শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় গুনাহ ও অপরাধ, যা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
নিশ্চয়ই আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা বড় জুলুম ও অপরাধ। ’
(সুরা : লুকমান : আয়াত : ১৩)
আনাস (রা.) বর্ণনা করেন।
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আলোচনা করতে গিয়ে বললেন,
‘কবিরা গুনাহ বা সবচেয়ে বড় অপরাধ হলো, আল্লাহর সঙ্গে শিরক বা অংশীদার স্থাপন করা, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া।’
[বুখারি : ৫৯৭৭]
গায়রুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া যে কোন ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্তুর উদ্দেশ্যে কোন ইবাদত আদায় করা, প্রতিমার পূজা করা।
গায়রুল্লাহর উদ্দেশে কুরবানী করা, মান্নাত করা,
কোন মৃত ব্যক্তি কিংবা জ্বীন অথবা শয়তান কারো উপকার বা ক্ষতি করতে পারে কিংবা কাউকে সুস্থ বা অসুস্থ করতে পারে, এ ধরনের বিশ্বাস রাখা।
প্রয়োজন ও চাহিদা পূর্ণ করা এবং বিপদ দূর করার ন্যায় যে সব ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ক্ষমতা রাখেনা সে সব ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে আশা করা৷
মহান আল্লাহ বলেন:
• ‘তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন বস্তুর ইবাদত করে, যা না তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারে, না করতে পারে, কোন উপকার৷ আর তারা বলে, এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী৷’
(সূরা ইউনুস ১৮)
মহান আল্লাহ শিরককারীকে ক্ষমা করেন না।
আল্লাহ তাআলা শিরকে গোনাহের পরিণতি সম্পর্কে ঘোষণা করেন-
إِنَّ اللّهَ لاَ يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَاء وَمَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا
‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তার সঙ্গে শিরক করাকে ক্ষমা করবেন না। তবে শিরক ছাড়া অন্যান্য গোনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। আর যে লোক আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার সাব্যস্ত করে; সে যেন অপবাদ আরোপ করে।’
(সুরা নিসা : আয়াত ৪৮)
নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে আহ্বান করেছিলেনঃ
قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَىٰ كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ ۚ فَإِن تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ-آل عمران/৬৪
‘’ বল, হে আসমানি কেতাবের অনুসারীগণ, আসো ঐ কালিমার দিকে যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে গুরুত্ব রাখে; আর তাহোলঃ আমরা কেউ আল্লাহ্ ছাড়া আর করো উপাসনা করবোনা। এবং আল্লাহ্র সাথে কোন কিছু শরীক করবোনা। আর আল্লাহ্ ছাড়া পরস্পর একে অপরকে রব মানবোনা। একথা না মেনে যদি তারা পিছটান দেয় তাহলে বল যে, তোমরা সাক্ষী থাকো যে আমরা মুসলমান’’।
-( আল ইমরান/৬৪)।
শিরক সমস্ত আমলকে বিনষ্ট করে দেয়।
মহান আল্লাহ বলেন,
• “আর যদি তারা শিরক করে তাহলে তাদের সকল আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে।”
(সুরা আনআম: ৮৮)
• আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের পতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন।
(সূরা যুমার: ৬৫)
শিরকের কারণে পরকালে জান্নাত হারাম ও জাহান্নাম ওয়াজিব হয়।
মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ
‘আর নিশ্চিত জেনো, যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন। তার ঠিকানা জাহান্নাম। আর যারা (এরূপ) জুলুম করে তাদের কোনো রকমের সাহায্যকারী লাভ হবে না। ’
(সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৭২)
‘তারা কাফের, যারা বলে যে, মরিময়-তনয় মসিহই আল্লাহ; অথচ মসিহ বলেন, হে বনি ইসরাঈল! তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, যিনি আমার পালনকর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা। নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। আর জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’ [সুরা মায়েদা : ৭২]
‘আহলে কিতাব ও মুশরিকদের মধ্যে যারা আল্লাহকে অস্বীকারকারী, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। সৃষ্টির মধ্যে তারাই নিকৃষ্ট।’ [সুরা বাইয়িনাহ : ৬]
সহিহ হাদিসে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে ৭টি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বেঁচে থাকতে বলেছেন। তন্মধ্যে অন্যতম হলো ‘আল্লাহর সঙ্গে শিরক তথা অংশীদার স্থাপন করা।’
[বুখারি: ৬৮৫৭; মুসলিম: ৮৯]
রাসূল (সঃ) বলেছেন, “শীঘ্রই আমার উম্মতের কিছু লোক মূর্তি পুজা করবে এবং কিছু লোক মূর্তি পূজারীদের সাথে মিশে যাবে।” -সুনানে ইবনে মাজাহ (৩৯৫২)
.
খলিফাতুল মুসলিমিন উমর (রঃ) বলেন, “তোমরা মুশরিকদের (মূর্তি পুজাকারীদের) উৎসবের সময় সেখানে যেও না। কেননা, তাদের উপর আল্লাহর গযব বর্ষিত হয়।” -সুনানুল কুবরা, (বায়হাকীঃ ১৮২৮৮)
তাই প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরয ও অপরিহার্য হলো,
যেকোনো মূল্যে শিরকমুক্ত থাকার চেষ্টা করা।
সুতরাং একজন মুমিন সর্বদা শিরকের ব্যাপারে ভীত থাকবে। শিরক থেকে বেঁচে থাকবে।
জীবন চলে যাবে তবুও সামান্যতম কোনো ব্যাপারে শিরকে লিপ্ত হবে না।
মুফতী মাসুম বিল্লাহ।
Sharia Specialist, Islamic Economist, Banking & Finance Expert.
Khatib & Mufassir at Al Madina Jame Masjid at Eastern Housing, Pallabi Phase-2, Mirpur 11 ½.
Senior Muhaddis & Mufti at Jamia Islamia Darul Uloom Dhaka,Masjidul Akbar Complex, Mirpur-1,Dhaka-1216
Ustazul fiqh & Ifta at مركز البحوث الاسلامية داكا. Markajul Buhus Al Islamia Dhaka