুসলমান নামধারী কেউ ইসলামের মৌলিক আক্বীদা যথাঃ কবর, হাশর, মীযান, পুলসিরাত, বেহেশত, দোযখ, পুনরুত্থান, নামায, রোযা, হজ্জ্ব ও যাকাত প্রভৃতির কোন একটি অস্বীকার বা অবিশ্বাস করে, তাহলে সে মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) বলে গণ্য হবে। [প্রমাণ: ফাতাওয়া তাতার খানিয়াহ ৫ : ৫০০]
আল্লাহপাক সম্বন্ধে যে কটূক্তি করে, বা তাঁর কোন বিধানের সমালোচনা করে সে মুরতাদ। [প্রমাণ: ফাতাওয়া তাতার খানিয়াহ ৫ : ৪৬১]
যে ইসলাম ধর্ম সম্বন্ধে কটূক্তি করে, ধর্মকে গালি দেয় এবং অশালীন মন্তব্য করে সে মুরতাদ। [প্রমাণ: ফাতাওয়া মাহমূদিয়া, ১০ : ১০৭]
কুরআন পাকের সাথে কেউ যদি বেয়াদবী করে বা তার সম্বন্ধে আপত্তি জনক কথা বলে সে মুরতাদ।
[প্রমাণ: ফাতাওয়া দারুল উলূম, ১২ : ৩৬৩]
যেমন কেউ বলে থাকে- কুরআন সাম্প্রদায়িকতা ছড়ায় ইত্যাদি (নাঊযুবিল্লাহ)
নারী জাতির পর্দা ব্যবস্থাকে কেউ যদি কটাক্ষ করে এবং এ সমন্ধে বর্ণিত কুরআন-হাদীসের আহকাম অস্বীকার করে, তাহলে সেও মুরতাদ হয়ে যাবে। [প্রমাণ: ফাতাওয়া দারুল উলূম, ১২ : ৩৩৯]
অতএব,
শরীয়াহ আইনকে গুরুত্বহীন মনে করা, অথবা অবজ্ঞা, কটুক্তি, কটাক্ষ, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, কিংবা সেকেলে বা আনফিট মনে করা ইত্যাদি;
শরী‘আতের দৃষ্টিতে এসব চিন্তাধারা সবই হল কুফরী চিন্তাধারা।
যে ব্যক্তি বুঝে শুনে এসবের প্রতি আস্থাশীল হয় তার ঈমান চলে যাওয়ার প্রবল আশংকা রয়েছে।
অবশ্য কেউ যদি কুফুরী ও মানব রচিত এসব মূলমন্ত্র না জেনে অপরের দেখাদেখি কুফুরী ও মানব রচিত আইনকে সমর্থন করে তাহলে সে কুফরী তন্ত্রের সমর্থনকারী হিসাবে মারাত্মক গুণাহগার হবে।
এসব মূল মন্ত্রগুলো কুফরী হওয়ার প্রমাণ হল যে, এগুলো কুরআন-হাদীসের স্পষ্ট বর্ণনার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
নিম্নে কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হল-
আল্লাহ পাক কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন, {ان القوة لله جميعا}
“নিশ্চয়ই সকল ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই।” (সূরা বাকারা ১৬৫)
অন্যত্র ইরশাদ ফরমান:
, “{ان الحكم الا لله}
আল্লাহ তা‘আলাই বিধানদাতা।” (সূরা ইউসুফ ৪০)
অপর আয়াতে ইরশাদ করেন,
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলার নিকট ধর্ম একমাত্র ইসলাম।” (সূরা আল ইমরান)
আল্লাহ্ পাক আরো ইরশাদ করেছেন-
إِنَّ الدِّينَ: عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে গ্রহণযোগ্য ধর্ম একমাত্র ইসলাম।” (সূরা আল-ইমরান)
আরো ইরশাদ হচ্ছে,
}وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ} [آل عمران : 85]
“যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম তালাশ করে (গ্রহণ করে) কস্মিনকালেও তা মেনে নেয়া হবে না এবং আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্থ।” (আল-ইমরান ৮৫)
অন্য আয়াতে ঘোষিত হচ্ছে,
}وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا} [الأحزاب : 36[
“আল্লাহ ও তার রাসূল কোন বিষয় নির্ধারণ করলে, কোন ঈমানদার নর-নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন মত অবলম্বনের অধিকার নেই। যে আল্লাহ ও তার রাসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্যে পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।” (সূরা আহযাব ৩৬)
