কুরআন-হাদীসের দৃষ্টিতে উমরী কাযা ? উমরী কাযা নামাজ কিভাবে আদায় করবে ?

By | March 11, 2021

প্রশ্নঃ

জনাব বাদ সালাম পর সমচার এই যে, আমি অতীতে শয়তানের ধোঁকায় ও অলসতার কারণে আমার জিম্মায় প্রায় 8,10 বছরের নামাজ ক্বাযা হয়ে গেছে, এখন আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি এবং তাওবা করছি ,এখন আমি আমার ওই ক্বাযা নামাজ গুলো আদায় করতে চাই ,তো আমি ওগুলো কি ভাবে আদায় করবো ?

বি.দ্র. আমি অতীতে যে নামাজ গুলো আদায় করেছি ওই গুলোও ভালো ভাবে মনোযোগ দিয়ে আদায় করতে পারি নাই এখন আমার ইচ্ছা এ নামাজ গুলো সহ জীবনের সমস্ত নামাজ ক্বাযা আদায় করবো।তো হুজুরের নিকট আমার আকুল আবেদন এই যে উক্ত বিষয়ে শরয়ী সমাধান দিয়ে বাধিত করবেন ।

প্রশ্নকারীঃ ফিরোজ মাহমুদ

উত্তর : وبالله سبحانه التوفيق

ইচ্ছাকৃত বা ভুলবশত কিংবা অন্য কোনো বিশেষ কারণে কোনো ওয়াক্তের ফরজ কিংবা ওয়াজিব নামায ছুটে গেলে এবং যথাসময়ে যা আদায় করা সম্ভবপর না হলে এই নামাজ পরবর্তীতে কাযা আদায় করা অপরিহার্য।ছুটে যাওয়া নামায সংখ্যায় কম হোক বা বেশী।

হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ نَسِيَ صَلَاةً فَلْيُصَلِّ إِذَا ذَكَرَهَالَا كَفَّارَةَ لَهَا إِلَّا ذَلِك اقم الصَّلاَةَ لِذِكْرِي ‏”‏

যে ব্যক্তি নামাযের কথা ভুলে যায় কিংবা নামায না পড়ে ঘুমিয়ে থাকে তার কাফফারা হল, যখন নামাযের কথা স্মরণ হবে তখন তা আদায় করা।আল্লাহ বলেছেন, “আমার স্মরণে সালাত আদায় কর। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৭২)
.
عن جابر بن عبد الله : أن عمر بن الخطاب جاء يوم الخندق بعدما غربت الشمس فجعل يسب كفار قريش قال يا رسول الله ما كدت أصلي العصر حتى كادت الشمس تغرب قال النبي صلى الله عليه و سلم ( والله ما صليتها ) . فقمنا إلى بطحان فتوضأ للصلاة وتوضأنا لها فصلى العصر بعدما غربت الشمس ثم صلى بعدها المغرب
.
হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত-ওমর বিন খাত্তাব রা. খন্দকের দিন সূর্য ডুবার পর কুরাইশ কাফেরদের তিরস্কার করতে করতে এলেন। নবীজী সাঃ কে বললেন-“হে আল্লাহর নবী! আমি আসরের নামায পড়তে পারিনি এরই মাঝে সূর্য ডুবে গেছে”।
নবীজী সাঃ বললেন-“হায় আল্লাহ! আমরাওতো পড়তে পারিনি! তারপর আমরা সমতল ভূমিতে দাঁড়ালাম। আর তিনি নামাযের জন্য অযু করলেন। আর আমরাও নামাযের জন্য অযু করলাম। তারপর সূর্য ডুবে গেলেও প্রথমে আমরা আসর পড়লাম। তারপর মাগরিব পড়লাম।
(বুখারী-হা/৫৬৯, ৬১৩, ৮৯৮, ১৩১৬)

হাদীসে এসেছে,,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِذَا رَقَدَ أَحَدُكُمْ عَنِ الصَّلاَةِ أَوْ غَفَلَ عَنْهَا فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا فَإِنَّ اللَّهَ يَقُولُ أَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِي ‏”‏
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি ঘুমিয়ে পড়ে অথবা ভুলে যায় তাহলে তার স্মরণ হওয়া মাত্রই তা আদায় করে নিবে। কেননা আল্লাহ বলেছেন, “আমার স্মরণে সালাত আদায় কর [ত্বাহাঃ ১৪]।
(সহীহ মুসলিম-হা/১৪৪১, ১৪৪২; সুনানে নাসাঈ-হা/৬১৫, ৬২০, ৬২১; মিশকাত-হা/৬০৩; মুসনাদে আহমাদ-হা/১২৯৩২, ১৩৫৫০; সুনানে বায়হাকী কুবরা-হা/৪১৮২; আবূ দাঊদ-হা/৪৪২; নাসায়ী-হা/৬১৩; তিরমিযী-হা/১৭৭, ১৭৮; ইবনে মাজাহ-হা/৬৯৮; সহীহ ইবনু হিব্বান-হা/১৫৫৬; ইরওয়া-হা/২৬৩)

