আত্মহত্যার শাস্তি কী, সে কি কখনো জান্নাতে যাবে ?

By | July 6, 2021

প্রশ্ন:
ক) আত্মহত্যার শাস্তি কী?সে কি কখনো জান্নাতে যাবে ?

উত্তর: وبالله سبحانه التوفيق

রাসুল (সাঃ) আত্মহত্যাকারী জানাযার সালাত পড়েন নাই। আত্মহত্যা এতই গর্হিত কাজ যে, এর প্রতি ধিক্কার জানিয়ে অন্যদেরকে এ থেকে সতর্ক করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আত্মহত্যাকারীর জানাযা ত্যাগ করেন। যেমনঃ

জাবের বিন সামুরা থেকে বর্ণিতঃ

‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমীপে এক ব্যক্তিকে আনা হলো যিনি নিজেকে তরবারীর ফলা দিয়ে মেরে ফেলেছে। ফলে তিনি তার জানাযা পড়লেন না।’ — মুসলিমঃ ২৩০৯।

অপর বর্ণনায় রয়েছে,

জাবের বিন সামুরা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ

‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক সাহাবী আহত হন। এটি তাকে প্রচণ্ড যন্ত্রনা দেয়। তখন তিনি হামাগুড়ি দিয়ে একটি শিংয়ের দিকে এগিয়ে যান, যা তার এক তরবারির মধ্যে ছিল। এরপর তিনি এর ফলা নেন এবং আত্মহত্যা করেন। এ কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযা পড়ান নি।’ — তাবরানীঃ ১৯২৩।

অনেকে সমাজে অনেকে মনে করেন কেউ আত্মহত্যা করলে তার বুঝি জানাযা পড়া যাবে না। উপরের হাদীসটিও কেউ প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন। তাদের এ ধারণা সঠিক নয়।

কারণ এ হাদীসের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ ইমাম নববী (রহিঃ) বলেছেনঃ

‘উপরের হাদীসকে তাঁরা প্রমাণ হিসেবে পেশ করেন, মানুষকে সতর্ক করার জন্য যারা আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়া হবে না বলে মত দেন। এটি উমর বিন আব্দুল আযীয ও আওযাঈ রহ.-এর মত। তবে হাসান বছরী, ইবরাহীম নখঈ, কাতাদা, মালেক, আবূ হানীফা, শাফেঈ ও সকল আলিমের মতামত হলো, তার জানাযা পড়া হবে।

উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় তাঁরা বলেছেনঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূলতঃ অন্যদেরকে এ ধরনের মন্দ কাজ থেকে সতর্ক করার জন্যই আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়ানো থেকে বিরত থেকেছেন। আর সাহাবীগণ তাঁর স্থলে এমন ব্যক্তির জানাযা পড়েছেন। — নববী, শারহু মুসলিমঃ ৭/৪৭।

হযরত ইমরান রাহ. বলেন,

سَأَلْتُ إبْرَاهِيمَ النَّخَعِيّ عَنْ إنْسَانٍ قَتَلَ نَفْسَهُ أَيُصَلَى عَلَيْهِ؟ قَالَ : نَعَمْ , إنَمَا الصَّلاَةُ سُنَّةٌ.

আমি ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-কে জিজ্ঞেস করলাম, আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়া যাবে কি? তিনি বললেন, হাঁ, নামায পড়াটাই নিয়ম। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১১৯

তাই গণ্যমান্য আলেম ও বিশেষ ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের জন্য করণীয় হলো আত্মহত্যাকারীর জানাযা না পড়ানো। বরং সাধারণ কাউকে দিয়ে তাদের জানাযা পড়িয়ে দেয়া। এ সূত্র ধরেই আমাদের সমাজে উচ্চ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আলেমের স্থলে অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আলেম দ্বারা আত্মহত্যাকারীর জানাযার সালাত পড়ানো হয়।

যেন অন্যরা তা দেখে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকে।

জাবের ইবনে সামুরা রা. থেকে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি ধারালো বস্তু দিয়ে আত্মহত্যা করল। তার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন

أَمَا أَنَا فَلَا أُصَلِّي عَلَيْهِ.