আল্লাহর একটি নাম ‘হাকিম’ বা ন্যায়বিচারক, তিনি ‘আহকামুল হাকিমিন’ অর্থাৎ সব বিচারকের শ্রেষ্ঠ বিচারক। মানুষকে আল্লাহ তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে ন্যায়বিচারের দায়িত্ব প্রদান করেছেন। সুবিচার মানবিক চাওয়া এবং ইবাদত।
ইসলামি বিধানে বিচার আদালতের মাধ্যমে অথবা আদালত কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠান বা মুসলিম শারীয়াহ বোর্ড দ্বারা সম্পন্ন হওয়া বিধেয়।
এর বাইরে কেউ কোন ধরণের বিচারিক কার্য সম্পাদনের এখতিয়ার রাখে না। এতে জুলুম ও বিশৃঙ্খলার অরাজকতার সমূহ আশঙ্কা বিদ্যমান।
তাই উলুল আমর তথা শরীয়াহ সম্মত আমীরের পদাংকানুসরণ আমাদের করতে হবে। আর এ ব্যাপারে তাদের অনুসরণ মূলত কুরআন-হাদীস তথা আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলেরই অনুসরণ করার নামান্তর।
কুরআন-হাদীসে উলুল আমর তথা শরীয়াহ সম্মত আমীরের অনুসরণ করার নির্দেশও দেয়া হয়েছে—
আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন-
“তোমরা আল্লাহ, আল্লাহর রাসূল এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলূল আমর, তাদের অনুসরণ কর।” [সূরা নিসাঃ ৫৯]
ان الحكم الا لله: إن المبتدأ الأول من ميادي الاحكام السياسية للاسلام هو أن الحكم الحقيقي في هذا الكون إنما هو لله سبحانه وتعالى وهو احكم الحاكمين…….. وإن هذا المبتدأ هو الذي يميز النظام السياسي الاسلامي من كل من الديموقراطية والدكتاتورية, فإن الديموقراطية تفوض الحكم إلى الشعب دون أي قيد.
إن نصب الخليفة أو الامام يكون في الاسلام من قبل أهل الحل والعقد. فليست الخلافة وراثة كما في الأمبراطورية. ولا مبنية على أساس القوة العسكرية كما في الدكتاتورية الفاشية, ولا مفوضة إلى رأي الجهال الحمقي كما في الديموقراطية الحديثية. وإنما هي مفوضة إلى اهل العلم والخبرة والتجربة الذين لهم عقل ورأي في الأمور الاجتماعية. (تكملة فتح الملهم:3/273)
একটি উদাহরণ দ্বারা উক্ত বিষয়টি আরো স্পষ্ট রূপে বুঝা যাবে বলে আশা করি।
যেমন,
এক ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। কিন্তু কোন কারণে সে আইন পরিপন্থী কাজ যেমন- জুয়া, চুরি, বা অসামাজিক কাজ ইত্যাদি করে বসে। তাহলে এরূপ ব্যক্তির অন্তরে যেহেতু রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও আস্থা রয়েছে তাই তার প্রতি দেশদ্রোহীর শাস্তি প্রয়োগ করা হবে না এবং তাকে দেশান্তরিত করাও হবে না। বরং তার শাস্তি হবে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পুনরায় সে সরকারের অনুগত প্রজাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। পক্ষান্তরে কোন ব্যক্তি যদি অত্যন্ত ভদ্র ও নম্র চরিত্রের অধিকারী হয় এবং কোন প্রকার অসামাজিক কাজে লিপ্ত না হয়। কিন্তু সরকারকে ও দেশকেই সে অমান্য করে তাহলে তাকে দেশদ্রোহী সাব্যস্ত করে দেশান্তরিত করা হবে অথবা ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হবে। ইসলামী আইনের বিষয়টি অনুরূপ।[আশরাফুল জাওয়াব, ৩৭৬]