অন্য হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি নামায রেখে ঘুমিয়ে গেছে বা নামায থেকে গাফেল রয়েছে তার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এর কাফফারা হল যখন তার নামাযের কথা স্মরণ হবে তখন তা আদায় করে নেওয়া। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৬১৪)
.
عن ابي قتادة، قال ذكروا للنبي صلى الله عليه وسلم نومهم عن الصلاة فقال ‏ “‏ انه ليس في النوم تفريط انما التفريط في اليقظة فاذا نسي احدكم صلاة او نام عنها فليصلها اذا ذكرها ‏”‏ ‏.‏

وفي الباب عن ابن مسعود وابي مريم وعمران بن حصين وجبير بن مطعم وابي جحيفة وابي سعيد وعمرو بن امية الضمري وذي مخبر ويقال ذي مخمر وهو ابن اخي النجاشي ‏.‏ قال ابو عيسى وحديث ابي قتادة حديث حسن صحيح ‏.‏ وقد اختلف اهل العلم في الرجل ينام عن الصلاة او ينساها فيستيقظ او يذكر وهو في غير وقت صلاة عند طلوع الشمس او عند غروبها ‏.‏ فقال بعضهم يصليها اذا استيقظ او ذكر وان كان عند طلوع الشمس او عند غروبها ‏.‏ وهو قول احمد واسحاق والشافعي ومالك ‏.‏ وقال بعضهم لا يصلي حتى تطلع الشمس او تغرب ‏
আবূ কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, লোকেরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সালাত ভুলে ঘুমিয়ে পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন নিদ্রার বেলায় কোন গোনাহ নেই, গোনাহ হল জাগ্রত থাকার বেলায়। তোমাদের কেউ যদি সালাত আদায় করতে ভুলে যায় বা ঘুমিয়ে পড়ে তবে যে সময়ই মনে পড়বে তা আদায় করে নিবে।
(তিরমীজি-হা/১৭৭; সুনানে নাসাঈ-হা/৬১৬)
.
عن أنس بن مالك قال : سئل رسول الله صلى الله عليه و سلم عن الرجل يرقد عن الصلاة أو يغفل عنها قال : كفارتها يصليها إذا ذكرها
.
হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ কে নামায রেখে ঘুমিয়ে যাওয়া ব্যক্তি ও নামায সম্পর্কে গাফেল ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন-এর কাফফারা হল যখনই নামাযের কথা স্মরণ হবে তখনই তা আদায় করে নিবে।
(সহীহ ইবনে খুজাইমা-হা/৯৯১; মুসনাদে আবী আওয়ানা-হা/১০৪১; মুসনাদে আবী ইয়ালা-হা/৩০৬৫; মুসনাদে আহমাদ-হা/১৩২৬২; সুনানে নাসায়ী কুবরা-হা/১৫৮৫)
.
أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ يَقُولُ مَنْ نَسِيَ صَلَاةً فَلَمْ يَذْكُرْهَا إِلَّا وَهُوَ مَعَ الْإِمَامِ فَإِذَا سَلَّمَ الْإِمَامُ فَلْيُصَلِّ الصَّلَاةَ الَّتِي نَسِيَ ثُمَّ لِيُصَلِّ بَعْدَهَا الْأُخْرَى
.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ বলতেন-যে ব্যক্তি নামাযের কথা ভুলে যায় তারপর তা স্মরণ হয় ইমামের সাথে জামাতে নামাযরত অব্স্থায়, তাহলে ইমাম সালাম ফিরানোর পর যে নামায ভুলে পড়েনি, তা আদায় করবে, তারপর অন্য নামায পড়বে।
(মু্য়াত্তা মালিক-হা/৫৮৪; সুনান আদ দারাকুতনী-হা/১৫২৯; সুনান বায়হাকী কুবরা-হা/৩০১২)
.
حدثنا أبو بكر الشافعي ، ثنا عبد الله بن أحمد بن خزيمة ، ثنا علي بن حجر ، ثنا بقية ، حدثني عمر بن أبي عمر عن مكحول عن عبد الله ابن عباس قال : قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – ” إذا نسي أحدكم صلاة فذكرها وهو في صلاة مكتوبة فليبدأ بالتي هو فيها ، فإذا فرغ منها صلى التي نسي ”
.
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ নামাযের কথা ভুলে গেলে এবং তা অন্য (ফরয) নামায পড়া অবস্থায় স্মরণ হলে সে যে নামায পড়ছে তা পড়া শেষ করে যে নামায ভুলে গেছে তা পড়বে।
(সুনান আদ দারাকুতনী-হা/১৫২৮

ইমাম ইবনে আব্দুল বার র. বিনা ওযরে কাযাকৃত (ছেড়ে দেয়া) নামায আদায় করা অপরিহার্য হওয়ার স্বপক্ষে শরয়ী প্রমাণাদি উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন:
ومن الدليل على أن الصلاة تصلي وتقضى بعد خروج وقتها كالصائم سواء وإن كان إجماع الأمة الذين أمر من شذ منهم بالرجوع إليهم وترك الخروج عن سبيلهم يغني عن الدليل في ذلك قوله عليه السلام. . . الاستذكار ۱/٣۰۲–٣۰٣
“ফরয রোযার মত ফরয নামাযও সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে কাযা করতে হয়। এ ব্যাপারে যদিও উম্মতের ইজমাই যথেষ্ট দলীল, যার অনুসরণ করা ঐ সব বিচ্ছিন্ন মতের প্রবক্তাদের জন্যও অপরিহার্য ছিল: তারপরও কিছু দলিল উল্লেখ করা হল। যথা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী…..।
(আল ইসতিযকার-১/৩০২, ৩০৩)