আমি এর জানাযা পড়ব না। (সুনানে কুবরা, নাসাঈ, হাদীস ২১০২)

— ফতোয়ায়ে শামি : খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১০৮, শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৯১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫১২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৭; ফাতহুল মুলহিম ২/৫১২

সে কি কখনো জান্নাতে যাবে ?

কোনো ঈমানদার ব্যক্তি যদি আত্মহত্যা করে তবে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামি বলতে দীর্ঘ সময় জাহান্নামের সাজা ভোগ করবে। অতপর সে গুনাহ থেকে পবিত্র হবার পর তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের বিশ্বাস মতে সে চির জাহান্নামী হবে না।

অবশ্য কেউ যদি নিজের গুনাহকে বৈধ মনে করে বা আল্লাহর বিধানের সঙ্গে কুফরীবশত গুনাহ করে বা বৈধ মনে করে আত্মহত্যা করে তবে সবার মতে, জাহান্নামই তার স্থায়ী ঠিকানা। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন।

একমাত্র কাফেররাই শুধু জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে। আল্লাহতে অবিশ্বাসী মুশরিক কাফেররাই শুধু জাহান্নামে চিরকাল থাকবে। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনীত দ্বীনকে যারা অস্বীকার করেছে।

আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন,

‘নিশ্চয় আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক বা অংশীদার স্থাপন করেছে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থাপন করে সে মারাত্মক পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১১৬)

আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে এ কথা বলেননি যে, আত্মহত্যাকারীকে ক্ষমা করা হবে না। বরং বলেছেন শিরককারী ব্যক্তি যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন।

আর আত্মহত্যা শিরক নয়। কেউ যখন নিজেকে হত্যা করে তখন সে নিজেকে মূলতঃ আল্লাহর গজব ও ক্রোধের শিকারে পরিণত করে। সে আল্লাহর ইচ্ছাধীন।

তেমনি যিনা, চুরি, মদ্য পান- সবকিছুই গুনাহ বটে। তবে তা শিরক নয়। এসবে লিপ্ত ব্যক্তি আল্লাহর ইচ্ছাধীন থাকবে।

কেউ যখন এসব গুনাহে লিপ্ত হয়ে মারা যাবে আল্লাহ চাইলে তাকে ক্ষমা করবেন- তার নেক কাজগুলোর বদৌলতে কিংবা ইসলামে বিশ্বাসের ভিত্তিতে। আর তিনি চাইলে তাকে তার অপরাধ অনুপাতে তাকে শাস্তি দেবেন। অতপর সে গুনাহ থেকে পবিত্র হবার পর তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের বিশ্বাস মতে সে চির জাহান্নামী হবে না। কোনো গুনাহগারই অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে না। খুনী, মদ্যপ কিংবা অন্য কোনো অপরাধীও নয়। কিন্তু ওপরে যেমন বলা হলো, আল্লাহ চাইলে তাকে শাস্তি দেবেন, তার অপরাধ অনুযায়ী তাকে আজাব দেবেন তারপর তাকে জাহান্নাম থেকে বের করবেন।

আবু হুরায়রা (রাদিঃ) হ’তে বর্ণিত হাদীসে এসেছে যেঃ

‘কেউ আত্মহত্যা করলে সে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে।’ মুসলিমঃ ১০৯।

সহীহ মুসলিমের ভাষ্যকার ইমাম নববী (রহিঃ) উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ

এখানে خالدًا مخلدًا এর মর্ম হ’ল সুদীর্ঘকাল ও অধিককাল, চিরস্থায়ী নয়। – মুসলিমঃ শরহ নববীঃ ২/১২৫, ১১৩-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ।

অর্থাৎ দীর্ঘকাল সে জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে এবং পরে জান্নাতে যাবে। আর চিরস্থায়ী শাস্তি ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য, যে আত্মহত্যাকে হালাল বলে বিশ্বাস করে। এরূপ বিশ্বাস করার কারণে সে কাফের হয়ে যাবে। আর কাফের নিঃসন্দেহে চিরস্থায়ী জাহান্নামী। অতএব, উভয় হাদীসের মধ্যে কোন বিরোধ নেই।