বিভিন্ন ধর্মের যেমন ভিন্ন ভিন্ন মত-পথ এবং নিয়ম-কানুন আছে… মুসলমানদেরও তেমন নিজস্ব মূল্যবোধ অনুযায়ী, ধর্মীয় বিধি-বিধানের আলোকে নিজস্ব নিয়ম-নীতি থাকার অধিকার আছে।
সুতরাং আজ যারা শরীয়া আইন তথা কুরআন-হাদীসের উপর আমল করা জরুরী মনে করছে না বা তা বাস্তবায়ন-কার্যকর করাকে বিরোধিতা করে, তারা মূলত ধর্মদ্রোহীতা ও বিভ্রান্তিতে রয়েছে।
আর তারা মূলতঃ তাদের কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ করছে এবং ভ্রান্ত মতবাদ মানুষের মাঝে ছড়ানোর প্রয়াস চালাচ্ছে।
অতএব ধর্মদ্রোহীর হুকুম অনুযায়ী ঐ ধরনের মন্তব্য কারী সম্পর্কে শরীয়তের ফায়সালা হলঃ
(১) রাষ্টীয়ভাবে তাকে বন্দী করা হবে এবং প্রকাশ্য তওবার জন্যে বাধ্য করা হবে। তওবা করতে অস্বীকার করলে চরম ধর্মদ্রোহী কর্মকান্ডের জন্যে তাকে মৃত্যুদন্ড দিবে।
(২) তওবার আগ পর্যন্ত তার স্বামী, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন বা অন্য কোন মুসলমানদের জন্য তার সাথে সম্পর্ক রাখা, উঠা-বসা করা, কথা-বার্তা বলা, লেনদেন করা জায়িয হবে না। বরং হারাম হবে।
শরীয়তের আরো ফায়সালা হল- তার স্বামীর সাথে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে বিধায় উভয়ের দেখা সাক্ষাত, মিলা-মিশা হারাম হবে। তারা সহবাস করলে, তা অবৈধ বা যেনা হবে। সন্তান জন্মিলে হারাম জাদা বা জারজ বলে গণ্য হবে। [প্রমাণ: আদ্ দুররুল মুখতার, ৩ : ১৯৩]
(৩) ঐ মহিলার মৃত্যু হলে, তার জানাযা পড়া হারাম হবে। [ফাতওয়ায়ে দারুল উলূম ৫:২৯]
(৪) আত্মীয় স্বজন কর্তৃক তার জানাযার ব্যবস্থা করাও হারাম হবে।[ফাতওয়ায়ে দারুল উলূম ৫:২৯০]
(৫) মুসলমানদের কবরস্থানে তাকে মাটি দেয়া হারাম হবে । বরং কোন গর্তের মধ্যে ফেলে তাকে মাটি চাপা দিতে হবে। [প্রমাণ: আদ্ দুররুল মুখতার পৃ: ২:২৩০#দারুল উলুম, ৫:২৯১]
এতো হল-
দুনিয়াবী দিক দিয়ে তার উপর বর্তিত শরীয়তের হুকুম।
আর পরকালীন ভয়াবহ চির শাস্তির কথা বলার অপেক্ষাই রাখে না।
আসল ব্যাপার হল-
ইসলাম আজ বিজাতীয়দের দ্বারা চরমভাবে আক্রান্ত ।
এদের লক্ষ্যে বিশ্বের শিক্ষা-সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি ইত্যাদিতে তারা সরাসরি দখল দিতে সচেষ্ট। যাতে করে পর্যায়ক্রমে ইসলামের শিক্ষা-সংস্কৃতি, তাহযীব-তামাদ্দুনকে আস্তে আস্তে খতম করে দিয়ে তাদের নিজস্ব কৃষ্টি কালচার, বেহায়াপনা ও পশুত্ব সব জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করা যায়।
ইসলাম বিদ্বেষীরা বিভিন্ন কৌশলে ইসলামের ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করছে ।
কখনো আবার ওরা ইসলামের বহুরূপী শত্রুদের অল্প মূল্যে ভাড়া করে তাদের থেকে কাজ নিচ্ছে।
কেননা আজকের বিশ্ব-ব্যবস্থায় এটা স্পষ্ট যে, দরিদ্র জাতি ও দরিদ্র রাষ্ট্র শত্রুদের নানামুখী ষড়যন্ত্রের শিকার হয় এবং এ সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে শত্রুরা সে জাতি ও রাষ্ট্রের উপর নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা যেমন চালায়, তেমনি তাদের মধ্যে নিজেদের সংস্কৃতি, মতবাদ ও ধ্বংসাত্মক চিন্তাধারার প্রসার ঘটায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারটি জলজ্যান্ত ও বাস্তব।