চার মাযহাবে চার ইমামসহ প্রায় সকল মুজতাহিদ এ বিষয়ে একমত যে, ফরয নামায নির্ধারিত সময়ে আদায় করতে না পারলে পরে হলেও তা আদায় করতে হবে। ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দেওয়া কিংবা ওজরবশত ছেড়ে দেওয়া উভয় ক্ষেত্রের একই বিধান।

হানাফি মাযহাবের সুপ্রসিদ্ধ আলেম আল্লামা ইবনে নুজাইম রহ লিখেন-

فالاصل فيه ان كل صلاة فاتت عن الوقت بعد ثبوت وجودها فيه ،فإنه يلزم قضاؤها،سواء ترك عمدا أو سهوا أو بسبب نوم،وسواء كانت الفوائت قليلة أو كثيرة ،

‘এক্ষেত্রে মূলনীতি হল,প্রত্যেক ওই নামায ওয়াজিব হওয়ার পর যা ইচ্ছায় অনিচ্ছায়,ভুলক্রমে কিংবা নিদ্রায় যাওয়ার কারণে ছুটে গেছে এবং যথাসময়ে যা আদায় করা সম্ভবপর হয় নাই, তা কাযা করা অপরিহার্য।ছুটে যাওয়া নামায সংখ্যায় কম হোক বা বেশী। (আল-বাহরুর রায়েক-২/১৪১)

ইমাম মালেক রাহ বলেন,

حتي يأتي على جميع ما نسى أو ترك

যে ব্যক্তির অনেক নামায কাযা হয়েছে,সে তার সকল কাযা নামায পড়বে।এমনকি সে তার ভুলক্রমে বা স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেওয়া সকল নামাযেরই কাযা করবে।(আল-মুদাউওয়ানাতুল কুবরা-১/২১৫)

ইমাম শাফেয়ী এর মাযহাব হল-

(من فاتته) مكتوبة فأكثر (قضى) ما فاته بعذر أو غيره

যে ব্যক্তির এক বা একাধিক ফরয নামায ছুটে গেছে,তার জন্য তার ছুটে যাওয়া নামাযগুলোর কাযা করে নেয়া জরুরী।কোনো ওজরের কারণে ছুটে থাকুক বা বিনা ওজরে ছুটুক।ফাতহুল জাওওয়াদ-১/২২৩

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ এর একান্ত বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী অাল্লামা মরদাবী রাহ কাযা নামায সম্পর্কে হাম্বলী মাযহাবের ভাষ্যকে এভাবে লিখেন-

و من فاتته صلوات لزمه قضاؤها على الفور

যার অনেক নামায ছুটে গেছে তার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে এসব নামায কাযা করা ওয়াজিব। (আল-ইনসাফ-১/৪৪২)

স্বয়ং ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ থেকেও উমরী কাযার বর্ণনা পাওয়া যায়-

ومن عليه فائتة فعليه ان يبادر إلى قضاءها على الفور سواء فائته عمدا أو سهوا عند جمهور العلماء،كمالك وأحمد و أبي حنيفة و غيرهم،

‘ যে ব্যক্তির দায়িত্বে কোনো কাযা নামায রয়েছে,তার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ওই কাযা নামায আদায় করে নেয়া ওয়াজিব।সে ওই নামায ইচ্ছাকৃতভাবে কাযা করে থাকুক কিংবা ভুলক্রমে।এটিই জুমহুর ফুকাহা, ইমাম মালিক (রহ), ইমাম আহমদ (রহ), ইমাম আবু হানিফা (রহ) এর অভিমত। (ফাতাওয়া শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ-২৩/২৫৯)

অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের অভিমত হল যে, সে উক্ত নামাযকে কাযা করে নিবে, কাযা করার দরুণ তার পক্ষ থেকে সেই নামায আদায় হয়ে যাবে, যদিও সে এক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাযকে ছেড়ে দেওয়ার দরুণ গোনাহগার হবে। তবে তাওবাহ করে নিলে তার ঐ গোনাহও (ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দেওয়ার গোনাহ) মাফ হয়ে যাবে। (আল্লাহ ভালো জানেন) (ইবনে উছাইমিন-শরহুল মুমতি’-২/৮৮)

নামাযকে ছেড়ে দেওয়া অনেক বড় গুনাহ এবং মারাত্মক অন্যায়। এমন ব্যক্তির তাওবাহ করা ওয়াজিব। এমনকি অনেক উলামায়ে কেরাম একে কুফরি বলেও ফাতাওয়া প্রদান করেছেন।

ফাতহুল কাদীরে আল্লামা ইবনুল হুমাম র. লেখেন, ‘কেউ যদি আলস্যের কারণে ইচ্ছাকৃত নামাজ ছেড়ে দেয়, তবে তাকে নামাজ পড়ার আগ পর্যন্ত বন্দী করে রাখতে হবে। আর যদি অস্বীকার করে কিংবা অবজ্ঞাবশত হেলা করে তবে তাকে হত্যা করা হবে!
(ফাতহুল কাদীর-১/৪৯৭)