আত্মহত্যার ধরণ ও ঘটনার বর্ণনা এবং এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি শাস্তি সম্পর্কে হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভিন্ন ভিন্নভাবে তা উল্লেখ করে বর্ণনা করেন-

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামেও তার সেই যন্ত্রণাকে অব্যাহত রাখা হবে। আর যে ব্যক্তি ধারালো কোনো কিছু দিয়ে আত্মহত্যা করবে, তার সেই যন্ত্রণাকেও জাহান্নামে অব্যাহত রাখা হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৪৬)

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে সে দোজখে অনুরূপভাবে নিজ হাতে ফাঁসির শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। আর যে বর্শার আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে- দোজখেও সে সেভাবে নিজেকে শাস্তি দেবে। আর যে নিজেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, কিয়ামতের দিন সে নিজেকে উপর থেকে নিক্ষেপ করে হত্যা করবে।’ [ইবন হিব্বান : ৫৯৮৭; তাবরানী : ৬২১]

জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের পূর্বেকার এক লোক আহত হয়ে সে ব্যথা সহ্য করতে পারেনি। তাই একটি চাকু দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে ফেলে। এরপর রক্তক্ষরণের কারণে মারা যায়। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়ো করে ফেলেছে। তাই আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ (বুখারি, হাদিস : ৩২৭৬; মুসলিম, হাদিস : ১১৩)

ছাবিত বিন জিহাক (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন : ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো বস্তু দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন তাকে সে বস্তু দিয়েই শাস্তি প্রদান করা হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭০০; মুসলিম, হাদিস : ১১০)

উল্লেখিত হাদিসের আলোকে বুঝা যায়,

দুনিয়াতে মানুষ যে পদ্ধতিতে আত্মহত্যা করবে, পরকালে চিরস্থায়ী জাহান্নামে দুনিয়ার সেই একই পদ্ধতিতে শাস্তি ভোগ করতে থাকবে।

যদি কোনো ঈমানদার ব্যক্তি আত্মহত্যা করে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে এটা হতে পারে না। হাদিসে চিরকাল বলে যে শব্দ خالدا مخلدا ব্যবহার করা হয়েছে, তার দ্বারা উদ্দেশ্য হবে দীর্ঘকাল বা লম্বা সময়।

তবে চিরস্থায়ী জাহান্নামী কেবল সে ব্যক্তি যে বা যারা ইসলামে বিশ্বাস স্থাপন করেনি। তারা এমনিতেই জাহান্নাম। আর জাহান্নামে তারা যে হালতে আত্মহত্যা করবে সে হালতেই জাহান্নামে তাদের সময় অতিবাহিত হবে।

বিশেষ করে,আত্মহত্যা করা কবিরা গোনাহ। আর কবিরা গোনাহ তাওবার দ্বারা মাফ হয়। কিন্তু আত্মহত্যাকারীর জন্য যদিও তাওবার সুযোগ নেই। তাওবা করতে না পারলেও আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করলে ঈমানদার হওয়ার কারণে দীর্ঘ শাস্তি ভোগের পর নিজ রহমতে আত্মহত্যাকারীকেও মাফ করে দিতে পারেন।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈমানদার ব্যক্তির ব্যাপারে হাদিসে পাকে বর্ণনা করেন-

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমাণ ঈমান থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। আবার যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে আর তার অন্তরে একটি অনু পরিমাণ নেকি থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে।’ (বুখারি, মুসলিম, ইবনে মাজাহ, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ, ইবনে আবি শায়বা, কানজুল উম্মাল)

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিস থেকেও প্রতিয়মান হয় যে, যদি কোনো ঈমানদার আত্মহত্যা করে তবে তাদের হাদিসের ভাষায় ‘চিরকাল’ বলতে দীর্ঘ সময় জাহান্নামের শাস্তি ভোগের পর আল্লাহর রহমতে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাত দান করা হবে।

তবে শুধু খারেজী ও মুতাজিলা সম্প্রদায় মনে করে আত্মহত্যাকারী চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। তাদের মতে গুনাহগার ব্যক্তিরাও চির জাহান্নামী।এ দু’টি দলই ভ্রান্ত ফেরকা। এটি তাদের ভ্রান্ত মত।