মুসলমান সন্তানদের মন ও মস্তিষ্কের দিক দিয়ে ইসলাম বিরোধী করে গড়ে তোলার সুদূর প্রসারী লক্ষ্য নিয়ে বৃটিশ বেনিয়ারা এদেশে যে শিক্ষা ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়ে গেছে তার প্রভাব, বর্তমান পাশ্চাত্য জগতের অপসংস্কৃতির প্রভাব, মানবতার মুক্তির মিথ্যা মরিচিকা মার্কসবাদ- লেলিনবাদের মিথ্যা আশাবাদের বুলির প্রভাব, প্রভৃতি কু-প্রভাবসমূহের কারণে আজ দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুসলমানদের ঘরেই জন্ম নেয়া ইসলাম বিদ্বেষী সাম্রাজ্যবাদের দালাল-নাস্তিকদের ক্ষুদ্র একটি দল সৃষ্টি হয়েছে। তারা বিভিন্নভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী নানা কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছে।
এরা এতকাল মস্কো-রাশিয়ার চাটুকার সেজে দেশ ও জনগণের স্বার্থবিরোধী বহু কার্য সম্পাদন করেছে। এদের চরিত্র ছিল মস্কোতে বৃষ্টি হলে ঢাকায় ছাতা ধরা।
সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙ্গে খান খান হওয়ার পরে তারা রাশিয়ার দালালী বাদ দিয়ে এদেশের রাশিয়ার হুমকি নব্য ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী খৃষ্টান মদদ পুষ্ট এনজিওদের তরফদারী করে তাদের থেকে আর্থিক সুবিধা ভোগ করছে।
এদের পরে আমেরিকার ডলার খেয়ে পেট পুড়েছে, তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বিশাল সম্পদের রাতারাতি মালিক বনেছে।
বাস্তবে;
ওদের উৎখাত হয়ে গেলে ওদের ভিক্ষা দেয়ার দুনিয়াতে আর কেউ থাকবে না, এ ভীতি তাদের।
কিন্তু মজার ব্যাপার হল-
তাদের কোন নীতি আছে বলে মনেই হয় না। পয়সাই যেন তাদের নীতি।
সঠিক দীন ও রুচিশীল সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ খিদমতে নিয়জিতদের বিরুদ্ধে কটাক্ষ ও মিথ্যা, ভিত্তিহীন আজে বাজে প্রলাপ বকাই তাদের দায়িত্ব বলে মনে হয় ।
এর উদাহরণ এমন, যেমন চোর নিজেই “চোর” বলে সাধুকে ধাওয়া করল।
আল্লাহ বলেন,
﴿ أَمۡ تَحۡسَبُ أَنَّ أَكۡثَرَهُمۡ يَسۡمَعُونَ أَوۡ يَعۡقِلُونَۚ إِنۡ هُمۡ إِلَّا كَٱلۡأَنۡعَٰمِ بَلۡ هُمۡ أَضَلُّ سَبِيلًا ٤٤ ﴾ [الفرقان: ٤٤]
‘‘তুমি কি মনে কর যে, তাদের অধিকাংশ শোনে ও বোঝে? তারা তো পশুর মতই; বরং তারা অধিক পথভ্রষ্ট’’।
﴿ وَجَعَلۡنَا لَهُمۡ سَمۡعٗا وَأَبۡصَٰرٗا وَأَفِۡٔدَةٗ فَمَآ أَغۡنَىٰ عَنۡهُمۡ سَمۡعُهُمۡ وَلَآ أَبۡصَٰرُهُمۡ وَلَآ أَفِۡٔدَتُهُم مِّن شَيۡءٍ إِذۡ كَانُواْ يَجۡحَدُونَ بَِٔايَٰتِ ٱللَّهِ ﴾ [الاحقاف: ٢٦]
‘‘আমি তাদেরকে দিয়েছিলাম কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর, কিন্তু তাদের কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর তাদের কোনো কাজে আসে নি। কেননা তারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছিল’’।
মূলত: ইসলাম বিদ্বেষীরা যেন এ ব্যাপারে আর রাখ-ঢাক রাখতে চাচ্ছে না।
তাই যদি না হয়,
তাহলে ওরা কেন আজ নিজেরা মুসলমানদের ঘরে জন্ম গ্রহণ করে নিজেদের মুসলমান বলে দাবী করে, দাঁড়ি টুপিওয়ালা সাচ্চা মুসলমান ও আলেমদের গালি দেয়?
শরীয়াহ আইনকে গুরুত্বহীন মনে করে ?
অবজ্ঞা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ?
সেকেলে বা আনফিট মনে করে ?
বরং তারাই ইসলাম বিরোধী এবং ইসলাম বিধ্বংসী সকল কার্য-কলাপের সমর্থন দিতে তৎপর!