নামাযের কাযা আদায় করা ‘তাওবা’রই অংশ। কৃতকর্মের উপর অনুতপ্ত হওয়া, আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা , আগামীতে এ কাজ না করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প হওয়া এবং ছুটে যাওয়া নামাযসমূহ আদায় করা: এসব মিলেই ব্যাক্তির তাওবা পূর্ণ হবে। শুধুমাত্র তাওবাহ নামাযের জন্য বিকল্প হবে না। বরং তাওবাহর সাথে সাথে উমরী কাযাও করতে হবে।

কাযা নামায পড়া সংক্রান্ত আলোচনা

• ছুটে যাওয়া নামায সমূহের মধ্যে শুধুমাত্র ফরয এবং বিতির নামাযের কাযা করতে হবে। সুন্নতের কাযা করা জরুরী না। তবে কেউ করলে সমস্যা নেই। (ইমদাদুল ফাতাওয়া-১/৩৯৮)  
বিতর নামায আদায় করা ওয়াজিব। তাই এটি কাযা হয়ে গেলে পড়ে কাযা আদায় করতে হবে।
হাদিসে এসেছে,,
عن ابي سعيد، قال قال رسول الله ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ “‏ من نام عن الوتر او نسيه فليصل اذا اصبح او ذكره
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বিতর সালাত না পড়ে ঘুমিয়ে গেলো বা তা পড়তে ভুলে গেলো, সে যেন ভোরবেলা অথবা যখন তার স্মরণ হয় তখন তা পড়ে নেয়।
(ইবনে মাজাহ-হা/১১৮৮; মিশকাত-হা/১২৭৯; বুলুগুল মারাম-হা/৩৮৮; আবূ দাঊদ-হা/১৪৩১; আত্ তিরমিযী-হা/৪৬৫, ইবনু মাজাহ্-হা/১১৮৮, আহমাদ-হা/১১২৬৪, ১৪৩১)
.
فى تنوير الأبصار- وكذا حكم الوتر
وقال ابن عابدين، لأنه فرض عملى عنده (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب قضاء الفوائت-2/73، سعيد)

আল্লামা আলাউদ্দিন হাসক্বাফী রাহ আদ্দুরর্রুল মুখতার (২/৬৫) গ্রন্থে লিখেন,

 وَالْقَضَاءُ فِعْلُ الْوَاجِبِ بَعْدَ وَقْتِهِ، وَإِطْلَاقُهُ عَلَى غَيْرِ الْوَاجِبِ كَاَلَّتِي قَبْلَ الظُّهْرِ مَجَازٌ 

কা’যা শুধুমাত্র ওয়াজিব ফরযেরই হয়ে থাকে।ওয়াজিব ব্যতীত অন্য নামাযের ব্যাপারে (যেমন জোহরের কাবলিয়্যাহ সুন্নতকে পরে পড়া) কে রূপক অর্থে কা’যা বলা হয়।  

অতঃপর তিনি লিখেন (২/৬৬) :

(وَقَضَاءُ الْفَرْضِ وَالْوَاجِب ِوَالسُّنَّةِ فَرْضٌ وَوَاجِبٌ وَسُنَّةٌ) لَفٌّ وَنَشْرٌ مُرَتَّبٌ 

ফরযের কাযা ফরযই হবে,ওয়াজিবের কা’যাই ওয়াজিবই হবে এবং সুন্নতের কা’যা সুন্নতই হবে।  

ব্যখ্যায় আল্লামা শামী রাহ লিখেন,

 وفي ردالمحتار تحت قوله (وسُنَّةٌ) والسنة يوهم العموم كالفرض والواجب وليس كذلك، 

ইবারতে সুন্নত দ্বারা সকল সুন্নত উদ্দেশ্য নয়।বরং ঐ সুন্নত উদ্দেশ্য যা ওয়াক্তের ভিতরেই আদায় করা যায়। যেমন জোহরের সুন্নতে কাবলিয়্যাহ-কে ফরযের পরে পড়া।

গ্রহণযোগ্য ফেকহী কিতাব হেদায়া তে উল্লেখ করা হয়-

 وأما سائر السنن سواها فلا تقضى بعد الوقت وحدها واختلف المشايخ رحمهم الله تعالى في قضائها تبعا للفرض 

ওয়াক্ত চলে যাবার পর একাকী সুন্নতকে আর কা’যা করা হবে না। তবে মাশায়েখগণ ফরযের অনুগামী হিসেবে ফরযের সাথে সুন্নতকে কা’যা করা নিয়ে মতপার্থক্য করেন। (ইনায়া ব্যাখ্যাগ্রন্থে উল্লেখ করা হয়, কেউ বলেন পড়া যাবে, আবার কেউ বলেন পড়া লাগবে না।)-হেদায়া-১/৭২ 

• তবে সুন্নত বা নফল নামাজ আরম্ভ করার পর ভেঙে গেলে তা কাজা করা আবশ্যক। (সুরা মুহাম্মদ, আয়াত: ৩৩; তিরমিজি, হাদিস : ৬৬৭)

• যদি ফজরের সুন্নত ফজরের ফরজসহ কাজা হয়ে যায়, তবে সূর্য ঢলে যাওয়ার আগে আগে ফরজের সঙ্গে সুন্নতও কাজা করবে।

في حديث أبي قتادة رضي الله عنه «فَكَانَ أَوَّلَ مَنِ اسْتَيْقَظَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَالشَّمْسُ فِي ظَهْرِهِ، قَالَ: فَقُمْنَا فَزِعِينَ، ثُمَّ قَالَ: «ارْكَبُوا»، فَرَكِبْنَا فَسِرْنَا حَتَّى إِذَا ارْتَفَعَتِ الشَّمْسُ نَزَلَ،… ثُمَّ أَذَّنَ بِلَالٌ رضي الله عنه بِالصَّلَاةِ، فَصَلَّى رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ صَلَّى الْغَدَاةَ، فَصَنَعَ كَمَا كَانَ يَصْنَعُ كُلَّ يَوْمٍ» .رواه مسلم (681).