কেননা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত তথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীবৃন্দ এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত তাঁর আদর্শ অনুসারীদের মত হলো, গুনাহগার ব্যক্তিরা চির জাহান্নামী হবে না।

কারণ গুনাহগার মাত্রেই সে নিজেকে অপরাধী ভাবে। বরং শয়তানের প্ররোচনায় বা প্রবৃত্তির তাড়নায় সে গুনাহে জড়িয়ে পড়ে। তাই সে অনন্তকাল জাহান্নামী হবে না। বরং আল্লাহ চাইলে তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে তার ঈমানের বদৌলতে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।অন্যথায় তাকে তার সাজা ভোগ করার পর জাহান্নাম থেকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।আর এ ব্যাপারে হাদীসের কোন অভাব নেই যে মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করবে অতপর সাজা খেটে সেখান থেকে জান্নাতে দাখিল হবে।

অবশ্য কেউ যদি নিজের গুনাহকে বৈধ মনে করে বা আল্লাহর বিধানের সঙ্গে কুফরীবশত গুনাহ করে বা বৈধ মনে করে আত্মহত্যা করে তবে সবার মতে, জাহান্নামই তার স্থায়ী ঠিকানা। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন।

আত্মহত্যার মত এই জঘন্য পাপটি বেশীর ভাগ ঘটতে দেখা যায় বিধর্মীধের মাঝে।

কারণ তারা মনে করে, এই দুনিয়াই তাদের প্রথম এবং শেষ, পরকালে তারা আদৌ বিশ্বাসী নয়। পরকালীন আযাব ও গযবের প্রতিও তাদের মোটেই ঈমান নেই। তারা ভাবে আত্মহত্যার মাধ্যমে তারা দুনিয়ার ঝামেলা ও প্রতিকুল অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে গেল। অথচ তারা এর মাধ্যমে নিজেকে আরো কঠিন শাস্তির দিকে ঠেলে দেয়, যদিও তারা কাফের হওয়ার জন্য অনুধাবন করতে পারেনা। অবশ্য কাফেরদের ক্ষেত্রে এমনটি হওয়া কোন বিচিত্র ব্যাপার নয়। কারণ, তারা হল অপরিণামদর্শী।

তাদেরকে আল্লাহ “চতুস্পদ জন্তু তুল্য” বলে আক্ষা দিয়েছেন, বরং তাদেরকে ঐ সব চতুস্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট বলেছেন। — সূরা আরাফঃ আয়াতঃ ৭:১৭৯।

সর্বোপরি কথা হলো,

আত্মহত্যা করা দুনিয়ার সবচেয়ে বড় শাস্তি ও ইসলামি শরিয়তে মারাত্মক বড় অপরাধ, কবীরা গুনাহ। শিরকের পর সবচে বড় গুনাহ।

সকল ফিকহবিদ এবং চার মাজহাবেই আত্মহত্যা হারাম।

কারণ, আল্লাহ তা’আলা মানুষকে মরণশীল হিসেবেই সৃষ্টি করেছেন। ধনী-গরীব, বিদ্বান-মূর্খ, রাজা-প্রজা সবাইকে মরতেই হবে।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, كُلُّ نَفۡسٖ ذَآئِقَةُ ٱلۡمَوۡتِۖ ثُمَّ إِلَيۡنَا تُرۡجَعُونَ [العنكبوت: ٥٧]

‘প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে, তারপর আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ {সূরা আল-আনকাবূত, আয়াত : ৫৭}

আর এ মৃত্যু দান করেন একমাত্র তিনিই। তিনি ছাড়া কেউ কাউকে মৃত্যু দিতে পারে না।

আল্লাহ তা’আলা বলেন, هُوَ يُحۡيِۦ وَيُمِيتُ وَإِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ [يونس : ٥٦]

‘তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান আর তাঁর কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন হবে।’ {সূরা ইউনুস, আয়াত : ৫৬}