যেন একই গাছের ২টি মাকাল ফল-
যার উপরিভাগের দৃশ্য কতই না সুন্দর মনোরম আর ভিতরের অবস্থার দিকে একটু দৃষ্টি পড়লেই রুচি নষ্ট হয়ে যায়।
এদেশের লোক সমাজ যাতে করে ওদের চিনতে না পারে এবং ওদের কুমতলব যাতে করে ফাঁস না হয়ে যায়, এজন্য তারা শাড়ি বদল করেছে মাত্র। কিন্তু বউ সেই একটাই। লেবাস বদল করার কারণে আজ অনেকেই না চিনে এদেরকে কল্যাণকর মনে করছে।
এদের থেকে সকলের সতর্ক থাকা একান্ত কর্তব্য।
মুসলিম শব্দ বা লেবাস দেখে ধোকা খাওয়া ঠিক নয় এবং মনে করা উচিত নয় যে, এরাও মুসলমান ।
কোন মুসলমান তাদের এ ভ্রান্ত বিশ্বাসের সাথে ঐক্যমত পোষন করলে সাথে সাথে তার ঈমান চলে যাবে। বর্তমানে বাংলাদেশে এদের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধভাবে এসব কাফির ও ঈমান ধ্বংসকারীদের প্রতিহত করা জরুরী এবং ঈমানী দায়িত্ব।
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
এ কিতাবের অবতরণ বিশ্ব পালনকর্তার নিকট থেকে। এতে কোন সন্দেহ নেই। তারা কি বলে এটা মিথ্যা রচনা করেছে ?
বরং এটা আপনার পালনকর্তার পক্ষ হতে সত্য। যাতে আপনি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করেন, যাদের কাছে আপনার পূর্বে কোন সতর্কবাণী আসেনি। সম্ভবতঃ এরা সুপথ প্রাপ্ত হবে। [সূরা সিজদাহঃ ১-২]
এবং এই নির্বোধ বা দালাল অনুচরদের হিদায়াত করা এবং বুঝানো দেশপ্রেমিক সকল নাগরিকের দায়িত্ব।
শুধু উলামায়ে কিরামের দায়িত্ব মনে করলে নেহায়েত ভুল হবে।
এসব বিকৃতি থেকে রক্ষা করার জন্য দাওয়াতী পন্থার আশ্রয় নেয়া সকল স্তরের মুসলিমদের উপর অত্যন্ত জরুরী।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلۡخَيۡرِ وَيَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٠٤ ﴾ [ال عمران: ١٠٤]
‘‘তোমাদের মধ্যে এমন একদল লোক থাকা উচিত যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎ কাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। তারাই হবে সফলকাম’’।
﴿ كُنتُمۡ خَيۡرَ أُمَّةٍ أُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَتَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَتُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِۗ ﴾ [ال عمران: ١١٠]
‘‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মাত মানব জাতির জন্য যাদের আবির্ভাব হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ প্রদান করবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে ও আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখবে’’।
﴿ وَٱدۡعُ إِلَىٰ رَبِّكَۖ وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ٨٧ ﴾ [القصص: ٨٧]
‘‘আর আপনার প্রভুর প্রতি আহবান করুন এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না’’। ‘‘আপনার প্রভূর পথের দিকে হিকমাত ও উত্তম উপদেশ সহকারে আহবান করুন’’।
﴿ قُلۡ هَٰذِهِۦ سَبِيلِيٓ أَدۡعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا۠ وَمَنِ ٱتَّبَعَنِيۖ ﴾ [يوسف: 108]
‘‘বলুন, এটাই আমার পথ। আল্লাহর প্রতি মানুষকে আমি আহবান করি জেনেশুনে – আমি ও আমার অনুসারীগণ..’’।
আসুন!
নিজের ঈমান বাঁচাই,
অপরকে ঈমান বাঁচাতে সহযোগিতা করি!
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে তাঁর শরীয়াহ্-এর জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে দীন পালন ও প্রসারের তাওফীক দান করুন। আমীন!
উত্তর প্রদান
মুফতী মাসূম বিল্লাহ।
Sharia Specialist, Islamic Economist, Banking & Finance Expert.
Khatib & Mufassir at Al Madina Jame Masjid at Eastern Housing, Pallabi Phase-2, Mirpur 11 ½.
Senior Muhaddis & Mufti at Jamia Islamia Darul Uloom Dhaka,Masjidul Akbar Complex, Mirpur-1,Dhaka-1216
Ustazul fiqh & Ifta at مركز البحوث الاسلامية داكا. Markajul Buhus Al Islamia Dhaka