عن يحيى بن سعيد الأنصاري، قال: سمعت القاسم، يقول: «لو لم أصلهما حتى أصلي الفجر، صليتهما بعد طلوع الشمس» وإسناده حسن. رواه الطحاوي في شرح مشكل الآثار (10/ 329) وابن أبي شيبة (2/ 255)

فى موطا مالك- و حدثني عن مالك أنه بلغه أن عبد الله بن عمرفاتته ركعتا الفجر فقضاهما بعد أن طلعت الشمس موطا مالك-النداء للصلاة، باب ما جاء في ركعتي الفجر،رقم-422 , ورواه ابن أبي شيبة أيضا .
.
হযরত ইমাম মালেক রহ: বলেন, আমি জেনেছি যে, আবদুল্লাহ বিন ওমর রা: এর ফজরের দুই রাকাআত ছুটে গিয়েছিল। তিনি তা সূর্যোদয়ের পর আদায় করেন।
(মুয়াত্তা মালিক-হা/২৭৯)
.
وفى جامع الترمذى- عن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من لم يصل ركعتي الفجر فليصلهما بعد ما تطلع الشمس (جامع الترمذى- أبواب الصلاة عن رسول الله صلى الله عليه و سلم، باب ماجاء في إعادتهما بعد طلوع الشمس،رقم-423)
.
হযরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত যে, নবীজি সা: বলেন-যে ফজরের দুই রাকআত সুন্নত (সময়মতো) পড়ল না সে যেন সূর্যোদয়ের পর তা আদায় করে।
(জামে তিরমিজী-১/৯৬; সুনান আদ দারাকুতনী-হা/১৪০৬, ১৪০৮)
.
حدثنا مسدد، حدثنا يحيى، عن ابن جريج، حدثني عطاء، عن عبيد بن عمير، عن عائشة، – رضى الله عنها – قالت ان رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن على شىء من النوافل اشد معاهدة منه على الركعتين قبل الصبح
.
আয়শা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) ফজরের নামাযের পূর্বে দুই রাকাত(সুন্নাত) নামায আদায়ের ব্যপারে যে কঠোর নিয়মানুবর্তিতা পালন করেছেন তা অন্য কোন নামাযের (সুন্নাত বা নফল) ব্যাপারে পালন করেন নি।
(আবু দাউদ-হা/১২৫৪; মিশকাত-হা/১১৬৩)

, لا تقضى راتبة الفجر إلا إذا فاتت مع الفرض: وهو مذهب الأحناف

قال ابن نجيم في البحر الرائق (2/ 131) : (قوله ولم تقض إلا تبعاً) أي لم تقض سنة الفجر إلا إذا فاتت مع الفرض فتقضى تبعاً للفرض سواء قضاها مع الجماعة أو وحده… فأفاد المصنف أنَّها لا تقضى قبل طلوع الشمس أصلاً ولا بعد الطلوع إذا كان قد أدى الفرض… وقيد بسنة الفجر لأنَّ سائر السنن لا تقضى بعد الوقت لا تبعاً ولا مقصوداً واختلف المشايخ في قضائها تبعا للفرض في الوقت والظاهر قضاؤها وأنَّها سنة لاختلاف الشيخين في قضاء الأربع قبل الظهر قبل الركعتين أو بعدهما.

وانظر: فتح القدير (1/ 417) ومنية المصلي ص:(254) وتبيين الحقائق (1/ 453).

والقول القديم للشافعي . انظر: الحاوي (2/ 288) ونهاية المطلب (2/ 344) والعزيز (2/ 138) والمجموع (4/ 42)

قال الإمام محمد بن صالح العثيمين-رحمه الله تبارك وتعالى- (ت 1421هـ):
*” ثبت من حديث أبي هريرة وأبي قَتادة في قِصَّة نوم النبي صلَّى الله عليه وسلَّم وأصحابه وهم في السَّفر عن صلاة الفجر، حيث صلَّى راتبةَ الفجر أولًا، ثم الفريضة ثانيًا.*

দুপুরের চার রাকাআত সুন্নত পড়তে না পারলে তা ফরজ নামাজ আদায়ের পরও পড়ে নেয়া যায়। জোহরের ফরজ নামাজের পর যে দুই রাকাআত সুন্নাত আছে তা ফরজ নামাজ আদায়ের পর ৪ রাকাআত সুন্নাতে মুয়াক্কাদার আগেও পড়া যায় এবং পরেও পড়া যায়। তবে জোহরের ওয়াক্ত চলে গেলে জোহরের আগের এবং পরে ৪ ও ২ রাকাআত সুন্নাতের কাজা ওয়াজিব হবে না।

روى الترمذي في سننه قال حدثنا عبد الوارث بن عبيد الله العتكي المروزي قال أخبرنا عبد الله بن المبارك عن خالدا لحذاء عن عبد الله بن شقيق عن عائشة أن النبي صلى الله عليه وسلم كان إذا لم يصل أربعا قبل الظهر صلاهن بعدها .