উপরোক্ত আয়াতদুটি থেকে বুঝা যায় মানুষের মৃত্যু ঘটানোর কাজটি একমাত্র আল্লাহর। অতএব কেউ যদি কাজটি নিজের হাতে তুলে নেন, নিজের মৃত্যু ঘটান নিজের হাতে তবে তিনি অনধিকার চর্চাই করবেন। আল্লাহ তা পছন্দ করেন না। কেউ অনধিকার চর্চা প্রত্যাশা করে না। ইসলামে তাই আত্মহত্যাকে মহাপাপ বলে গণ্য করা হয়েছে।

এ কাজ থেকে বিরত থাকতে মহান আল্লাহ বিশেষভাবে নির্দেশ দান করেছেন এবং এর পরিণামের কথা ভাববার জন্য কঠোর ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির বর্ণনা দিয়ে মহা পবিত্র আল কুরআনে আয়াত অবতীর্ণ করেছেন।

আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন,

وَلَاتَقۡتُلُوٓاْأَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ عُدۡوَٰنٗاوَظُلۡمٗا فَسَوۡفَ نُصۡلِيهِ نَارٗاۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرًا [النساء : ٢٩،٣٠]

‘আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। এবং যে কেউ জুলুম করে, অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্যই আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করবো, আল্লাহরপক্ষে তা সহজসাধ্য।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ২৯-৩০}

আরেক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ [البقرة: ١٩٥]

‘আর তোমরা নিজ হাতে নিজদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৯৫}

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু এবং যে কেউ সীমা লঙ্ঘন করে অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, তাকে অগ্নিতে দগ্ধ করব; এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৯-৩০)

আত্মহত্যা করে, সে শুধু তার নিজের ওপরই জুলুম করে না বরং এতে মা-বাবা, ভাই-বোনসহ আত্মীয়-পরিজন সবাই খুব কষ্ট পায় এবং অত্যন্ত বিচলিতবোধ করে। যে পরিস্থিতিতেই হোক না কেন, ইসলামের দৃষ্টিতে এ এক বিরাট অন্যায়। কারণ, এর দ্বারা আল্লাহর বেঁধে দেওয়া নিয়মের বরখেলাপ হয়ে যায়।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন মদীনায় হিজরত করেন, তখন তুফায়েল বিন আমরের সঙ্গে অন্য আরেকজন লোকও হিজরত করে। মদীনার আবহাওয়া অনুকূলে না হওয়ায় অসহ্য হয়ে লোকটি স্বীয় হাতের আঙ্গুল সমূহের গিরা কেটে ফেলে। ফলে অধিক রক্ত ক্ষরণে সে মৃত্যুবরণ করে। তারপর তুফায়েল বিন আমর একদিন স্বপ্ন যোগে লোকটিকে খুব ভাল অবস্থায় দেখেন। কিন্তু তার হাত দু’খানা ছিল আবৃত। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার হাত দু’টি আবৃত কেন? জবাবে সে বলল, মদীনায় হিজরত করার কারণে মহান আল্লাহ হাত দু’টি ছাড়া আমার সবকিছুই ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতঃপর তুফায়েল স্বপ্নের ঘটনা নবী করীম (সাঃ)-এর কাছে বললে তিনি আল্লাহর নিকট দূ‘আ করেন। ফলে তার হাত দু’টিও ভাল হয়ে যায়। – মুসলিমঃ ১১৬; ‘আত্মহত্যাকারী কাফের না হওয়া’ অনুচ্ছেদ; মিশকাতঃ ৩৪৫৬।

ইসলামের ওপর বিশ্বাসী সব আত্মহত্যাকারীকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করুন। মুসলিম উম্মাহকে আত্মহত্যার মতো বড় অপরাধ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

উত্তর প্রদান

মুফতী মাসূম বিল্লাহ

সিনিয়র মুহাদ্দিছ ও মুফতী,

জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম ঢাকা (মসজিদুল অকবার কমপ্লেক্স) মিরপুর-১, ঢাকা।

ও উস্তাযুল ফিকহ ওয়াল ইফতা,

মারকাযুল বুহূস আল-ইসলামিয়া ঢাকা।

খতীব,

আল মদীনা মসজিদ, ইস্টার্ন হাউজিং, রূপনগর, মিরপুর, ঢাকা।

Facebook Comments Box