قال الترمذي: هذا حديث حسن غريب إنما نعرفه من حديث ابن المبارك من هذا الوجه . ورواه قيس بن الربيع عن شعبة عن خالد الحذاء نحو هذا ولانعلم أحد رواه عن شعبة غير قيس بن الربيع . وقد روي عن عبد الرحمن بن أبي ليلى عن النبي صلى الله عليه وسلم نحو هذا ….

وفي رد المحتار– لكن لما كان القضاء خاصا بما كان مضمونا والنفل لا يضمن بالترك اختص القضاء بالواجب ، ومنه ما شرع فيه من النفل فأفسده فإنه صار بالشروع واجبا فيقضى ، وبهذا ظهر أن الأداء يشمل الواجب والمندوب ، والقضاء يختص بالواجب (رد المحتار- كتاب الصلاة، باب قضاء الفوائت، مطلب فى ان الأمر يكون بمعنى اللفظ ، وبمعنى الصفة-2/519)
.
وفيه ايضا- ( بخلاف سنة الظهر ) وكذا الجمعة ( فإنه ) إن خاف فوت ركعة ( يتركها ) ويقتدي ( ثم يأتي بها ) على أنها سنة ( في وقته ) أي الظهر ( قبل شفعه ) عند محمد ، وبه يفتى جوهرة (رد المحتار- كتاب الصلاة، باب ادراك الفريضة- 2/512-513

أمَّا إذا تركها عمدًا حتى فات وقتُها، فإنه لا يقضيها، ولو قضاها لم تصحَّ منه راتبةً؛ وذلك لأنَّ الرواتب عبادات مؤقَّتة، والعبادات المؤقتة إذا تعمَّد الإنسان إخراجها عن وقتها لم تُقبل منه . (الشرح الممتع 74-72/4)

• একদিনে যত দিনের ইচ্ছে কাযা আদায় করা যাবে। কোন সমস্যা নেই।

• প্রত্যেক দিনের  কাযা  হয় মাত্র  ২০  রাকাত।  ফজরের  ২  রাকাত, জোহরের   ৪ রাকাত,  আছরের ৪  রাকাত,  মাগরিবের ৩ রাকাত,  ইশার  ৪ রাকাত এবং বিতরের ৩ রাকাত মিলে মোট ২০ রাকাত।

• যদি কেউ জুমআ’র নামাজ কোনো কারণে আদায় করতে না পারে তবে জুমার নামাজের পরিবর্তে ঐ ওয়াক্তে সম্ভব হলে জোহরের ৪ রাকাআত নামাজ পড়ে নিবে। আর ওয়াক্ত চলে গেলেও ৪ রাকাআত জোহর আদায় করবে। জুমা পড়তে না পারলে চার রাকাত জোহার কাজা পড়তে হবে।

• যদি সফর  অবস্থায়  কাযাকৃত   নামায ইকামত  (স্থায়ী  বসবাসকালীন)  অবস্থায় পড়ে  দেয়ার ইচ্ছা করেন তাহলে কসরই পড়তে হবে। আর ইকামত   অবস্থায় কাযাকৃত নামায সফরকালীন  সময়ে  আদায়  করলে সম্পূর্ণ  নামাযই  পড়তে হবে। কসর পড়া  যাবে  না।  (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১২১ পৃষ্ঠা)

আর সফর থেকে ফিরে মুকিম সীমানায় আসার পর নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করতে না পারলে ঐ নামাজের ‘কাজা’ আদায়ের ক্ষেত্রের পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে।

• কাযা নামায আদায়ের  জন্য  নির্দিষ্ট  কোন সময় সীমা নেই। যখনই  আদায় করা হবে  তখনই দায়িত্ব  থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। কিন্তু সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও  দ্বিপ্রহর এ তিন  সময়ে   নামায আদায়  করা যাবে না।     কেননা, উক্ত  সময়গুলোর  মধ্যে নামায আদায়  করা জায়েয নেই।  (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ৫২ পৃষ্ঠা)

• এই তিনটি সময় হল-

في حديث عمرو بن عبسة رضي الله عنه «صَلِّ صَلَاةَ الصُّبْحِ، ثُمَّ أَقْصِرْ عَنِ الصَّلَاةِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ حَتَّى تَرْتَفِعَ، فَإِنَّهَا تَطْلُعُ حِينَ تَطْلُعُ بَيْنَ قَرْنَيْ شَيْطَانٍ، وَحِينَئِذٍ يَسْجُدُ لَهَا الْكُفَّارُ، ثُمَّ صَلِّ فَإِنَّ الصَّلَاةَ مَشْهُودَةٌ مَحْضُورَةٌ حَتَّى يَسْتَقِلَّ الظِّلُّ بِالرُّمْحِ، ثُمَّ أَقْصِرْ عَنِ الصَّلَاةِ، فَإِنَّ حِينَئِذٍ تُسْجَرُ جَهَنَّمُ، فَإِذَا أَقْبَلَ الْفَيْءُ فَصَلِّ، فَإِنَّ الصَّلَاةَ مَشْهُودَةٌ مَحْضُورَةٌ حَتَّى تُصَلِّيَ الْعَصْرَ، ثُمَّ أَقْصِرْ عَنِ الصَّلَاةِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ، فَإِنَّهَا تَغْرُبُ بَيْنَ قَرْنَيْ شَيْطَانٍ، وَحِينَئِذٍ يَسْجُدُ لَهَا الْكُفَّارُ» رواه مسلم (832).

১. সূর্য উঠার থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত, (নামাজের ক্যলেন্ডার দেখে নিবেন)

২. যাওয়ালের সময়, সূর্য যখন ঠিক মাঝখানে আসে তখন থেকে যোহর এর ওয়াক্ত শুরু হওয়ার ১০ মিনিট আগ পর্যন্ত, (নামাজের ক্যলেন্ডার দেখে নিবেন)

৩. সূর্য অস্ত যাওয়ার ১০ মিনিট আগ থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। (নামাজের ক্যলেন্ডার দেখে নিবেন)

• ফজর এবং আছরের নামাযের পর কাযা নামায পড়া যাবে। তবে নফল পড়া যাবে না বরং মাকরুহ হবে। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ-৪/২৪৪) 

• এমন  অসুস্থ ব্যক্তি যে  ইশারায়  নামায আদায় করতে পারছে না। তার এ  অবস্থা   যদি  একাধারে   ছয়  ওয়াক্ত নামাযের  সময়   পর্যন্ত থাকে, তাহলে এমন অসুস্থ অবস্থায় তার যে সব নামায  ছুটে গিয়েছে  তার  কাযা ওয়াজীব  হবে  না। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১২১ পৃষ্ঠা)

• যে  ব্যক্তি (আল্লাহর পানাহ) ধর্মদ্রোহী হয়ে  গেছে   অতঃপর  পুনরায়  ইসলাম    ধর্ম    গ্রহণ করেছে,  তার উপর ধর্মদ্রোহীতা কালীন  নামায সমূহ  কাযা আদায়   করা   আবশ্যক  নয়।  তবে মুরতাদ হওয়ার পূর্বে ইসলাম ধর্মে থাকা কালীন সময়ে যে নামাযগুলো সে পড়েনি, তা  (ওয়াজীব)  অবশ্যই  তাকে  কাযা আদায়করে দিতে  হবে।  (রদ্দুল মুহতার,  ২য়  খন্ড,৬৪৭ পৃষ্ঠা)

“উমরী কাযা” নামায আদায় করার পদ্ধতি

উমুরী কাযা নামায আদায় করতে হলে প্রথমে কোন ওয়াক্ত নামায কত রাকাত কাযা হয়েছে তা নির্ণিত করে নিতে হবে। আপনি আপনার বালেগ হতে আজ পর্যন্ত কত মাসের নামাজ আদায় করেননি, সেইটা হিসাব করবেন।
.
যদি তা জানা সম্ভব না হয়। তাহলে অনুমান করে নিবে। অনুমান করে কোন নামায কত ওয়াক্ত কাযা করেছে তা নির্ধারণ করে নিবে। তারপর একে একে তা আদায় করবে। এই ক্ষেত্রে আপনি গভীর ভাবে অনুমান করে সেইটা বের করবেন, সেই অনুযায়ী নামাজ আদায় করে দিলে ইনশাআল্লাহ আপনার এই ফরজ আদায় হয়ে যাবে।

আপনি চাইলে ক্বাযা নামাজ ধারাবাহিক ভাবে আদায় করতে পারেন (যেমন- ফজর,যোহর,আছর এভাবে) অথবা প্রথমে শুধু ফজর পড়বেন, তারপর যোহর এর ক্বাযা গুলো পড়বেন এইভাবে৷ কতদিন এর ক্বাযা নামাজ পড়া হয়ে গেছে সেইটা অবশ্যই কোন খাতায় নোট করে রাখবেন।

যেমনঃ ফজরের নামায ১০০ ওয়াক্তের কাযা হয়েছে।

“উমরী কাযা” নামায আদায় করার সময় এভাবে নিয়ত করবে,

আমার যত ফজরের নামায কাযা আছে, তার প্রথম ফজরের কাযা আদায় করছি”
.
তারপর যিম্মায় ৯৯ ওয়াক্তের ফজরের নামায বাকি থাকে। তবু এভাবেই নিয়ত করবে যে, আমার যত ফজরের নামায কাযা আছে, তার প্রথম ফজরের নামাযের নিয়ত করছি”।

এভাবে হিসেবে করে পড়তে থাকবে। প্রত্যেক নামাযে এভাবেই   নিয়্যত  করবে।

প্রতিবার প্রথম ফজর নামায বলার দ্বারা যে নামায বাকি আছে, তার প্রথম নামাযের নিয়ত হচ্ছে, তাই নিয়তটি নির্দিষ্ট নামাযের হয়ে যায়।
.
ঠিক উল্টোভাবেও করা যায়। অর্থাৎ যত নামায কাযা আছে তার সর্বশেষ অনাদায়কৃত কাযার নিয়ত করছি। এভাবেও পূর্বোক্ত পদ্ধতিতে বাকি নামাযের কাযা আদায় করা যাবে।
এভাবে বাকি নামায আদায় করবে। যোহর, আছর, মাগরিব, ইশাও এভাবে আদায় করবে।
একদিনে একাধিক চারদিন পাঁচদিনের, যত দিনের ইচ্ছে কাযা আদায় করা যাবে। কোন সমস্যা নেই। (রদ্দুল মুহতার-২/৫৩৮)

وفى الدر المختار- كَثُرَتْ الْفَوَائِتُ نَوَى أَوَّلَ ظُهْرٍ عَلَيْهِ أَوْ آخِرَهُ،

وقال ابن عابدين الشامى – (قَوْلُهُ كَثُرَتْ الْفَوَائِتُ إلَخْ) مِثَالُهُ: لَوْ فَاتَهُ صَلَاةُ الْخَمِيسِ وَالْجُمُعَةِ وَالسَّبْتِ فَإِذَا قَضَاهَا لَا بُدَّ مِنْ التَّعْيِينِ لِأَنَّ فَجْرَ الْخَمِيسِ مَثَلًا غَيْرُ فَجْرِ الْجُمُعَةِ، فَإِنْ أَرَادَ تَسْهِيلَ الْأَمْرِ، يَقُولُ أَوَّلَ فَجْرٍ مَثَلًا، فَإِنَّهُ إذَا صَلَّاهُ يَصِيرُ مَا يَلِيهِ أَوَّلًا أَوْ يَقُولُ آخِرَ فَجْرٍ، فَإِنَّ مَا قَبْلَهُ يَصِيرُ آخِرًا، وَلَا يَضُرُّهُ عَكْسُ التَّرْتِيبِ لِسُقُوطِهِ بِكَثْرَةِ الْفَوَائِتِ. (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب قضاء الفوائت-2/538

ফতোওয়ায়ে শামীতে বর্ণিত আছে: কাযা নামায আদায়  করা নফল  নামায আদায়  করা থেকে  উত্তম  এবং  গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু   সুন্নাতে  মুয়াক্কাদা, চাশতের নামায,   সালাতুত  তাসবীহ  এবং ঐ  নামায যেগুলোর ব্যাপারে  হাদীসে  মোবারকায় বর্ণিত  আছে। যেমন- তাহাইয়াতুল      মসজিদ,  আসরের প্রথম  চার  রাকাত    (সুন্নাতে গাইর  মুয়াক্কাদা) এবং  মাগরিবের  পরে ছয় রাকাত  আদায় করতে  হবে। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড,  ৬৪৬ পৃষ্ঠা)

অতীতে যে নামাজগুলো ভালোভাবে মনোযোগ দিয়ে আদায় করতে পারেন নাই, এখন এ নামাজগুলোর ক্বাযা নাই। বরং এক্ষেত্রে দায়িত্ব হল সে নামাজগুলোর কাযা না করে বেশী বেশী করে নফল নামায পড়বে।

হাদীসে উল্লেখ হয়েছে-

কেয়ামতের দিন মানুষের সর্বপ্রথম যে আমলের হিসাব নেওয়া হবে তা হল নামায। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, তোমরা আমার বান্দার ফরয নাময দেখো। সে পূর্ণরূপে তা আদায় করেছে, নাকি তা আদায়ে কোনো ত্রুটি করেছে? যদি পূর্ণরূপে আদায় করে থাকে তবে তার জন্য পূর্ণ নামাযের ছওয়াব লেখা হবে। আর আদায়ে কোনো ত্রুটি করে থাকলে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, দেখ, আমার বান্দার নফল নামায আছে কি না? যদি থাকে তবে এর দ্বারা তার ফরয নামায আদায়ে যে ত্রুটি হয়েছে তা পূর্ণ করে দাও। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৮৬৪)

উক্ত হাদীসে ‘কারো ফরয নামায কম পড়ে গেলে নফল দ্বারা তা পূর্ণ করা হবে’- এ কথা নেই; রবং এতে রয়েছে, আদায়কৃত নামাযে ত্রুটির বিষয়। (ফয়যুল কাদীর ৩/৮৭; ইতহাফু সাদাতিল মুত্তাকীন ৩/১১; আলফাতহুর রববানী ১/১৮২)

قوله صلى الله عليه وسلم: “عليك بكثرة السجود ، فإنك لا تسجد لله سجدة إلا رفعك بها درجة ، وحط بها عنك خطيئة” رواه مسلم

মনে রাখবেন, শরীয়তের দৃষ্টিতে ছেলেদের বালেগ হওয়ার বয়স (১২ থেকে ১৫) বছর এবং মেয়েদের বালেগ হওয়ার বয়স (৯ থেকে ১৫) বছর। ছেলেদের বালেগ হওয়ার পরিচয় হল স্বপ্নদোষ হলে অর্থাৎ স্বপ্নযোগে বীর্যপাত হলে তখন হতেই ছেলেকে বালেগ ধরতে হবে। মেয়েদের বালেগা হওয়ার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরিচয় হল, হায়েজ বা ঋতুস্রাব অথবা স্বপ্নদোষ হওয়া। والله تعالى اعلم

উত্তর প্রদান

মুফতী মাসূম বিল্লাহ

সিনিয়র মুহাদ্দিছ ও মুফতী,

জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম ঢাকা (মসজিদুল অকবার কমপ্লেক্স) মিরপুর-১, ঢাকা।

ও উস্তাযুল ফিকহ ওয়াল ইফতা,

মারকাযুল বুহূস আল-ইসলামিয়া ঢাকা।

খতীব,

আল মদীনা মসজিদ, ইস্টার্ন হাউজিং, রূপনগর, মিরপুর, ঢাকা।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *